যেকোনো চাকরিতেই নিয়োগের আগে প্রার্থীকে মুখোমুখি হতে হয় ইন্টারভিউ বোর্ডের। আপনি যে পদের জন্য আবেদন করেছেন, তার জন্য আপনি কতটা উপযুক্ত, তা যাচাই করে নেওয়ার জন্যই এ প্রক্রিয়ার আয়োজন করা হয়ে থাকে। বর্তমান সময়ে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে বাংলার পাশাপাশি ইংরেজিরও কর্মক্ষেত্রে ব্যাপক চাহিদা থাকায় ইন্টারভিউর মাধ্যমে একই সঙ্গে আপনার ইংরেজি ভাষায় স্পিকিং (Speaking) ও লিসেনিং (Listening)-এ দখল কতটুকু, তা-ও লক্ষ করা হয়।
নিয়মিত চর্চায় ঘাটতির কারণে অনেকেই ইংরেজিতে পড়তে ও লিখতে কোনো সমস্যার সম্মুখীন না হলেও ইংরেজিতে কনভারসেশন (Conversation) বা আলাপ চালাতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েন। ইন্টারভিউ যেহেতু একটু ফরমাল প্রক্রিয়া, তাই শব্দচয়ন ও বাক্যগঠনের ক্ষেত্রে আপনাকে সতর্কতার পরিচয় দিতে হবে। কারণ, সামনে যিনি বসে আছেন, তিনি আপনার ভবিষ্যৎ কর্মক্ষেত্রের বস, আপনার কোনো পরিচিত ব্যক্তি বা বন্ধু নন।
আজকের আয়োজনে আমরা জেনে নেব, ইন্টারভিউতে ইংরেজিতে করা আটটি সাধারণ প্রশ্ন এবং সেসবের উত্তর সম্পর্কে। একই সঙ্গে আমরা আলোচনা করব, উত্তর দেওয়ার সময় কী কী বিষয় পরিহার করতে হবে, তা নিয়েও।
১. Tell me about yourself. (আপনার নিজের সম্পর্কে কিছু বলুন)
ইন্টারভিউর শুরুতেই আপনি এই প্রশ্নটির সম্মুখীন হতে পারেন। প্রশ্নকর্তা চাইলে আরেকটু কায়দা করে, ‘Run me through your CV.’ (আমাকে আপনার সিভি সম্পর্কে ধারণা দিন।) এ প্রশ্নটি করার মূল উদ্দেশ্য আপনার আত্মবিশ্বাস (Confidence), উৎসাহ (Enthusiasm উচ্চারণ– এন-থু-সি-আ-জম) এবং নিজের সম্পর্কে প্যাশন (Passion)-এর মাত্রা দেখে নেওয়া। এই প্রশ্নটির উত্তর আপনি কীভাবে দিচ্ছেন, তা আপনার কমিউনিকেশন স্কিল সম্পর্কেও ধারণা দেবে। ‘I love watching movies.’, ‘I love partying!’, ‘I have so many friends.’ এ ধরনের জবাব পরিহার করে বরং কথা বলুন আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা, পরিবার এবং পূর্ববর্তী কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে অনেকটা এভাবে :
‘I grew up in France and I studied Accounting. I also worked for an accounting farm for 8 months. I really enjoy solving numbers and maybe this is the reason why I like this job. In my spare (স্পেয়ার) time I like to read.’ অর্থাৎ, আমি ফ্রান্সে বড় হয়েছি এবং সেখানেই অ্যাকাউন্টিং নিয়ে পড়াশোনা করেছি। আমার একটি অ্যাকাউন্টিং ফার্মে আট মাস কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। সংখ্যা নিয়ে কাজ করতে আমার ভালো লাগে এবং এই একই কারণে এই চাকরি করতেও আমি আগ্রহী। অবসর সময়ে আমি বই পড়তে পছন্দ করি।
কথার মাঝে Fumbling (ফাম্বলিং) বা তোতলানো এড়াতে এবং পরবর্তী বাক্য কী হবে, তা গুছিয়ে নিয়ে গ্যাপ ফিলারস ব্যবহারের মাধ্যমে দুটো বাক্যের মাঝে স্বল্প সময়ের বিরতি নিন।
২. What are your strengths (স্ট্রেন্থস)? (কোন বিষয়গুলোতে আপনি দক্ষ?)
আপনি নিজের সম্পর্কে কতটুকু পজিটিভ, তা দেখার জন্য এই প্রশ্ন করা হয়। জবাব দেওয়ার সময় চেষ্টা করুন একটি বাক্যে নিজের গুণ সম্পর্কে সরাসরি না বলে বরং সংক্ষেপে তা আলোচনা করতে। ‘I am a very friendly person.’ এভাবে না বলে, বলুন :
‘My strongest strength is attention to detail. I totally believe in planning and execution (এক্সিকিউশন). In fact, when I was in my college I used to organize my week. Because of my very outgoing nature many people have said that I am quiet approachable (অ্যাপ্রচেবল). So, I believe these are my strengths.’
(আমার সবচেয়ে সেরা গুণ হচ্ছে আমি যেকোনো কাজকে নিখুঁতভাবে সম্পন্ন করার জন্য চেষ্টা করি। আমি পরিকল্পনার মাধ্যমে ধাপে ধাপে সামনে এগোই। কলেজে পড়ার সময়েও আমি আমার সারা সপ্তাহের কাজের তালিকা তৈরি করে রাখতাম এবং তা অনুসরণ করতাম। আমার মিশুক স্বভাবের কারণে অনেকেই এটা মনে করেন যে আমি সহজেই মানুষের সঙ্গে মিশতে পারি।)
৩. What are your weaknesses (উইকনেসেস)? (আপনার দুর্বল দিকগুলো কী কী?)
এ প্রশ্নের জবাবে সরাসরি ‘I am very impatient (ইম্প্যাশেন্ট).’, ‘I get angry really fast.’ এভাবে নিজের দুর্বল দিকগুলো নিয়ে কথা না বলে বরং একটু ঘুরিয়ে বলুন :
‘I think my weakness is I am way too detail oriented (ওরিয়েন্টেড). I try to accomplish (আকমপ্লিশ) everything and I just want everything to be perfect, but then I realise, I am taking extra time/I am spending too much time. And, maybe that makes me submitting projects late. So I guess this is my weakness.’
(আমার সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হচ্ছে আমার খুঁতখুঁতে স্বভাব। আমি সমস্ত কাজ নিখুঁতভাবে করতে চাই এবং তা করতে গিয়ে প্রয়োজনের থেকে অনেক বেশি সময় ব্যয় করে ফেলি। এ কারণেই আমি নির্ধারিত সময়ে অনেক ক্ষেত্রে প্রজেক্ট জমা দিতে পারি না। আমার মতে, এটিই আমার দুর্বল দিক।)
প্রশ্নকর্তার এই প্রশ্নটি করার উদ্দেশ্য হলো আপনি আপনার দুর্বলতা সম্পর্কে জানেন কি না এবং আপনি কীভাবে সেটিকে ভালো দিকে কাজে লাগান, তা যাচাই করে দেখা।
৪. Where do you see yourself in five years? (আগামী পাঁচ বছরে আপনি নিজেকে কোথায় দেখতে চান?)
ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আপনার দূরদর্শিতা কতখানি, তা দেখার জন্য প্রশ্নটি করা হয়। অনেকেই এর জবাব দিতে গিয়ে একটু অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন, কারণ ভবিষ্যতে কী হবে, তা কেউই জানেন না। একই প্রশ্ন ঘুরিয়ে এভাবেও করা হতে পারে যে, ‘What are your long-term (দীর্ঘমেয়াদি)/ short-term (স্বল্পমেয়াদি) goal?’
‘I would like to be the CEO of this company.’, ‘I would like to own an airline’-এর মতন অবাস্তব উত্তর দিয়ে পরিবেশকে হালকা না করে বরং এভাবে বলুন :
‘Well five years from now, I would like be in the management position. Till then, I would like to gain practical experience and then eventually become a Manager. Of course, I would like to share and learn new things from my team members.’ অর্থাৎ, আগামী পাঁচ বছরে আমি নিজেকে ম্যানেজমেন্ট (ব্যবস্থাপনা) পজিশনে দেখতে চাই। তবে এর মধ্যবর্তী সময়ে আমি বাস্তবিক কর্মক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চাই। আমি আমার দলের সদস্যদের সঙ্গে কাজ করে নতুন নতুন বিষয় শিখতে ও জানতে চাই এবং তাদের সঙ্গে আমার অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করতে চাই।
৫. What do you know about our company? (আমাদের কোম্পানি সম্পর্কে আপনি কী জানেন?)
এই প্রশ্নটির মুখোমুখি আপনাকে যেকোনো ইন্টারভিউতে হতে হবে। প্রশ্নকর্তা এর মাধ্যমে জানতে চান, এই চাকরির ব্যাপারে আপনি কতটা আগ্রহী এবং আবেদনের আগে আপনি কোম্পানির সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়েছেন কি না। কাজেই প্রস্তুত থাকুন এই প্রশ্নের উত্তর দিতে, ইন্টারনেটে কোম্পানির সম্পর্কে যথেষ্ট রিসার্চ করুন, যাতে করে আপনাকে বিড়ম্বনার সম্মুখীন না হতে হয় এবং বলুন অনেকটা এভাবে :
‘Your company is very well known for the customer service and you also won an award for the best service provider in the country.’ (কাস্টমার সার্ভিসের জন্য আপনাদের কোম্পানি সুপ্রসিদ্ধ এবং দেশের সেরা পণ্যসেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে আপনারা পুরস্কারও পেয়েছেন।)
৬. How well do you handle change? (পরিবর্তনের সঙ্গে আপনার মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা কতখানি?)
কর্মক্ষেত্রে পরিবর্তন একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। অনেকেই এই পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজেকে বদলে নিতে পারেন না। প্রশ্নের জবাবে আপনি যে পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সক্ষম, তা বলার সঙ্গে সঙ্গে চাইলে আপনার আগের কর্মক্ষেত্রে ঘটে যাওয়া এই সংশ্লিষ্ট কোনো ঘটনা নিয়েও বলতে পারেন অনেকটা এভাবে :
‘Of course I can handle a change. In my previous company, one of my bosses had to quit and the new boss changed the complete strategy of a project. We managed it with our team efforts and definitely, the result was good. So of course I am very flexible (ফ্লেক্সিবল) and hardworking too.’
(অবশ্যই আমি এ ধরনের পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারব। আমার আগের কর্মক্ষেত্রে একজন বস চাকরি ছেড়ে দেওয়ার পরে তাঁর জায়গায় নতুন যিনি যোগ দেন, তিনি এসেই আমাদের চলমান একটি প্রজেক্টের সম্পূর্ণ স্ট্র্যাটেজি বদলে দেন। আমরা তার পরেও নতুন স্ট্র্যাটেজির সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে কাজ সম্পন্ন করি এবং এর ফলাফলও বেশ ভালো ছিল। কাজেই বলা যেতে পারে, আমি পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সক্ষম এবং আমি পরিশ্রমী।)
৭. How well do you work under pressure? (আপনি কতখানি কাজের চাপ নিতে সক্ষম?)
অতিরিক্ত কাজের চাপ নিতে আপনি কতখানি উপযুক্ত, তা জানতে এই প্রশ্ন করা হয়। এই প্রশ্নের জবাবে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলুন :
‘Working under pressure or without pressure works just the same for me.’ অর্থাৎ, কাজের চাপ থাকুক অথবা না থাকুক, দুই ক্ষেত্রেই আপনি মানিয়ে নিতে সক্ষম এবং অতিরিক্ত কাজের চাপ আপনাকে প্রভাবিত করে না।
৮. How do you handle important decisions? (গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আপনি কতটা বিচক্ষণ?)
কর্মক্ষেত্রে অনেক সময়ই আপনাকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে। সেসব সিদ্ধান্তের সঙ্গে জড়িত থাকে কোম্পানির ভবিষ্যৎ এবং লাভ-ক্ষতি। এমন প্রশ্নের জবাবে ঘাবড়ে না গিয়ে বলুন :
‘Handling decisions is definitely considered to be a little difficult. But, I am sure I can do it by relying (রিলায়িং) on my experience. I would also look at the pros and cons, and take some advice from my team members which will help me to take a better decision.’ অর্থাৎ, সিদ্ধান্ত নেওয়া সব সময়েই একটি কঠিন কাজ। তবে আমি আমার অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নিতে চেষ্টা করব। আমি পুরো বিষয়টির খুঁটিনাটি যাচাই করব এবং আমার টিম মেম্বারদের সঙ্গে আলোচনা করা সাপেক্ষে কোম্পানির জন্য মঙ্গলজনক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব।
ইন্টারভিউ দেওয়ার সময়ে চেষ্টা করুন এক শব্দে বা এক লাইনে জবাব দেওয়ার বদলে সময় নিয়ে জবাব দিতে। শব্দচয়ন, উচ্চারণের মতন ব্যাপারগুলোর প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখুন। রুমে প্রবেশের আগে মোবাইল ফোন সাইলেন্ট করে নিন। চেষ্টা করুন নির্ধারিত সময়ের কিছু আগেই ইন্টারভিউ যেখানে নেওয়া হবে, সেখানে পৌঁছে যেতে। ইন্টারভিউর আগের রাতেই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গুছিয়ে নিন। নিজের সম্পর্কে আত্মবিশ্বাসী থাকুন। জয় আপনার সুনিশ্চিত।