গণিত : ল.সা.গু এবং গ.সা.গু : প্রাথমিক আলোচনা

গাণিতিক যুক্তি

লঘিষ্ঠ সাধারণ গুণিতক (ল.সা.গু)
Lowest Common Multiple (L.C.M)

গরিষ্ঠ সাধারণ গুণনীয়ক (গ.সা.গু)
Highest Common Factor (H.C.F)

প্রাথমিক আলোচনা

গণিতের অন্যসব চ্যাপ্টারের মত ল.সা.গু এবং গ.সা.গু প্রয়োজনীয় একটি চ্যাপ্টার। তাই এই অধ্যায়টি গুরুত্বের সাথে পড়ুন। তাছাড়া বিগত বিসিএস থেকে ব্যাংক সবধরনের চাকুরী নিয়োগ পরীক্ষায় ল.সা.গু এবং গ.সা.গু থেকে কমবেশি ২/৩ টা প্রশ্ন এসেছে। ভালো একটি চাকুরীর জন্যে ভালো মার্কস পেতে হয় আর ভালো মার্কস পেতে অবশ্যই আপনাকে ল.সা.গু এবং গ.সা.গু ভালোভাবে জানতে হবে। মজার বিষয় এই অধ্যায়টি একদম পানির মতন সহজ। তাই ল.সা.গু এবং গ.সা.গু কে ভালভাবে আয়ত্বে আনতে আপনাকে বেশি বেগ পোহাতে হবে না। 

ল.সা.গু (লঘিষ্ঠ সাধারণ গুণিতক)
ল.সা.গু হলো একাধিক সংখ্যার এমন একটি গুণিতক যাকে প্রতিটি সংখ্যা দ্বারা নিঃশেষে ভাগ করা যায়।

যেমন ধরুন, ৪ এবং ৬ সংখ্যা দুটির ল.সা.গু হবে ১২। কারণ, ১২ কে ৪ এবং ৬ উভয় সংখ্যা দিয়েই ভাগ করা যায়। এগুলো ছাড়া আরো কিছু সংখ্যা ২৪, ৩৬, ৪৮, ৬০ ইত্যাদি কে ৪ এবং ৬ দ্বারা নিঃশেষে ভাগ করা যায় কিন্তু এরা ৪ এবং ৬ এর ল.সা.গু হবে না। কারণ, ল.সা.গু এর ক্ষেত্রে সবচেয়ে ছোট এবং কমন সংখ্যাটিকে বাছাই করতে হয়। 

তাহলে ল.সা.গু কাকে বলে?
পাটিগণিত এবং সংখ্যাতত্ত্বে দুই বা ততোধিক পূর্ণসংখ্যার ল.সা.গু (লঘিষ্ঠ সাধারণ গুণিতক) বলতে বুঝায় সেই ক্ষুদ্রতম সংখ্যা যা ওই সংখ্যাগুলোর প্রত্যেকটি দ্বারা নিঃশেষে বিভাজ্য। ইংরেজি ভাষায় ল.সা.গু কে Least Common Multiple বা Lowest Common Multiple অথবা সংক্ষপে L.C.M বলা হয়।

গ.সা.গু (গরিষ্ঠ সাধারণ গুণনীয়ক) 
গ.সা.গু হলো দুই বা ততোধিক সংখ্যার একটি সাধারণ গুণনীয়ক। অর্থাৎ, গ.সা.গু হবে প্রদত্ত সংখ্যাগুলোর থেকে ছোট এমন একটি সংখ্যা যা দ্বারা উক্ত সংখ্যা গুলোকে নিঃশেষে ভাগ করা যাবে (অবশ্যই ১ বাদে)। 

যেমন ধরুন, ৪ এবং ৬ এর গ.সা.গু হবে ২। অর্থাৎ ২ দ্বারা ৪ এবং ৬ উভয়কেই ভাগ করা যায়। আবার, একাধিক সংখ্যা দ্বারা ভাগ করা গেলে সবথেকে বড় সংখ্যাটি নিতে হবে। যেমন: ৩৬ এবং ৪৮ থেকে ছোট ১২, ৬, ৪ এবং ২ এই ৪ টি সংখ্যা দ্বারাই ৩৬ এবং ৪৮ কে ভাগ করা যায়। কিন্তু এক্ষেত্রে সবচে বড় সংখ্যাটি অর্থাৎ ১২ হবে ৩৬ ও ৪৮ এর গ.সা.গু। কারণ, গ.সা.গু হচ্ছে গরিষ্ঠ সাধারণ গুণনীয়ক।

মনে রাখবেন, যে সংখ্যা গুলোর সাধারণ গুণনীয়ক নেই তাদের গ.সা.গু সবসময় ১ হবে। যেমন: ৭ ও ১১ এবং ১৭ ও ১৯ ইত্যাদি সংখ্যাগুলোর গ.সা.গু হচ্ছে ১। 

প্রশ্ন হচ্ছে গ.সা.গু কাকে বলে? 
দুই বা তার অধিক সংখ্যার গ.সা.গু (গরিষ্ঠ সাধারণ গুণনীয়ক) হলো সেই বৃহত্তম সংখ্যা যাকে দিয়ে ওই সংখ্যাগুলোকে নিঃশেষে ভাগ করা যায়। কোন ভগ্নাংশকে তার ক্ষুদ্রতম পদে প্রকাশ করার জন্য গ.সা.গু. -র প্রয়োজন হয়। ইংরেজিতে গ.সা.গু কে Highest Common Factor বা H.C.F বলা হয়। 

জ্ঞাতব্য : একটি সংখ্যাকে অন্য একটি সংখ্যা দ্বারা ভাগ করলে যদি ভাগশেষ না থাকে, অর্থাৎ যদি সংখ্যাটি সম্পূর্ণরূপে বিভাজ্য হয়, তাহলে প্রথম সংখ্যাটিকে দ্বিতীয় সংখ্যার গুণিতক এবং দ্বিতীয় সংখ্যাটিকে প্রথম সংখ্যার গুণনীয়ক বা উৎপাদক বলে।

মনোযোগ দিন (Note) : ল.সা.গু তে লঘিষ্ঠ থাকলেও এর উত্তর বড় এবং গ.সা.গু তে গরিষ্ঠ থাকলেও এর উত্তর ছোট হয়। যেমন: ২৪ ও ৩৬ এর ল.সা.গু ৭২ অর্থাৎ ২৪ ও ৩৬ দ্বারা ভাগ করা যায় এমন সবথেকে বড় সংখ্যা হল ৭২। যদিও আরো অনেক সংখ্যা আছে যেমন, ১৪৪, ২১৬ ..... যাদের কে ২৪ ও ৩৬ দ্বারা ভাগ করা যায় কিন্তু ৭২ হল সবথেকে ছোট। তেমনিভাবে গ.সা.গু এর ক্ষেত্রে ২৪ ও ৩৬ উভয় সংখ্যাকেই ভাগ করা যায় ২, ৩, ৪, ৬ ও ১২ সংখ্যাগুলো দিয়ে। কিন্তু এক্ষেত্রে সবচে বড় সংখ্যাটি অর্থাৎ ১২ নিতে হয়।

ল.সা.গু নির্ণয় করার দুটি পদ্ধতি আছে। যথা:
  • প্রত্যেক রাশি যৌগিক উৎপাদক বিশ্লেষণের দ্বারা এবং 
  • সাধারণ উৎপাদক বিশ্লেষণ এর দ্বারা। 

অন্যদিকে গ.সা.গু. নির্ণয়েরও দুটি পদ্ধতি আছে। যথা:
  • যৌগিক উৎপাদক বিশ্লেষণের দ্বারা এবং
  • ভাগ পদ্ধতির সাহায্যে।

অতিদ্রুত এবং মুখে মুখে ল.সা.গু এবং গ.সা.গু বের করার কৌশল : 
অতিদ্রুত এবং মুখে মুখে ল.সা.গু এবং গ.সা.গু বের করার জন্যে আপনাকে নিজের ৪ টি নিয়ম ফলো করলেই চলবে। চলুন নিয়ম ৪ টি দেখে নেওয়া যাক— 

(১) দুটি সংখ্যা ভিন্ন হলে বা মৌলিক বা সহমৌলিক হলে দুটো গুণ করলেই ল.সা.গু পেয়ে যাবেন। যেমন : 
৩ × ৪ = ১২
৩ × ৫ = ১৫ 
৪ × ৫ = ২০
৫ × ৬ = ৩০
৪ × ৯ = ৩৬

(২) দুটো বা তিনটি সংখ্যার মধ্যে বড় সংখ্যাটি ছোট সংখ্যাগুলো দিয়ে নিঃশেষে ভাগ করা গেলে বড় সংখ্যাটি হবে তাদের ল.সা.গু। যেমন: 
১২ ও ২৪ এর ল.সা.গু ২৪ 
১০, ২০, ৩০ ও ৬০ এর ল.সা.গু ৬০ 

এখানে, ১২ ও ২৪ এ ছোট সংখ্যা ১২ দ্বারা ২৪ কে নিঃশেষে ভাগ করা যায়। তাই তাদের ল.সা.গু হবে ২৪। আবার, ১০, ২০, ৩০ ও ৬০ এ ছোট সংখ্যা ১০, ২০, ৩০ দ্বারা ৬০ কে নিঃশেষে ভাগ করা যায়। তাই তাদের ল.সা.গু হবে ৬০। 

তেমনি,
২ ও ৬ এর ল.সা.গু ৬;
৬ ও ১২ এর ল.সা.গু ১২;
৩ ও ৬ এর ল.সা.গু ৬ 

(৩) যদি সংখ্যাগুলোর একটি দিয়ে আরেকটিকে নিঃশেষে ভাগ করা না যায়, কিন্তু অন্য কোনো সংখ্যা দিয়ে উভয় সংখ্যাকেই ভাগ করা যায় তাহলে তাদের ল.সা.গু দ্রুত বের করতে বড় সংখ্যাটিকে ২গুণ, ৩গুণ, ৪গুণ, ৫গুণ এভাবে বাড়িয়ে ছোট সংখ্যাটিকে দিয়ে ভাগ করে দেখতে হবে। অতঃপর যে সংখ্যাটিকে ভাগ করা যাবে সেই সংখ্যাটি হবে ঐ দুই সংখ্যার ল.সা.গু।

যেমন: ১২ ও ১৮ এর ল.সা.গু ৩৬। ১২ ও ১৮ এর ল.সা.গু বের করতে বলা হলে ১৮ × ২ = ৩৬ যাকে ১২ দিয়ে ভাগ করা যায়৷ সুতরাং ১২ ও ১৮ এর ল.সা.গু ৩৬ হবে। 

আবার, ৬ ও ৮ এর ল.সা.গু ২৪। ৬ ও ৮ এর ল.সা.গু বের করতে বলা হলে ৮ × ২ = ১৬ কিন্তু ১৬ কে ৬ দ্বারা ভাগ করা যায় না। তাই আবার, ৮ × ৩ = ২৪ যাকে ৬ দ্বারা ভাগ করা যায়। সুতরাং ৬ ও ৮ এর ল.সা.গু হবে ২৪। 

আরো কিছু উদাহরণ—
৪ ও ৬ এর ল.সা.গু = ১২ 
১০ ও ১৫ এর ল.সা.গু = ৩০
২০ ও ৩০ এর ল.সা.গু = ৬০ 
১০ ও ১২ এর ল.সা.গু = ৬০। 

(৪) একসাথে অনেকগুলো সংখ্যা থাকলে তার ল.সা.গু কেমন হবে? এটি বলার আগে আমরা ছোটবেলায় যেমনে শিখেছি তা আগে দেখবো— 

২, ৩, ৪, ৫, ১৫, ২০ এর ল.সা.গু কত? 

লসাগু করার নিয়ম
নির্ণেয় ল.সা.গু = ২×২×৩×৫×১×১×১×১×১×১=৬০

এবার আসি, এতবড় ল.সা.গু যেভাবে ৫/৭ সেকেন্ডে করতে পারবো। 
প্রথমে একটি কথা বলে নিই কারণ এটি যতদিন বেঁচে থাকবেন ততদিন এই কথা মনে রাখতে হবে৷ "কয়েকটি সংখ্যার একটি মিলিত বিন্দুর নামই হলো ল.সা.গু।" অর্থাৎ, একটি সংখ্যাকে কয়েকটি সংখ্যা দ্বারা ভাগ করা গেলে ঐ সংখ্যাটিই প্রদত্ত সংখ্যাগুলোর ল.সা.গু। 
এবার উপরের অংকটি কত সহজে হয় দেখুন— 

২, ৩, ৪, ৫, ১৫, ২০ এখানে সবচেয়ে বড় সংখ্যাটি ২০। বড় সংখ্যা ২০ দ্বারা যাকে যাকে ভাগ করা যাবে ২ ও ৪ দ্বারা তাকে ভাগ করা যাবে আর তাই ২ ও ৪ বাদ, আবার ১৫ দ্বারা যাকে ভাগ করা যাবে ৫ দ্বারাও তাকে ভাগ করা যাবে আর তাই ৫ ও বাদ। এখন বাকি ১৫ ও ২০ এর ল.সা.গু বের করলেই সবগুলোর ল.সা.গু বের হয়ে যাবে। এখন উপরের (৩) নং নিয়মে ২০ কে ৩ গুণ অর্থাৎ ২০ × ৩ = ৬০ এবং যাকে ১৫ দ্বারা ভাগ করা যায়। সুতরাং ২, ৩, ৪, ৫, ১৫, ২০ এর ল.সা.গু হবে ৬০। 

প্রাকটিস করুন: 
(i) ৫, ১০, ১৫ এর ল.সা.গু = ৩০ (৫ বাদ দিয়ে ১০ ও ১৫ এর ল.সা.গু এবং ১৫ কে ২ গুণ অর্থাৎ ১৫ × ২ = ৩০ এবং যাকে ১০ দ্বারা ভাগ করা যায়।)
(ii) ৫, ১০, ১৫, ২০ এর ল.সা.গু = ৬০ (৫ ও ১০ বাদ দিয়ে ১৫ এর ল.সা.গু এবং ২০ কে ৩ গুণ অর্থাৎ ২০ × ৩ = ৬০ এবং যাকে ১০ দ্বারা ভাগ করা যায়।)
(iii) ৩, ৬, ৯, ১২ ও ১৫ এর ল.সা.গু = ১৮০ (৩ ও ৬ বাদ দিয়ে ৯, ১২ ও ১৫ এর ল.সা.গু।)


গ.সা.গু (গরিষ্ঠ সাধারণ গুণনীয়ক) ল.সা.গু (লঘিষ্ঠ সাধারণ গুণিতক) এর মধ্যে সহজ একটি পার্থক্য :
দুইটি সংখ্যার একই গুণনীয়ক থাকলে ঐ গুণনীয়কটিকে বলা হয় সংখ্যা দুটির সাধারণ গুণনীয়ক। এবং এদের মধ্যে সবচেয়ে বড় সংখ্যাটিকে বলে গরিষ্ঠ সাধারণ গুণনীয়ক (গ.সা.গু)। যেমন: ৩, ৬, ৯ এর গ.সা.গু হল ৩।

একটি সংখ্যার অসংখ্য গুণিতক থাকে। যেমন: ৪  ও ৬ এর গুণিতকগুলো দেখলে দেখা যায় যে, উভয় সংখ্যার গুণিতকগুলোর মধ্যে কতগুলি সাধারণ সংখ্যা আছে। যেমন: ১২, ২৪ ও ৩৬ ইত্যাদি। এসব সংখ্যাগুলিকে ৪ ও ৬ এর সাধারণ গুণিতক বলা হয়। এই রকম সাধারণ গুণিতকের সংখ্যা অসংখ্য। এই সাধারণ গুণিতকগুলির মধ্যে ১২ হল সবচেয়ে ছােট। তাই ১২ কে বলা হয় ৪ ও ৬ এর ল.সা.গু।

ল.সা.গু এবং গ.সা.গু গুরুত্বপূর্ণ ৪ টি সূত্র 
১. দুটি সংখ্যার গুণফল = সংখ্যাদ্বয়ের (ল.সা.গু × গ.সা.গু)

২. দুটি সংখ্যার ল.সা.গু = সংখ্যাদ্বয়ের গুণফল সংখ্যাদ্বয়ের গ.সা.গু

৩. দুটি সংখ্যার গ.সা.গু = সংখ্যাদ্বয়ের গুণফল সংখ্যাদ্বয়ের ল.সা.গু

৪. অপর সংখ্যাটি = ল.সা.গু × গ.সা.গু একটি সংখ্যা

৫. ভগ্নাংশের ল.সা.গু = লবগুলোর ল.সা.গু হরগুলোর গ.সা.গু

৬. ভগ্নাংশের গ.সা.গু = লবগুলোর গ.সা.গু হরগুলোর ল.সা.গু

[ সহজে মনে রাখুন : সূত্র– ২, ৩ এ যেটি নির্ণয় করতে হয়, সেটি ব্যস্তানুপাতিক আর সূত্র— ৫, ৬ এ যেটি নির্ণয় করতে হয় তা সমানুপাতিক ]

ল.সা.গু এবং গ.সা.গু সম্পর্কিত উপরোক্ত লেখাগুলো পড়লেই আপনার প্রিপারেশন পুরোপুরি হয়ে যাবে আশা করা যায়। গাণিতিক অংশের প্রাকটিসের জন্যে আমাদের পরবর্তী পোস্টটি দেখুন। 

Azibul Hasan

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post