একটি লোকজ মেলা
গ্রাম বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি অন্যতম প্রধান উপকরণ হলো লোকজ মেলা। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে একাকার হয়ে মুখরিত হয়ে ওঠে মেলা প্রাঙ্গণ। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে লোকজ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। মেলার প্রধান আকর্ষণ লোকজ বিভিন্ন উপাদানের প্রাচুর্য। এখানে দেশীয় খাবারের মাঝে রয়েছে মুড়ি, মুড়কি, খই, নানা রকমের গুড়, বাতাসা, ছানা, সন্দেশ, মণ্ডা, মিঠাই, চমচম, দই প্রভৃতি। কুমোরদের হাতে বানানো ছোট ছোট নানা ধরনের তৈজসপত্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে— নানারকমের মাটির তৈরি পশু-পাখি, মাটির ব্যাংক, লবণের পাত্র, মটকা, নানারকমের মাটির পুতুল, খেলনা সামগ্রী। এছাড়া কামারের তৈরি দা, ছুরি, বটি, পানের বাটা থেকে শুরু করে ব্যবহারিক জীবনে প্রয়োজন এমন অনেক কিছু। হস্তজাত বস্ত্রশিল্পের দোকানে পাওয়া যায় সুতি কাপড়, রেশম কাপড়, কাতান, জামদানিসহ নানারকম শাড়ি, লুঙ্গি থেকে শুরু করে আধুনিকতার উপযোগী থ্রিপিস, ছেলেদের পাঞ্জাবি সবই। তবে এই লোকজ মেলার সবচেয়ে আকর্ষণীয় বস্তু হলো নকশি কাঁথা। আসবাবপত্রের দোকানে পাওয়া যায় গতানুগতিক ধারার বাইরে নানারকম ডিজাইনের বা খোদাই করা কাঠের আসবাবপত্র। যেমন- দরজা, খাট, প্রভৃতি। এসব দোকানে নানারকম অলংকৃত বাদ্যযন্ত্রও পাওয়া যায়। যেমন- সারিন্দা, ঢোল প্রভৃতি। মেলায় পুতুল নাচের ব্যবস্থা থাকে। একপাশে বিশাল মঞ্চে বিভিন্ন ধরনের লোকসঙ্গীত যেমন-জারি, সারি, ভাটিয়ালি, ভাওয়ালি, মুর্শিদি, লোকনৃত্য, লোকনাট্য, যাত্রাপালা পরিবেশিত হয়। লোকজমেলা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মেলায় আধুনিক পণ্যের পাশাপাশি গুরুত্ব পায় লোকজ সংস্কৃতি, লোকজ গান। এসব কিছু মিলিয়ে এই লোকজমেলা আমাদের সংস্কৃতিরই একটা অংশ।