বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন রকম খনিজ পদার্থ পাওয়া যায়। সিলেটে গ্যাস,
উত্তরবঙ্গের মধ্যপাড়ায় কঠিন শিলা (গ্রানাইট), বড়পুকুরিয়ায় কয়লা। কিন্তু বরিশালে
কেন গ্রানাইট নাই? খুলনাতে কয়লা বা গ্যাস নাই কেন? বাংলাদেশে কি খনিজ তেল বা
পেট্রোলিয়াম পাওয়া যায়? এই প্রশ্নগুলির উত্তর খুজতে হলে আমাদের যেতে হবে
বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ড কিভাবে তৈরি হয়েছে, সেই ইতিহাসে, যার ওপর থিংক বাংলা একটা
চমৎকার ভিডিও করেছে (https://youtu.be/H4HVixHaeNU)
আজ থেকে ৩০ কোটি বছর আগে পৃথিবীর সব ভূভাগ মিলে একত্রে তৈরি করেছিল বিশালতম
মহাদেশ প্যানজিয়া। ভূগর্ভস্থ তাপ আর পৃথিবীর ঘুর্ণনের কারনে পৃথিবীর উপরের স্তরে
(ম্যান্টলে) নড়াচড়া হয়, ফলে এই অতিমহাদেশে ফাটল ধরে। ফলে ১৮ কোটি বছর আগে
প্যানজিয়া ভেঙ্গে যায়। বর্তমান দক্ষিণ গোলার্ধের সবকটা মহাদেশ, যেমন দক্ষিণ
আমেরিকা, আফ্রিকা, আর দক্ষিণ মেরু, এবং বর্তমান মাদাগাস্কার, ভারত, অস্ট্রেলিয়া
সব একসাথে থাকে, ভূতত্ত্ববিদেরা নাম দিয়েছেন গন্ডোয়ানাল্যান্ড। তারপর
গন্ডোয়ানাল্যান্ডের বিভিন্ন স্থানেও ফাটল ধরে। পশ্চিম গন্ডোয়ানাল্যান্ড, যার ভেতর
দক্ষিণ আমেরিকা আর আফ্রিকা ছিল, পূর্ব গন্ডোয়ানাল্যান্ড থেকে আলাদা হয়ে যায়।
পূর্ব গন্ডোয়ানাল্যান্ডে ছিল ভারত, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ মেরু আর দক্ষিণ আমেরিকা।
গন্ডোয়ানাল্যান্ড প্রথম ভাঙা শুরু করার প্রায় সাড়ে চার কোটি বছর পরে, আজ থেকে
প্রায় সাড়ে ১৩ কোটি বছর আগে পূর্ব গন্ডোয়ানাল্যান্ড ভাঙা শুরু হয় এবং এক সময়
ভারত, অস্ট্রেলিয়া আর দক্ষিণ মেরু বিচ্ছিন্ন হয়ে আলাদা ভূখণ্ডে পরিণত হয়। ফাটল যে
কারনে ধরেছিল অর্থাৎ তাপ ও ঘুর্ণনে ম্যান্টলের স্থানান্তর, সেই একই কারণে এই
ভূখণ্ডগুলি সরতে থাকে। এই সরণকে বলা হয় কন্টিনেন্টাল ড্রিফট, বাংলায় মহাদেশীয়
সঞ্চরণ বা মহাদেশীয় প্রবাহ।
Source |
এই ভূখণ্ডগুলি এক বা একাধিক টেকটোনিক প্লেইট বা ভূ-পাতের সমষ্ঠি। একটা পাতে একটা
মহাদেশ হতে পারে, আবার একাধিক পাতেও হতে পারে। বাংলাদেশ ইন্ডিয়ান প্লেইট নামের
একটা পাতের অংশ।
এই সঞ্চরণের ফলে ইন্ডিয়ান প্লেইট উত্তর দিকে সরতে থাকে, এবং আজ থেকে প্রায় সাড়ে
পাঁচ কোটি বছর আগে ইন্ডিয়ান প্লেইটের উপরের বা উত্তরের অংশ ইউরেশিয়ান প্লেইটের
সাথে ধাক্কা খায় বর্তমান তিব্বতের কাছে। এই ধাক্কার ফলে জন্ম নেয় হিমালয়।
Source |
আর এই ইন্ডিয়ান প্লেইটের একদম শেষ বা নিচের অংশ ছিল বর্তমান সিলেট আর রংপুর। তার
পরে আর কোন মাটি ছিল না, ছিল শুধু সমুদ্রের পানি। সেই প্রাচীন পাথরে তৈরি রংপুর
আর সিলেটের উত্তরে ভারতের মেঘালয় ছিল শুধু, আর বর্তমান সারা সিলেটের অধিকাংশ আর
গাইবান্ধা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল সমুদ্র। সিলেট অঞ্চলে এই সমুদ্র ছিল জাফলং আর
খাসিয়া পাহাড় পর্যন্ত।
কীভাবে জানলাম আমরা বর্তমান সিলেট ইন্ডিয়া সীমান্তের পরেই খেলতো সমুদ্রের ঢেউ?
সেটার জন্য একটু ভূতাত্বিক ডিটেকটিভগিরি করা লাগবে।
চুনাপাথর
আমরা অনেকেই জানি, সিলেটের ছাতকে একটা সিমেন্ট ফ্যাক্টরি আছে। বাংলাদশের সেই
সময়ের দূর্গম প্রান্তে কেন সিমেন্ট ফ্যাক্টরি করা হয়েছিল? কারন সেখানে একসময়
চুনাপাথর পাওয়া যেত। ভোলাগঞ্জ থেকে রোপওয়ে দিয়ে কেবল কারে করে চুনাপাথর আসতো
সেখানে। ভোলাগঞ্জের “সাদা পাথর” এলাকায় যারা ঘুরেছেন, তারা কি জানেন, এই সাদা
পাথরের সাদা রঙ এসেছে ক্যালসিয়াম থেকে, যা থেকে পানে বা দেয়ালে দেওয়া চুন তৈরি
হয়?
Source |
শামুক, ঝিনুক, কোরাল, এই সব জলজ প্রাণী মারা যাওয়ার পর খোলসগুলি পানিতে মেশে।
তারপর সেই পানি বাষ্পীভূত হলে খোলসের ক্যালসিয়াম জমে তৈরি হয় চুনাপাথর। তাই
যেখানে প্রচুর চুনাপাথর পাওয়া যায়, ধরে নেয়া যায় সেটা এক সময় স্বল্প-গভীরতার
পানির নিচে ছিল, অর্থাৎ উপকূল ছিল। সিলেটেও তাই হয়েছে। নদীর শামুক/ঝিনুক থেকে কি
এই চুনাপাথর আসতে পারতো? না, সেটা সম্ভব না, কারন ঐ পরিমাণ পাথর তৈরি করতে হাজার
হাজার কোটি শামুক/ঝিনুক লাগতো, ঐ নদীতে যাদের স্থান-সংকুলান হতো না।
ঐ সমুদ্রিক জলজ শামুক, ঝিনুকরাই দিয়ে গিয়েছে এই চুনাপাথরের স্তর।
একই কারনে নওগাঁ আর জয়পুরহাটেও পাওয়া গিয়েছে আহরণযোগ্য পরিমাণের চুনাপাথর, কারন ঐ
এলাকাগুলিও এক সময় সিলেটের মতই ছিল বাংলাদেশের দক্ষিণ স্থলসীমার শেষ, সমুদ্রের
শুরু।
তারপর কী হলো সেই সমুদ্রের?
আমরা আগেই জেনেছি, দুই পাতের ধাক্কায় জেগে উঠেছিল কয়েক কিলোমিটার উঁচু হিমালয়
পর্বতমালা। সমুদ্রের বাষ্পীভূত পানি থেকে তৈরি হওয়া মেঘ সেটার উচ্চতা অতিক্রম না
করতে পেরে ঝরে পড়তে থাকলো বৃষ্টি হয়ে হিমালয়ের দক্ষিণ দেয়ালগুলিতে, তারপর
খরস্রোতা নদী হয়ে সেই পানি ধাবিত হলো আরো দক্ষিনে। সাথে করে নিয়ে এলো কোটি কোটি
টন পলি। আর সেই পলি জমেই তৈরি হলো আমাদের বাংলাদেশের অধিকাংশ এলাকা।
কঠিন শিলা / গ্রানাইট
সিলেট ও রংপুর-দিনাজপুরের কিছু অংশ তৈরি হয়েছিল ১৫ কোটি বছরেরও আগে, যখন ইন্ডিয়ান
প্লেইট গন্ডোয়ানাল্যান্ডের অংশ ছিল। সেই এলাকার মাটি তাই অতি প্রাচীন, যেখানে
বাংলাদেশ তৈরি হওয়ার আগেও প্রচুর অগ্ন্যুৎপাত হয়েছে, এবং ঐ পাথরগুলি তখন তৈরি
হয়েছে। বাংলাদেশের অন্যান্য অংশের বয়স মাত্র পাচ-সাড়ে পাঁচ কোটি বছর, এবং সেই
সময়ে জমা হওয়া ২০-২৫ কিলোমিটার পলি প্রাচীন সমুদ্রের নিচে আগ্নেয়গিরি থাকলেও
সেটাকে চাপা দিয়ে রাখতো। তবে এই এলাকায় কোন আগ্নেয়গিরি নেই, ফলে প্রাচীন অংশ বাদে
অন্য কোথাও কোন আগ্নেয় শিলা তৈরি হয় নাই বা পাওয়া যায় না।
গ্যাস, পেট্রোলিয়াম, কয়লা—তিনটাকেই ‘ফসিল ফিউয়েল’ বা জীবাশ্ম জ্বালানী বলা হয়,
কারন এগুলি তৈরি হয় মৃত জীব বা গাছ থেকে। দেখা যাক জীবাশ্ম থেকে গ্যাস,
পেট্রোলিয়াম আর কয়লা তৈরির প্রক্রিয়াটা কীরকম।
গ্যাস
সমুদ্রের পানিতে থাকে প্রচুর প্ল্যাঙ্কটন ও অন্যান্য জলজ ক্ষুদ্র প্রাণী। কোটি
কোটি বছর ধরে তারা মারা গিয়েছে, তাদের দেহের কার্বন ও অন্যান্য জৈব যৌগ পড়েছে সেই
প্রাচীন সমুদ্রের তলদেশে। তারপর ভেসে আসা পলির আস্তরণে তারা চাপা পড়েছে। সময়ের
সাথে সেই মাটি এক সময় পরিণত হয়েছে পাথরে, তার সেই পাথরের নিচে অক্সিজেন-বিহীন
পরিবেশে তৈরি হয়েছে মোমের মত একটা পদার্থ যার নামে কেরোজেন (গ্রিক শব্দ ‘কেরোস’
বা মোম থেকে)। যদি অন্তত ২-৩ কিলোমিটার মাটির নিচে থাকে সেই কেরোজেন তাহলে
পৃথিবীর তাপে সেটা থেকে তেল বা গ্যাস তৈরি হতে পারে। তাপমাত্রা যদি ৯০ থেকে ১৬০
ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে, তাহলে গ্যাস আর পেট্রোলিয়াম, দুটাই তৈরি হবে। আর
যদি ১৬০ ডিগ্রির উপরে তাপমাত্রা থাকে, তাহলে শুধু গ্যাস তৈরি হবে। যত বেশী নিচে
চাপা পড়বে, তত বেশি তাপমাত্রা। বাংলাদেশে ১৫-২০-২৫ কিলোমিটার বা তার চাইতেও বেশী
পলির নিচে চাপা পড়ে কোটি কোটি বছর ধরে প্রকৃতির রান্নাঘরের তাপে (পৃথিবীর
আভ্যন্তরীণ তাপ) ও উপরের চাপে তৈরি হয়েছে জীবাশ্ম জ্বালানী। যেহেতু এগুলি গভীরে
চাপা পড়ে ছিল, তাই তাপ বেশি ছিল, ফলে তৈরি হয়েছে প্রাকৃতিক গ্যাস ও কিছু
পেট্রোলিয়াম।
গ্যাস থাকার শর্ত দুটা-অন্তত পাঁচ কোটি বছর আগে প্রাচীন সমুদ্রের নিচে থাকা লাগবে
সেই স্থান। কেন? কারন সমুদ্র না থাকলে জলজ প্রাণীর মৃতদেহ থাকবে না, আর পাঁচ কোটি
বছরের কম সময়ে সেগুলি পচে গ্যাস হওয়ার সম্ভাবনা কম। যেহেতু সিলেট ছিল সেই প্রাচীন
অঞ্চলের সমুদ্রের শুরু এবং সেই অঞ্চল চাপা পড়া শুরু হয়েছে বাকি এলাকাগুলির আগে,
তাই সেখানে গ্যাস তৈরি হওয়ার সময় পেয়েছে সবচাইতে বেশি। বাংলাদেশের প্রথম
গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার হয় সিলেটের হরিপুরে, ১৯৫৫ সালে।
Source |
উপরের ছকে বাংলাদেশের গ্যাসক্ষেত্রগুলির নাম ও কখন আবিষ্কার হয়েছে সেটা দেখানো
হয়েছে। ট্রেন্ডটা পরিষ্কার, সময়ের সাথে দক্ষিনে আগাচ্ছে গ্যাসক্ষেত্রগুলির
আবিষ্কার। এটা কিন্তু কাকতালীয় না; প্রাচীনতম এলাকাগুলি (উত্তর) আগে পরীক্ষা করা
হয়েছে, তারপর অপেক্ষাকৃত নতুন এলাকা (দক্ষিন)।
বাংলাদেশের উপকূলে সমুদ্রের নিচে গ্যাস? ঘটনা একই। সমুদ্রের তলদেশেও জলজ প্রাণীর
দেহ থেকে গ্যাস তৈরি হয়েছে, তবে সেটা তৈরির পদ্ধতি একটু আলাদা। কিছুদিন আগেই খবরে
এসেছে, বাংলাদেশের উপকূলে কয়েক ট্রিলিয়ন মিথেন হাইড্রেট (গ্যাসের স্ফটিক) পাওয়া
গিয়েছে (www.tbsnews.net/bangla/বাংলাদেশ/news-details-79252)। পানির সংস্পর্শে ছিল বলে সেই গ্যাস হাইড্রেট হয়ে গিয়েছে, এবং সেটা থেকে
বাণিজ্যিকভাবে গ্যাস বের করার কোন সাশ্রয়ী পদ্ধতি এখনো নেই।
কয়লা
কয়লা গ্যাসের আগে তো বটেই, এমনকি ডাইনোসরদেরও আগের, অর্থাৎ ৩০ কোটি বছরেরও আগের
প্রাচীন গাছের দেহাবশেষ। পানি আর মাটির নিচে চাপা পড়ে সেগুলি তাপে/চাপে পরিণত হয়
কয়লায়। যখন মহাদেশীয় পাত ভাঙ্গে, সেগুলির কিছু নিচে চাপা পড়ে, আর কিছু উপরের দিকে
থাকে; ঠিক যেমন হাত থেকে পড়ে ভাঙ্গা একটা প্লেইটের কিছু অংশ অন্য অংশের উপরে পড়ে।
কয়লা আছে এমন স্তর যদি এভাবে উপরে উঠে আসে, তখন সেটা বাণিজ্যিকভাবে আহরণ করা সহজ
হয়। অর্থাত কয়লা থাকার শর্ত দুটো—এলাকাটা প্রাচীন হওয়া লাগবে, যেখানে অন্তত ৩০
কোটি বছর আগে গাছপালা ছিল, এবং উপরে উঠে আসা লাগবে ভূস্তরের ওঠানামায়, ঠিক কঠিন
শিলার মতই। দিনাজপুরের বড়োপুকুরিয়াতে তাই হয়েছে, তাই সেখানে বাংলাদেশের সবচাইতে
বড় কয়লাখনি। তার মানে কী বাংলাদেশের অন্য কোথাও কয়লা নেই? যেখানে ৩০ কোটি বছর আগে
গাছপালা থাকা সম্ভব ছিল, সেখানে কয়লা আছে, তবে সেগুলি বাণিজ্যিকভাবে আহরণযোগ্য
না। যেখানে প্রাচীন গাছের দেহাবশেষ যত বেশী বছর, যত বেশি নিচে চাপা পড়ে ছিল,
সেখানে কয়লার মান তত উন্নত। অর্থাৎ নিচের ছবির লিগনাইট সবচাইতে খারাপ কয়লা আর
অ্যান্থ্রাসাইট সবচাইতে ভাল কয়লা। বাংলাদেশের বড়পুকুরিয়ার পাওয়া যায় মধ্যম মানের
বিটুমিনাস কয়লা।
Source |
পেট্রোলিয়াম
গ্যাসের অংশে আমরা দেখেছি, পেট্রোলিয়াম তৈরি হওয়ার পদ্ধতি গ্যাসের মতই। এখানেও
শর্ত হচ্ছে, সমুদ্রিক প্রাণীর মৃতদেহ চাপা পড়বে মাটির নিচে, তারপর সেটা তাপে ও
চাপে রূপান্তরিত হয়ে তৈরি হবে পেট্রোলিয়াম যদি তাপমাত্রা ১৬০ ডিগ্রির কম থাকে।
(এটা থেকে আমরা একটা সহজ অনুসিদ্ধান্তে পৌছাতে পারি—সৌদি আরব ও অন্যান্য
তেল-সমৃদ্ধ মরুভূমির দেশগুলি এক সময় সমুদ্রের নিচে ছিল যেটা পরে শুকিয়ে গিয়েছে।)।
সিলেটে প্রথমে গ্যাস পাওয়া গিয়েছে, এবং একই কারনে সেখানে পেট্রোলিয়ামও পাওয়া
গিয়েছে।
Source |
বর্তমানে পৃথিবীর মোট তেলের মজুদের ৭০% তৈরি হয়েছে মেসোজোয়িক যুগ বা ৬.৬ কোটি বছর
থেকে পচিশ কোটি বছর আগে, ২০% তৈরি হয়েছে ছয় কোটি বছর আগে, আর মাত্র ১০% তৈরি
হয়েছে ২৫ থেকে ৫০ কোটি বছর আগে। বাংলাদেশের বর্তমান ভূখণ্ডের নিচে যে সমুদ্র ছিল,
তা অবশ্যই এই বয়সের হিসাবে পড়ে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, সেই তেল খুঁজতেই ২৫-৩০
কিলোমিটার পলিমাটি ড্রিল করা লাগবে। এত গভীর মাটিতে ড্রিল করা সম্ভব না এখনো
(পৃথিবীর গভীরতম তেলকূপ Chayvo রাশিয়াতে, ৪০,০০০ ফুট বা ১২ কিলোমিটার গভীরে) তাই
সেটা না করে সমুদ্রে তেল খোঁজা হচ্ছে, এবং পাওয়াও যাচ্ছে, যদিও বড় তেলক্ষেত্র
এখনো আবিষ্কার হয় নাই। তবে সেগুলিও সমুদ্রের তলদেশে আরো কয়েক কিলোমিটার মাটির
নিচে হবে। যেসব ভূখণ্ড প্রাচীন কিন্তু বেশি মাটির নিচে চাপা পড়ে নাই, সেখানে
পেট্রোলিয়াম পাওয়া সহজতর, যেমন পশ্চিম টেক্সাস বা মধ্যপ্রাচ্য।
তাহলে আর কী পাওয়া যেতে পারে বাংলাদেশে? লোহা, সোনা বা অন্যান্য ভারী ধাতু
এমনিতেই মাটির গভীরে থাকে। তার ওপরে পড়েছে আরো ২০-২৫ কিলোমিটার পলি, তাই সেগুলি
থাকলেও খুঁজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব। নেত্রকোনা, মধ্যপাড়া বাংলাদেশে আছে কিছু সাদা
মাটি বা কেওলিন যা আমদানি করা কেওলিনের সাথে মিশিয়ে সিরামিকের প্লেইট, বাটি এগুলি
তৈরি করা হয়। আর আছে বালু, যদিও সেটাকে আমরা খনিজ হিসাবে ভাবি না।
সাড়ে চারশো কোটি বছর বয়সের পৃথিবীর এক চিমটি এলাকা নিয়ে মাত্র সাড়ে পাঁচ কোটি
বছরেরও কম বয়সী বাংলাদেশের জন্য এই বা খারাপ কী।
পুনশ্চঃ
মাঝে মাঝে খবরে আসে, চট্টগ্রামের সৈকতের বালুতে ইউরেনিয়াম ও অন্য তেজস্ক্রিয়
পদার্থ পাওয়া গিয়েছে। খবরটা ঠিক, কিন্তু তার মানে এই না যে সেখানে মাটির নিচে
ইউরেনিয়ামের আকরিক আছে। প্রতি বছর নদীগুলির বয়ে আনা ১০০ কোটি টন পলির সাথে হিমালয়
ও ভারত থেকে আসছে প্রায় কয়েক টন ইউরেনিয়াম এবং মিশে যাচ্ছে বঙ্গোপসাগরে। সৈকতে
আমরা সেটারই ছিটেফোঁটা দেখতে পাচ্ছি। (এই পেপারটা https://www.sciencedirect.com/science/article/pii/S2211379717323847#b0045
বলছে বছরে প্রায় ১০০০ টন কিন্তু যে পেপার থেকে উদ্ধৃতি দিয়েছে সেটা খুঁজে পাচ্ছি
না)
© 2022 Javed Ikbal