ভাবসম্প্রসারণ : নাম মানুষকে বড় করে না, মানুষই নামকে বড় করে তোলে

নাম মানুষকে বড় করে না, মানুষই নামকে বড় করে তোলে

মহাকালের অনন্ত প্রবাহে মানুষ পায় সীমাবদ্ধ এক জীবন। সেখানে Life is a vision between a sleep and a sleep- অনন্ত ঘুমের মধ্যে ক্ষণিকের জন্যে চোখ মেলে তাকানো। এই ক্ষণিক সময়ে প্রত্যেক মানুষই তার পরিচয় চিহ্নিত করার জন্যে পায় নিজস্ব একটি নাম। কালের প্রবাহে তাদের অনেকের নামই হারিয়ে যায়। কিন্তু কর্মকৃতির জন্যে কারো কারো নাম পায় মহিমা, উত্তর-পুরুষের কাছে হয় স্মরণীয়।

জীবন অবসান হলেও যে সব মানুষের নাম স্বরণীয় হয়ে থাকে তাঁরা তাঁদের নামের কারণে স্মরণীয় হন না, স্মরণীয় বরণীয় মহিমা পান তাঁদের কর্মের জন্যে। মহৎ সাধনা ও অসামান্য কর্ম-অবদানের জন্যে মানুষের নাম মানুষ মনে রাখে। কোনো কীর্তি না থাকলে কারো নাম মানুষ স্মরণ করে না। যতই চিত্ত-বৈভব, প্রভাব-প্রতিপত্তি থাকুক, নাম যতই জৌলুসপূর্ণ হোক কর্মসাধনায় নির্বেতি প্রাণ না হলে সে নাম মুছে না যেয়ে পারে না। রবীন্দ্রনাথ বিখ্যাত ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছেন। কিন্তু ঐ পরিবারের সকলকে ছাপিয়ে বড় হয়ে উঠেছে রবীন্দ্রনাথের নাম। নজরুল সাধারণ পরিবারে জন্মেছিলেন। কিন্তু অসামান্য অবদানের জন্য তাঁর নাম চির জাগরুক হয়ে আছে আমাদের মধ্যে।

মানুষ ক্ষণস্থায়ী জীবনকে মহিমান্বিত করতে পারে তাঁর কর্ম-অবদানের মধ্য দিয়ে। মহৎ কীর্তির বলে মানুষের নাম দেশ কালের সীমারেখা ছাড়িয়ে যায়।


এই ভাবসম্প্রসারণটি অন্য বই থেকেও সংগ্রহ করে দেয়া হলো


মূলভাব : নাম মানুষের প্রধান বিচার্য বিষয় নয়, গুণই মানুষের প্রধান বিচার্য বিষয়।

সম্পসারিত ভাব : পিতা-মাতা যথেষ্ট চিন্তা-ভাবনা করে পুত্র কন্যার নাম রাকেন। নামের প্রতিই তাদের সবচেয়ে বেশি ঝোঁক দেখা যায়। সন্তানের জীবনে নামের মর্যাদা রক্ষিত হোক- এমনই একটি কামনা করে তাঁরা বিভিন্ন মহাপুরুষদের নামের সঙ্গে মিল রেখে নামকরণ করেন। কিন্তু পিতা-মাতা বা গুরুজনদের এ বাসনা সবসময় পূর্ণ হয় না। অনেক সময় এ নাম কানা ছেলের নাম “পদ্মলোচন” এর মতই অর্থহীন হয়ে পড়ে।

আবার মাঝে মধ্যে এমনও দেখা যায় যে, চেষ্টা ও চরিত্রগুণে মানুষ অনেক সময় তাঁর অনুত্তম নামকেও গৌরবান্বিত ও মর্যাদাশীল করে তুলেন। তখন ঐ নামই পরবর্তীকালে শ্রুতিমধুর এবং বৈশিষ্ট্যপূর্ণ হয়ে মাতা-পিতার মুখ উজ্জ্বল করে।

বস্তুত গুণই মানুষের প্রধান আলোচ্য বিষয়। গুণের দ্বারাই মানুষ পৃথিবীতে অমর হয়ে বেঁচে থাকেন। তাঁদের কর্ম এবং নাম হয় মানুষের কাছে স্বরণীয় এবং বরণীয়। গোলাপকে যে নামেই ডাকা হোক না কেন তা ঠিক মত গন্ধ বিতরণ করে মানব চিত্তকে বিমুগ্ধ করবেই।

নাম কিংবা বংশ পরিচয়ই বড় নয়। কর্মফলই নামকে স্মরণীয় করে রাখে।

1 Comments

  1. বাহ দারুন সম্প্রসারণ টা

    ReplyDelete
Post a Comment
Previous Post Next Post