মুসলমানদের সবচেয়ে বড় দুটো ধর্মীয় উৎসবের একটি হলো ঈদুল আযহা। যা কুরবানির ঈদ নামেও পরিচিত। ঈদুল আযহার দিনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলো আল্লাহর নামে কুরবানি করা। অন্যদিকে আর্থিক ও শারীরিকভাবে সামর্থ্যবান মুসলমান নর-নারীর জন্য হজ অন্যতম বরকতপূর্ণ অবধারিত কর্তব্য।
ঈদুল আযহা
ঈদ অর্থ উৎসব বা আনন্দ, আর আযহা অর্থ কুরবানি বা উৎসর্গ করা। মহানবী (স) ঈদুল আযহার দিন ঈদের নামাজ পরবর্তী খুতবায় বলেছেন, এ দিনের প্রথম কাজ হলো সালাত আদায় করা, এরপর নহর (কুরবানি) করা। আরবি জিলহজ মাসের ১০ তারিখ ঈদুল আযহা পালন করা হয়।
ঈদুল আযহার বিশেষ আমলগুলো হলো-
১. গোসল, সুগন্ধি ও উত্তম পোশাক পরিধান করা;
২. তাকবিরে তাশরিক বলা;
৩. ঈদের নামাজ;
৪. কুরবানি;
৫. কুরবানির গোশত খাওয়া ও খাওয়ানো।
তাকবিরে তাশরিক
জিলহজ মাসের ৯ তারিখ ফজর হতে ১৩ তারিখ আসর পর্যন্ত (মোট ২৩ ওয়াক্ত) সকলের উপর ফরজ নামাজের পরেই একবার তাকবিরে তাশরিক পাঠ করা ওয়াজিব। পুরুষরা উচ্চস্বরে ও স্ত্রীলোকগণ নীরবে পাঠ করবে। তাকবিরে তাশরিক হলো- ‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ।’
কুরবানি
কুরবানি শব্দের অর্থ নৈকট্য, ত্যাগ, উৎসর্গ। অর্থাৎ আল্লাহ তা’লার নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যেই কুরবানি দেওয়া হয়। এটা আল্লাহ তা’লার সন্তুষ্টি অর্জনের অন্য মাধ্যম। ইসলামী বিধান মতে, যিনি অন্তত কুরবানির তিন দিন যাকাতের নিসাব পরিমাণ টাকা বা সম্পদের মালিক, তার ওপর ঈদুল আযহায় পশু কুরবানি করা ওয়াজিব।
‘কুরবানি’ একটি আর্থিক ইবাদত। আল্লাহ তা’লা বলেন,
‘আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্য কুরবানির বিধান রেখেছি।’
(সূরা হজ; আয়াত : ৩৪)।
সেই মুসলমানের ওপর কুরবানি ওয়াজিব হবে যিনি ১০ জিলহজ সুবেহ সাদিকের পূর্বে মুকীম হবেন, স্বাধীন এবং নিসার পরিমাণ সম্পদের অধিকারী হবেন। রাসূল (স) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানি করে না সে যেন আমাদের ইদগাহের ধারে না আসে।’ (মুসনাদে আহমাদ, ইবন মাজাহ)। যারা কুরবানি পরিত্যাগ করে তাদের প্রতি এ হাদীস একটি সতর্কবাণী।
কুরবানির আহকাম
উট, মহিষ, গরু, দুম্বা, ছাগল ও ভেড়া এ ৬ শ্রেণির পশু দিয়ে কুরবানি করা যায়। কুরবানির ক্ষেত্রে নিয়তের বিশুদ্ধতা অপরিহার্য। জিলহজ মাসের ১০ তারিখ তথা ঈদের নামাজের পর থেকে ১২ জিলহজ পর্যন্ত কুরবানি করা যায়। তবে প্রথম দিন কুরবানি করাই উত্তম।
গোশত বণ্টন
পবিত্র কুরআন (সূরা হজ; আয়াত : ৩৬) ৩ শ্রেণিকে কুরবানির গোশত্ খাওয়া বা খাওয়ানোর কথা ঈঙ্গিত পাওয়া যায়-
- কুরবানি দাতা;
- আত্মীয়-প্রতিবেশী এবং
- ফকির-মিসকিন।
হজ
হজ ইসলামের পঞ্চম রোকন বা স্তম্ভ। নামাজ, রোযা, যাকাত যেমন ফরজ ইবাদত তেমনি আর্থিক ও শারীরিকভাবে সামর্থবান মুসলমান নর-নারীর জন্য হজ অন্যতম বরকতপূর্ণ অবধারিত কর্তব্য। হজ আরবি শব্দ। এর অর্থ নিয়ত করা, সংকল্প করা। ইসলামী শরীআতের পরিভাষা অনুসারে – নির্দিষ্ট দিনে, নির্দিষ্ট তারিখে মক্কার পরিত্র কা’বা শরীফ প্রদক্ষিণ, আরাফাত ময়দানে অবস্থান, সাফা ও মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের মধ্যবর্তী স্থানে সা’ঈ করা, মিনায় অবস্থান প্রভৃতি কাজ প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (স) যেভাবে নির্ধারণ করে দিয়েছেন সেভাবে সম্পন্ন করার নাম হজ। আর্থনৈতিকভাবে সামর্থ্যবান মুসলমানদের ওপর জীবনে একবার হজ আদায় করা ফরজ।
হজের গুরুত্ব
আল্লাহ তা’লা বলেছেন,
‘মক্কা শরীফ পর্যন্ত পৌঁছাতে সক্ষম প্রত্যেক ব্যক্তির ওপর আল্লাহর জন্য হজ আদায় করা ফরজ।’(সূরা আল ইমরান; আয়াত : ৯৭)
রাসূল (স) বলেছেন,
‘যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ পালন করে এবং তাতে কোনো অশ্লীল কথা বলে না বা কোনো অশ্লীল কাজ করে না, সে হজ থেকে দিনের মতো এমন নিষ্পাপ হয়ে প্রত্যাবর্তন করে, যেদিন তার মা তাকে জন্ম দান করে।’(বুখারী ও মুসলিম)
তিনি আরও বলেন,
‘ফরজ হজ আদায়ে তোমার বিলম্ব করো না। কারণ তোমাদের কারো জানা নেই তোমাদের পরবর্তী জীবনে কী ঘটবে।’(মুসনাদে আহমাদ ও সুনামে কুবরা বায়হাকী)
এভাবে হাদিস শরীফে হজ ফরজ হওয়া মাত্র আদায় করার তাগিদ ও হুকুম দেওয়া হয়েছে।
হজের আহকাম
হজের ফরজ তিনটি-
- ইহরাম বাঁধা,
- আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা,
- তাওয়াফে জিয়ারত সম্পন্ন করা।
হজের ওয়াজিবসমূহ –
- মুজদালিফায় অবস্থান,
- সাতবার সা’ঈ করা,
- মিনার জামারাসমূহে কঙ্কর নিক্ষেপ,
- কুরবানি করা,
- মাথার চুল মুণ্ডানো,
- বিদায়কালীন তাওয়াফ সম্পন্ন।