ভূমিকা : অজানা কে জানা এবং দুর্জয় কে জয় করার আকাঙ্ক্ষা মানুষের স্বভাবজাত। চাঁদের বুকে পদচিহ্ন এঁকে দিয়ে মানুষ অসম্ভবকে সম্ভব করেছে। এর সাথে সাথে সৃষ্টি হয়েছে পৃথিবীর ইতিহাসে নতুন অধ্যায়।
চাঁদে অভিযান : মানুষ মহাশূন্যের রহস্য উদ্ঘাটনের সূচনালগ্নেই চাঁদে যান চালাতে শুরু করে। মহাকাশ গবেষণার সর্বোৎকৃষ্ট কেন্দ্র চাঁদ তাই ১৯৫৯, ১৯৬১, ১৯৬২ সালে প্রবল আকাঙ্ক্ষা ও উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে চলতে থাকে একের পর এক অভিযান। অবশেষে ১৯৬৯ সালের ২০শে জুলাই চন্দ্রাভিযান সফল হয়।
মহাশূন্যে প্রথম অভিযাত্রী : ১৯৫৭ সালে রাশিয়া মহাশূন্যে প্রায় আধা টন ওজনের যে স্পুটনিকটি পাঠাতে সক্ষম হয়, তা ছিল তাদের প্রেরিত দ্বিতীয় স্পুটনিক। এতে লাইকা নামক একটি কুকুরকে সওয়ারি করা হয়েছিল। জীবদেহের ওপর মহাশূন্যের কী প্রতিক্রিয়া হয়, তা জানাই ছিল এর উদ্দেশ্য। তারপর রাশিয়ার দুঃসাহসী তরুণ ইউরি গ্যাগারিন সমগ্র বিশ্বের মানবকুলকে বিস্মিত করে মহাশূন্যে পাড়ি জমান। ইউরি গ্যাগারিনই ছিলেন মহাশূন্য পরিভ্রমণকারী প্রথম মানুষ। পরবর্তীকালে আমেরিকা ও রাশিয়ার আরও কয়েকজন বৈজ্ঞানিক মহাশূন্য পরিভ্রমণ করেন এবং বেশ কয়েক দিন ধরে মহাশূন্যেই অবস্থান করেন।
চন্দ্রের চতুর্দিক ভ্রমণ : চাঁদের ভূমিতে পদার্পণের প্রস্তুতিস্বরূপ তিনজন মার্কিন মহাশূন্যচারী অ্যাপোলো-৮ নামক মহাশূন্যযানে চড়ে চাঁদের চতুর্দিক পরিভ্রমণ করেছিলেন। এ তিনজন মহাশূন্যচারী প্রথম চাঁদের অতি কাছাকাছি অর্থাৎ মাত্র ৬০-৭০ মাইল দূর থেকে চন্দ্রপৃষ্ঠ দেখে এসেছিলেন এবং প্রমাণস্বরূপ বহু ছবিও তুলে এনেছিলেন।
পৃথিবীর মানুষের চাঁদে গমন : মর্তের মানুষের চাঁদে গমন একটি বিস্ময়কর ইতিহাস, একটি সাফল্যজনক পদক্ষেপ। আমেরিকান মহাশূন্যযান অ্যাপোলো-১১ নামক মহাশূন্যযানে চড়ে তিনজন দুঃসাহসিক নভোচারী নিল আর্মস্ট্রং, এডুইন অলড্রিন এবং মাইকেল কলিন্স ১৯৬৯ সালের ১৬ই জুলাই চাঁদে গমন করেন এবং সফল অভিযান চালান। ২০শে জুলাই তারিখে বাংলাদেশ সময় সকাল ১২-১৭ মিনিটে নিল আর্মস্ট্রং চাঁদের মাটিতে প্রথম পা রাখেন। এরপর তাঁরা নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরে এসেছেন।
গবেষণায় সাফল্য ও অগ্রগতি : চাঁদের মাটি ও পাথরকে নানাভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং গবেষণা করে মানুষ রচনা করতে চাইছে আরও সাফল্যজনক পদক্ষেপ। প্রথমবারের পরও মানুষ চাঁদে গেছে। চাঁদে অবতরণের ফলেই মানুষ শুক্র ও মঙ্গল গ্রহে যাত্রার সম্ভাব্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে গবেষণা চালাতে পারছে।
উপসংহার : চাঁদ এখন আর মানুষের কাছে খুব দূরের বস্তু নয়। তাই তো চাঁদের বুকে বসবাস করার চিন্তা নিয়েই বিশ্বের সেরা মহাকাশ বিজ্ঞানীরা কাজ করে যাচ্ছেন। আশা করা যায়, অদূর ভবিষ্যতে মানুষের সে স্বপ্ন ও পূরণ হবে।