ঝড়ের রাতে বিদ্যুৎহীন একটা রাতের অভিজ্ঞতা বর্ণনা কর।
মামা দেশের বাইরে, মামি সন্তানসম্ভবা, এ অবস্থায় মা আমাকে নিয়ে রওয়ানা হলেন চাঁদপুরের উদ্দেশে। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। আকাশ ক্রমশ দুরন্ত কালো মেঘে ছেয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে ঝড় উঠবে। লঞ্চ নদীর কিনার ধরে যাচ্ছে। অল্পক্ষণের মধ্যেই পৌছে গেলাম লঞ্চঘাটে। কাছেই মামাবাড়ি। বাড়িতে ঢুকতে ঢুকতেই শুরু হলো ঝড়। প্রবল বাতাসের সাথে প্রবল বৃষ্টি। মামি আর নানি খুব খুশি হলেন। তারা আশাই করেননি আমরা কেউ আসব । নানি লাঠিতে ভর করে আস্তে হাঁটছেন আর বলছেন চিন্তা এবং উৎকণ্ঠার কথাগুলো। মা তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছেন। আমি মামির কাছে। মামি আমাকে জড়িয়ে ধরে আছেন। কাঁদছেন। এমন সময় বিদ্যুৎ চলে গেল। আমি বললাম, হারিকেন বা মোমবাতি কিছু আছে ঘরে? ম্যাচ, ম্যাচ কোথায়? মামি বললেন, “তুমি তো খুঁজে পাবে না বাবা, আমি দেখছি।” আমি মামিকে উঠতে মানা করলাম। ধাক্কা লাগলে বা পড়ে গেলে সর্বনাশ হবে। মোবাইলের কথা মনে পড়ল। আলো জ্বেলে খুঁজে পেলাম সবই। হারিকেনটাই জ্বালালাম। মা আর নানি কেঁদেই চলেছেন । অনেকদিন পর দেখা। ঝুপ ঝুপ শব্দে মামি চমকে উঠলেন, “মা নদীর পাড় ভাঙছে বোধ হয়।” নানি নির্বিকার। অমাবস্যার রাত। তীব্র স্রোতে কিছু ভাঙতে পারে। নানি বললেন, ‘তুমি ভয় পাইও না বউমা।’ ঝড়ের তীব্রতা কমেছে। নানি, আমি কি দেখে আসব কোথায় কী হচ্ছে? দরজা খুলতেই বাতাসের ঝাপটায় হারিকেনটা নিভে গেল । বিদ্যুৎ চমকানির আলোয় দেখলাম সামনে পানির স্রোত । ভয়ে চিৎকার করে উঠলাম— নানি, পানির স্রোত। নানি অভয় দিয়ে বললেন— “জোয়ারের পানি যাইবো গা কতক্ষণ পরে। ভাই তুমি দরজা বন্ধ কর।” দরজা বন্ধ করে মোবাইলের আলো জ্বেলে দেখলাম হারিকেন উলটে তেল সব পড়ে গেছে। মোমবাতি জ্বাললাম। বিদ্যুৎও আসছে না। “রান্না কিছু নেই, মা কী করব?” মামির কথা শুনে নানি হাসলেন। আমার মাকে বললেন, “মঞ্জু যা, দুধ জ্বাল দেওয়া আছে, চিড়া-মুড়ি ভিজাইয়া চিনি দিয়া খাওনের ব্যবস্থা কর।” আমি মোমবাতি নিয়ে মাকে সাহায্য করলাম। রাত বারোটা পার হয়েছে। মা অল্পক্ষণেই সব গুছিয়ে ফেললেন। বেশ মজা করে খেলাম সবাই। আবার শুরু হলো ঝড়। বিদ্যুৎবিহীন কাটল সারারাত।