নদী শাসন
নদীমাতৃক দেশ বাংলাদেশ। ঐতিহাসিক কাল থেকে সমাজসংস্কৃতি-অর্থনীতি-রাজনীতি ও বাংলাদেশের ভৌগোলিক গঠনে নদীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এদেশের মাটি ও মানুষের সাথে নদী ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত। এদেশের ওপর দিয়ে ছোট-বড় প্রায় ৩১০টি নদ-নদীর ভাঙ্গনের ফলে মানুষের জীবনে দুঃখের সীমা থাকে না। বাংলাদেশের বেশ কিছু নদী অস্বাভাবিক রকম প্রশস্ত কিন্তু সে তুলনায় নদীর গভীরতা কম। এ কারণে পদ্মা, মেঘনা, যমুনার মতো বিশাল নদীতেও নাব্য সংকট দেখা যায়। এ সব নদীর কোথাও কোথাও প্রশস্ততা ১০-১২ কিলোমিটার হলেও গভীরতা ৮-৯ ফুট। শুষ্ক মৌসুমে নাব্য সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করে। নৌপথে পণ্য পরিবহন খরচ কম হওয়া সত্ত্বেও নাব্য না থাকায় নৌ পরিবহনের সুযোগ ক্রমশ সংকুচিত হচ্ছে। এ সমস্যার সমাধানে বড় নদীগুলোর তীর ভরাট করে নগরায়ণ ও শিল্পায়নের উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি নদীগুলোর গভীরতা বৃদ্ধির কথা ভাবা হচ্ছে। নদীর প্রশস্ততা কমিয়ে নদীর গভীরতা বাড়ালে নাব্য ধরে রাখা যেমন সম্ভব হবে, তেমনি শিল্পায়ন ও নগরায়নের জন্য পয়োজনীয় জমি পাওয়াও সহজলভ্য হবে। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় আমাদের সুজলা-সুফলা কৃষিনির্ভর এই দেশের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ শত শত নদ-নদী যা কেবল আমাদের অবহেলায়, উদাসীনতায়, অপরিচর্যায় ও প্রয়োজনীয় নদী শাসনের অভাবে তা ক্রমেই শুকিয়ে মৃত খাল ও মরুভূমিতে পরিণত হচ্ছে। বর্তমানে যথাযথ নদী শাসনের অভাবে নদীপথের পানি প্রবাহ যেমন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, ঠিক তেমনি নদী ভরাট হয়ে বর্ষাকালে ভয়াবহ নদী ভাঙনের তীব্রতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। ফলে নদীর দু’ধারের আবাদি জমি ও বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। এতে নদীর পাড়ের শত সহস্র জনগণ সহায়-সম্বল হারিয়ে ভূমিহীন হচ্ছে এবং আবাদি জমির পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে এদেশে ঘনঘন বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, সাইক্লোন হতে দেখা যায়। পরিকল্পনা অনাযায়ী নদী শাসন সম্ভব হলে বন্যা ও নদী ভাঙনের হাত থেকে যেমন রক্ষা পাওয়া সম্ভব তেমনি সম্ভব নদীর পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধিও। নদীর চরিত্র বা বৈশিষ্ট্য কিন্তু আবার এক রকম নয়। তাই সেতু নির্মাণের পূর্বে বৈশিষ্ট্য বুঝে নদী শাসন করতে হবে। কোনো নদী বেশি পলি ধারণ করে, আবার কোনোটাই কম। কোনোটা আবার বেশি খরস্রোত, কোনোটা আবার সারা বছরই সমান তালে চলে। এক কথায় বলতে গেলে দেশের বড় নদীগুলোর একটা সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো পলি ধারণ করা। তাই নদীর বৈশিষ্ট্যকে সমুন্নত রেখে তাকে ব্যবহার উপযোগী করতে হবে। এ জন্য নদী শাসন খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।