সাধারণ জ্ঞান : বিজন ভট্টাচার্য

বিজন ভট্টাচার্য

বিজন ভট্টাচার্য কবে জন্মগ্রহণ করেন? — ১৯০৬ সালে। 

তিনি কোথায় জন্মগ্রহণ করেন? — খানখানপুর, ফরিদপুর। 

তিনি কিসের প্রধান পুরোহিত ছিলেন? — নবনাট্য আন্দোলনের।

এই আন্দোলনকে অন্য আর কী নামে অভিহিত করা হয়? — থার্ড থিয়েটার।

গণনাট্য ও নবনাট আন্দোলন কী?
গণনাট্য আন্দোলন : প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর সারা পৃথিবী জুড়েই শুরু হয়েছিল এক ধরনের বিশৃঙ্খলা এবং অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত এক অবস্থা। এই দুরবস্থা আরো চরম রূপ নেয় ১৯২৯ সালে। তখন বিশ্বজোড়া আর্থিক মন্দায় চারিদিকে শুরু হয় চুরি, ডাকাতি, পটেকমারি ইত্যাদি নানা সামাজিক অপরাধ। এই সুযোগে স্বদেশ প্রেমের মুখোশে ইতালি, জার্মানি, স্পেন, গ্রিস ইত্যাদি দেশে শুরু হয় একনায়কতন্ত্র বা স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট সাম্রাজ্যবাদ। লোরকা, র্যালফ ফক্সের ন্যায় অনেক বিশ্বন্দিত ব্যক্তি এইসব ফ্যাসিস্ট সরকারের হাতে নিহত হতে থাকে। রবীন্দ্রনাথ, রোমা রোঁলা, আদ্রে জিঁদ প্রমুখ দার্শনিক ও চিন্তাশীল ব্যক্তি এই অমানবিক শক্তির বিরুদ্ধে ক্রমাগত প্রতিবাদ করতে থাকেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ভারতে গণনাট্য সংঘ বা গণনাট্য আন্দোলনের জন্ম হয়। কমিউনিস্ট পার্টির সাংস্কৃতিক মঞ্চ হিসপবে গড়ে তোলা হয় IPTA (Indian People's Theatre Association)। স্থাপিত হয় ফ্যাসিবাদ বিরোধী লেখক শিল্পী সংঘ। সেই সময় প্রতিষ্ঠিত গণনাট্য সংঘ যে আদর্শগুলি মেনে চলত— 

(১) নাটকে থাকবে বাস্তব সমস্যার রূপায়ন ও জনগণের সম্মিলিত প্রতিবাদ এবং প্রতিরোধের পথ।
(২) ব্যক্তি এখানে শ্রেণির প্রতিভূত হয়ে নাটকে চিত্রিত হবে।
(৩) ব্যক্তিনায়কের মধ্যে প্রাধান্য লাভ করবে গোষ্ঠীর প্রতি চিন্তা।
(৪) আনন্দ বিধানের সঙ্গে সঙ্গেই শিল্পের উদ্দেশ্য হবে জনগণের সমস্যার মূল কারণ খুঁজে বের করে পরিবর্তনের উপায় সম্পর্কে তাদের সচেতন করে তোলা।
(৫) হিন্দু মুসলিম সম্প্রীতি রক্ষা বিষয়েও নাট্যকারকে সচেতন হতে হবে।
(৬) আমজনতার হৃৎস্পন্দনকে স্পর্শ করার জন্য নাটকে থাকবে লোকসংগীত বা লোক উৎসবের ঘটনা। 

নাট্যকার তুলসী লাহিড়ীর 'ছেঁড়া তার' বা বিজন ভট্টাচার্যের 'দেবীগর্জন' নাটকে IPTA–র সাহিত্যাদর্শের প্রতিফলন লক্ষ্য করা যায়। 

নবনাট্য আন্দোলন : গণনাট্যেপর পরবর্তী পর্যায় হলো নবনাট্য আন্দোলন। নবনাট্যের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করতে হলে নবনাট্যের অন্যতম পথিকৃত গঙ্গাপদ বসুর কথাতেই বলতে হয়— "সৎ মানুষের নতুন জীবনবোধের এবং নতুন সমাজ ও বলিষ্ঠ জীবনগঠনের মহৎ প্রয়াস যে সুলিখিত নাটকে শিল্প সুষমায় প্রতিফলিত, তাকেই বলতে পারি নবনাট্যের নাটক এবং এইরকম নাটক নিয়ে মঞ্চে সমাজ সচেতন শিল্পীর মতো রিয়ালিটির যে অন্বেষণ তাকেই বলতে পারি নবনাট্যে আন্দোলন।" বস্তুত নাটক নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষার বিষয়ে গণনাট্যের সাথে নবনাট্যের কোনো বৈসাদৃশ্য লক্ষ্য করা না গেলেও একটি বিষয়ে উভয়ের মধ্যে পার্থক্য দেখা গিয়েছিল। সেটি হলো, নবনাট্যের দলগুলি বিশেষ কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শের মধ্যে নিজেদের গণ্ডিবদ্ধ করতে চান নি। নবনাট্যের সূত্রে বিশেষভাবে উল্লেখ্য হলেন— নাট্যকার শম্ভু মিত্র ('চাঁদবণিকের পালা'),  তৃপ্তি মিত্র ('বিদ্রোহিণী'), উমানাথ ভট্টাচার্য ('ছারপোকা') ইত্যাদি। বিজন ভট্টাচার্য গণনাট্য থেকে নবনাট্যের অন্যতম সূচনাকারী ছিলেন।
 
কোন নাটক রচনা করে তিনি প্রভূত খ্যাতি অর্জন করেন? — নবান্ন (১৯৪৪)। 

'নবান্ন' নাটকের বিষয়বস্তু লেখ। 
— 'নবান্ন' (১৯৪৪) পঞ্চাশের মন্বন্তরের পটভূমিকায় কৃষক জীবনের দুঃখ দুর্দশা ও জীবন সংগ্রামের কাহিনী অবলম্বনে রচিত নাটক। নবনাট্যের আন্দোলনের পথিকৃত বিজন ভট্টাচার্য এই নাটকের মাধ্যমে বাংলা নাট্যধারায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তাই নাটকটিকে বাংলা নাট্য আন্দোলনের ইতিহাসে যুগান্তকারী বলা চলে। অনেকে দীনবন্ধুর 'নীল দর্পন' নাটকের সাথে এই নাটককে তুলনা করেছেন। এ নাটকটি ভারতীয় গণনাট্য সংঘ ১৯৪৪ সালে প্রথম অভিনয় করেন। তখন থেকে 'নবান্ন' নতুন বাংলা নাটকের অগ্রদূত রূপ গণ্য হয়। পঞ্চাশের মন্বন্তর, সমকালীন জাতীয় আন্দোলন, মেহনতি মানুষের চাহিদা ইত্যাদির প্রেক্ষাপটে গ্রামীণ কৃষক সমাজের দুঃখ–দুর্দশা, তাদের সংগ্রাম, সফলতা, ব্যর্থতা ইত্যাদি এই নাটকের মূল সুর।

তাঁর রচিত অপর নাটকগুলোর নাম লিখ। — 'জনপদ' (১৯৪৫), 'কলঙ্ক' (১৯৪৬), 'মরাচাঁদ' (১৯৪৬), 'অবরোধ' (১৯৪৭), 'গোত্রান্তর' (১৯৬০)।

★ নোট : 'গোত্রান্তর' ছোটগল্পের লেখক সুবোধ ঘোষ।

তাঁর রচিত নাটকের মূল উপজীব্য বস্তু কী? — সমাজের নীচ তলার মানুষদের জীবনচিত্র।

নাট্য রচনার ক্ষেত্রে তিনি কোন মতবাদকে প্রাধান্য দিতেন? — মার্কসবাদ মতবাদকে।

তিনি কবে, কোথায় মৃত্যুবরণ করেন? — ১৯ শে জানুয়ারি, ১৯৭৮ সালে কলকাতায়।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post