↬ মুজিব জন্ম শতবর্ষ
↬ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী
↬ মুজিববর্ষ ২০২০-২০২১
“আমি হিমালয় দেখিনি, তবে শেখ মুজিবকে দেখেছি। ব্যক্তিত্ব ও সাহসে তিনি হিমালয় সমান।”
- ফিদেল ক্যাস্ট্রো।
ভূমিকা : পৃথিবীর শিক্ষা, সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিকাশে তথা জাতিসত্তার বিকাশে অনেক মহান ব্যক্তি অভাবনীয় অবদান রেখে গেছেন। পরাধীনতার শৃঙ্খল ছিন্ন করে চির আকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা অর্জনে দূরদর্শী ও বিস্ময়কর ভূমিকা পালন করেছেন অনেক কীর্তিমান ব্যক্তিত্ব। গভীর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, আত্মত্যাগ ও জনগণের আস্থায় অটল বাঙালির অবিসংবাদী নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেই কীর্তিমান মহান ব্যক্তিদের অন্যতম। এই দূরদর্শী মহান নেতার নেতৃত্বে মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় উন্মাতাল বাঙালি জাতি ঝাঁপিয়ে পড়ে গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধে, অর্জন করে বহু প্রত্যাশিত স্বাধীনতা।
বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ : বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ এক ও অভিন্ন। বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের সঙ্গে তাঁর আত্মার সম্পর্ক। তাই তো তিনি দৃঢ়কণ্ঠে বলেছেন, ‘আমি বাঙালি, বাংলা আমার ভাষা, বাংলাদেশ আমার দেশ’। আজীবন সংগ্রামী বঙ্গবন্ধু দেশ ও মানুষকে শোষণ-বঞ্চনা থেকে, পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করার জন্য ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬’র ঐতিহাসিক ৬ দফা, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থানে মানুষকে সম্পৃক্ত করে ’৭০-এর নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছিলেন। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর গভীর ষড়যন্ত্রের মধ্যেও ১৯৭১-এর, ৭ই মার্চ তিনি দিকনির্দেশনা সংবলিত ভাষণে দৃঢ়কণ্ঠে বলেছিলেন- ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। ২৫শে মার্চের কালরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এদেশের মানুষের ওপর সশস্ত্র আক্রমণ ও গণহত্যা শুরু করলে ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু তাঁর বাসভবন থেকে ওয়্যারলেস বার্তায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তারপর তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ । এদেশের মানুষ বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা মোতাবেক ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে পরাজিত করে ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় অর্জন করে। পৃথিবীর মানচিত্রে নবীন সূর্যের মতো স্থান করে নেয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে পুনর্গঠনের মাধ্যমে স্বনির্ভরতার দিকে এগিয়ে নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। তাঁর আদর্শ ও স্বপ্ন অনুসরণ করেই সমৃদ্ধির দিকে দ্রুত এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। কাজেই এ কথা অনস্বীকার্য যে বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ অধরাই থেকে যেত। তাই বাঙালি জাতির ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর নাম চিরদিন স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
মুজিববর্ষ : ‘মুজিববর্ষ’ হলো বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের জন্য ঘোষিত বর্ষ। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের এক সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “২০২০ সালের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্ম তারিখ থেকে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত মুক্তিববর্ষ পালিত হবে।” এখানে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীও থাকবে। এই সময়ের মধ্যে যেসব জাতীয় ও দলীর (আওয়ামী লীগের) দিবস পড়বে সেগুলোকেও বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে পালন করা হবে। দেশের ওয়ার্ড, ইউনিয়ন পর্যন্ত এই বর্ষ পালন করা হবে। মুজিববর্ষ সরকারিভাবেও পালিত হবে। এই দেশ ও এই দেশের মানুষের জন্য বঙ্গবন্ধুর অবদানের পাশাপাশি তাঁর জন্মের তিথিও চিকাজাগরূক থাকবে বাঙালির প্রাণের স্পন্দনে। তাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও কর্ম দেশ ও দেশের বাইরে সর্বত্র দেওয়ার জন্যই তাঁর জন্মশতবার্ষিকী অর্থাৎ মুজিববর্ষ উদযাপন।
জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন কমিটি : জাকজমকপূর্ণভাবে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠান উদযাপনে দুটি কমিটি গঠন করা হচ্ছে ১১৯ সদস্যবিশিষ্ট ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় কমিটি’। এই কমিটির সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দ্বিতীয়াটি জাতীয় অধ্যাপক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামকে সভাপতি ও সাবেক মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৗধুরীকে প্রধান সমন্বয়ক করে গঠন করা হয়েছে ৭১ সদস্যবিশিষ্ট ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি’।
মুজিববর্ষের থিম সং : বিশিষ্ট কবি কামাল চৌধুরীর লেখা ও নকিব খানের সুরারোপিত ‘তুমি বাংলার ধ্রুবতারা, তুমি বাংলার বাতিঘর’ শীর্ষক গানটিকে মুজিববর্ষের থিম সং হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের বছরব্যাপী অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধীন অনুষ্ঠানে এই থিম সং-এ কণ্ঠ দেন বঙ্গবন্ধুকন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানাসহ দেশের খ্যাতিমান শিল্পীবৃন্দ।
বছরব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর মূল কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে —
১০ জানুয়ারি : মুজিববর্ষের ক্ষণগণনা শুরু।
১৭ মার্চ : সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন স্থানে সেনাবাহিনীর তোপধ্বনি। বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান, বঙ্গবন্ধুর সমসাময়িক রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যক্তিদের নিয়ে মূল অনুষ্ঠান।
১৭ এপ্রিল : মেহেরপুরের মুজিবনগর সরকার দিবস উদযাপন।
৭ জুন : ছয় দফা দিবস উদযাপন।
২৫ সেপ্টেম্বর : জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বঙ্গবন্ধুর বাংলায় ভাষণদানের বার্ষিকীতে এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা।
ফেব্রুয়ারি ২০২১ : অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২১ উৎসর্গ করা হবে বঙ্গবন্ধুকে।
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ : ১৯৬৯ সালের এই দিনে জাতির জনককে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দেওয়া হয়। এ উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও প্রদর্শনীর আয়োজন।
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১ : সাত দিনের কর্মসূচি ও জয় বাংলা কনসার্টের আয়োজন।
ক্ষণগণনা : বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর বিশ্বনেতৃবৃন্দের চাপের মুখে ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। ১০ জানুয়ারি তিনি স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। সেই ঐতিহাসিক ঘটনাকে স্মরণীয় করতেই ১০ জানুয়ারি থেকে শুরু হয় মুজিববর্ষের ক্ষণগণনা।
মুজিববর্ষের মূল অনুষ্ঠান : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর মূল আয়োজন শুরু হয় ১৭ মার্চ সূর্যোদয় থেকেই। এদিন সকালে ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন স্থানে সেনাবাহিনীর তোপধ্বনির মাধ্যমে শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান। সকাল ১০টায় টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিসৌধে প্রথমে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন, ফাতিহা পাঠ করেন এবং তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করে মোনাজাত করেন। মুজিববর্ষ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে মানুষের ঢল নামে। রাজধানীর প্রতিটি ওয়ার্ডে, এতিম ও দুঃস্থদের মাঝে খাবার ও মিষ্টি বিতরণ করা হয়। বাদ জোহর বায়তুল মোকাররমসহ সব মসজিদে দোয়া ও মিলাদের আয়োজন করা হয়। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিষ্টি ও ফল উপহার দেন। রাত আটটায় বঙ্গবন্ধুর জন্মক্ষণে রাজধানীর সোহরাওয়াদী উদ্যানের স্বাধীনতা স্তম্ভ থেকে আতশবাজির মাধ্যমে শুরু হয় মুক্তিববর্ষের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। এরপর জাতীয় প্যারেড স্কয়ার থেকে ধারণকৃত ‘মুক্তির মহানায়ক’ শিরোনামের বহুমাত্রিক সাংস্কৃতিক পরিবেশনা টিভি চ্যানেলগুলোয় প্রচারিত হয়। প্রথমেই শত শিশু কণ্ঠে গীত হয় জাতীয় সংগীত, তারপর রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আব্দুল হামিদের ভাষণ। জাতির উদ্দেশে উদ্দীপনাময় ভাষণ দেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুভূতি প্রকাশ করেন বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা। এরপর প্রচারিত হয় বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনেতা ও সংস্থা প্রধানদের বাণী। যাদের মধ্যে ছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, নেপালের রাষ্ট্রপতি বিদ্যা ভণ্ডারি, ভূটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, ওআইসির মহাসচিব ইউসেফ ঝালওথাইমিন প্রমুখ। প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের পর শতকণ্ঠে গাওয়া হয় মুজিববর্ষের থিম সং তুমি বাংলার ধ্রুবতারা, তুমি হৃদয়ের বাতিঘর। শতাব্দীর মহানায়ক শীর্ষক মনোমুগ্ধকর থিয়েট্রিক্যাল কোরিওগ্রাফির মাধ্যমে বর্ণিত হয়েছে বঙ্গবন্দুর আত্মত্যাগ, সাহস ও সাম্রাজ্যের বিবরণসহ মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাথা। জাতীয় সংসদ ভবন থেকে পিক্সেল ম্যাপিং বা লেজার শো-এর মাধ্যমে শেষ হয় অনুষ্ঠান।
মুন্সিবর্ষের নানা আয়োজন ও কর্মসূচি : বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন দিবস ঘিরে বড় পরিসরের কর্মসূচির পাশাপাশি থাকবে বিভিন্ন আয়োজন। কর্মসূচি পালনে ২৯৪টি পরিকল্পনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ১৮ মার্চ জাতীয় সংসদের বিশেষ অধিবেশন, ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস পালন, ২৬ মার্চ মুজিববর্ষের আবহে স্বাধীনতা দিবস এবং ২৩ মে বঙ্গবন্ধুর ‘জুলিও কুরি’ পদক প্রাপ্তি দিবস উদযাপন। ২৩ জুন রোক গার্ডেনে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা দিবস উদযাপন, ৮ আগস্ট বঙ্গমাতার জন্মদিন উদযাপন, আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উদযাপন। এছাড়া ৩ নভেম্বর জেল হত্যা দিবস এবং ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হবে মুজিববর্ষের আবহে।
মুজিববর্ষে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আরও কিছু কর্মসূচি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এগুলো হলো :
১. বঙ্গবন্ধুর ছবি, স্কেচ ও আলোকচিত্র নিয়ে ইংরেজিতে ‘শেখ মুজিব লাইফ অ্যান্ড টাইমস’ এবং ‘বায়োগ্রাফি অব বঙ্গবন্ধু’ প্রকাশ করা হবে।
২. বঙ্গবন্ধুর চীন সফর নিয়ে অনুবাদ প্রান্ত প্রকাশ এবং তাঁর নির্বাচিত ভাষণ ইংরেজি ছাড়াও আরও ১২টি ভাষায় অনুবাদ করা হবে।
৩. বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ‘কারাগারের রোজনামচা’ থেকে এক ঘণ্টার পাণ্ডুলিপি প্রযোজনা নিয়ে দুটি অনুষ্ঠান করা হবে।
৪. বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা ২৫টি দেশের যেসব গুরুত্বপূর্ণ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে তা সংগ্রহ ও প্রকাশ করা হবে।
৫. বঙ্গবন্ধুর সব লেখা ও অডিও ভিডিও নিয়ে একটি আর্কাইভ স্থাপন করা হবে।
৬. বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত বিভিন্ন ঘটনা ও স্থান চিত্রায়ণ করে আমাদের বঙ্গবন্ধু শিরোনামে অনুষ্ঠান নির্মাণ ও প্রচার করা হবে।
৭. সারা দেশে এক হাজার ডিজিটাল ডিসপ্লে স্থাপন করে প্রচার করা হবে বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধুর ওপর বিভিন্ন কনটেন্ট।
৮. বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের নির্মমতা ও সাক্ষীদের জবানবন্দি নিয়ে সেমিনার, ওয়ার্কশপ ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হবে।
৯. যাত্রা ও লোকনাট্য, জেলা পর্যায়ে ৬০টি নৃত্যানুষ্ঠান আয়োজন ও দেশ-বিদেশে চারুকলার প্রদর্শনী করা হবে। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলমান ৫০টি -নাটককে সহায়তা প্রদান করা হবে।
১০. দেশব্যাপী শতকণ্ঠে আমার পরিচয় কবিতা, বঙ্গবন্ধুর প্রিয় কবিতা এবং তাঁকে নিয়ে রচিত কবিতা আবৃত্তির আয়োজন করা হবে।
১১. মুজিববর্ষে ফুটবল, ক্রিকেট, কাবাডি, হকি, ভলিবল, সাঁতার, দাবা, বাস্কেটবল ইত্যাদি খেলার আয়োজন করা হবে।
১২. সারা দেশে এক কোটি ফলদ, বনজ ও ঔষধি বৃক্ষ রোপণ করা হবে।
১৩. বঙ্গবন্ধুর বিদেশ সফর নিয়ে একটি শর্টফিল্ম এবং ছবিগুলো নিয়ে একটি স্টিলফিল্ম বা ভিডিও তৈরি করা হবে।
১৪. ঢাকা আন্তর্জাতিক বইমেলা ২০২০-এর আয়োজন করা হবে এ বছরের শেষের দিকে এবং এটি উৎসর্গ করা হবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।
বিদেশে মুজিববর্ষ উদযাপন : ‘মুজিববর্ষ’ উপলক্ষে বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের ৭৭টি দূতাবাসে ২৬০টিরও বেশি অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট, নিউইয়র্কে অবস্থিত জাতিসংঘের সদর দফতর জেনেভায় জাতিসংঘ দফতরের পাশাপাশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা, ব্রাসেলসে অবস্থিত ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদর দফতর এবং প্যারিসে অবস্থিত ইউনেস্কোর সদর দফতরে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের ব্যবস্থা নেবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এছাড়া মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন ও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিদেশে আরও পাঁচটি ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ এবং ইউনিভার্সিটি অব ক্যামব্রিজে ‘বঙ্গবন্ধু সেন্টার’ স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। লন্ডনে মাদাম তুলো জাদুঘর ও জাতিসংঘ সদর দফতরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ স্থাপন এবং ব্রিটিশ মিউজিয়ামে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও আদর্শভিত্তিক চিত্রকর্ম ও আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে।
বঙ্গবন্ধু প্রতিদিন : ‘মুজিববর্ষ’ উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বর্ণাঢ্য জীবনের প্রতিদিনকার ঘটনাপঞ্জি স্কুলে ধরে নির্মিত টেলিভিশন স্পট ‘বঙ্গবন্ধু প্রতিদিন’ ইতোমধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এটি দেখে মানুষ সহজেই বুঝতে পারছে বঙ্গবন্ধু কীভাবে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা হয়ে ওঠেন এবং কীভাবে স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জনে জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেন।
মুক্তিববর্ষ উদযাপনে করোনার প্রভাব : বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব এবং বাংলাদেশে ক্রমশ আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ‘মুজিববর্ষ’ উপলক্ষে প্রণীত কর্মসূচিসমূহ জনস্বার্থে ও জনকল্যাণে ছোট পরিসরে উদযাপন করা হচ্ছে। বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে অনেক কর্মসূচি পুনর্বিন্যাস করার প্রচেষ্টা চলছে।
উপসংহার : ‘মুজিববর্ষ উদযাপনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ও সারা বিশ্বের মানুষ জানতে পারবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন, কর্ম, চিন্তা ও আদর্শ, সাহস, দৃঢ়তা, সৌজন্যবোধ, সরলতা, দেশ ও মানুষের প্রতি অপরিসীম মমতার কথা। কিন্তু শুধু আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে তাঁকে সীমাবদ্ধ রাখা যাবে না। বিশাল হৃদয়ের এই সুমহান ব্যক্তিত অগণিত মানুষের হৃদয়জুড়েই অবস্থান করবেন চিরকাল। বঙ্গবন্ধুর জীবন, কর্ম, আদর্শ আমাদের অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে চিরদিন। বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে প্রখ্যাত সাহিত্যিক অন্নদাশঙ্কর রায়ের কালজয়ী উচ্চারণ—
যতদিন রবে পদ্মা-মেঘনা, গৌরী-যমুনা বহমান
ততদিন রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান।
আরো দেখুন :