আধুনিক খাটের উপকারিতা ও বৈশিষ্ট্যসমূহ

বাসাবাড়ির প্রধান ফার্নিচার হলো খাট। আধুনিক খাট আসার পর থেকে খুব কম খরচে নান্দনিক ডিজাইনের খাট কিনতে পাওয়া যাচ্ছে। শুধু সৌন্দর্যের জন্য এধরনের খাট জনপ্রিয়তা পেয়েছে বললে ভুল হবে। বিভিন্ন ধরনের সুবিধাই খাটগুলোকে বাংলাদেশের টপ সেলিং ফার্নিচার প্রোডাক্টে পরিণত করেছে। সহজে বোঝার জন্য আজ আমরা আধুনিক খাটের উপকারিতা ও বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা করবো। আপনি আধুনিক খাট সম্পর্কে না জেনে থাকলে এই গাইড পড়ে অনায়াসে কিনতে পারবেন।
 

আধুনিক খাট বলতে কি বোঝায়?


দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে প্রচলিত হওয়া সহজ সরল ডিজিাইনের খাটগুলোকেই আধুনিক খাট বলে। তখনকার সময়ে দ্রুত বাসাবাড়ি মেরামত করার জন্য কম কারুকাজ করা খাট তৈরি শুরু হয়। পরে, উদ্ভাবকেরা খাটগুলোতে সহজে সরানোর, জোড়ানোর ও জিনিসপত্র রাখার অংশ যোগ করে এর জনপ্রিয়তা বাড়িয়ে দেয়। দেখতে সাধারণ হবার কারণে এগুলো বেশ মিনিমালিস্ট ঘরানার হয়ে থাকে, যার কারণে সহজে পরিষ্কার করা যায়।


আধুনিক খাটের উপকারিতা ও বৈশিষ্ট্যসমূহ

আধুনিক খাটে কি কি উপকারিতা পাওয়া যায়?


আধুনিক খাটে উপকারিতার শেষ নেই বলেই গত শতাব্দীতে সারা বিশ্ববাসীর কাছে এত সমাদৃত হয়েছে। নিজের বাসার ব্যক্তিত্বের সাথে মিলিয়ে ডিজাইন পাওয়া, পরিবহনের সুবিধা পাওয়া, শারীরিক সুস্থতা পাওয়া সহ অনেক উপকারিতা আছে যা বলে শেষ করা যাবেনা।

  • রুমের সাথে সামঞ্জস্য ডিজাইন: আধুনিক খাটের ডিজাইন এমনভাবে হয় যে রুমের সাথে বেশ ভালভাবে ফিট করে যায়। পুরনো থেকে শুরু করে নতুন সবধরনের বাসায় খাটগুলো নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারবেন। এমনকি খাটগুলোর রঙ বেশ হালকা ও মোলায়েম হয়, যেন আপনার বাসার আবহে সহজেই মিলে যায়।
  • পরিবহনের সুবিধা: কোনো যন্ত্র ছাড়া সহজে খুলতে পারার কারণে আধুনিক খাটগুলো এক জায়গা থেকে অন্য জায়গাতে নেওয়া সহজ। অনেকেই বাসা পাল্টানোর সময় ঝামেলা এড়ানোর জন্য এসব খাট কিনে থাকেন। খাটের পার্টস খুলে সিঁড়ি বা লিফটে করে একজনই মানুষই একটা আস্ত খাট নিয়ে যেতে পারে।
  • শারীরিক সুস্থতা: আধুনিক খাটগুলো সঠিক মাপে বানানো হয়ে থাকে। পৃষ্ঠ সমতল হবার কারণে মেরুদন্ড ও ঘাড়ে কোনো ধরনের বাজে প্রভাব পড়েনা। আবার এসব খাটে হাত-পা রাখার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা থাকে। ব্যক্তি বিশেষে হাইট ফোবিয়া থাকলে লো হাইট খাটগুলো বেশ কাজে দেয়। তাছাড়া আধুনিক খাটের উপাদানে নিজের শরীরের ও পরিবেশের কোনো ক্ষতি হয় না।
  • স্টোরেজ সুবিধা: বেশিরভাগ আধুনিক খাটের উপরে, নিচে ও হেডবোর্ডে বিভিন্ন জিনিস রাখার জন্য জায়গা থাকে। তাই দৈনন্দিন জীবনে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রাখার কাজে বেশ সহায়ক হয় একেকটা খাট। বেডরুমে আধুনিক খাট থাকলে আপনি হাতের নাগালেই ফোন, চশমা, ঘড়ি, টেবিল ল্যাম্প, বই, শোপিসের মত প্রিয় জিনিস রাখতে পারবেন।

আধুনিক খাটে কি কি বৈশিষ্ট্যসমূহ দেখবেন?

সহজে মজবুত আধুনিক খাট বানাতে কোম্পানিগুলো কিছু সাধারণ ফিচার দিয়ে থাকে। বস্তুত সাধারণ মনে হলেও এগুলো খুবই উপকারী। আপনি দোকানে গেলে এগুলো মিলিয়ে দেখতে পারবেন। যেমনঃ ফ্যাক্টরি মেড কাঠ, ভিন্নরকম সাইজ, স্টোরেজ সুবিধা, মেমোরি ফোমের জায়গা থাকা ইত্যাদি।

ইঞ্জিনিয়ার্ড কাঠ দিয়ে বানানো হয়

ভাল ফার্নিচার নির্মাতা কোম্পানিগুলো বীচ উড, ভিনিয়ার্ড উড, মালয়েশিয়ান উডের মত ফ্যাক্টরিতে রিফাইন করা উপকরণ দিয়ে আধুনিক খাট বানিয়ে থাকে। তাই খাটগুলো বেশ হালকা ও টেকসই হয়। ঘুন বা পোকামাঁকড়ে ধরার সম্ভাবনা একেবারেই থাকেনা। পানি ও আর্দ্রতা থেকে দূরে রাখতে পারলে বছরের পর বছর একই খাট ব্যবহার করা যায়। ইকো ফ্রেন্ডলি হবার কারণে খাটগুলোয় নিরাপদে ঘুমানো যায়।

বিভিন্নরকম সাইজের হয়ে থাকে

ফার্নিচার স্টোরগুলোতে বিভিন্ন সাইজে একই মডেলের আধুনিক খাট দেখতে পারবেন। কিং, কুইন, ডাবল, সেমি ডাবল, সিংগল সহ বিভিন্ন স্টাইলের মডুলার খাট রয়েছে। নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এমনভাবে তৈরি করে যেন ছোট থেকে বড় সবরকমের অ্যাপার্টমেন্টে আপনি একই মডেলের খাট ব্যবহার করতে পারেন। এতে ঘরে খাট রাখার পরও চলাফেরা করার পর্যাপ্ত জায়গা থাকে।

স্টোরেজ সুবিধা দেওয়া থাকে

বর্তমানে বক্স বা সেমি বক্স খাটগুলো জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করছে। বক্স খাটের নিচে চেস্ট অব ড্রয়ারের মত কাপড় ও আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র রাখার অনেক স্পেস থাকতে পারে। আবার আপনি বড় হেডবোর্ডের শেলফ-সহ খাট দেখবেন যাতে বিভিন্ন টুকিটাকি জিনিস রাখা যায়। অনেক আধুনিক খাটের সাথে ম্যাচ করে বেড সাইড টেবিল বা সীটার থাকে।

মেমোরি ফোমের ম্যাট্রেস থাকা

মেমোরি ফোম কিছুটা মোটা ও নরম হয়। মজার বিষয় হলো, আধুনিক ডিজাইনের খাটে মেমোরি ফোমের ম্যাট্রেস একেবারে ফিট হয়ে যায়। খাটের সাইড প্যানেল ও সারফেস এমনভাবে ডিজাইন করা হয় যেন কোনো অতিরিক্ত ফাঁকা জায়গা না থাকে। আবার ম্যাট্রেস খাটের উপরে উঠে থাকার কোনো সম্ভাবনা নেই।

কিভাবে আধুনিক খাট কিনলে বেশি উপকৃত হবেন?

কিছু বিষয় বিবেচনা করে খাট কিনলে উপকারিতার মাত্রা অনেক গুণ বেড়ে যেতে পারে। যেমন, প্রথমেই দেখতে হবে কাঠের গুণগত মান কেমন। বেনামী ফার্নিচার নির্মাতা কোম্পানি নিম্নমানের কাঠ ও ঝুকির্পূর্ণ কেমিক্যাল ব্যবহার করে। তাই এদের থেকে সাবধান! এরপরে যা দেখতে হবে তা হলো সাইজ ও ডিজাইন। সবসময় এমন কাট কিনবেন যাতে দুজন মানুষ আরামে ঘুমাতে পারে। খুব বড় খাট নেওয়া যাবে না, কারণ বড় খাটে বাসার চলাফেরার জায়গা কমে যায়। আর যারা ড্রয়িং রুমের জন্য খাট নিবেন তারা অবশ্যই লো-হাইট খাট নিবেন।

শেষ ভাবনা

বাংলাদেশে হাতিল, আখতার ফার্নিচার, নাভানা সহ বেশ কিছু ফার্নিচার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অত্যাধুনিক মানের আধুনিক খাট তৈরি করে থাকে। আপনি অনলাইনে খুঁজে এদের ওয়েবসাইট থেকে খাটের ডিজাইন কেমন হয় দেখে নিতে পারেন। যেহেতু বর্তমান সময়ে সবাই সিম্পল জিনিস বেশি পছন্দ করছে, তাইা ট্রাডিশনাল বাহারি নকশার খাটের চেয়ে আধুনিক খাটের বিক্রি বহুগুণ বেড়ে গিয়েছে। পরিবার নিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে চাইলে আধুনিক খাটের কোনো জুড়ি নেই।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post