ব্যাকরণ : সরকারি কাজে প্রমিত বাংলা ব্যবহারের নিয়ম - ২

সরকারি কাজে প্রমিত বাংলা ব্যবহারের নিয়ম
পর্ব - ২ 

একবচন : টি
একবচনসূচক ' –টি ' সবসময় বিশেষ্যের সাথে যুক্তভাবে বসবে। যেমন— 'লোকটি', 'কথাটি' ইত্যাদি। 

একবিন্দু ( . ), ত্রিবিন্দু ( ... )
বাংলায় শব্দ সংক্ষেপণের জন্য একবিন্দু ব্যবহার করা যায়। যেমন— 'ড.' বা 'ডা.'।

অসম্পূর্ণ বাক্য বা উদ্ধৃতি বোঝাতে ত্রিবিন্দু ব্যবহৃত হয়। যেমন— 
"হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,
সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে..." 

অসম্পূর্ণ পদ্য–অনুচ্ছেদ তথা অনুল্লেখিত উক্তি/ লাইন/ চরণ বোঝাতে ত্রিবিন্দু বাক্যের শেষে না লিখে একটি চরণ হিসেবে লেখা হয়। যেমন—
"গগনে গরজে মেঘ, ঘন বরষা।
কূলে একা বসে আছি, নাহি ভরসা।
...
কাটিতে কাটিতে ধান এলো বরষা।" 

এ–কার
শব্দের শুরুর এ–কার মাত্রাহীন হয়। যেমন— বেলা, লেখা, খেলা ইত্যাদি। কিন্তু শব্দের মধ্যকার এ–কার মাত্রাযুক্ত হয়। যেমন— শেষবেলা, স্মৃতিলেখা, ধূলিখেলা ইত্যাদি। 

–এর, –য়ের, –র
'–এর' এবং '–র' সাধারণভাবে বিশেষ্যের সঙ্গে যুক্তভাবে ব্যবহৃত হবে। যেমন— বনের রাজা, ঢাকার ইতিহাস, জামাইয়ের বাড়ি, ইনস্টিটিউটের কর্মপদ্ধতি, ঢাকার ছেলে ইত্যাদি। তবে কোনো নামবিশেষকে আলাদা করে দেখানোর প্রয়োজনে '–এর' রূপটি ব্যবহার করা হয়। যেমন— 'বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় –এর প্রতিষ্ঠাদিবস', 'মানিক বন্ধ্যোপাধ্যায়ের লেখা "হারানের নাতজামাই" —এর কাহিনী', 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট –এর আয়োজন' ইত্যাদি। অনেকে 'শামসুর রাহমান–র' লিখে থাকেন। এটি শ্রুতিকটু এবং অস্বাভাবিক। 

ঐ/ ওই
আনুষ্ঠানিক প্রমিত ব্যবহারে কেবল 'ঐ' লেখা হবে। যেমন— 
১৯৭ সাল আমাদের ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৎসর। ঐ বৎসরে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম। 

ও–কার
লিখনরীতির ক্ষেত্রে মিতব্যয়িতা বজায় রাখার তাগিদে শব্দশেষের ও-কার যথাসম্ভব ব্যবহার বর্জন করা হবে। যেমন— ছিল, গেল, রইল, এত (তবে ‘তো’, ‘এ তো’ ও-কার দিয়ে লেখা হবে), ভীত ইত্যাদি। তবে যেসব শব্দের ক্ষেত্রে অর্থগত বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে, সেসব শব্দের শেষে ও-কার ব্যবহার করা হবে। যেমন—কালো (রং অর্থে), ভালো (গুণ অর্থে), রসালো (গুণ অর্থে), মতো (তুলনা অর্থে)।

সংখ্যাবাচক শব্দের বানান প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ও-কার দিয়ে লেখা হবে। যেমন—এগারো, বারো, তেরো ইত্যাদি।

–কালীন
‘কালীন' (কাল + ঈন) সবসময়ই ঈ-কার সহযোগে লিখতে হবে। যেমন— সন্ধ্যাকালীন, তৎকালীন ইত্যাদি।

কী, কি, কি না, কিনা, নাকি
বিস্ময়, প্রশ্ন ইত্যাদি অর্থে বিশেষণ এবং সর্বনাম রূপে স্বতন্ত্র পদ হিসেবে ‘কী’ ব্যবহৃত হয়। অন্য কথায় ‘কী’ কথাটির ওপর যখন জোর পড়ে তখন তা ঈ-কার দিয়ে লেখা হয়। যেমন—‘কী সুন্দর!’ ‘এখানে কী কাজে এসেছ?’ অন্যদিকে, সংশয় কিংবা প্রশ্ন বোঝাতে অব্যয় হিসেবে ‘কি’ ব্যবহৃত হয়। এ ক্ষেত্রে ‘কি’-এর ওপর জোর পড়ে না। যেমন—“সে কি আসবে?” অন্য একটি উদাহরণে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হতে পারে

তুমি কি খাবে? এখানে শ্রোতা খাবেন কিনা তা জানতে চাওয়া হচ্ছে। তুমি কী খাবে? এখানে শ্রোতা কোন খাবারটি খাবেন তা জানতে চাওয়া হচ্ছে।

‘কি না’ সংশয়, বিতর্ক, প্রশ্ন ইত্যাদি অর্থে অব্যয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যেমন— আপনি খাবেন কি না মা জানতে চাইল।

‘কি না’ সংশয়, বিতর্ক, প্রশ্ন ইত্যাদি অর্থে অব্যয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যেমন— আপনি খাবেন কি না মা জানতে চাইল। অর্থহীন বাগভঙ্গি হিসেবে, কিংবা কোনও কিছুর কারণ বোঝাতে 'কিনা' যুক্তভাবে ব্যবহৃত হয়।

যেমন—এত্তটুকু ছেলে কিনা আমার কথার ভুল ধরে! ঘটে বুদ্ধি কম কিনা, তাই আমার কথার মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারছ না।

অন্যদিকে, ‘নাকি’ সংশয়, সন্দেহ, বিতর্ক, প্রশ্ন ইত্যাদি অর্থে অব্যয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যেমন—আমার সঙ্গে যাবেন নাকি? এ ব্যাটা নাকি আবার বিদ্যার জাহাজ! ‘কে’

ব্যাকরণগতভাবে অপরিহার্য না হলেও অর্থ স্পষ্ট করার প্রয়োজনে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ‘কে’ ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন— আমাদেরকে একটু বিবেচনা করুন।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post