বাংলা একাডেমি প্রণীত বাংলা বানানের নিয়ম
পর্ব — ৪
বিবিধ
১. যুক্ত–ব্যঞ্জনবর্ণের যতদূর সম্ভব স্বচ্ছ করতে হবে অর্থাৎ পুরাতন রূপ বাদ দিয়ে
এগুলোর স্পষ্ট রূপ দিতে হবে। তার জন্যে কতগুলো স্বরচিহ্নকে বর্ণের নিচে বসাতে
হবে। যেমন— গু, রু, রূ, শু, ব্রু, ভ্রু, হৃ, ত্র, ভ্র। তবে ক্ষ–এর পরিচিত যুক্ত
রূপ অপরিবর্তিত থাকবে। যেমন— অক্ষর, অক্ষয়, ক্ষতি, ক্ষমা, নক্ষত্র।
২. সমাসবদ্ধ পদগুলো একসাথে লিখতে হবে, মাঝখানে ফাঁক রাখা চলবে না। যেমন—
সংবাদপত্র, রবিবার, পূর্বপরিচিত, অদৃষ্টপূর্ব, সমস্যাপূর্ণ, সংযতবাক, নেশাগ্রস্ত।
বিশেষ প্রয়োজনে সমাসবদ্ধ পদটিকে একটি, কখনও একটির বেশি হাইফেন (–) দিয়ে যুক্ত করা
যায়। যেমন : মা–মেয়ে, ভবিষ্যৎ–তহবিল, বে–সামরিক, স্থল–জল–আকাশ–যুদ্ধ,
কিছু–না–কিছু।
৩. বিশেষণ পদ সাধারণভাবে পরবর্তী পদের সঙ্গে যুক্ত হবে না। যেমন— স্নিগ্ধ বাতাস,
সুন্দর ফুল, লাল গোলাপ, তিন হাজার, কত দূর, এক জন। কিন্তু যদি সমাসবদ্ধ পদ অন্য
বিশেষ্যে বা ক্রিয়াপদের গুণ বর্ণনা করে তা হলে স্বভাবই সে যুক্তপদ একসঙ্গে লিখতে
হবে। যেমন— কতদূর যাবে, একজন শিক্ষক, তিনহাজার টাকা। তবে কোথাও কোথাও
সংখ্যাবাচক শব্দ একসঙ্গে লেখা যাবে। যেমন— দুজনা।
৪. নাই, নেই, না, নি–এ নঞর্থক অব্যয় পদগুলো শব্দের শেষে যুক্ত না হয়ে পৃথক থাকবে।
যেমন— বলে নাই, করে নি, যাব না, ভয় নেই। তবে শব্দের পূর্বে নঞর্থক উপসর্গরূপে
'না' উত্তরপদের সাথে যুক্ত থাকবে। যেমন— নাবালক, নারাজ। অর্থ পরিস্ফুট করার জন্যে
কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রয়োজনে না–এর পর হাইফেন ব্যবহার করা যায়। যেমন : না–বলা
বাণী, না–শোনা কথা।
৫. উদ্ধৃতি অংশ মূলে যেমন আছে তেমনই লিখতে হবে। কোনো পুরাতন রচনায় যদি বানান
বর্তমান নিয়মের অনুরূপ না হয়, উক্ত রচনার বানানই যথাযথভাবে উদ্ধৃত করতে
হবে।
তবে কোনো পুরাতন রচনার অভিযোজিত বা সংক্ষেপিত পাঠে পুরাতন বানানকে বর্তমান নিয়ম
অনুযায়ী পরিবর্তিত করা যেতে পারে।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড প্রবর্তিত বাংলা বানানের যেসব নীতি
অনুসরণ করা হয় তার সংক্ষেপে পরিচয় :
বাংলা বানানকে অভিন্ন ও প্রমিত করার লক্ষ্যে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক
বোর্ড (NCTB) বানান সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করে। পাঠ্যপুস্তককে বানানের সমতা
বিধানের জন্য ১৯৮৪ সালে এনসিটিবি একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে।অভিন্ন বানানারীতির
সুপারিশমালা প্রণয়নের লক্ষ্যে ১৯৮৮ সালের অক্টোবর মাসে একটি জাতীয় কর্মশিবিরের
আয়োজন করা হয়। কর্মশিবিরে অংশগ্রহণকারী বিশেষজ্ঞগণ প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তকে
অনুসরণের জন্য অভিন্ন বানানরীতির কিছু সুপারিশ প্রণয়ন করেন এবং তা চূড়ান্তভাবে
গৃহীত হয়। যেমন—
১. রেফের পর কোথাও ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব হবে না। যেমন— কর্ম, কার্য, শর্ত, সূর্য
ইত্যাদি।
২. হস্ চিহ্ন ও ঊর্ধ্বকমা যথাসম্ভব বর্জন করা হবে। যেমন— করব, দুজন।
৩. ক্ষ–বিশিষ্ট সকল শব্দে 'ক্ষ' অক্ষুণ্ন থাকবে। যেমন— অক্ষয়, ক্ষেত, পক্ষ
ইত্যাদি।
৪. কয়েকটি স্ত্রীবাচক শব্দের শেষে ঈ–কার থাকবে। যেমন— গাভী, হরিণী, কিঙ্করী,
পিশাচী, মানবী ইত্যাদি।
৫. ভাষা ও জাতির নামের শেষে ই–কার হবে। যেমন— ইংরেজি, জাপানি, বাঙালি
ইত্যাদি।
৬. অর্থভেদ বোঝাবার জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী হ্রস্ব ও দীর্ঘস্বর ব্যবহার করা হবে।
যেমন— কি (অব্যয়), কী (সর্বনাম), তৈরি (ক্রিয়া), তৈরী (বিশেষণ), নিচ (নিম্ন
অর্থে), নীচ (হীন অর্থে), কুল (বংশ অর্থে), কূল (তীর অর্থে)।
- বাংলা বানানের নিয়ম
- বাংলা একাডেমি প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম - পর্ব-১ > পর্ব-২ > পর্ব-৩ > পর্ব-৪
- অশুদ্ধ বানান শুদ্ধকরণ