কুসংস্কার কি? প্রচলিত কুসংস্কারের তালিকা

কুসংস্কার কি?

কু+সংস্কার=কুসংস্কার। ‘কু’ অর্থ খারাপ আর ‘সংস্কার’ অর্থ রীতি অথাৎ কুসংস্কার অর্থ খারাপ রীতি। আমাদের সমাজে অতি প্রাচিন কাল থেকে মুখে মুখে প্রচলিত ক্ষতিকর বা মিথ্যা বা খারাপ রীতি গুলোই হলো কুসংস্কার যা আজও অতি বিশ্বাসের সাথে মানা হয়।

কুসংস্কার

কেন কুসংস্কার থেকে মুক্ত হবো?

কুসংস্কার মানেই মিথ্যা রীতি। মিথ্যা কোন রীতিনীতি কখনোই উপকারে আসে না। মিথ্যা লালন করাও ক্ষতিকর। কুসংস্কারের কোন বৈজ্ঞানিক সত্যতা নেই। এগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা। এগুলোর সত্যতা না জেনেই আমরা এগুলো বিশ্বাস করি। এই ধরণের ভুল বিশ্বাস সমাজের তথা পরিবার তথা ব্যক্তি জীবনের জন্য ক্ষতিকর। তাই আমাদের এই ধরণের খারাপ রীতি বা কু-সংস্কার থেকে মুক্ত হতে হবে এবং অন্যকেও মুক্ত করতে হবে।

কখনো কখনো কেন কুসংস্কারকে সত্য মনে হয়?

মাঝে মাঝে কুসংস্কার গুলোকে সত্য মনে হতে পারে। যেমন একটি কুসংস্কার আছে এমন যে ’ রাতের বেলা হাতে-হাতে চুন দিলে ঝগড়া হয়’। কেউ যদি রাতে কাউকে চুন দেয় এবং কোন কারণে যদি সত্যিই ঝগড়া হয় তবে ধরে নেওয়া হয় যে রাতে চুন দেয়ার কারণেই ঝগড়া হয়েছে। কিন্তু রাস্তাঘাটে অনেক সময় অপরিচিত অনেকের সাথেই আমাদের ঝগড়া হতে পারে কিন্তু তার সাথে কখনো রাতে চুন বিনিময় হয় নি। আবার চুন বিনিময় হয়েছে এমন কারো সাথে ঝগড়া নাও হতে পারে। দুই জনের মনের মিল বা ঐক্য না হলেই ঝগড়া হয় এতে রাতে চুন দেয়া নেয়ার কোন সম্পর্ক নাই। মূল কথা আমরা নিজেরাই আমাদের জীবনের সাথে কুসংস্কারকে জড়িয়ে ফেলি। একজন মানুষের জীবনে ভালো-খারাপ অনেক কিছুই ঘটতে পারে; আমরা আমাদের জীবনের ভালো-খারাপ গুলোর সাথে কুসংস্কারকে জড়িয়ে ফেলি এবং কুসংস্কারকে বিশ্বাস করি। আমাদের এই ধরণের কুসংস্কার বিশ্বাস থেকে মুক্ত হতে হবে।

আমাদের সমাজে প্রচলিত কিছু কুসংস্কার


  1. পরীক্ষা দিতে যাওয়ার পূর্বে ডিম/আলু/কলা খাওয়া যাবে না। তাহলে পরীক্ষায় ডিম/আলু/কলা পাবে (ফেল করবে)।
  2. নতুন স্ত্রীকে দুলা ভাই কোলে করে ঘরে আনতে হবে।
  3. দোকানের প্রথম কাস্টমার ফেরত দিতে নাই।
  4. নতুন স্ত্রীকে নরম স্থানে বসতে দিলে মেজাজ নরম থাকবে।
  5. বিড়াল মারলে আড়াই কেজি লবণ দিতে হবে।
  6. ঔষধ খাওয়ার সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বললে’ রোগ বেড়ে যাবে।
  7. জোড়া কলা খেলে জোড়া সন্তান জন্ম নিবে।
  8. রাতে নখ, চুল ইত্যাদি কাটতে নাই।
  9. চোখে কোন গোটা হলে ছোট ছেলে বাচ্চাদের পুরুষাঙ্গ লাগাইলে সুস্থ হয়ে যাবে।
  10. ভাই-বোন মিলে মুরগী জবেহ করা যাবে না।
  11. ঘরের ময়লা রাতে বাইরে ফেলা যাবে না।
  12. ঘর থেকে কোন উদ্দেশ্যে বের হওয়ার পর পেছন থেকে ডাক দিলে যাত্রা অশুভ হবে।
  13. ব্যাঙ ডাকলে বৃষ্টি হবে।
  14. কুরআন মাজীদ হাত থেকে পড়ে গেলে আড়াই কেজি চাল দিতে হবে।
  15. ছোট বাচ্চাদের দাঁত পড়লে ইঁদুরের গর্তে ফেলতে হয়, দাঁত ফেলার সময় বলতে হয়, “ইঁদুর ভাই, ইঁদুর ভাই, তোর চিকন দাঁতটা দে, আমার মোটা দাঁতটা নে।”
  16. মুরগীর মাথা খেলে মা-বাবার মৃত্যু দেখবে না।
  17. বলা হয়, কেউ ঘর থেকে বের হলে পিছন দিকে ফিরে তাকানো নিষেধ। তাতে নাকি যাত্রা ভঙ্গ হয় বা অশুভ হয়।
  18. ঘরের ভিতরে প্রবেশ কৃত রোদে অর্ধেক শরীর রেখে বসা যাবে না। (অর্থাৎ শরীরের কিছু অংশ রৌদ্রে আর কিছু অংশ বাহিরে) তাহলে জ্বর হবে।
  19. রাতে বাঁশ কাটা যাবে না।
  20. রাতে গাছের পাতা ছিঁড়া যাবে না।
  21. ঘর থেকে বের হয়ে বিধবা নারী বা খোলা চুলে নারী চোখে পড়লে যাত্রা অশুভ হবে।
  22. ঘরের চৌকাঠে বসা যাবে না।
  23. মহিলাদের ঋতুশ্রাব অবস্থায় সবুজ কাপড় পরিধান করতে হবে এবং তার হাতের কিছু খাওয়া যাবে না।
  24. বিধবা নারীকে সাদা কাপড় পরিধান করতে হবে।
  25. ভাঙ্গা আয়না দিয়ে চেহারা দেখা যাবে না। তাতে চেহরা নষ্ট হয়ে যাবে।
  26. ডান হাতের তালু চুলকালে টাকা আসবে। আর বাম হাতের তালু চুলকালে বিপদ আসবে।
  27. নতুন কাপড় পরিধান করার পূর্বে আগুনে ছেক দিয়ে পরতে হবে।
  28. নতুন কাপড় পরিধান করার পর পিছনে তাকাইতে নাই।
  29. বৃষ্টির সময় রোদ দেখা দিলে বলা হয় শিয়ালের বিয়ে।
  30. আশ্বিন মাসে নারী বিধবা হলে আর কোন দিন বিবাহ হবে না।
  31. খাওয়ার পর যদি কেউ গা মোচড় দেয়, তবে বলা হয় খাবার কুকুরের পেটে চলে যায়।
  32. রাতের বেলা কাউকে সুই-সূতা দিতে নাই।
  33. গেঞ্জি ও গামছা ছিঁড়ে গেলে সেলাই করতে নাই।
  34. খালি ঘরে সন্ধ্যার সময় বাতি দিতে হয়, না হলে ঘরে বিপদ আসে।
  35. গোসলের পর শরীরে তেল মাখার পূর্বে কোন কিছু খেতে নেই।
  36. মহিলার পেটে বাচ্চা থাকলে কিছু কাটা-কাটি বা জবেহ করা যাবে না।
  37. পাতিলের মধ্যে খানা থাকা অবস্থায় তা খেলে পেট বড় হয়ে যাবে।
  38. কোন ব্যক্তি বাড়ি হতে বাহির হলে যদি তার সামনে খালি কলস পড়ে যায় বা কেউ খালি কলস নিয়ে তার সামনে দিয়ে অতিক্রম করে তখন সে যাত্রা বন্ধ করে দেয়, বলে আমার যাত্রা আজ শুভ হবে না।
  39. কু-নজর না পড়ার জন্য শিশুদের কপালে কালো তিলক দেয়া।
  40. রুমাল, ছাতা, হাত ঘড়ি ইত্যাদি কাউকে ধার স্বরূপ দেয়া যাবে না।
  41. হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলে ভাগ্যে দুর্ভোগ আছে।
  42. হাত থেকে প্লেট/চিরুনি পড়ে গেলে মেহমান আসবে।
  43. নতুন স্ত্রী কোন ভাল কাজ করলে শুভ লক্ষণ।
  44. পাখি ডাকলে বলা হয় ইষ্টি কুটুম (আত্মীয়-আসবে।
  45. কাচা মরিচ হাতে-হাতে দিতে নাই।
  46. তিন রাস্তার মোড়ে বসতে নাই।
  47. খানার সময় যদি কারো ঢেকুর আসে বা মাথার তালুতে উঠে যায়, তখন একজন আরেকজনকে বলে, দোস্ত তোকে যেন কেউ স্মরণ করছে বা বলা হয় তোকে গালি দিচ্ছে।
  48. কাক ডাকলে বিপদ আসবে।
  49. শুঁকুন ডাকলে মানুষ মারা যাবে।
  50. পেঁচা ডাকলে বিপদ আসবে।
  51. তিনজন একই সাথে চলা যাবে না।
  52. দুজনে ঘরে বসে কোথাও কথা বলতে লাগলে হঠাৎ টিকটিকির আওয়াজ শুনা যায়, তখন একজন অন্যজনকে বলে উঠে “দোস্ত তোর কথা সত্য, কারণ দেখছস না, টিকটিকি ঠিক ঠিক বলেছে।”
  53. একজন অন্য জনের মাথায় টোকা খেলে দ্বিতীয় বার টোকা দিতে হবে, একবার টোকা খাওয়া যাবে না। নতুবা মাথায় ব্যথা হবে/শিং উঠবে।
  54. প্লেটে ভাত একবার নিয়ে ভাত খাওয়া শেষ করতে নেই।
  55. নতুন জামাই বাজার না করা পর্যন্ত একই খানা খাওয়াতে হবে।
  56. নতুন স্ত্রীকে স্বামীর বাড়িতে প্রথম পর্যায়ে আড়াই দিন অবস্থান করতে হবে।
  57. পাতিলের মধ্যে খানা খেলে মেয়ে সন্তান জন্ম নিবে।
  58. পোড়া খাবারের খেলে বা খাবারের সাথে পিঁপড়া খেলে সাঁতার শিখবে।
  59. হাতে-হাতে লবণ দিলে শত্রুতা সৃষ্টি হয়।
  60. দাঁত উঠতে বিলম্ব হলে সাত ঘরের চাউল উঠিয়ে তা পাক করে কাককে খাওয়াতে হবে এবং নিজেকেও খেতে হবে।
  61. সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই ঘর ঝাড় দেয়ার পূর্বে কাউকে কোন কিছু দেয়া যাবে না।
  62. রাতের বেলা কোন কিছু লেন-দেন করা যাবে না।
  63. সকাল বেলা দোকান খুলে যাত্রা (নগদ বিক্রি- না করে কাউকে বাকী দেয়া যাবে না। তাহলে সারা দিন বাকীই যাবে।
  64. দাঁড়ি-পাল্লা, মাপার জিনিস পায়ে লাগলে বা হাত থেকে নিচে পড়ে গেলে সালাম করতে হবে, না হলে লক্ষ্মী চলে যাবে।
  65. শুকরের নাম মুখে নিলে ৪০দিন মুখ নাপাক থাকে।
  66. রাতের বেলা কাউকে চুন ধার দিলে চুন না বলে ধই বলতে হয়।
  67. বাড়ি থেকে বের হলে রাস্তায় যদি হোঁচট খেয়ে পড়ে যায় তাহলে যাত্রা অশুভ হবে।
  68. কোন ফসলের জমিতে বা ফল গাছে যাতে নযর না লাগে সে জন্য মাটির পাতিল সাদা-কালো রং করে ঝুলিয়ে রাখতে হবে।
  69. বিনা ওযুতে বড় পীর (!!- আবদুল কাদের জিলানীর নাম নিলে আড়াইটা পশম পড়ে যাবে।)
  70. নখ চুল কেটে মাটিতে দাফন করতে হবে, কেননা বলা হয় কিয়ামতের দিন এগুলো খুঁজে বের করতে হবে।
  71. মহিলাগণ হাতে বালা বা চুড়ি না পড়লে স্বামীর অমঙ্গল হবে।
  72. স্ত্রীগণ তাদের নাকে নাক ফুল না রাখলে স্বামীর বেঁচে না থাকার প্রমাণ।
  73. দা, কাচি বা ছুরি ডিঙ্গিয়ে গেলে হাত-পা কেটে যাবে।
  74. গলায় কাটা বিঁধলে বিড়ালের পা ধরে মাপ চাইতে হবে।
  75. বেচা কেনার সময় জোড় সংখ্যা রাখা যাবে না। যেমন, এক লক্ষ টাকা হলে তদস্থলে এক লক্ষ এক টাকা দিতে হবে। যেমন, দেন মোহর (কাবীন- এর সময় করে থাকে, একলক্ষ এক টাকা ধার্য করা হয়।
  76. বন্ধু মহলে কয়েকজন বসে গল্প-গুজব করছে, তখন তাদের মধ্যে অনুপস্থিত কাউকে নিয়ে কথা চলছে, এমতাবস্থায় সে উপস্থিত হলে, কেউ কেউ বলে উঠে “দোস্ত তোর হায়াত আছে।” কারণ একটু আগেই তোর কথা বলছিলাম।
  77. হঠাৎ বাম চোখ কাপলে দুখঃ আসে।
  78. মেয়েদের দাঁতে ফাঁক থাকলে স্বামীর অমঙ্গল হওয়া।
  79. স্বামীর নাম বলা জাবে না এতে অমঙল হয়।
  80. বাছুর এর গলায় জুতার টুকরা ঝুলালে কারো কু-দৃস্টি থেকে বাঁচা যায়।
  81. এক গালে চড় খেলে বিয়ে হয় না।
  82. নাক চুলকালে অসুখ আসা।
  83. গর্ভাবস্তায় বাঁদর দেখলে সন্তান দুষ্ট হয়।
  84. পেঁয়াজ কাটার সময় বটির মাথায় একটি পেঁয়াজ গেঁথে দিলে চোখ ঝালা করে না।
  85. রাতে বাঁশি বাজালে সাপ আসে।
  86. ঘরে আঙ্গুল ফুটালে আয় কমে যায়।
  87. পায়ে তিল থাকলে বিদেশ ভ্রমণ করে, মেয়েদের পিঠে তিল থাকলে স্বামীর হাতে মার খেতে হয়।
আপনার জানা আর কোনো কুসংস্কার থাকলে কমেন্ট করে জানান যেন ১০০ টি কুসংস্কার পূর্ণ করতে পারি...

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post