ভূমিকা : শিক্ষা সর্বজনীন ও মৌলিক অধিকার। জাতির উন্নয়নের পূর্বশর্ত হিসেবে শিক্ষাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তাই শিক্ষাই জাতির উন্নতির চাবিকাঠি। একটি জাতিকে বা একটা দেশকে উন্নত করতে হলে প্রথমেই চলে আসে সে দেশের বা সে জাতির শিক্ষা। শিক্ষা ছাড়া ব্যক্তি তথা জাতির অন্তনিহিত শক্তির কোনো বিকাশ সাধন হতে পারে না।
বয়স্ক শিক্ষা |
শিক্ষার বিবরণ : শিক্ষা বলতে অনেকেই কোনোকিছু সম্বন্ধে জানা বা বিষয়টিকে অধিগত করা বুঝি। কিন্তু শিক্ষার অর্থ এখানেই সীমাবদ্ধ নয়। শিক্ষা বলতে মানুষের সমগ্র দেহ ও মনের সুপ্ত কোষগুলোর বিকাশ সাধন করা বোঝায়। শিক্ষা একটি নিরবচ্ছিন্ন ধারা যার মাধ্যমে মানুষ আধাশক্তি বিকাশের ক্ষেতে এগিয়ে যায়। শিক্ষা মানুষের জীবন পথের পাথেয়।
আমাদের দেশের শিক্ষার হার : আমাদের দেশের শিক্ষিতের হারের দিকে তাকালে অবাক হতে হয়। আধুনিক বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে শিক্ষারহার ১ শতভাগ। আমাদের দেশে মাত্র ৩০/৩১ ভাগ। তাই তো আমাদের সমাজ ব্যবস্থা, ধ্যান-ধারণা বদলানো দরকার। তবে গোটা সমাজের জীবন ব্যবস্থা বদলাতে হলে আমাদের আসতে হবে শিক্ষার উন্নয়নের দিকে। আমাদের দেশের লোককে শিক্ষিত করে না তোলা পর্যন্ত কোনো উন্নয়ন আশা করা যায় না।
আমাদের দেশের জনগোষ্ঠী : আমাদের দেশে ৬৮ হাজার গ্রাম নিয়ে একটি বিশাল জনগোষ্ঠী গড়ে উঠেছে। মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮৫ ভাগ মানুষ গ্রামে বসবাস করে। তাদের কায়িক পরিশ্রমে জীবিকা অর্জন করতে হয়। ছোটবেলা থেকেই তারা স্কুলে যাবার পরিবর্তে কাজে আত্মনিয়োগ করে এবং সেখানেই তারা সময়কে ব্যয় করতে অভ্যস্ত হয়েছে। তাই পল্লির এ বৃহৎ জনগোষ্ঠী গ্রামে অজ্ঞানহীন হয়েই রয়েছে। ফলে তাদের মনে বাসা বেঁধে আছে নানা কুসংস্কার। তারা নিজেদের ভাগ্যকে নির্ভর করে চলতে অভ্যস্ত। সবসময় অদৃষ্টের উপর নির্ভরশীল। তারা শিশুদের স্কুলে দেওয়ার চেয়ে মাঠের কাজে লাগাতে অধিক আগ্রহী। ওই পুরাতন ধ্যান-ধারণা বদলানোর জন্য প্রয়োজন হয়ে দেখা দিয়েছে বয়স্ক শিক্ষার।
বয়স্ক জনগোষ্ঠীর জন্য : শিক্ষার একটি এলাকা ধরে কাজ করতে হবে। এজন্য প্রথমে প্রয়োজন উৎসাহী ও কর্মহীন কর্মীর। এই কর্মীর প্রধান দায়িত্ব হলো নিজ ব্যক্তিত্বের প্রভাব বিস্তার করে গ্রামে বা এলাকার দশ/বিশ জন করে শিক্ষা গ্রহণের জন্য উৎসাহ প্রদান করা। গ্রামের মানুষের বিরাট একটা অংশ বেকার থাকে। মাঠে কাজ থাকে খুব বেশি হলে ছয় মাস। বাকি সময় কর্মহীনভাবে গল্পগুজবে তারা কাটিয়ে দেয়। সাধারণভাবে দেখা যায় গ্রামের লোকেরা সন্ধ্যার সময় কোনো এক নির্দিষ্ট জায়গায় একত্র হয়ে নানান কথাবার্তায় তাদের ব্যস্ত রেখে সময় কাটায়। বয়স্ক শিক্ষার জন্য কর্মীদের এ রকম একটা জায়গা ঠিক করে নিতে হবে। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর বয়স্ক লোকদের এবং যুবকদের একত্রিত করে উন্নত সমাজ গঠন করা যেতে পারে। কেননা শিশুদের শিক্ষার সাথে বয়স্কদেরকে একত্রে শিক্ষা দেওয়া যাবে না। সে বিষয়ে চিন্তাভাবনা করে আমাদের বয়স্ক শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।
শিক্ষার্থীর প্রতি ব্যবহার : বয়স্ক শিক্ষার্থীদের কোনোক্রমেই বুঝতে দেয়া উচিত হবে না যে, সে কোনো শিক্ষিত ব্যক্তি অপেক্ষা হীন। তাদের মনে ধারণা জন্মাতে হবে যে, সুযোগের অভাবে তাঁরা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারেনি। কিন্তু চেষ্টা করলে তারা অন্য দশজনের মতো হতে পারে এবং লেখাপড়া শিখবার সমস্ত ক্ষমতাই তাদের মধ্যে আছে। বয়স্ক ব্যক্তির সঙ্গে সবসময় বন্ধুর মতো ব্যবহার করতে হবে। শিক্ষক তাঁর বন্ধু, এমন ধারণা তার মনে যদি আনে তবেই তার পক্ষে শিক্ষা গ্রহণ করা সহজ হবে। কাজেই শিক্ষককে বয়স্ক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এমন ব্যবহারই করতে হবে। শিক্ষার্থী যেন মনে করে শিক্ষক তাঁর একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং পরিচিত।
বয়স্ক শিক্ষা কেন্দ্রের পরিবেশ : বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্রের ছাত্র ও শিক্ষকদের মাঝে কোনো বৈষম্য থাকা উচিত নয়। শিক্ষার্থী ও শিক্ষক পরস্পরের মধ্যে উঁচু-নিচু কোনো বিভেদ না থাকাই ভালো। শিক্ষার্থীর সাথে সবসময় সম্মানজনক ব্যবহার করতে হবে। সাধারণত বয়স্ক ব্যক্তিরাই খুব স্পর্শকাতর হয়ে থাকে। কোনো প্রশ্নের ভুল উত্তর দিলে অথবা কোনো বিষয় বুঝতে দেরি হলে “আপনার দারা কিছু হবে না”, এ রকম কথা বা মন্তব্য কখনো করা ঠিক হবে না। বরং ওই ভুলের জন্য তাকে অপ্রতিভ না করে শুধু উত্তরটি পুনরুক্তি করা উচিত।
উপসংহার : আমাদের দেশের সরকার বয়স্ক শিক্ষা কর্মসূচি নিয়েছেন। সরকার যে করে হোক আমাদের নিরক্ষরতা দূরীকরণের জন্য সকল প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করে ৮৫ হাজার গ্রামের জনগণকে শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে বদ্ধপরিকর। এ বিষয়ে অবশ্যই আমাদের সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে এবং সকল জনগোষ্ঠীকেই আন্তরিকতার সঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। এ মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়েই আমাদের বয়স্ক শিক্ষা কার্যক্রম সফল করার জন্য সকল শ্রেণির নাগরিককে এগিয়ে আসতে হবে।