উচ্চ শির যদি তুমি কুল মান ধনে
করিও না ঘৃণা তবু নীচ-শির জনে।
মূলভাব : ধনী ও দরিদ্র উভয়েরই বাসযোগ্য ভূমি এই পৃথিবী। ধন-সম্পদে কিংবা বংশমর্যাদায় পার্থক্য থাকলেও মূলত মানুষের সঙ্গে মানুষের কোনো ভেদাভেদ নেই।
সম্প্রসারিত ভাব : উচ্চ শ্রেণির লোকেরা প্রায়ই এ কথা অস্বীকার করে থাকে যে, ‘সব মানুষই সমান’। যার একটু বংশ গৌরব ও অর্থ-সম্পদের প্রাচুর্য দেখা দেয়, আত্মদম্ভে সে নিজেকে একেবারে বাদশা বানিয়ে ফেলে। সে ধরাকে সরা জ্ঞান করে কেবলই আত্ম অহংকার প্রকাশে উদ্যত থাকে। কিন্তু অর্থ-সম্পদ কারও চিরস্থায়ী নয়। আজ যে ধনী কাল সে পথের ফকিরে পরিণত হতে পারে। তাই ধন-সম্পত্তির বড়াই করা উচিত নয়। বড়ো হতে গেলে আগে মনটাকে বড়ো করতে হবে। নিচু জনকে ঘৃণা করে কেউ কখনো উঁচুতে অধিষ্ঠিত হতে পারেনি। একটু চিন্তা করে দেখলে সহজেই প্রতীয়মান হয় যে, উঁচু স্থানেই আঘাতের পরিমাণ সর্বদা বেশি হয়ে থাকে। উঁচু বৃক্ষ অধিকাংশ সময়ই ঝড়ে ভূপাতিত হয়। তাই এই নশ্বর পৃথিবীতে অহংকার করা বোকামি ছাড়া আর কিছু নয়। চোখের পলকেই সবকিছু ওলট-পালট হয়ে যেতে পারে। বস্তুত মানুষের ধন-সম্পত্তি, নাম-যশ-খ্যাতি পার্থিব জগতের এক ক্ষণস্থায়ী অর্জন। মনুষ্যত্বের বিকাশ ব্যতীত এসব অর্জন মূল্যহীন, কেননা মানুষের কাছে স্রষ্টার সান্নিধ্যের পর সেটা স্বর্গীয় বলে গণ্য সেটি হলো মানুষের শ্রদ্ধ-প্রেম-আশীর্বাদ। আর তার জন্য চাই মানুষের প্রতি সহমর্মিতা, সমতা জ্ঞানে অকৃত্রিম ভালোবাসা।
মন্তব্য : সুতরাং ধনী-গরিব, উঁচু-নিচু সব ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে সবার সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে চলতে পারাটাই প্রজ্ঞার পরিচায়ক।