পরিসংখ্যান
(Statistics)
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রযাত্রার ক্ষেত্রে তথ্য ও উপাত্তের অবদানের ফলে পৃথিবী
পরিণত হয়েছে বিশ্বগ্রামে। তথ্য ও উপাত্তের দ্রুত সঞ্চালন এবং বিস্তারের ফলে সম্ভব
হয়েছে বিশ্বায়নের। আর তাই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখা ও বিশ্বায়নে অংশগ্রহণ ও
অবদান রাখতে হলে আমাদের তথ্য ও উপাত্ত সম্বন্ধে জ্ঞান অর্জন করা আবশ্যক। আর
গণিতের শাখা পরিসংখ্যান এই কাজটি করে থাকে। সেজন্যে গণিতে পরিসংখ্যানের গুরত্ব
অপরিসীম।
পরিসংখ্যান : পরিসংখ্যান বা Statistics হল ব্যবহারিক গণিতের একটি শাখা যা
সংখ্যাত্নক তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণে প্রয়োগ করা হয়।
উপাত্ত : আমরা জানি, গুণবাচক নয় এমন সংখ্যাসূচক তথ্যাবলি পরিসংখ্যানের
উপাত্ত অর্থাৎ, সংখ্যার মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যকে উপাত্ত বলে।
চলক : আমরা জানি, সংখ্যাসূচক তথ্যাসমূহ পরিসংখ্যানের উপাত্ত। উপাত্তে
ব্যবহৃত সংখ্যাসমূহ চলকের মান নির্দেশ করে। পরিসংখ্যানে ব্যবহৃত চলকগুলো ২ ধরনের
হয়ে থাকে। যথা—
১. বিচ্ছিন্ন চলক এবং
২. অবিচ্ছিন্ন চলক
নিম্নে এগুলো ব্যাখ্যা করা হল :
১. বিচ্ছিন্ন চলক : যে চলকের মান শুধুমাত্র পূর্ণসংখ্যা (যেমন: ১, ২, ৩,
৪, ৫, ৬, ৭ ইত্যাদি পূর্ণ সংখ্যা) হয়, তাকে বিচ্ছিন্ন চলক বলে। যেমন: জনসংখ্যার
উপাত্ত একটি বিচ্ছিন্ন চলক।
২. অবিচ্ছিন্ন চলক : যে সকল চলকের মান যে কোনো বাস্তব সংখ্যা হতে পারে,
তাকে অবিচ্ছিন্ন চলক বলে। যেমন: তাপমাত্রা, বয়স, উচ্চতা, ওজন ইত্যাদির উপাত্ত
হচ্ছে অবিচ্ছিন্ন চলক।
গণসংখ্যা : একটি উপাত্তের মোট উপাদান গুলো ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণিতে বিন্যাস্ত
করলে প্রতিটি শ্রেণির উপাদানকে গণসংখ্যা বলে।
কেন্দ্রীয় প্রবণতা : সহজ ভাষায় বলতে গেলে কেন্দ্রীয় প্রবণতা হচ্ছে
উপাত্তগুলোর কেন্দ্রের দিকে একত্রিত হওয়ার ইচ্ছে। আমরা যদি অনুসন্ধানাধীন
অবিন্যস্ত উপাত্তগুলোকে তাদের মানের ক্রমানুসারে সাজাই, তবে উপাত্তসমূহ মাঝামাঝি
কোনো মানের কাছাকাছি পুঞ্জিভূত বা একীভূত হয়। আবার, অবিন্যস্ত উপাত্তসমূহ
গণসংখ্যা নিবেশন সারণিতে উপস্থাপন করলে দেখা যায় মাঝামাঝি একটি শ্রেণিতে
গণসংখ্যার প্রাচুর্য দেখা যায়। অর্থাৎ, মাঝামাঝি একটি শ্রেণিতে গণসংখ্যা খুব বেশি
হয়। বস্তুত উপাত্তসমূহের কেন্দ্রীয় মানের দিকে পুঞ্জিভূত হওয়ার এই প্রবণতাকে
কেন্দ্রীয় প্রবণতা বলে।
কেন্দ্রীয় মান এমন একটি সংখ্যা যেই সংখ্যা উপাত্তগুলোর প্রতিনিধিত্ব করে বা তাদের
প্রকাশ করে। এবং এই সংখ্যা দিয়েই মূলত কেন্দ্রীয় প্রবণতা পরিমাপ করা হয়। সাধারণত
কেন্দ্রীয় প্রবণতার পরিমাপ হয় ৩ টি বিষয়ের ভিত্তিতে—
- গাণিতিক গড়
- মধ্যক
- প্রচুরক
নিম্নে এগুলো সংক্ষেপে বর্ণনা করা হল :
গাণিতিক গড় : উপাত্তসমূহের মানের সমষ্টি বা যোগফলকে যদি তার সংখ্যা দ্বারা
ভাগ করা হয়, তবে আমরা উপাত্ত সমূহের গড় মান পাবো।
উপাত্তগুলোর গড় = উপাত্তগুলোর গড় = উপাত্তগুলোর সমষ্টি⁄পদসংখ্যা
মধ্যক : প্রদত্ত উপাত্তগুলোর মানের ক্রমানুসারে (ঊর্ধ্বক্রম থেকে নিম্ন
ক্রমে বা নিম্ন ক্রম থেকে ঊর্ধ্ব ক্রমে) সাজালে, যে মান উপাত্তগুলোকে সমান
দুইভাগে ভাগ করে, তাকে উপাত্তগুলোর মধ্যক বলা হয়। আসলে মধ্যক হচ্ছে উপাত্তের
মধ্যপদের মান। উপাত্ত বিজোড় সংখ্যক হলে মধ্যক হবে মধ্যপদের মান। আর উপাত্ত জোড়
সংখ্যক হলে মধ্যক হবে মাঝখানের পদ দুইটির গড়৷ যেমন:
উপাত্ত ১ : ৭, ৩, ১০, ১৩, ৩, ৯, ১৫
এখন যদি আমরা উপাত্তগুলোকে মানের ক্রমানুসারে সাজাই তবে পাই = ৩, ৩, ৭, ৯, ১০,
১৩, ১৫
এখানে, পদসংখ্যা = ৭ (যা বিজোড়)
সুতরাং, উপাত্তগুলোর মধ্যক (৪র্থ পদ) = ৯
উপাত্ত ২ : ৭, ৩, ১০, ১৩, ৩, ৯, ১৫, ৭
এখন যদি আমরা উপাত্তগুলোকে মানের ক্রমানুসারে সাজাই তবে পাই = ৩, ৩, ৭, ৭, ৯, ১০,
১৩, ১৫
এখানে, পদসংখ্যা = ৮ (যা জোড়)
সুতরাং, উপাত্তগুলোর মধ্যক = (৭ + ৯) ÷ ২ = ৮
নোট:
১. যদি উপাত্তের সংখ্যা n হয় এবং n যদি বিজোড় সংখ্যা হয় তবে মধ্যক = $\frac
{n+1}{2}$
২. উপাত্তের সংখ্যা n যদি জোড় সংখ্যা হয় তবে মধ্যক হবে $\frac {n}{2}$ তম ও
$\left( \frac{n}{2}+1 \right)$ তম পদ দুইটির সাংখ্যিক মানের গড়।
প্রচুরক : কোনো উপাত্তের মধ্যে যে সংখ্যাটি সবচেয়ে বেশি বার থাকে, তাকে
প্রচুরক বলে। প্রচুরক নির্ণয় করতে উপাত্তের মানগুলোকে কোনো নির্দিষ্ট ক্রমানুসারে
না সাজালেও চলে। যেমন:
উপাত্ত = ৭, ৫, ১০, ১৩, ৫, ৯, ১৫, ৭, ৫ উপাত্তের মধ্যে ৫ মান বা সংখ্যাটি
সর্বাধিক তিনবার আছে।
সুতরাং, এখানে প্রচুরক = ৫
উপরের সবগুলো নিয়ম অর্থাৎ গড়, মধ্যক এবং প্রচুরক নিয়ে এবার একটি সমস্যার সমাধান
করব এবং এর পর আশা করা যায় গড়, মধ্যক ও প্রচুরক নিয়ে আর কোনো কনফিউশান থাকবে না।
উদা-১: নিম্নে প্রদত্ত সংখ্যাগুলোর গড়, মধ্যক এবং প্রচুরক নির্ণয় করতে হবে।
৩০, ১২, ২২, ১৭, ১৭, ২৫, ২০, ২৪, ১৯, ২, ২৩, ৩২, ২৬, ২৯, ৩৫, ২১, ১১, ২৮ এবং
১৯।
সমাধান: উপাত্তগুলোকে মানের ক্রমাণুসারে সাজালে পাই,
২, ১১, ১২, ১৭, ১৯, ১৯, ২০, ২১, ২২, ২৩, ২৪, ২৫, ২৬, ২৭, ২৮, ২৯, ৩০, ৩২,
৩৫
এখানে, পদসংখ্যা = ১৯
উপাত্তগুলোর মধ্যক (১০ম পদ) = ২৩
উপাত্তের মধ্যে ১৯ মান বা সংখ্যাটি সর্বোচ্চ ২ বার আছে। সুতরাং প্রচুরক =
১৯
গড় = উপাত্তগুলোর সমষ্টি⁄পদসংখ্যা = $\frac {৪২২}{১৯}$ = ২২.২১
পরিসংখ্যান থেকে বিসিএসে মূলত কোনো প্রশ্ন আসে না। তবে আমাদের দেশে প্রচলিত
অন্যান্য চাকুরীর নিয়োগ পরীক্ষাগুলোতে পরিসংখ্যান থেকে প্রশ্ন আসে। তাই আপনার
টার্গেট বিসিএস হলে পরিসংখ্যান একবারে স্ক্রিপ করে যেতে পারেন। আবার, অন্যান্য
চাকুরীর জন্যে গণিতে আপনার প্রস্তুতিকে শতভাগ করতে চাইলে পরিসংখ্যানে হালকা নজর
দিতে হবে।