প্রতিদিন চাকরিজীবীদের একটি বিশাল সময় কাটে কর্মস্থলে। এটাই তাদের রুটি-রুজির জায়গা। কিন্তু কর্মস্থলে সবাই যে খুব ভালো বা কোয়ালিটি টাইম কাটাতে পারেন, তা নয়। তবুও চাকরিটা করে যেতেই হয়। কারণ, ওই চাকরির বেতনেই যে চলে জীবনের চাকা।
কোনো কোনো কর্মস্থলে কর্তৃপক্ষই কর্মীদের ভালো থাকার বা ভালো বোধ করার ব্যবস্থা করে দেয়। কোথাও আবার প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ কম থাকে কিছুটা। তখন আসলে ব্যক্তিগত পর্যায়েই উদ্যোগী হতে হয়।
আসুন, তবে জেনে নেওয়া যাক এমনই কিছু ছোট ছোট অভ্যাসের কথা।
১. নিজের খোঁজ নিন
শুনতে কি অদ্ভুত লাগছে? যত অবাকই হন না কেন, মনে রাখতে হবে–নিজের খোঁজ আসলে নিজেকেই রাখতে হয়। এ জন্য নিজেকেই জিজ্ঞেস করতে হবে, ‘আছ কেমন? ভালো আছো তো?’ আর এটা করতে হবে প্রতিটি দিনই। যাপিত জীবনে আমরা নিজের সঙ্গে কথা বলার ফুরসতই যেন পাই না। আর এতে সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা নিজেরই হয়। এমন নয় যে, নিজেকে করা প্রশ্নের উত্তরেই সব সমাধান মিলবে। তবে নিজ সত্তার সঙ্গে আলোচনাটা অন্তত শুরু হবে। হবে সেলফ কাউন্সেলিংয়ের কাজটিও। এতে নিজের অবস্থা ও পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারণা তৈরি হবে।
২. প্রয়োজন নিয়মিত বিরতি
কর্মস্থলে কাজের ফাঁকে ফাঁকে নিয়মিত হারে বিরতি নেওয়া প্রয়োজন। এই বিরতিতে কাজের ভারে নুইয়ে পড়া নিজেকে আবার চনমনে করে তুলতে হবে। অফিসের বিভিন্ন মিটিংয়ের ফাঁকে ফাঁকে ৫ থেকে ১০ মিনিটের বিরতি কমিয়ে দেয় মানসিক চাপ। ফলে মনযোগ এবং অনুপ্রেরণা বাড়ে।
৩. চাপে পড়লে কী করবেন?
কর্মস্থলে কাজের চাপ থাকবেই। সেই চাপকে সহজভাবে গ্রহণের মানসিকতা তৈরি করতে হবে। কতটুকু আপনার নিয়ন্ত্রণে আছে, আর কী কী নিয়ন্ত্রণে নেই–সেই হিসাবটি মনে মনে করে ফেলতে হবে। যতটা নিয়ন্ত্রণে আছে, ততটুকু নিয়েই আপনি চিন্তা করবেন, কর্মকৌশল সাজাবেন। অফিসের যেসব বিষয় আপনার নিয়ন্ত্রণে নেই, সেসব নিয়ে মাথা ঘামালে ক্ষতি ছাড়া লাভ কিছু নেই।
৪. সহকর্মীদের সঙ্গে হৃদ্যতা বাড়ান
যারা চাকরি করেন, তাঁরা কর্মস্থলেই দিনের একটা বড় সময় কাটান। সে ক্ষেত্রে সহকর্মীদের সঙ্গেই কাটে একটা লম্বা সময়। তাই কাজের পাশাপাশি সহকর্মীদের সঙ্গে হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক থাকাটা জরুরি। নইলে কর্মস্থলের কাজের চাপের পাশাপাশি একাকীত্বও আপনাকে গিলে খাবে। তখন কর্মস্থলে কাটানো সময়টুকু আপনার জন্য বিষাদময় হয়ে উঠতে পারে। উপযুক্ত সামাজিক সমর্থন ও আশপাশের মানুষের সঙ্গে সংযুক্তি যেকোনো ব্যক্তির মানসিক শক্তি জোগায়। এতে কমে উদ্বেগও। ফলে কর্মস্থলে আরও ভালোভাবে কাজ করা সম্ভব হয়।
৫. নেতিবাচকতাকে না
মানুষ হলে তার মাথায় ইতিবাচক ও নেতিবাচক–দুই মনোভাবই থাকবে। কিন্তু মানুষের মনে নেতিবাচকতা যেভাবে কুপ্রভাব ফেলে, তাতে কখনো কখনো পুরো কর্মপ্রক্রিয়াই থমকে যায়। তাই নিজের কাজের প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধও থাকতে হবে। সব সময়ই যদি নেতিবাচক মনোভাব নিয়ে থাকেন, তবে কাজে অগ্রগতি আসবে না। তাই নেতিবাচকতাকে মেনে নিয়েই ইতিবাচক বিষয়ের প্রতি মনযোগী হতে হবে। তবেই আসবে সাফল্য। আর মনটাও থাকবে ভালো।
৬. কাজ শেষ মানে শেষই
কর্মস্থল থেকে যখন বের হবেন, তখন অফিসকে মাথায় নিয়ে বাসায় ফেরা যাবে না। অফিসটা বরং অফিসেই থাক। অফিসকে যখন বাসাতেও টেনে আনবেন, তখন পারিবারিক ঝামেলার পাশাপাশি আপনার পেশাগত সমস্যাও পুরোপুরি মিটবে না।
কাজ থেকে পুরোপুরি বিযুক্ত হতে বিভিন্ন শখের কাজ করা এবং বন্ধু ও পরিবার-পরিজনের সঙ্গে কোয়ালিটি টাইম কাটানো সবচেয়ে ভালো উপায়। এতে করে পরবর্তী কর্মদিবসের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করাও সহজ হয়ে উঠবে।