ভাবসম্প্রসারণ : সুসময়ে অনেকেই বন্ধু বটে হয় / অসময়ে হায় হায় কেহ কারো নয়।

সুসময়ে অনেকেই বন্ধু বটে হয়
অসময়ে হায় হায় কেহ কারো নয়।

মানুষের জীবন বন্ধুত্বের পরীক্ষা হয় দুঃসময়ের দিনগুলোতে। তখন যারা পাশে থাকে তারাই প্রকৃত বন্ধু। সুসময়ে যারা সাময়িক বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে সেই সুদিনের বন্ধুরা নিতান্তই স্বার্থপর মাত্র।

মানুষ পৃথিবীতে একাকী জন্ম নেয় এবং একাকী মৃত্যু বরণ করে। কিন্তু কেউই পৃথিবীতে একা বাঁচতে চায় না। এই পৃথিবীতে প্রতিটি মানুষই জীবনের চলার পথে অন্যের সাহচর্য চায়, চায় অন্যের অকৃত্রিম বন্ধুত্ব। বন্ধুর সাহচর্য ও ভালোবাসা প্রতিটি মানুষের জীবনই কাম্য প্রিয় সম্পদের মতো। বন্ধুর সঙ্গেই আমরা আমাদের সুখ-দুঃখকে সমভাবে ভাগ করে নেই। দুঃখ ও বিপদের দিনে সহৃদয় বন্ধু যখন পাশে এসে দাঁড়ায় তখন আমরা মনে বল পাই। সাহসের সঙ্গে বিপদকে মোকাবেলা করতে পারি।

কিন্তু জগতে এক ধরনের স্বার্থপর লোক আছে যারা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের হীন আশায় অন্যের সঙ্গে বন্ধুত্বের মেকি সম্পর্ক গড়ে তোলে। এরা মানুষের সুদিনে তাদের কাছে বন্ধুর বেশে আসে। আর সাময়িক বন্ধুত্বের সূত্র ধরে নিজের স্বার্থ হাসিল করে, আখের গুছিয়ে নেয়। প্রকৃতিগতভাবে এরা যেন ‘বসন্তের কোকিল’। মানুষের সংকটের দিনে এদের দেখা পাওয়া যায় না। মানুষের দুঃখ ও বিপদের দিনে তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্যে এদের সামান্য বিবেকবোধও কাজ করে না।

সুতরাং প্রকৃত বন্ধুত্বের স্বরূপ স্পষ্ট হয় মানুষের দুর্দিনের মুহূর্তে। যে বন্ধু সুখে-দুঃখে, সুদিনে-দুর্দিনে মানুষের পাশে থাকে, ভালোমন্দ সব কিছুতে সমভাগী হয় সেই বন্ধই প্রকৃত বন্ধু। যে বন্ধু স্বার্থপর দুঃসময়ে তার দেখা পাওয়া যায় না।

বস্তুত, স্বার্থান্বেষী মানুষ কখনো প্রকৃত বন্ধু হতে পারে না। মানুষের জীবনে দুঃসময়ের বন্ধুই প্রকৃত বন্ধু।


এই ভাবসম্প্রসারণটি অন্য বই থেকেও সংগ্রহ করে দেয়া হলো


মূলভাব : সুদিনে অনেক বন্ধু জোটে। কিন্তু দুঃসময়ে প্রকৃত বন্ধু খুঁজে পাওয়া বড়ই মুশকিল। কৃত্রিম বন্ধুরা মূলত সুযোগ সন্ধানী। তারা বন্ধুত্বের নামে নিজের স্বার্থ হাসিল করে। বন্ধুর দুর্দিনে এদের দেখা পাওয়া যায় না।

সম্প্রসারিত ভাব : আমাদের এ চলমান জীবনে প্রকৃত বন্ধুর সংখ্যা অনেক কম। কৃত্রিম বন্ধুই এখন সমাজে বেশি। নিজের স্বার্থের জন্য বন্ধু সেজে অনেকেই তোষামোদ করে এবং চাটুকারের ভূমিকায় অভিনয় করে। মৌমাছি ছুটে যায় মধু সংগ্রহের জন্য কিন্তু যখনই তার মধু নেয়া শেষ হয়ে যায় তখন আর তাকে ফুলে বসতে দেখা যায় না। তেমনি এ ধরনের বন্ধুদেরকে সঙ্কটের সময় আর কাছে পাওয়া যায় না। আমাদের সমাজে নকল বন্ধুর অভাব নেই। তাইতো আমাদের সাহিত্যে প্রবাদ-প্রবচনে কিংবা বাগধারায় তাদের উল্লেখ পাওয়া যায়। যেমন- বসন্তের কোকিল, দুধের মাছি, কাজের বেলায় কাজী-কাজ ফুরালেই পাজী ইত্যাদি। আমাদের নাটক, গল্প, উপন্যাসেও এ ধরনের নকল বন্ধুদের চরিত্র চিত্রণ করা হয়। খল ভূমিকায় অবর্তীণ হয়ে এরা মানুষের সর্বনাশ করে। এদের হাতছানিতে বহু সাজানো সংসার নষ্ট হয়, ভাইয়ে ভাইয়ে বিরোধের সৃষ্টি হয়, বহু সংসার তছনছ হয়ে যায়। এরা সংসারের কাঁটা। এদের মধুর বচনে অনেকেই পাগল হয়। আসল রূপ সহজে কেউ ধরতে পারে না। অপরদিকে প্রকৃত বন্ধুরা কখনো বিপদ দেখে বন্ধুকে ছেড়ে চলে যায় না। সাধ্যমত চেষ্টা করে বন্ধুকে বাঁচাতে। বন্ধুর দুর্দিনে তারা সাহায্যের হাত প্রসারিত করে ছুটে আসে। বন্ধু মানুষের সবচেয়ে আপনজন। আর যদি বন্ধু আপনই না হলো তাহলে কিসের বন্ধু? যখন মনের মিল হয় তখনই বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। প্রকৃত বন্ধুরা, বন্ধুর জন্য জীবন পর্যন্ত বিলিয়ে দেয়। ইংরেজিতে একটা প্রবাদ আছে- A friend in need, is a friend indeed. অর্থাৎ দুঃসময়ের বন্ধুই প্রকৃত বন্ধু। এ জগতে কৃত্রিম বন্ধুর অভাব নেই। তাই তাদের এড়িয়ে চলাই মঙ্গল। কেননা, তারা সবার শত্রু। এদের দ্বারা জগতের কোনো কল্যাণ সম্ভব নয়।

1 Comments

  1. আমাকে একটা রচনা দিন (পরিবেশ ও বিজ্ঞান)

    ReplyDelete
Post a Comment
Previous Post Next Post