সূচনা : শ্রমিকদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন দেশে যে সংগঠন গড়ে উঠেছে, তাকে শ্রমিক সংঘ বা ‘ট্রেড ইউনিয়ন’ বলে। বর্তমান যুগে বৃহৎ শিল্প কারখান সমূহে হাজার হাজার শ্রমিক একত্রে কাজ করে। শ্রমিকেরা দরিদ্র ও অধিকাংশ ক্ষেত্রে অশিক্ষিত বলে তারা অনেক সময় মালিক শ্রেণীর দ্বারা অন্যায়ভাবে শোষিত ও বঞ্চিত হয়। একজন শ্রমিক এককভাবে এর বিরুদ্ধে কিছুই করতে পারে না। তাই প্রয়োজন দেখা দেয় একটি সামগ্রিক শ্রমিক সংগঠনের। এ থেকেই আধুনিক কালের ‘ট্রেড ইউনিয়ন’ বা শ্রমিক সংঘের উৎপত্তি। পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থায় পুঁজিপতিদের শক্তি ও ক্ষমতা সীমাহীন। বস্তুতপক্ষে একতাই শ্রমিক সংঘের শক্তির মূল উৎস। বর্তমানে শ্রমিক শ্রেণী আর পূর্বের মত মালিকদের লাঞ্ছনা ও অন্যায়-অবিচার সহ্য করতে রাজি নয়, এখন তারা অনেক বেশি সচেতন। শ্রমিকদের বেতনের হার বৃদ্ধি, শ্রমের সীমা নির্ধারণ, স্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং অধিকতর আর্থিক সুবিধার জন্য তারা সংগঠনের মাধ্যমে সংগ্রাম করে। শ্রমিকদের সামগ্রিক কল্যাণের জন্যও এই সংঘ বিশেষ সচেষ্ট থাকে। বর্তমানে পৃথিবীর শিল্পপ্রধান দেশসমূহে শ্রমিক সংঘ আরও ব্যাপকভাবে গড়ে উঠেছে। শিল্পোন্নত দেশগুলোতে শ্রমিকগণ অপেক্ষাকৃত বেশি সংঘবদ্ধ।
ট্রেড ইউনিয়নের কাজ : শ্রমিক সংঘের প্রধান কাজ হল, মালিকদের সঙ্গে চুক্তি করে কারখানায় শ্রমিক নিয়োগ করা। অশিক্ষা, দারিদ্র্য ও প্রতিযোগিতার দরুন শ্রমিকদের পক্ষে সঠিকভাবে কর্মসংস্থান করা সম্ভব হয় না। ট্রেড ইউনিয়ন মালিকের সঙ্গে বোঝাপড়া করে চাকরির শর্ত, বেতন ইত্যাদি ঠিক করে দেয়। চাকরির নিরাপত্তা রক্ষা করা শ্রমিক সংঘের অন্যতম প্রধান কাজ। মালিকপক্ষ খেয়াল খুশি মতো যেন অযোগ্য শ্রমিকদের পদোন্নতি এবং যোগ্য শ্রমিককে বরখাস্ত ইত্যাদি না করতে পারে সে বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখা শ্রমিক সংঘের দায়িত্ব। শ্রমিকদের দুর্ঘটনার দরুন ক্ষতিপূরণ আদায়, তাদের স্বাস্থ্যরক্ষা, চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি ব্যাপারেও শ্রমিক সংঘের উপর গুরুদায়িত্ব অর্পিত থাকে। রুগ্ন ও দুঃস্থ শ্রমিক পরিবারকে আর্থিক সাহায্য দানের ব্যবস্থা করা ইত্যাদিও এ দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত। শ্রমিকদের সম্মিলিত চাঁদা থেকে এর সাংগঠনিক ব্যয় বহন করা হয় এবং একটি সাধারণ তহবিল গঠন করা হয়।তবে শুধু মালিকদের বিরুদ্ধে কাজ করাই শ্রমিক সংঘের লক্ষ্য হওয়া উচিত নয়। অযথা ধর্মঘট করে উৎপাদন বন্ধ রাখলে তাতে জাতির অশেষ ক্ষতি হয়।
উপসংহার : বাংলাদেশে শিল্পোন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে শ্রমিক আন্দোলনও গড়ে উঠেছে। তবে মালিকদের কুটবুদ্ধি, শ্রমিকদের সংঘবদ্ধতার অভাব এবং অর্থের অপ্রতুলতার কারণে শ্রমিক আন্দোলন তেমন বিস্তারলাভ করতে পারছে না। সরকার অবশ্য শ্রমিক কল্যাণের জন্য নানাবিধ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন।