নিন্দুকেরে বাসি আমি সবার চেয়ে ভালো,
যুগ জনমের বন্ধু আমার আঁধার ঘরের আঁলো।
অথবা,
নিন্দুক সে বেঁচে থাকুক বিশ্বহিতের তরে,
আমার আশা পূর্ণ হবে তাহার কৃপা ভরে।
মূলভাব : নিন্দুকের কাজ হলো অপরের নিন্দা করা। তাই বলে নিন্দুককে ঘৃণা করা উচিত নয়। সে মানুষের পরম বন্ধু। নিন্দার ভয়ে মানুষ দূষণীয় কাজ থেকে বিরত থাকতে চেষ্টা করে এবং পরিপূর্ণতা অর্জন করে।
সম্প্রসারিত ভাব : মানুষ সামাজিক জীব। তাই সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস করে। সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় জীবনে সমালোচনাকারী বা পরনিন্দাকারী লোকের অভাব নেই। তবে সমালোচনা বা পরনিন্দা সবসময় সমাজের ক্ষতি করে না। বরং কিছু কিছু গঠনমূলক সমালোচনা সমাজ বা রাষ্ট্রকে সঠিক পথে পরিচালিত হতে সহায়তা করে। একটি রাষ্ট্রের বিরোধী দল সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে। এতে সরকার নিজেদের ভুলত্রুটি শুধরে নিতে পারে। ফলে জনগণের কল্যাণ সাধিত হয়। নিন্দ না থাকলে পৃথিবীর গৌরব হ্রাস পেত। একটি ভালো কাজের যদি সমালোচনা না হয়, তাহলে সে ভালো কাজের কোনো মূল্যায়ন থাকে না। তই কোনো মহৎ কাজ করতে গেলে বার বার সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। সকল প্রকার প্রতিকূলতা অতিক্রম করে মহৎ কাজ সম্পন্ন করার মাধ্যমে মহত্ত্বের পরিচয় দিতে হয়। সোনা যেমন পুড়ে পুড়ে খাঁটি হয়, তেমনই একজন মানুষকে নিন্দাবাদে জর্জরিত হয়েই প্রকৃত মানুষ হতে হয়। এতে যে হেরে যায় সে মহত্ত্বের সম্মান পায় না। নিন্দুকের কাজ যে শুধু দোষ দেওয়া বা সমালোচনা করা তা নয়, বরং মহত্ত্বকে গৌরবান্বিত করাও তার কাজ। তাই নিন্দুককে শত্রু নয়, বন্ধু ভাবা উচিত। তাকে ঘৃণা না করে ভালোবাসতে পারার মধ্যেই প্রকৃত মানুষ হওয়ার চাবিকাঠি। বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন সবাই ছেড়ে চলে যেতে পারে, কিন্তু নিন্দুক সবসময় ছায়ার মতো লেগে থেকে আমাদের কল্যাণের পতে পরিচালিত করে।
নিন্দুকের নিন্দার মাধ্যমে মানুষ নিজেদের ভুলত্রুটি সম্পর্কে অবগত হতে পারে। নিন্দুকের ভূমিকার কারণেই মানুষ ব্যক্তি ও সামাজিক জীবনে কল্যাণ সাধন করতে পারে। তাই নিন্দুক তার নিন্দার মাধ্যমে পরোক্ষভাবে সমাজের কল্যাণ করে।