বাংলা একাডেমি প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম
পর্ব — ৩
৯. ও
বাংলায় অ–কারের উচ্চারণ বহুক্ষেত্রে ও–কার হয়। এ উচ্চারণকে লিখিত রূপ দেওয়ার
জন্যে ক্রিয়াপদের বেশ কয়েকটি রূপের এবং কিছু বিশেষণ ও অব্যয় পদের শেষে, কখনও
আদিতে অনেকে যথেচ্ছভাবে ও–কার ব্যবহার করেছেন। যেমন— ছিলো, করলো, বলতো, কোরছো,
হোলে, যেনো, কেনো (কী জন্যে) ইত্যাদি ও–কার যুক্ত বানান লেখা হচ্ছে। বিশেষ
ক্ষেত্রে ছাড়া অনুরূপ ও–কার ব্যবহার করা যাবে না।
বিশেষ ক্ষেত্রের মধ্যে রয়েছে এমন অনুজ্ঞাবাচক ক্রিয়াপদ এবং বিশেষণ ও অব্যয় পদ বা
অন্য শব্দ যার শেষে ও–কার যুক্ত না করলে অর্থ অনুধাবনে ভ্রান্তি বা বিলম্ব ঘটতে
পারে। যেমন— ধরো, চড়ো, চলো, বলো, বোলো, জেনো, কেনো (ক্রয় করো), করানো, খাওয়ানো,
শেখানো, করাতো, মতো, ভালো, কালো, হলো।
১০. ং (অনুস্বার), ঙ
তৎসম শব্দে ং এবং ঙ যেখানে যেমন ব্যবহার্য ও ব্যাকরণসম্মত সেভাবে ব্যবহার করতে
হবে।
তদ্ভব, দেশি, বিদেশি, মিশ্র শব্দের বানানের ক্ষেত্রে এ নিয়মের বাধ্যবাধকতা নেই।
তবে এক্ষেত্রে প্রত্যয় ও বিভক্তিহীন শব্দের শেষে সাধারণভাবে অনুস্বার (ং) ব্যবহৃত
হবে। যেমন— রং, সং, পালং, ঢং, রাং, গাং।
তবে শব্দে অব্যয় বা বিভক্তি যুক্ত হলে বা পদের মধ্যে বা শেষে স্বরচিহ্ন থাকলে 'ঙ'
হবে। যেমন— বাঙালি, ভাঙা, রঙিন, রঙের।
১১. রেফ ও দ্বিত্ব
তৎসম শব্দের অনুরূপ বানানের ক্ষেত্রে এবং অতৎসম সকল শব্দেও রেফের পর
ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব হবে না। যেমন— কর্জ, কোর্তা, মর্দ, সর্দার।
১২. বিসর্গ
ক. শব্দের শেষে বিসর্গ (ঃ) থাকবে না। যেমন— কার্যত, মূলত, প্রধানত, বস্তুত,
ক্রমশ, প্রায়শ, সাধারণত।
খ. তবে যেসব শব্দের শেষে বিসর্গ থাকলে অর্থের বিভ্রান্তি ঘটার আশঙ্কা থাকে,
সেখানে শব্দ শেষে বিসর্গ থাকবে। যেমন— পুনঃপুনঃ।
গ. পদমধ্যস্থ বিসর্গ থাকবে। যেমন— অতঃপর। তবে অভিধানসিদ্ধ হলে পদমধ্যস্থ বিসর্গ
বর্জনীয়। যেমন— দুস্থ, নিস্পৃহ।
১৩. আনো প্রত্যয়ান্ত শব্দ
আনো প্রত্যয়ান্ত শব্দের শেষে ও–কার যুক্ত করা হবে। যেমন— করানো, বলানো, খাওয়ানো,
শেখানো, পাঠানো, নামানো, শোয়ানো।
১৪. বিদেশী শব্দ ও যুক্তবর্ণ
বাংলায় বিদেশি শব্দের বানানে যুক্তবর্ণকে বিশ্লিষ্ট করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
যুক্তবর্ণের সুবিধা হচ্ছে তা উচ্চারণের দ্বিধা দূর করে। তাই ব্যাপকভাবে বিদেশি
শব্দের বানানে যুক্তবর্ণ বিশ্লিষ্ট করে অর্থাৎ ভেঙে দেওয়া উচিত নয়। শব্দের আদিতে
তো অনুরূপ বিশ্লেষ সম্ভবই নয়। যেমন— স্টেশন, স্ট্রিট, স্প্রিং।
তবে কিছু কিছু বিশ্লেষ করা যায়। যেমন— সেপটেম্বর, অকটোবর, মার্কস (ক –র নিচে ্
আছে), শেকসপিয়র (স্ –র নিচে ্ আছে), ইসরাফিল (স্ –র নিচে ্ আছে)।
১৫. হস্ চিহ্ন
ক. হস্ চিহ্ন যথাসম্ভব বর্জন করতে হবে। যেমন— কাত, মদ, চট, ফটফট, শনশন, কলকল, জজ,
ঝরঝর, তছনছ, করলেন, বললেন, শখ, টাক, টক, হুক, চেক।
খ. যদি ভুল উচ্চারণের আশঙ্কা থাকে তবে হস্ চিহ্ন করা যাবে। যেমন— উহ্,
যাহ্।
গ. যদি অর্থের বিভ্রান্তির আশঙ্কা থাকে তাহলেও তুচ্ছ অনুজ্ঞায় হস্ চিহ্ন করা
যাবে। যেমন— কর্৷ ধর্, মর্, বল্।
১৬. ঊর্ধ্ব কমা
ঊর্ধ্ব কমা যথাসম্ভব বর্জন করা হবে। যেমন— করল, ধরত, বলে (= বলিয়া), হয়ে, দু জন,
চার শ৷ চাল, আল (= আইল)।
- বাংলা বানানের নিয়ম
- বাংলা একাডেমি প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম - পর্ব-১ > পর্ব-২ > পর্ব-৩ > পর্ব-৪
- অশুদ্ধ বানান শুদ্ধকরণ