পুলিশ বিষয়ক পরিভাষা
Police State
পুলিশ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত রাষ্ট্র হচ্ছে ‘Police State’। যেখানে সরকারবিরোধী পক্ষকে পুলিশের সাহায্যে দমন করা হয়। এটা অনেকটা Totalitarian রাষ্ট্রের মতো।
Totalitarian State
Totalitarian State বলতে এমন একটা রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে বোঝায়, যেখানে একটিমাত্র রাজনৈতিক দল থাকে। এখানে জনসাধারণকে রাষ্ট্রের প্রয়োজনের নিকট উৎসর্গীকৃ বলে বিবেচনা করা হয়।
Ambush
অতর্কিত আক্রমণার্থে গোপন স্থানে অবস্থান করাকে Ambush বলা হয় (to lay concealed in wait to attack by surprise)।
Curfew
আভিধানিক অর্থে Curfew হচ্ছে একটা ইঙ্গিত বা সময়, যার পর জনসাধারণ অবশ্যই ঘরে অবস্থান করবে। অপরদিকে Code of Criminal Procedure (CrPC)-এর ২৪ নং সেকশন অনুযায়ী Curfew হচ্ছে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক জারিকৃত একটি আদেশ, যার ফলে একটি নির্দিষ্ট এলাকার জনসাধারণ যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিরেকে ঘর থেকে বের হতে পারে না।
FIR বা এজাহার
FIR হচ্ছে First Information Report CrPC-এর ১৫৪ ও ১৫৫ ধারা অনুযায়ী কোনো অপরাধের বিষয়ে থানায় রিপোর্ট করাকে FIR বলা হয়। ফৌজদারী মামলার ক্ষেত্রে FIR একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে কাজ করে। প্রাথমিক তথ্যসমূহ অবশ্যই লিখে রাখতে হবে এবং সংবাদদাতা কর্তৃক স্বাক্ষরিত হতে হবে। FIR-এর গুরুত্বপূর্ণ উপাদানসমূহ হলো :
- সময়ের প্রেক্ষিতে এটা প্রথমে হতে হবে।
- এটা নিশ্চিত হতে হবে এবং কেবল জনশ্রুতি হলে চলবে না।
- এটা OC-এর নিকট প্রদান করতে হবে।
- এটা আমলযোগ্য অপরাধের সাথে সংশ্লিষ্ট হতে হবে।
- এটা এমন পর্যায়ে হতে হবে যেন Police তদন্ত শুরু করতে পারে।
- এটা অবশ্যই লিখিত ও উত্থাপনকারী কর্তৃক স্বাক্ষরিত হতে হবে।
চার্জশিট (Charge Sheet)
চার্জশিট হচ্ছে এক ধরনের অভিযোগ পত্র। থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কোনো অপরাধীর অপরাধ তদন্ত শেষে যদি এমন অবস্থা দেখেন যে অপরাধ সংঘটিনের পক্ষে যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ রয়েছে তখন তিনি অভিযোগপত্র তৈরি করেন এবং ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট পেশ করেন।
Inquiry এবং Investigation-এর পার্থক্য
বাংলায় উভয় শব্দের অর্থ তদন্ত। কিন্তু দুটির মধ্যে ব্যবহারগত কিছু পার্থক্য রয়েছে। যেমন- ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক CrPC-এর অধীন পরিচালিত মামলার ক্ষেত্র ব্যতীত অন্যান্য সকল ক্ষেত্রে তদন্তকে Inquiry বলা হয়। যেমন- বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের কোনো ঘটনা তদন্তের জন্য Inquiry Committee গঠন করা হয়। Inquiry তে সাধারণত অপরাধী শনাক্ত করা হয়।
অপরদিকে Investigation হচ্ছে CrPC-এর অধীন বিচারাধীন কোনো মামলার সাক্ষ্যপ্রমাণ ও তথ্যাদি উদ্ভাবনের জন্য পুলিশ অফিসার বা অন্য কেউ কর্তৃক পরিচালিত তদন্ত। Inquiry-এর ক্ষেত্রে অপরাধী শনাক্তকরণ এবং তার অপরাধের তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করা হয়।
Warrant
ওয়ারেন্ট শব্দের অর্থ গ্রেপ্তারি পরওয়ানা। বিচারক কর্তৃক কাউকে গ্রেপ্তার করার উদ্দেশ্যে পুলিশের প্রতি লিখিত আদেশনামাই হলো Warrant।
Camouflage (ক্যামোফ্লেজ)
শাব্দিক অর্থে Camouflage বলতে বোঝায় ছদ্মবেশ, আবরণ প্রভৃতি দ্বারা শত্রুকে প্রতারিত করা (any device to deceive an enemy)। প্রাসঙ্গিকভাবে ক্যামোফ্লেজ বলতে বোঝায় সৈন্যদল বা অস্ত্র শস্ত্র লুকিয়ে রাখা।
রিমান্ড
তদন্তের স্বার্থে কোর্ট আসামিকে পুলিশের নিকট নির্দিষ্ট সময়ের জন্য হস্তান্তর করাকে ‘রিমান্ড’ (Remand) বলে।
জানিম
পুলিশী হেফাজত থেকে আসামিকে নির্ধারিত শর্তসাপেক্ষে নির্ধারিত তারিখে হাজির করানোর অঙ্গীকার জামিনদারের নিকট সম্পন্ন করাকে জামিন বলা হয়। জামিন নিজ মুচলেকায়ও দেয়া যায়।
Arrest (গ্রেফতার)
ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৬(১) ধারা মতে, কথা বা কার্যদ্বারা আত্মসমর্পণ করা না হলে পুলিশ অফিসার বা গ্রেপ্তারকারী অপর কোনো ব্যক্তি গ্রেপ্তার করার সময় যাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে প্রকৃতপক্ষে তার দেহ স্পর্শ বা আটক করবেন।
৪২০ ধারা
৪২০ ধারা বলতে CrPC-এর Section 420-কে বোঝানো হয়। প্রতারণা (Cheating) এবং অসদুপায়ে (dishonestly) কারো সম্পত্তি দখল করলে এ ধারা কার্যকর হয়।
অপরাধ স্বীকারোক্তি (Confession)
শারীরিক নির্যাতন, ভয়ভীতি প্রদর্শন বা প্ররোচনা ব্যতীত কোনো অপরাধীকর্তৃক স্বেচ্ছায় নিজের অপরাধের কথা স্বীকার। সাক্ষ্য আইনের ২৪-৩০ ধারায় কোন কোন অবস্থায় আসামির অপরাধস্বীকারোক্তি সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণযোগ্য তা বলা হয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় ম্যাজিস্ট্রেটকে আসামির অপরাধ-স্বীকারোক্তি লিপিবদ্ধ করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে এবং উক্ত কার্যবিধির ৩৬৪ ধারায় তা লিপিবদ্ধ করার পদ্ধতি উল্লেখ করা হয়েছে। আদালত যদি মনে করেন যে, আসামির অপরাধস্বীকারোক্তি আইনের উপরিউক্ত যে কোনো বিধান লঙ্ঘন করে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে, তবে আদালত মামলা বিচারে তা বিবেচনায় গ্রহণ নাও করতে পারেন।
আটক (Detention)
গ্রেপ্তার করার পর কোনো ব্যক্তির ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাঁর ব্যক্তি স্বাধীনতাহরণ। ফৌজদারি কার্যবিধির ৬১ ধারার বিধান-অনুসারে কোনো পুলিশ কর্মকর্তা বিনা পরওয়ানায় কাউকে গ্রেপ্তার করলে তাঁকে সামগ্রিক পরিস্থিতির বিবেচনায় যুক্তিসংগত সময় অপেক্ষা অধিককাল আটক রাখবেন না এবং ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে যাবার সময় বাদ দিয়ে চব্বিশ ঘণ্টার বেশি হবে না। পুলিশ কর্মকর্তা আটক ব্যক্তির বিরুদ্ধে তদন্তের পর অভিযোগ দায়ের করতে ব্যর্থ হলে অথবা ম্যাজিস্ট্রেট তাঁকে পুনরায় আটক রাখার আদেশ না দিলে তাঁকে ছেড়ে দিতে হয়।
জামিন (Bail)
বিচারের অপেক্ষায় থাকাকালে কিংবা অপরাধহেতু দোষী সাব্যস্ত হওয়ার বিরুদ্ধে আপিল করার সময়ে আইনানুগ হেফাজত হতে কোনো ব্যক্তিকে পুলিশ বা আদালতকর্তৃক মুক্তি দেওয়া। জামিন মঞ্জুর করা উচিত না অনুচিত এবং কী পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে তা করা যাবে, সে বিষয়ে বিচারকদের স্ববিবেচনা প্রয়োগের ব্যাপক ক্ষমতা রয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৬-৫০২ ধারায় জামিন ও জামিনদার সম্পর্কে বিধান রয়েছে।
বাদী, ফরিয়াদি (Complainant)
অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বলে যিনি অভিযোগ উত্থাপন করেন। ফৌজদারি কার্যবিধির ২০০ ধারায় যিনি মামলা করে থাকেন।
বিবাদী (Defendant)
যে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়। বাদী আদালতে দাখিলি আরজিতে যে ব্যক্তি অথবা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতিকার প্রার্থনা করেন তাঁকে অথবা উহাকে বিবাদী বলা হয়।
পাবলিক প্রসিকিউটর
ফৌজদারি কার্যবিধির ৪ ধারায় বলা হয়েছে যে, পাবলিক প্রসিকিউটর বা সরকারি অভিযোক্তা অর্থ ফৌজদারি আইনের ৪৯২ ধারা অনুসারে নিযুক্ত যে কোনো ব্যক্তি এবং সরকারি অভিযোক্তার নির্দেশক্রমে কার্যরত ব্যক্তি উহার অন্তর্ভুক্ত হবেন। পুলিশ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে যে সমস্ত মামলা গৃহীত হয় সে সকল মামলার জন্য সরকারি উকিল নিয়োগ করা হয়। ফৌজদারি মামলায় সরকারের পক্ষ হতে যে উকিল নিয়োগ করা হয়, তাকে সরকারি অভিযোক্তা বলা হয়।
স্ব-উদ্যোগ (Sou moto)
আদালত ন্যায়বিচারের স্বার্থে কোনো কোনো বিষয়ে স্ব-উদ্যোগে কোনো মামলার কার্যক্রম শুরু এবং নিষ্পত্তি করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, দেওয়ানি কার্যবিধির ১১৫ ধারা অনুসারে, যদি নিম্ন আদালতের কোনো কার্যক্রমের ক্রটি উচ্চ আদালতের দৃষ্টিগোচর হয়, সেক্ষেত্রে আদালত স্ব-উদ্যোগে তদ্রুপ ক্রটি সংশোধন করতে পারেন।