ব্যাকরণ : ইত্যাদি, প্রভৃতি, প্রমুখ এর মধ্যে পার্থক্য?

আজকে আমাদের আলোচনার একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ‘ইত্যাদি’, ‘প্রভৃতি’ ও ‘প্রমুখ’ এর মধ্যে পার্থক্য!

সাধারণ দৃষ্টিকোণ থেকে এই তিনটিরই অর্থ এই রকম যে, “এই রকম আরো কিছু কিছু”।

কিন্তু প্রায়োগিক বা ব্যবহারিক দিক থেকে এদের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য আছে। যেমন :


ইত্যাদি

‘ইত্যাদি’ একটা বহুব্রীহি সমাস এবং অব্যয় পদ। ইত্যাদি এর সন্ধি বিচ্ছেদ করলে আমরা পাই, ইতি+আদি। ‘ইতি’ এর অর্থ, ইহা শেষ। আমরা প্রায়ই চিঠির শেষে ‘ইতি’ ব্যবহার করি। মানে চিঠিটি এখানেই শেষ। আর ‘আদি’ অর্থ, শুরু বা প্রথম বা আরম্ভ। আর ‘ইত্যাদি’ এর সমাস করলে হয় ‘ইতি হওয়ার আদি যার’। অর্থাৎ কিছু শেষ হয়েছে তবে এটাই আদি যার বা শুরু যার।

‘ইত্যাদি’ এর ব্যবহারিক অর্থ হলো ‘এইরূপ আরো অনেক কিছু’। যেমন ধরা যাক, ‘আমি বাজার থেকে চাল, ডাল, তেল, লবণ ইত্যাদি কিনে এনেছি।’ চাল, ডাল, তেল, লবণ’ই শেষ নয় এই রকম আরো অনেক কিছু কিনে এনেছি, সময় অভাবে বা স্থানাভাবে লিখা বা বলা হলো না। চাল, ডাল, তেল, লবণ উল্লেখ করে বিষয়টা শেষ করেছি ঠিকই তবে এগুলো বাজারের বড় তালিকার শুরুর দিকটা মাত্র, ক্রয়কৃত জিনিস আরো অনেক আছে।


প্রভৃতি

‘প্রভৃতি’ শব্দটা ‘ইত্যাদি’ শব্দের সমার্থক হলেও ব্যবহারিক বা প্রায়োগিক দিক দিয়ে কিছুটা পার্থক্য আছে। যেমন, ‘প্রভৃতি’র ব্যুৎপত্তি করলে হয়, প্র-র(ভৃ)+তি। ‘প্রভৃতি’ শব্দটি কখনো বিশেষণ, কখনো অব্যয় রূপে ব্যহৃত হয়।

একটা বিষয় লক্ষ্য করলে দেখবেন, ‘ইত্যাদি’ ব্যবহৃত হয় জড়বস্তুর ক্ষেত্রে, এবং কিছু মানবেতর প্রাণির উদাহরণের ক্ষেত্রে। মানবেতর প্রাণি বলতে বুঝাচ্ছি, মানুষ ছাড়া অন্যান্য প্রাণি, যেগুলো বনে-জঙ্গলে থাকে। বাঘ, সিংহ, হরিণ ইত্যাদি প্রাণি। আর জড় বস্তু বলতে বই, খাতা, কলম, পেন্সিল ইত্যাদি কে বুঝানো হয়েছে।

কিন্তু ‘প্রভৃতি’ ব্যবহার করা হয়; শব্দ, সাহিত্য, ব্যাকরণ শাস্ত্রের কয়েকটি উদাহরণের ক্ষেত্রে। যেমন সাহিত্যের ক্ষেত্রে, ‘রবিন্দ্রনাথ চোখের বালি, গোরা, নৌকাডুবি প্রভৃতি উপন্যাস রচনা করেছেন।’ ব্যাকরণের ক্ষেত্রে, ‘সন্ধি, কারক, সমাস প্রভৃতি আমাদের জানা উচিত।’

তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ‘ইত্যাদি’ আর ‘প্রভৃতি’ এই যুগপৎ পার্থক্য মেনে ব্যবহার করা হয় না।


ইত্যাদি -প্রভৃতি - প্রমুখ


প্রমুখ

‘প্রমুখ’ এর ব্যবহার কিন্তু ভিন্ন। ‘ইত্যাদি’ আর ‘প্রভৃতি’র মত ‘প্রমুখ’ কিন্তু যেখানে-সেখানে ব্যবহার করা যায় না। ‘প্রমুখ’ জ্ঞানী-গুণি, কবি, পণ্ডিত, গুণিজন ইত্যাদি সম্মানিত ব্যক্তিদের অবশিষ্ট্যজনদের বুঝাতে ব্যবহার করা হয়। যেমন; ‘রামমোহন, বিদ্যাসাগর, বিবেকানন্দ প্রমুখরা বাংলার সার্বিক উন্নতি করেছেন।’ অর্থাৎ এই রকম জ্ঞানী-গুণি ব্যক্তিবর্গ যাদের নাম উল্লেখ করছি না, তাঁদের অবশিষ্টদের বুঝাতে ‘প্রমুখ’ ব্যবহার করা হয়।

এর মধ্য দিয়ে নিশ্চয় ‘ইত্যাদি’, ‘প্রভৃতি’ আর ‘প্রমুখ’-এর ব্যবহার বুঝা গেল।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post