কোম্পানির মালিক বা HR বা কোনো শুভাকাঙ্ক্ষি থেকে যদি ফেসবুক আর লিংকড-ইন এ কোনো চাকরির পোস্ট দেওয়া হয় তবে সেই চাকরিতে আবেদন করার ক্ষেত্রে কিছু কিছু বিষয় মনে রাখতে হবে।
মনে রাখতে হবে, যিনি চাকরির জন্য একটি পোস্ট দিয়েছেন তার সাথে কিভাবে আচরণ করতে হবে। কারণ চাকরির পোস্ট দাতা যদি আপনার কোনো আচরণের কারণে বিরক্ত হন, তবে আপনার সিভি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে নাও পৌঁছতে পারে। আপনার কমুনিকেশন দক্ষতা আপনার সিভি ইন্টারভিউর জন্য নির্বাচিত হতে খুবই সাহায্য করবে। তাই যেনে নিন কিভাবে চাকরির পোস্ট দাতার সাথে আচরণ করতে হবে এবং কি কি বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে।
১। চাকরির পোস্টে যা লেখা আছে তা ভালোমতো পড়ুন। পুরোটা না পড়েই পোস্টে উল্লেখিত জিনিসই আবার পোস্ট দাতাকে জিজ্ঞেস করাটা বিরক্তিকর।
২। যেখানে স্পষ্ট করে লেখাই আছে অমুক সাবজেক্টে পড়াশোনা বা অভিজ্ঞতা লাগবে। সেখানে "আমিতো তমুক সাবজেক্টে/ আমার তো অভিজ্ঞতা নাই, আমি কী আবেদন করতে পারবো?" এরকম প্রশ্ন করাটা একদমই আনস্মার্টনেস।
৩। মেইল আইডি বা আবেদনের পন্থা বলা থাকলে সেটাই ফলো করুন। খুব বেশি দরকার না হলে আলাদা করে মেসেজ দেয়া বা ইনবক্সে সিভি দেয়াটা অমূলক।
৪। ইনবক্সে যোগাযোগ করতে বলা হলে আপনার পরিচয় বা মেসেজ দেয়ার প্রেক্ষাপট বলে তারপর মূল বক্তব্যটি বলুন। এমনকি পরিচিত হলেও অন্তত তাকে বুঝিয়ে বলেন যে কোন পোস্টের জন্য নক দিয়েছেন।
৫। চেনা নাই জানা নাই, জীবনে কথা হয়নাই হুট করে মেসেজ দিয়ে "Interested", "আমি আগ্রহী", "এইযে আমার সিভি" এসব বলা বা ইনবক্সেই একটা হ্যালো লিখে সিভি এটাচ করে দিয়ে রাখলেন। মানুষটা কীভাবে বুঝবে আপনি কে বা কেন মেসেজ দিয়েছেন বা কোন পোস্টের জন্য সিভি দিছেন?
৬। মেসেজ দিয়ে দেখার সময় দিন। অপেক্ষা না করে একের পর এক মেসেজ দেয়া এমনকি অপরিচিত হয়েও হুট করে কল দিয়ে বসাটা আপনার সম্পর্কে শুরুতেই নেগেটিভ ইম্প্রেশন ক্রিয়েট করবে, নিশ্চিত থাকুন।
৭। লিংকড-ইনে পোস্ট দেখলে লিংকড-ইনেই যোগাযোগ করুন। ওই ব্যাক্তির ফেসবুক প্রোফাইল খুজে ফেসবুকে মেসেজ দিয়ে জিজ্ঞেস করাটা শোভনীয় না। ফেসবুক একটা পার্সোনাল জায়গাও বটে।
৮। অনেক সময় কোম্পানীর নাম গোপন রেখে পোস্ট দেয়া হয় এবং সিভি শর্টলিস্টেড হলে পরে জানানো হয়। এসব ক্ষেত্রে পোস্টদাতা একান্ত পরিচিত না হলে তার কাছে কোম্পানির নাম জিজ্ঞেস করাটা বিব্রতকর।
৯। আবেদন করার পর বড়জোর এক দুইবার খোঁজ নিতে পারেন কিন্তু নিয়ম করে বারবার জিজ্ঞেস করার দরকার নাই। কারণ আপনি শর্টলিস্টেড হলে প্রতিষ্ঠান এমনিই যোগাযোগ করবে আপনার সাথে।
১০। পোস্ট দাতা অনেক সময় হেল্প করার জন্য পোস্ট দেন; শুধু সিভিগুলো সংগ্রহ করে ওই প্রতিষ্ঠানে ফরোয়ার্ড করার জন্য। বাকি কাজ প্রতিষ্ঠানই করে। এক্ষেত্রে যিনি আপনার সিভি ফরওয়ার্ড করলো তিনি এটুকুই হেল্প করতে পারেন। এরপর হাতে ধরে আপনাকে চাকরি নিয়ে দেয়ার ক্ষমতা তার নেই।
১১। যিনি আপনার সিভি ফরওয়ার্ড করবেন তিনিও দিনশেষে চেষ্টা করবেন HR-কে ভালো সিভি দিয়ে নিজের সম্মান রাখতে। আর তার নিজের হাতেও কাউকে চাকির দেয়ার ক্ষমতা নেই। তাই পোস্ট দেখেই একদম "আমাকে চাকরিটা দিয়ে দেন / আমার কথা বলে দেন / আপনি বললেই চাকরিটা হয়ে যাবে" এসব এপ্রোচে কথা বললে ওই ব্যক্তিও বিব্রত হবে একই সাথে আপনার প্রতিও বিরক্তির উদ্রেক হবে।
সর্বোপরি, একদম চাকরীটা আমাকে নিয়ে দেন টাইপ এপ্রোচ না করে বরং নিজেকে ডেভেলপ করার জন্য সাজেশন নেন, বারবার আবেদন করে সাড়া না পেলে কোথায় গ্যাপ আছে সেটা বুঝার জন্য সহায়তা নেন, সিভিতে সমস্যা থাকলে আবেদন করার আগে ফিডব্যাক নিয়ে সেটা ঠিক করেন।
একই ভুলের মধ্যে থেকে অন্যকে বারবার অনুরোধ না করে বরং স্মার্টলি অন্যের কাছ থেকে সাহায্য নেন, অভিজ্ঞ কারো রেফারেন্স না খুঁজে বরং তার জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাকে নিজের জন্য কাজে লাগান। এতে করে আপনার প্রতি ইম্প্রেশন যেমন ভালো হবে তেমনি আপনার নিজেরও দীর্ঘমেয়াদি লাভ হবে!