সরকারি কাজে প্রমিত বাংলা ব্যবহারের নিয়ম
পর্ব - ৪
–নির্বিশেষে
‘নির্বিশেষে অন্য শব্দের পরে যুক্তভাবে (দীর্ঘ শব্দ হলে হাইফেন সহযোগে) বসে। যেমন—বয়সনির্বিশেষে, জাতিধর্মবর্ণ নির্বিশেষে।
নেই/নিই
‘নেওয়া' অর্থে ‘নেই’ ব্যবহৃত হয় না, এটি অনুপস্থিতি অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন—আরিফ এখানে নেই। অন্যদিকে, উত্তম পুরুষে ‘নেওয়া' অর্থে 'নিই' ব্যবহৃত হয়। যেমন—আমি সবসময় ভালোটাই নিই।
প্রতি, –প্রতি, প্রতি–
‘প্রতি’ অর্থ অনুযায়ী মুক্ত ও যুক্তভাবে (শব্দের শুরুতে ও শেষে) বসে। যেমন—
- প্রতি বসন্তে পৃথিবী ফুলে ফুলে সেজে ওঠে।
- আমি প্রতিদিন (প্রত্যহ, daily) এক মাইল হাঁটি।
- জনপ্রতি একসের চাল পেল গরিবরা।
প্রশ্নবোধক চিহ্ন (?)
বাক্যের শেষে প্রশ্নবোধক চিহ্নের আগে ১টি ‘স্পেস' ব্যবহার করা সংগত।
প্রায়/ –প্রায়
বিশেষণবাচক ‘প্রায়' শব্দটি সাধারণত একাধিক অর্থে স্বতন্ত্র শব্দ হিসেবে সংশ্লিষ্ট বিশেষ্য বা বিশেষণের আগে বসে। যেমন—প্রায় দশ মণ, তিনি প্রায়ই এখানে আসেন ইত্যাদি। তবে ‘মতো’ অর্থে এটি বিশেষণের পরে মুক্ত বা যুক্তভাবে ব্যবহৃত হয়। যেমন— ভগ্নপ্রায়, পাগলপ্রায়, পাগলের প্রায় ইত্যাদি।
বন্ধনীর ব্যবহার
বাংলা লিখনরীতিতে দ্বিতীয় বন্ধনীর ({ }) ব্যবহার সাধারণত নেই। তৃতীয় বন্ধনী ([ ]) ব্যবহৃত হয় মূল রচয়িতার রচনায় সম্পাদক বা অন্য কেউ যে-ব্যাখ্যা বা অনুমিত শব্দ (মূল পাঠ অস্পষ্ট বা ভুল থাকলে, কিংবা উদ্ধৃতাংশের অর্থ স্পষ্ট করার প্রয়োজনে যোগ করেন, সেই শব্দ বা শব্দাবলি। যেমন—
সেদিন [গত বুধবার] তো আমি [ঢাকায়] ছিলাম না।
প্রথম বন্ধনী (( )) ব্যবহৃত হয় কোনও শব্দ বা বাক্যাংশের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা কিংবা উদাহরণ দেওয়ার প্রয়োজনে (উদাহরণ এই ভুক্তিতে দ্রষ্টব্য)।
বলো/বোলো, করো/কোরো
মধ্যম পুরুষে বর্তমান অনুজ্ঞায় ‘বলো’, ‘করো' এবং ভবিষ্যৎ অনুজ্ঞায় ‘বোলো’, ‘কোরো’ ব্যবহৃত হয়। যেমন—‘এখন তুমি আমাকে বলো’, ‘আজ শপথ করো’, ‘কাল তুমি আমাকে বোলো’, ‘সেদিন তুমি শপথ কোরো' ইত্যাদি। কোনও ক্ষেত্রেই ঊর্ধ্বকমা বা লোপচিহ্ন ( ' ) ব্যবহৃত হবে না। অনুরূপভাবে ‘ফিরো’ ( < ‘ফেরো’, ‘ধোরো’ ( < ধরো), ‘চোলো’ ( < চলো) ইত্যাদি লেখা হবে।
বসেছিল/ বসে ছিল
'বসেছিল' 'বসা' ক্রিয়ার পুরাঘটিত অতীতকালের রূপ। যেমন— একদিন এই ঘাটে সে এসে বসেছিল। অন্যদিকে, 'বসে ছিল' যৌগিক ক্রিয়া (একটি অসমাপিকা + একটি সমাপিকা ক্রিয়া)। যেমন— এই তো একটু আগেই লোকটা এখানে বসে ছিল ( 'বসে আছে' যৌগিক ক্রিয়ার সাধারণ অতীতকালের রূপ)।
বহু, বহুল
'বহুল' একটি বিশেষণবাচক শব্দ এবং অন্য শব্দের পরে বা আগে যুক্তভাবে ব্যবহৃত হয়। যেমন— জনবহুল, ব্যয়বহুল, বহুলপ্রজ, বহুল প্রচারিত। অন্যদিকে 'বহু' একটি বহুবচনবাচক পদ। যে–কোনও বিশেষণের মতোই এটি সাধারণত বিশেষ্যের আগে স্বতন্ত্রভাবে এবং ক্ষেত্রবিশেষে বিশেষ্যের আগে যুক্তভাবে বসে। যেমন— বহু মানুষ, বহুরূপী, বহুবার।
বহুবচন : –গুলি/ –গুলো/ –গুলা, –সমূহ, –বৃন্দ, –গণ ইত্যাদি
বহুবচনসূচক শব্দাংশ সবসময় বিশেষ্যের পরে যুক্তভাবে বসবে। যেমন— দিনগুলো, গ্রন্থসমূহ, শ্রোতৃবৃন্দ, ভদ্রমহোদয়গণ ইত্যাদি। '–গুলি', '–গুলো', '–গুলা', রূপসমূহের মধ্যে প্রমিত ও আনুষ্ঠানিক ব্যবহারে '–গুলো' ব্যবহৃত হবে। 'সমূহ', 'গণ', অবশ্য বহুবচন নির্দেশ করা ছাড়াও ভিন্ন অর্থেও শব্দের আগে বসে। যেমন— 'সমূহ ক্ষতি' (সার্বিক বা চরম অর্থে), 'গণনাট্য' (সাধারণ মানুষ অর্থে), 'গণধোলাই' (সম্মিলিত অর্থে) ইত্যাদি।
বাংলা লেখার মধ্যে ইংরেজি লেখার ফন্টের আকার
একই লেখায় ইংরেজি বর্ণ বাংলা বর্ণের চেয়ে ২ পয়েন্ট ছোটো হবে।