অনুপাত–সমানুপাত
প্রাথমিক আলোচনা
অনুপাত এবং সমানুপাত পাটিগণিতের একটি বৃহত্তর শাখা। ব্যবহারিক এবং বাস্তবিক জীবনে অনুপাত–সমানুপাত বহুল ব্যবহৃত হয়। বিসিএস, ব্যাংক জব, শিক্ষক নিবন্ধন কিংবা যেকোনো সরকারি চাকুরীর নিয়োগ পরীক্ষায় অনুপাত–সমানুপাত থেকে প্রশ্ন করা হয়। আর তাই বরাবরের মতো আপনার জব প্রিপারেশনকে আরো স্ট্রং করতে আজকে অনুপাত–সমানুপাত এর খুঁটিনাটি সবকিছু A to Z আলোচনা করছি।
ধরুন, আপনার মাসিক বেতন ২০ হাজার টাকা আর আপনার স্ত্রীর মাসিক বেতন ৪০ হাজার টাকা। তাহলে আপনাদের উভয়ের বেতনের পার্থক্য দুভাবে বুঝানো যাবে।
- আপনার বেতন আপনার স্ত্রীর তুলনায় অর্ধেক।
- আপনার স্ত্রী আপনার তুলনায় দ্বিগুণ বেতন পায়।
এই যে, একজনের সাপেক্ষে আরেকজনের তুলনা করলাম মূলত এটাই হলো অনুপাত। অর্থাৎ, অনুপাত হচ্ছে দুইটি একই জাতীয় রাশির একটি অপরটির তুলনায় কতগুণ বা কত অংশ তা ভগ্নাংশে প্রকাশ করে।
অনুপাত (Ratio) : অনুপাত হচ্ছে এক বা একাধিক রাশির তুলনা যাকে ( : ) চিহ্ন দিয়ে প্রকাশ করা হয় এবং যা একটি ভগ্নাংশকে নির্দেশ করে। যেমন— ৩:৭ = $\frac৩৭$
[ ' : ' চিহ্নটি হল অনুপাতের গাণিতিক চিহ্ন। একে পড়ার সময় বলতে হয় is to ; অর্থাৎ, ৩ is to ৭]
খেয়াল করুন:
- অনুপাত হচ্ছে একটি ভগ্নাংশ যার প্রথম রাশিকে লব এবং দ্বিতীয় রাশিকে হর বলে।
- অনুপাতের দুটি পদের মধ্যে গ.সা.গু ১ হতে হয় অর্থাৎ অনুপাতকে সবসময় সর্বনিম্ন আকারে প্রকাশ করা হয়। অর্থাৎ, ১০:৫ না লিখে একে ২:১ লিখতে হয়।
- অনুপাতে তুলনায় যে রাশি প্রথমে থাকে তার মান ও প্রথমেই বসাতে হয়৷ যেমন- X:Y = ৫:৪ হলে Y:X = ৪ : ৫ লেখা যায় কিন্তু X:Y = ৫:৪ হলে Y:X = ৪:৫ লেখা যাবে না।
- অনুপাত প্রকাশের জন্যে কমপক্ষে দুইটি রাশির প্রয়োজন হয়।
অনুপাতের প্রকারভেদ : অনুপাত বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে। তবে গুরুত্বপূর্ণ প্রকারভেদগুলো আলোচনা করা হল:
১। সরল অনুপাত : অনুপাতে দুইটি রাশি থাকলে, তাকে সরল অনুপাত বলে। সরল অনুপাতের প্রথম রাশিকে পূর্ব রাশি এবং দ্বিতীয় রাশিকে উত্তর রাশি বলা হয়। যেমন— ৩:৪ অনুপাতটিতে পূর্ব রাশি ৩ এবং উত্তর রাশি ৪।
২। লঘু অনুপাত (Ratio of less inequality) : যে সরল অনুপাতের পূর্ব রাশি ক্ষুদ্রতম এবং উত্তর রাশি বৃহত্তম তাকে লঘু অনুপাত বলে। যেমন— ৩:৫ এখানে, পূর্বরাশি ৩, উত্তর রাশি ৫ থেকে ছোট (৩ < ৫)।
৩। গুরু অনুপাত (Ratio of greater inequality) : যে সরল অনুপাতের পূর্ব রাশি বড় এবং উত্তর রাশি ছোট তাকে গুরু অনুপাত বলে।যেমন— ৫:৩ এখানে, পূর্বরাশি ৫ এবং যা উত্তর রাশি ৩ থেকে বড় (৫ > ৩)।
৪। একক অনুপাত : যে সরল অনুপাতের পূর্ব রাশি ও উত্তর রাশি পরস্পর সমান, তাকে একক অনুপাত বলে। যেমন— ৫:৫ বা ১:১ বা ৩:৩ ইত্যাদি।
৫। বিপরীত বা ব্যস্ত অনুপাত (Reciprocal Ratio) : সাধারণ একটি অনুপাতকে ঘুরিয়ে লিখলে যে নতুন অনুপাত তৈরী হয় তাকে পূর্বের অনুপাতটির ব্যস্ত অনুপাত বা বিপরীত অনুপাত বলে। সরল অনুপাতের উত্তর রাশিকে পূর্ব রাশি এবং পূর্ব রাশিকে উত্তর রাশি ধরে প্রাপ্ত অনুপাতকে সরল অনুপাতটির ব্যস্ত অনুপাত বলা হয়।যেমন— ৫:৬ এর ব্যস্ত অনুপাত ৬:৫।
নোট : ব্যস্ত-অনুপাত বা বিপরীত দুটি অনুপাতকে ভগ্নাংশের আকারে প্রকাশ করলে ওরা পরস্পরের অন্যোন্যক হবে।
৬। মিশ্র বা যৌগিক অনুপাত (Compound Ratio) : একের অধিক সরল অনুপাতের পূর্ব রাশিগুলোর গুণফলকে পূর্ব রাশি ও উত্তর রাশিগুলোর গুণফলকে উত্তর রাশি ধরে যে অনুপাত তৈরী করা হয়, তাকে মিশ্র বা যৌগিক অনুপাত বলে।
যেমন— ৩:৪, ৫:৬, ২:৫ তিনটি সরল অনুপাত।
তাদের পূর্ব রাশিগুলোর গুণফল = (৩×৫×২) = ৩০ এবং
উত্তর রাশিগুলোর গুণফল = (৪×৬×৫) = ১২০
∴ অনুপাত তিনটির নির্ণেয় মিশ্র অনুপাত = ৩০:১২০ বা ১:৪।
৭। দ্বিগুণানুপাত : কোন সরল অনুপাতের পূর্ব রাশির বর্গকে পূর্ব রাশি এবং উত্তর রাশির বর্গকে উত্তর রাশি ধরে যে অনুপাত পাওয়া যায় তাকে প্রদত্ত অনুপাতের দ্বিগুণানুপাত বলে। যেমন: ৩:৪ এর দ্বিগুণানুপাত হলো ৯:১৬।
৮। দ্বিভাজিত অনুপাত : কোন সরল অনুপাতের পূর্ব রাশির বর্গমূলকে পূর্ব রাশি এবং উত্তর রাশির বর্গমূলকে উত্তর রাশি ধরে যে অনুপাত পাওয়া যায় তাকে প্রদত্ত অনুপাতের দ্বিভাজিত অনুপাত বলে। যেমন: ৩৬:২৫ এর দ্বিভাজিত অনুপাত = $\sqrt{৩৬}$:$\sqrt{২৫}$ = ৬:৫
৯। বহুরাশিক অনুপাত : যখন দুইয়ের অধিক রাশি নিয়ে কোনো অনুপাত গঠন করা হয়, তখন তাকে বহুরাশিক অনুপাত বলে।
যেমন— ১টি ঘরের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং উচ্চতা যথাক্রমে ১৭, ১২ ও ১০ মিটার। তাহলে দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতার অনুপাত = ১৭:১২:১০। এটি একটি বহুরাশিক অনুপাত। তিনের অধিক রাশি নিয়েও এভাবে অনুপাত গঠন করা যায়।
১০। ধারাবাহিক অনুপাত : যখন দুইটি অনুপাত A:B এবং B:C আকারের হয় তখন তাদের সাধারণত A : B : C আকারে লেখা যায়, একে ধারাবাহিক অনুপাত বলা হয়।
টিপস : কোনো অনুপাতের পদ দুটিকে শূন্য ব্যতীত একই সংখ্যা দ্বারা গুণ বা ভাগ করলে অনুপাতের কোন পরিবর্তন হয় না। বিস্তারিত নিম্নে—
(ক) কোন অনুপাতের পূর্ব রাশি ও উত্তর রাশিকে ০ (শূন্য) বাদে একই সংখ্যা দিয়ে গুণ বা ভাগ করলে অনুপাতের মানের কোনো পরিবর্তন হয় না। যেমন— ৫:৩ = (৫×৬) : (৩×৬) = ৩০:১৮
(খ) ভগ্নাংশের মতই অনুপাতকে লঘিষ্ঠ আকারে প্রকাশ করা যায়। যেমন— ৩০:১৮ = ৫:৩ (পূর্ব রাশি ও উত্তর রাশিকে ৬ দ্বারা ভাগ করে।
জ্যামিতি অংশের কিছু অনুপাত :
- ত্রিভুজের ৩ কোণের সমষ্টি = ১৮০°
- চতুর্ভূজের ৪ কোণের সমষ্টি = ৩৬০°
- যেকোনো ত্রিভুজ বা চতুর্ভূজের পরিসীমা হলো তাদের বাহুগুলোর যোগফল।
সমানুপাত (Proportion) : দুইটি অনুপাত পরস্পর সমান হলে তাকে সমানুপাত (Proportion) বলে।
চারটি রাশির মধ্যে ১ম ও ২য় রাশির অনুপাত, ৩য় ও ৪র্থ রাশির অনুপাত পরস্পর সমান হলে, ঐ চারটি রাশি একটি সমানুপাত তৈরি করে। এবং সমানুপাতের প্রত্যেকটি রাশিকে সমানুপাতী বলে।
যেমন—
(ক) ৪:৬, ১০:১৫ এরা সমানুপাতী। কারণ—
৪:৬=$\frac৪৬$=$\frac২৩$
আবার,
১০:১৫=$\frac{১০}{১৫}$=$\frac২৩$
উভয় অনুপাতের মান $\frac২৩$ বলে এরা সমানুপাতী।
(খ) ২ টাকা, ৫ টাকা, ১২ গজ, ৩০ গজ –এই চারটি রাশি সমানুপাতী। কারণ—
২ টাকা $\div$ ৫ টাকা = $\frac২৫$
এবং, ১২ গজ $\div$ ৩০ গজ = $\frac{১২}{৩০}$=$\frac২৫$
এখানে, ১ম রাশি দুইটির অনুপাত, ৩য় ও ৪র্থ রাশি দুইটির অনুপাতের সমান হওয়ায়, ঐ রাশি চারটি সমানুপাতী।
সমানুপাত লেখার নিয়ম : সমানুপাতের প্রথম ও চতুর্থ রাশিকে প্রান্তীয় রাশি বলে। এবং সমানুপাতের দ্বিতীয় ও তৃতীয় রাশিকে মধ্য রাশি বলে। ৪:৬ = ১০:১৫ " = " সমান চিহ্নের পরিবর্তে " : : " এই চিহ্নের ব্যবহার করা হয়। যথা, ৪:৬ : : ১০:১৫
টিপস : চারটি রাশি সমানুপাতী হলে প্রান্তীয় (১ম ও ৪র্থটি) রাশি দুটির গুণফল, মধ্যরাশি দুইটির গুণফলের সমান হবে। অর্থাৎ, প্রথম ও শেষ রাশিটির গুণফল মধ্যের দুটি রাশির গুণফলের সমান হবে। যেমন:
$ a:b = b:c$
$\frac{a}{b}=\frac{b}{c}$
$ac=b^2$
$\therefore b^2=ac$
নোট : অনুপাতের পদ দুটি সমান হতে পারে আবার নাও হতে পারে। সমান হলে তাকে সাম্যানুপাত (Ratio of equality) আর সমান না হলে তাকে বৈষম্যানুপাত (Ratio of inequality) বলে।
আজিবুল হাসান