নারী বন্দীর কুফল

অনেক ধর্মান্ধ মনে করে নারীকে গৃহবন্দী করে রাখলে বা নারীরা পুরুষের সাথে কাজ না করলেই সমাজ থেকে ইভটিজিং বা অনাচার বন্ধ হবে। হ্যাঁ, হয়তো রাস্তা-ঘাটে ইভটিজিং বন্ধ হবে। কিন্তু পাশাপাশি সৃষ্টি হবে আরো অনেক মারাত্মক সমস্যা। কিছু দিন আগে রাজনীতির মাঠ গরম ছিলো একটি ইসলামিক দলের ১৩ দফা দাবি নিয়ে। তাদের অনেক গুলো দারি সাথে ছিলো, পুরুষের সাথে নারীর কর্ম নিষিদ্ধ করা এবং সহ শিক্ষা বন্ধ করা। এটা মধ্য যুগিয় আবদার। এই দাবির বাংলাদেশের মত দেশে সম্ভব নয়। কারণ এই দেশ স্বাধীনতা অর্জনের মূল ভিত্তিই ছিলো ধর্মনিরপেক্ষতা। তাছাড়াও এই দেশের মানুষ তাদের নিজস্ব সংস্কৃতিই ধারণ ও লালন করতে পছন্দ করে। এই দেশে কখনোই এই ধরনের নারী বন্দীমূলক আইন প্রণয়ন সম্ভব নয়।

তারপরও যদি ধরে নিই এই ধরনের নারী বন্দী নীতিমূলক আইন বাংলাদেশর মত দেশ হতে যাচ্ছে, এতে কি কি সমস্যার মধ্যে বাংলাদেশ পড়তে পারে তা নিচে আমি তুলে ধরার চেষ্টা করলাম।
  • আপনার আমার সকলেই জানা নারীরা আমাদের দেশের অর্থনীতিতে কতটা গুরুত্ব বহন করে। নারীরা আজ গার্মেন্টস্, অফিস, হাসপাতাল, বিমান, সামরিক বাহীনি, গৃহ কর্মী, সুইপার ইত্যাদি বহু পেশায় কাজ করে, যদি নারীরা এই পেশায় কাজ করতে না পারে তবে প্রয়োজন হবে পুরুষের। তখন দেখা যাবে দক্ষ কর্মীর অভাবে সেইসব পেশায় উপযুক্ত পুরুষ পাওয়া যাচ্ছে না। সৃষ্টি হবে পদ শূন্যতা। দেশের বৈদেশিক আয়ের একটা বড় অংশ আশে গার্মেন্টস্ সেক্টর থেকে। নারীদের শ্রমই সেই গৌরবের দাবীদার। শুধু মাত্র পুরুষের শ্রম দিয়ে দেশকে অথনৈতিক ভাবে শক্তিশালী করা সম্ভব নয়।
  • নারীদের যদি ঘরে বাহিরে পুরুষের সাথে কাজ করতে না দেয়া হয় তবে দেশে দারিদ্রের হারও বৃদ্ধি পাবে। যেমন ধরুন কেন পরিবারের কোন পুরুষ মানুষ নাই বা পরুষ থাকলেও তার কর্ম করার ক্ষমতা নাই সেই ক্ষেত্রে এক জন নারীই পারে সংসারের সকল দায়িত্ব নিতে। ছেলে মেয়ের পড়া-লেখা সহ দুই বেলা খাওয়ার জন্য নারীর পরিশ্রম এই ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া কিছুক্ষণ আগে উল্লেখ করলাম গার্মেন্টসের নারী শ্রমীকদের দেশে অর্থনীতিতে অবদানের কথা। একটি গ্রামের মেয়ে যদি শহরে এসে কোন গামেন্টসে কাজ করে বাবা-মা’কে টাকা পাঠিয় এতে গ্রামের একটি পরিবার দারিদ্রতা থেকে মুক্ত হতে পারে। এছাড়াও সংসারে পুরুষের পাশাপাশি নারী কাজ করে সংসারের বাড়তি আয় যুক্ত করে পরিবারের অর্থিক অবস্থার পরিবর্তন করতে পারে। এতিম বা স্বজন হীন কোন নারীর পক্ষে চাকরি ছাড়া টিকে থাকা কঠিন। সেই ক্ষেত্রে শুধু মাত্র ধর্মিয় কারণ দেখিয়ে নারীকে গৃহে বন্ধি করে রাখা কতটা যুক্তিযুক্ত তা আমার মাথায় ধরে না। বর্তমানে বিবাহ বিচ্ছেদের (তালাক) সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, তালাকের পর অনেক সময় সন্তানের দায়িত্ব স্ত্রীদের উপরই পড়ে। তখন সন্তান লালন পালনের জন্য একজন নারীকে চাকরি করা ছাড়া উপায় থাকে না।
  • নারীকে ঘরে বন্ধি করে রেখে শুধু মাত্র পুরুষ একা যদি সমাজের সকল দায়িত্ব গ্রহণ করে তবে মানুষ হিসেবে নারী সমাজে আত্মসম্মান হারাবে ব’লে আমি মনে করি। সমাজের কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজে অংশ গ্রহণের দায়িত্ব না দিয়ে সমাজের অর্ধেক জনগোষ্ঠী এই নারীদেরকে ঘরের কোণে রেখে দেয়া তাদের জন্য সম্মান হানীকর। শুধু মাত্র যে পুরুষরাই সমাজের সকল গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পারে এটা ভুল, একজন নারীও পারে। বর্তমানে আমাদের দেশের সরকার প্রধান ও বিরোধীদল প্রধন নারী। তাঁরা তাদের নিজস্ব দল সহ দেশ পরিচালনা করছে। এ থেকে বুঝা যায় নেতৃত্ব দানে নারী অক্ষম নয়। তাহলে এত বড় একটি শক্তিকে শুধু ধর্মের দোহায় দিয়ে গৃহে বন্দী রাখার যুক্তি আবশ্যিই নারীর জন্য আত্মসম্মানহানীকর।
  • নারীকে গৃহ বন্দী করে রাখলে সমাজে শিক্ষার হারও হ্রাস পাবে। একটা কথা আছে, “তুমি আমাকে একটা শিক্ষিত মা দাও আমি তোমাকে একটি শিক্ষিত জাতি দিবো”। সমাজে যদি নারী কে গৃহ বন্ধি করে রাখার নিয়ম চালু হয় বা তাদেরকে অবাদে সমাজে বিচরণ করতে দেয়া না হয়। যদি প্রতি পরিবারে বা সমাজে নারীকে রাস্তায় বের হতে কড়া নিয়ম অনুসরণ করতে হয় তবে এক সময় স্কুলে কন্যা শিশুর উপস্তিতি হ্রাস পাবে। এতে নারী শিক্ষার হারও হ্রাস পাবে।
  • নারী শিক্ষার হার হ্রাস পাওয়ার সাথে সাথে সমাজে কুসংস্কারের পরিমান বৃদ্ধি পাবে। কুংস্কার মানুষের নিত্য দিনের আচরণের মাধ্যেই বিচরণ করে, মানুষই কুসংস্কার লালন করে। যদি মানব সমাজের একটি বিরাট অংশ অশিক্ষিতই থেকে যায় তবে সমাজ থেকে কুসংস্কার দূর করাও কঠিন হয়ে যাবে। এছাড়া মানুষ যত তার আশপাশের পরিবেশ ভালো করে চিনতে পারবে ততই ভালো-মন্দ বুঝতে পারে, যদি নারীকে মুক্ত সমাজ থেকে আলাদা রাখা হয় তবে তাদের বাহির জগৎ সম্পর্কে ধারণা থাকবে কম। এর ফলে কুসংস্কার গুলো তাদের মাঝে সহজেই স্থান পাবে। এমনকি তখন নারী শিশু জন্মনেয়াটা মা-বাবার পাপের ফল হিসেবে ধরা হবে। বর্তমানে ভারত, পাকিস্তান, সৌদি আরব সহ কিছু কিছু ধর্ম প্রধান এলাকয় এমন কুসংস্কারও প্রচলন আছে।
  • যদি নারীকে সমাজে পুরুষের সমান অধিকার দিয়ে চলতে দেয়া না হয় তবে এরা সমাজের একটি অবহেলিত অংশে রূপান্তরিত হবে। এতে দম্পতিদের মাঝে কন্যা সন্তান জন্ম দানে অনিহা তৈরি হবে। একটা কন্যা সন্তান জন্ম দিয়ে সমাজ ও আত্মিয় স্বজনদের কাছে নিজেকে ছোট মনে করবে দম্পতি। ফলে কন্যা সন্তান গ্রহণে ও জন্মদানে অনিহা বাড়বে। এতে সমাজে পুরুষ বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিবে অপর নারীর সংখ্যা হ্রাস পাবে।।
  • কন্যাশিশু হত্যা বৃদ্ধি পাবে। বর্তমানে বহু দেশে কন্যা সন্তান হত্যার নজির আছে। সুখের বিষয় এটা আমাদের সমাজে নাই। যদি কন্যা সন্তান গ্রহণে বাবা-মা অনিহা দেখায় বা নিজেদের পাপের ফল মনে করেন তবে কন্যা শিশু জন্মানোর সাথে সাথে নবজাত শিশু বা মায়ের পেটে থাকা অবস্থায় ভ্রুন হত্যাও বৃদ্ধি পাবে।
  • সমাজে বাল্য বিবাহের হারও ‍বৃদ্ধি পাবে। কন্যা সন্তান থেকে কোনো আর্থিক সুফল না পাওয়ার কারণে অনেক পরিবারের কাছে কন্যা সন্তান ভোজা হয়ে যাবে। সেই সকল কন্যা সন্তানের বাবা তার মেয়েকে ঘরে বসিয়ে বসিয়ে খাওয়ানোর চেয়ে বিয়ে দিয়ে দেয়াই ভালো মনে করবে, যত তাড়াতড়ি কন্যার বিয়ে দিয়ে বাবা-মায়েরা তাঁদের গা হালকা করতে চাইবে। এত বাল্য বিবাহের হার বৃদ্ধি পাবে এবং অল্প বয়সে মা হতে গিয়ে মাতৃ-মৃত্যুর হারও বৃদ্ধি পাবে বলে আমি মনে করি। এছাড়া সংসারে কন্যা সন্তানের কোনো গুরুত্ব নেই মনে করে তাদের পুষ্টিকর খাবার দিতে চাইবে না বাবা মা। যার ফলে নারীরা পুষ্টিহীনতায় ভুগতে পারে পারে।
  • নারী নির্যাতনও থেমে থাকবে না। যখন নারী বাহিরে জগৎ সম্পর্কে কম জানবে তখন নারী বান্দব আইন কানুন সম্পর্কেও তাদের ধারণা থাকবে না। তারা জানবে না কিভাবে প্রতিবাদ করতে হয়। তারা জনবেনা যদি স্বামী নির্যাতন করে তবে কি করে তার প্রতিবাদ করতে হবে। অথবা প্রকাশ করতে পারলেও তাদের কথার গুরুত্ব কম পাবে তখন ভিতরে ভিতরে প্রতি পরিবারেই নারী নির্যাতন বৃদ্ধি পাবে। ঘরের ভিতরে যদি কোন নারীকে নির্যাতন করা হয় তবে তা বাইরের কেউ জানবে না। মানসিক নির্যাতন করলেও কেউ জানবে না। কয়েক বেলা ভাত না দিলেও কেউ জানবে না। এতে চরম নারী নির্যাতন বৃদ্ধি পাবে। নারী বাক স্বাধীনতা কম পাবে ব’লে তারা তা কাউকে বলতেও পারবে না বা আইনের আশ্রয়ও নিতে পারবে না। এইভাবে দেখা দিবে চরম বিশৃঙ্খলা।
তাই আমি মনে করি নারীকে শুধু ইভটিজিং এর কারণে বা গুটি কয়েক সমস্যা দেখিয়ে কর্ম বিমুখ করে রাখা বা তাদের স্বাধীনতা ক্ষর্ব করা উচিৎ নয়। এত সমাজে বিশৃঙ্খলা কমার পরিবর্তে বৃদ্ধি পাবে পক্ষান্তরে নির্যাতনও বৃদ্ধি পাবে। নারীকে দিতে হবে পুরুষের মতই সব বিষয়ে সমান অধিকার।

2 Comments

  1. Vai apni prothom j dabi duita bollen ta mohanobi bole gesen... Purush aar nari kokhono eksathe kaj korte pare na.. eta islam e noshiddho... Aar ekta kotha mhanobi kokhono oshantir kotha bolenni.. Bangladesh aar kichu na korte paruk meyeder borkha porata to baddhogoto korte pare!! Sutorang na jene bujhe kono kotha likhben na.. jader ke apni dhormandho boltesen tarai dhormotake bujhe... Apnar lekha porei bujhagese j apno dhormo somporke kisui janen na

    ReplyDelete
  2. Vai apnar sob kotha vul na.. but kichu kotha islam birodhi... Narike ghorer moddhe theke pora lekhar kotha bola hoise.. pora lekha korte nished kore nai islam...

    ReplyDelete
Post a Comment
Previous Post Next Post