বিহারীলাল চক্রবর্তী
বিহারীলাল চক্রবর্তী কবে জন্মগ্রহণ করেন? — ১৮৩৫ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ শে মে।
তিনি কোথায় জন্মগ্রহণ করেন? — নিমতলা, কলকাতায়।
তিনি মূলত কী ছিলেন? — কবি।
তিনি কী কী মাসিক পত্রিকা সম্পাদনা করেন? — 'পূর্ণিমা' (১৮৫৯), 'সাহিত্য সংক্রান্তি' (১৮৬৩), 'অবোধ বন্ধু' (১২৭৫)।
তিনি বাংলা সাহিত্যের কীসের স্রস্টা? — আধুনিক গীতিকবিতার।
বিহারীলাল চক্রবর্তী রচিত কবিতায় প্রথম বিশুদ্ধভাবে কী প্রকাশিত হয়? — কবির ব্যক্তিগত অনুভূতি ও গীতোচ্ছাস।
তিনি গীতি কবিতার ক্ষেত্রে কী হিসেবে খ্যাত? — রবীন্দ্রনাথের গুরু হিসেবে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁকে বাংলা গীতিকবিতার ধারার কী বলে আখ্যা দিয়েছেন? — ভোরের পাখি।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁকে বাংলা গীতিকবিতার ধারার ভোরের পাখি বলেছেন কেন?
বিহারীলাল চক্রবর্তী প্রথম বাংলায় ব্যক্তির আত্মলীনতা, ব্যক্তিগত অনুভূতি ও গীতোচ্ছাস সহযোগে কবিতা রচনা করে বাংলা কবিতাকে নতুন এক প্ররণা দান করেন। এ ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন প্রথম। তাই তাঁকে "ভোরের পাখি'' বলা হয়।
তাঁর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থগুলোর নাম কী?
'স্বপ্নদর্শন' (১৮৫৮), 'সঙ্গীত শতক' (১৮৬২), 'বঙ্গসুন্দরী' (১৮৭০), 'নিসর্গ সন্দর্শন' (১৮৭০), 'বন্ধু বিয়োগ' (১৮৭০), 'প্রেম প্রবাহিণী' (১৮৭০), 'সারদা মঙ্গল' (১৮৭৯)।
'বঙ্গসুন্দরী' কাব্যগ্রন্থের পরিচয় দাও।
বিহারীলালের প্রথম সার্থক গীতিকবিতার গ্রন্থ 'বঙ্গসুন্দরী' (১৮৭০)। এই কাব্যে কবি বলেছেন : "সর্বদাই হুহু করে মন/ বিশ্ব যেন মরুর মতন/ চারিদকে ঝালাপালা/ উঃ কি জ্বলন্ত জ্বালা/ অগ্নিকুন্ডে পতঙ্গ পতন।" রবীন্দ্রনাথ এ প্রসঙ্গে বলেছেন— ''আধুনিক বঙ্গ সাহিত্যে এই প্রথম বোধহয় কবির নিজের কথা প্রকাশ পাইয়াছে।'' গ্রন্থটির প্রথম সর্গ উপহার, ২য় সর্গ নারী বন্দনা, ৩য় সর্গ সুরবালা, ৪র্থ সর্গ চির পরাধীনা, ৫ম সর্গ করুনাসুন্দরী,৬ষ্ঠ সর্গ বিষাদিনী, ৭ম সর্গ প্রিয় সখী, ৮ম সর্গ বিরহিণী, ৯ম সর্গ প্রিয়তমা ও ১০ম সর্গ অভাগিনী নামকরণ করা হয়েছে।
'সারদামঙ্গল' কাব্যগ্রন্থের পরিচয় দাও।
বিহারীলাল চক্রবর্তীর শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ 'সারদামঙ্গল' ১৮৭৯ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয়। এটি পাঁচ সর্গে ত্রিপদী দীর্ঘ স্তবকময় লালিত্যপূর্ণ ভাষায় রচিত। কাব্যের প্রথম সর্গে কবির মনোজগতে এক কাব্যলক্ষ্মীর আবির্ভাব, ২য় সর্গল হারানো আনন্দ লক্ষ্মীর উদ্দেশ্যে কবির মানসভ্রমণ, ৩য় সর্গে কবিচিত্তের দ্বনু,৪র্থ সর্গে হিমালয়ের উদার প্রশান্তির মধ্যে কবিচিত্তের আশ্বাস লাভ, ৫ম সর্গে হিমালয়ের পুণ্যভূমিতে কবির আনন্দ উপলব্ধির চিত্র পাওয়া যায়। 'সারদামঙ্গল' কাব্য সম্পূর্ণরূপে জীবনরচিত, বিশেষ সৌন্দর্যধ্যান। শেলির মতো বিহারীলাল চক্রবর্তী তাঁর প্রিয়তমা সারদাকে অন্বেষণ করেছেন এবং দীর্ঘ বিরহের পর হিমাদ্রিশিখরে ভাব সম্মিলনের চিত্র অংকন করে কবি কাব্যের পরিসমাপ্তি টেনেছেন।
বিহারীলাল চক্রবর্তী রচনার ঐতিহাসিক গুরুত্ব কী?
সৌন্দর্যপিয়াসী প্রকৃতি প্রেমিক কবি বিহারীলাল চক্রবর্তীর তাঁর কবিতায় সমকালীন সমাজ ও সমস্যাকে তেমনভাবে তুলে ধরেন নি। কিন্তু কবিতার চরণে ছন্দে ঢেউ তুলেছেন নূপুর–নিক্বণ। মনের মাধুরী মিশিয়ে প্রকৃতির রস পান করেছেন যেভাবে, সেই মুগ্ধতার প্রকাশ ঘটেছে তাঁর কবিতায়। নগরবাসের অভিজ্ঞতা কঠিন আবরণে আচ্ছন্ন করতে পারে নি তাঁর সলজ্জ সরস মানসভূমিকে।
তিনি কবে মৃত্যুবরণ করেন? — ২৪ শে মে, ১৮৯৪ ; কলকাতায়।