↬ মানুষ ও মনুষ্যত্ব
↬ মানবজীবনে মনুষ্যত্বের ভূমিকা
ভূমিকা : মানুষ মনুষ্যত্বের অধিকারী। মানুষ্যত্ববোধ, মনুষ্যত্বের বিকাশ ও মনুষ্যত্বের কার্যকর অস্তিত্বের মধ্যেই ‘মানুষ’-এর প্রকাশ। মনুষ্যত্ব ছাড়া মনুষ নয়। মনুষ্যত্ব আছে বলেই মানুষ অর্থাৎ মনুষ্যত্ব ধারণ বা লালন করেই তবে মানুষ।
মনুষ্যত্ব কী? : মনুষ্যত্ব মানুষের সেসব গুণাবলি যা মানুষ ধারণ করে, লালন করে এবং জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে সেগুলো প্রয়োজনমতো কার্যকর করে। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন- ‘ভালো-মন্দের দ্বন্দ্বের মধ্য থেকে মানুষ ভালোকে বেছে নেবে বিবেকের দ্বারা, প্রথার দ্বারা নয়- এই হচ্ছে মনুষ্যত্ব।’ এ প্রসঙ্গে তিনি আরোও বলেছেন, ‘মনুষ্যত্ব আমাদের পরম দুঃখের ধন, তাহা বীর্যের দ্বার লভ্য।’ মনুষ্যত্ব প্রসঙ্গে ডা. লৎফর রহমানের পর্যবেক্ষণ হলো, ‘প্রতিদিনের ছোট ছোট কথা, ছোট ছোট ব্যবহার, হাসি-রহস্য, একটুখানি সহায়তা, একটু স্নেহের বাক্যে মনুষ্যত্ব সূচিত হয়।’ অন্যভাবে বলা যায়, মানুষের মস্তিষ্কে মনুষ্যত্বের উপাদানগুলো সজ্জিত আছে, কঠোর সাধনা ও চর্চার ম্যে দিয়ে তা অর্জন করতে হয়। এই অর্জিত উপাদনগুলোর সমন্বেই মনুষ্যত্ব।
মনুষ্যত্বের উপাদান : মানুষের যেসব গুণ জগতের অন্যান্য প্রাণী থেকে মানুষেকে পৃথক করেছে, মানুষকে শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা দিয়েছে, সেই গুণগুলোই মনুষ্যত্বের উপাদান। মানুষের চেতনায়, মানুষের প্রতিভায় এসব গুণ সুপ্ত থাকে। মানুষকে তার চলার পথের প্রেরণায়, দুঃখে, সান্ত্বনায়, উদ্যোগে, উদ্যমে, আদরে, আপ্যায়নে, ভালোবাসায় এসব গুণের চর্চা করতে হয়। প্রতি মুহূর্তে, প্রতিটি পদক্ষেপে, প্রতিটি কার্যক্রমে উপাদানগুলোর অনুশীলন, প্রয়োগ ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তা ধাতস্থ ও আত্মস্থ করতে হয়। এ উপাদানগুলোহলো স্নেহ-মমতা, প্রীতি-প্রেম, সহযোগিতা, সহানুভূতি, সহমর্মিতা, ত্যাগ, সৌজন্য, দয়া, সাধুতা, ক্ষমা, তিতিক্ষা, অনুগ্রহ, উদারতা, আত্মবিশ্বাস, তীক্ষ্ন, দৃষ্টি, সমদর্শন, কল্যাণ চিন্তা ইত্যাদি। এসব উপাদান মানুষের মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করে, পরস্পরের প্রতি সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি গড়ে তোলে, পারস্পরিক সুন্দর সম্পর্ক তৈরি করতে উদ্বুদ্ধ করে, পরস্পরকে ভালোবাসতে অনুপ্রাণিত করে।
মনুষ্যত্ব চর্চা : পৃথিবীজুড়ে কোটি কোটি মানুষ। মানুষের মধ্যেই মনুষ্যত্বের চর্চা। অর্থাৎ মনুষ্যত্ব চর্চার ক্ষেত্র হলো মনুষ। আকার-আকৃতি, রঙে ঢঙে মানুষ পৃথক হতে পারে; কিন্তু তাদের মধ্যে মনুষ্যত্বের উপাদন অর্থাৎ গুণগুলোর মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। যে কারণে এসব গুণের চর্চায়ও কোনো পার্থক্য নেই। দাদা-দাদি, নানা-নানী, বাবা-মা, চাচা-চাচি, মামা-মামি, ফুপা-ফুপি, খালা-খালু, ভাই-বোন, বন্ধুবান্ধব, পরিচিত-অপরিচিত সব মহলের মধ্যে সব মহলকে নিয়েই মনুষ্যত্ব চর্চা হয়। এর বাইরে জীবজগৎ ও প্রাণিজগতের প্রতিও মানুষ মনুষ্যত্বের চর্চা করতে পারে। যত্ন, পরিচর্যা ও সংরক্ষণের মাধ্যমে মানুষ তাদের প্রতি মনুষ্যত্বের প্রকাশ ঘটাতে পারে। কারণ মানুষ তাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ’আশরাফুল মাখলুকাত’। তাই কবির দৃঢ় উচ্চারণ-
মনুষ্যত্বই মানুষের ধর্ম : মানুষ তার প্রকৃতি বা স্বভাবে যেমন কল্যাণকর বৈশিষ্ট্য বা ধর্ম লালন ও বিকাশ সাধন করে তাই মনুষ্যত্ব। মানুষ মানুষকে ভালোবাসবে, মানুষের অধিকার দেবে, মানুষকে সম্মান করবে- এটাই মনুষ্যত্ব। একই সাথে প্রকৃতিকে ভালোবাসবে, জীবজগৎকে ভালোবাসবে ও সেবা করবে- এটাই মনুষের ধর্ম। কেননা জীবকে ভালোবাসলে, তাদের প্রতি দয়ার্দ্র হলে স্রষ্টাও খুশি হন। এই পৃথিবীকে সুন্দর করে রাখার জন্যই জীবজগতের সৃষ্টি। আর জীবজগৎ ও প্রকৃতিকে সেবা ও সংরক্ষণ করার মাধ্যমে সুস্থ ও সুন্দর থাকবে মানুষ। কাজেই পৃথিবীতে যা কিছু আছে মানুষ তাদের সেবা করার মধ্য দিয়ে পরম উপকার ও প্রশান্তি লাভ করবে। এর ফলে ঈশ্বর ও স্রষ্টার সান্নিধ্য লাভ করাও সহজ হবে। এজন্যই স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন-
মানুষের সেবা এবং প্রকৃতি ও জীবজগতের সেবাই মানুষের ধর্ম। এর মধ্য দিয়েই মনুষ্যত্বের প্রকাশ ও বিকাশ ত্বরান্বিত হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যথার্থই বলেছেন- ‘মানুষের ধর্ম মনুষ্যত্ব, তাহাকে আর কোনো নাম দিবার দরকার পড়ে না।’
মনুষ্যত্ব ও পরিবার : মনুষ্যত্বের প্রথম শিক্ষা মানুষ তার পরিবার থেকেই লাভ করে। কেননা মানুষ একসময় পরিবার গঠন করেছে মনুষ্যত্বের বোধ বা চেতনা থেকেই। পরস্পর নির্ভরতা, পরস্পর ভালোবাসা, স্নেহ-মায়া-মমতার চর্চা, কর্তব্য ও দায়িত্ববোধ, সাহায্য-সহযোগিতার মনোভাব, সহানুভূতি ও সহমর্মিতা প্রদর্শন- এ সবকিছু মানুষ পরিবার থেকেই শেখে। পারিবারিক বন্ধন বলতে যা বোঝায় তা মনুষ্যত্বের চর্চা ও অর্জনেরই ফল।
মনুষ্যত্ব ও সমাজ : অনেক পরিবার নিয়েই সমাজ। মানুষ পরিবার থেকে যা কিছু শেখে তার যথার্থ প্রয়োগ হয় সমাজে। বিনয়, সৌজন্য পারস্পরিক মর্যাদাবোধ, পারস্পরিক সহযোগিতা ও কর্মজজ্ঞের বন্ধন সমাজকে সুন্দর ও সৌহার্দ্যপূর্ণ করে তোলে। মনুষ্যত্বের বিকাশে সমাজও একইভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মনুষ্যত্ববোধের অভাব কারও মধ্যে দেখা গেলে সমাজ তার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়। ফলে তার মধ্যে মনুষ্যত্ববোধ জন্মে। তাকে দেখে অনেকেই সচেতন হয়। আদব-কায়দা, শিষ্টাচার, দয়া-মায়া, সহানুভূতির প্রকাশ ঘটলে সমাজ তার প্রশংসা করে, সম্মান করে। আর এসবের অবক্ষয় বা অবনতি ঘটলে সমাজের মানুষ চিন্তিত হয়, সংশোধনের ব্যবস্থা গ্রহণ করে। সুতরাং মনুষ্যত্ব চর্চার মাধ্যমে সমাজকে সুন্দর, সুষম, গতিশীল ও কল্যাণকর করে গড়ে তোলা যায়। এজন্যই প্রাচীন পারস্য উপদেশে বলা হয়েছে- ‘পৃথিবীর কাছে তোমার মনুষ্যত্বের পরিচয় হচ্ছে তোমার সত্যিকারের নাম।’
শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব : শিক্ষার সাথে মনুষ্যত্বের সম্পর্ক নিবিড়। কেননা ’জীবসত্তার ঘর থেকে মানবসত্তার (মনুষ্যত্ব) ঘরে উঠবার মই হচ্ছে শিক্ষা।’ মানুষকে মনুষ্যত্বের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়াই শিক্ষার কাজ। যে মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্বের চর্চা ও প্রকাশ নেই তার আত্মার মৃত্যু অনিবার্য। কেননা শিক্ষা মনুষ্যত্ব অর্জনের পথ দেখায়, মানুষের মধ্যে মানবিক মূল্যবোধ সৃষ্টি করে। মানবিক মূল্যবোধ অর্থাৎ মনুষ্যত্ব ছাড়া মানুষ প্রকৃত মানুষ হয়ে উঠতে পারে না। শিক্ষার মাধ্যমে মানুষ মুক্তচিন্তা করতে শেখে, বুদ্ধির স্বাধীনতা লাভ করে এবং আত্মপ্রকাশের স্বাধীনতা অর্জন করে। এর ফলে মনুষ্যত্বের চর্চার পথ সুগম, সুন্দর ও পরিশীলিত হয়।
মনুষ্যত্ব ও সাহিত্য : মনুষ্যত্বের সাথে সাহিত্যের সম্পর্ক খুবই ঘনিষ্ট। কেননা সাহিত্যে মনুষ্যত্বেরই সার্বিক প্রতিফলন ঘটে। মনুষ্যত্বের উপাদানগুলো সাহিত্যে পরিস্ফুট হয়ে ওঠে। যে কারণে মানুষ সাহিত্য পাঠ করে, সাহিত্যের ঘটনা ও চরিত্র থেকে শিক্ষা নেয়। যারা সাহিত্য রচনা করেন তারাও মানবিক দিকগুলো সাহিত্যে তুলে ধরেন। এ বিষয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন-
“সাহিত্যের মধ্যে মানুষের হাসি-কান্না, ভালোবাসা, বৃহৎ মানুষের সংসর্গ এবং উত্তাপ, বহু জীবনের অভিজ্ঞতা, বহুবর্ষের স্মৃতি, সর্বশুদ্ধ মানুষের একটা ঘনিষ্ঠতা পাওয়া যায়। সেইটেতে বিশেষ কী উপকার করে পরিষ্কার করে বলা শক্ত; এই পর্যন্ত বলা যায়, আমাদের সর্বাঙ্গীণ মনুষ্যত্বকে পরিস্ফুট করে তোলে।”
মনুষ্যত্ব ও মহামানব : যুগে যুগে যখনই মনুষ্যত্বের অবমাননা হয়েছে, মনুষ্যত্ব শৃঙ্খলিত হয়েছে, সর্বত্র হতাশা ও অবক্ষয় দেখা দিয়েছে তখনই মহামানবরা আবির্ভূত হয়েছেন। মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে এসেছেন, পশুত্ব থেকে মনুষ্যত্বের মুক্তি নিশ্চিত করেছেন। হিংসা, সংঘাত ও অরাজকতা থেকে মুক্ত করে মানুষকে দেখিয়েছেন মানবধর্মের শান্তিময় পথ- মনুষ্যত্বের পথ। কেননা মনুষ্যত্বকে আড়াল করে বা অবলুপ্ত করে প্রকৃত মানুষ হওয়া অসম্ভব। একই সাথে সুখ, শান্তি ও নিরাপত্তাপূর্ণ পৃথিবী গড়ে তোলাও সম্ভব নয়। মনুষ্যত্বের চর্চা ও বিকাশের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ বিশ্ব নির্মাণে নিজেদের উৎসর্গ করেছেন গৌতম বুদ্ধ, শ্রীকৃষ্ণ, যিশু খ্রিস্ট, হযরত মুহম্মদ (স) প্রমুখ মহামানব।
মনুষ্যত্বের অবমাননা : মানুষ মনুষ্যত্বের প্রতীক। বিভন্ন সময়ে মানুষই আবার মনুষ্যত্বের অবমাননা করেছে। মনুষ্যত্বের অবমাননা হয়েছে ভারতবর্ষে। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, সম্প্রদায় মানুষকে নানা ভাগে বিভক্ত করে। আরব দেশসমূহে মেয়ে শিশু হত্যাসহ নানা অমানবিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে মনুষ্যত্ব ভূলণ্ঠিত হয়েছে। ইউরোপের দেশসমূহে মধ্যযুগে নেমে এসেছিল অন্ধকার, মনুষ্যত্বকে দূর করে পেশিশক্তির উত্থান ও ধর্মের নামে অধর্ম বিস্তার লাভ করেছিল। মনুষ্যত্বের অবমাননা হয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসি নিধনযজ্ঞ ও পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণে অসংখ্য জীবন ধ্বংসের মাধ্যমে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নির্বিচারে ৩০ লক্ষ মানুষ হত্যা, আড়াই লক্ষ নারী নির্যাতন ও ধ্বংসযজ্ঞের মাধ্যমে মনুষ্যত্বের অবমাননা হয়েছে। সাম্প্রতিক ইরাক যুদ্ধের নির্বিচার হত্যা ও অমানবিক কর্মকাণ্ড মনুষ্যত্বের অবমাননার জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত। আজও ধর্মের নামে, সম্প্রদায়ের নামে নানা অছিলায় মনুষ্যত্বের অবমাননা চলছে। এসব জঘন্য কাজের সাথে যারা জড়িত তারা হীন ভেদবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ, তারা মানুষ নামের কলঙ্ক। কিছু রাষ্ট্রও নিজেদের হীনস্বার্থে সারা পৃথিবীতে মনুষ্যত্বের অবমাননার জন্য দায়ী। ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনারা রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মাধ্যমে যেখাবে রাখাইন রাজ্যের রহিঙ্গা জনগোষ্ঠির উপর যে অমানবিক নির্যাতন করে তাদের দেশ ছাড়া করেছে তা ইতিহাসে জঘন্যতম মনুষত্বহীন কাজ।
জাতিসংঘের ভূমিকা : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় হত্যাযজ্ঞে মনুষ্যত্বের অবমাননার ভয়ঙ্কর ও বীভৎস রূপ দেখে শুভ বুদ্ধিসম্পন্ন কিছু রাষ্ট্রনায়ক-ব্যক্তিত্বের পরামর্শে গঠিত হয় জাতিসংঘ। পরবর্তীতে ঘোষিত হয় মানবাধিকার সনদ। যে সনদে স্বাক্ষর করেছে পৃথিবীর প্রায় সব দেশ। মানুষ হিসেবে মানুষের অধিকার ও মর্যাদা রক্ষায় এ সনদ নিঃসন্দেহে একটি মাইলফলক। মনুষ্যত্বের রক্ষাকবচ হিসেবে এ সনদ সারা পৃথিবীতে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় কার্যকর ভূমিকা পালন করছে।
মনুষ্যত্ব ও বাংলাদেশ : প্রাচীনকাল থেকেই বাংলাদেশের মানুষ মনুষ্যত্বের চর্চা ও এর বিকাশ সাধনে তৎপর। যে কারণে বিভিন্ন জাতি, গোষ্ঠী, ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করছে। সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির দিক থেকে বাংলাদেশ সারা বিশ্বে ঈর্ষণীয় অবস্থানে রয়েছে। কোনো কোনো সময় দু’একটি ছোট এলাকায় মনুষ্যত্বের অবমাননা হলেও তা কখনো ব্যাপক আকার ধারণ করেনি। কেননা বাংলাদেশের শান্তিপ্রিয় ও মানবিকবোধসম্পন্ন মানুষ এ ধরনের জঘন্য কার্যকলাপ পছন্দ করে না। এদেশের মানুষ সমাজজীবনে, কাব্যে, সাহিত্যে, চিত্রশিল্পে, সংগীত ও অভিনয় শিল্পে মনুষ্যত্ব তথা মানবিকবোধের স্বাক্ষর রেখেছে চিরকাল। আজও তা অব্যাহত রয়েছে। মনুষ্যত্বের লালন ও বিকাশে এ দেশের মানুষ সর্বস্তরে অনন্য ভূমিকা রেখে চলেছে, যা সত্যিই প্রশংসনীয়।
মনুষ্যত্বের উৎকর্ষসাধন : মানবজীবনে এবং মানব কল্যাণে মনুষ্যত্বের বিকাশ ও উৎকর্ষসাধন অপরিহার্য। কেননা আমাদের পারিবারিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ, মানবতাবোধ তথা মনুষ্যত্বের ওপর প্রতিষ্ঠিত। এ মূল্যবোধগুলো যেকোনো মূল্যে আমাদের ধরে রাখতে হবে। এগুলোকে ধরে রাখলেই মনুষ্যত্ববোধের চর্চা স্বাভাবিকভাবেই গড়ে উঠবে। কিন্তু উগ্র ধর্মান্ধতা এবং সন্ত্রাসীগোষ্ঠী নানাভাবে আমাদের মূল্যবোধের ঐতিহ্য নষ্ট করার চেষ্টা করে। এদের সংখ্যা বেশি নয়। তাই শুভ বুদ্ধিসম্পন্ন সচেতন মানুষকে প্রতিবাদী হতে হবে এবং প্রয়োজনে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। সেই সাথে পরিবারে, সমাজে, মন্দিরে, মসজিদে, শিক্ষালয়ে নৈতিক শিক্ষা ও মানবাধিকার সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। এ সম্পর্কে সঠিক প্রচার হলে এখনকার প্রজন্ম মনুষ্যত্বের লালন ও চর্চায় অধিকতর অনুরাগী হয়ে উঠবে।
উপসংহার : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, ‘মনুষ্যত্বের শিক্ষাটাই চরম শিক্ষা আর সমস্তই তার অধীন।’ মানুষ হিসেবে অন্য মানুষের অধিকার, কর্তব্য ও দায়িত্ব এবং মর্যাদা সম্পর্কে আমরা সবাই সচেতন হলে মনুষ্যত্বের শিক্ষালাভ সহজ হয়ে যাবে। আর মনুষ্যত্বের শিক্ষা সম্পন্ন হলে মানবসমাজের যেমন উৎকর্ষ সাধিত হবে, তেমনি প্রকৃতি ও জীবজগতের নিরাপত্তা ও পরিচর্যা নিশ্চিত হবে। আর তখনই শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে আমরা বলতে পারব- মনুষ্যত্বের সাধনাই মানুষের শেষ্ঠ সাধনা।
আরো দেখুন :
রচনা : ছাত্রজীবন / দেশ ও জাতি গঠনে ছাত্র সমাজের ভূমিকা
রচনা : ছাত্রজীবনে ত্যাগ ও সততার অনুশীলন
রচনা : শিষ্টাচার
রচনা : দয়া
রচনা : মহত্ত্ব
রচনা : মিতব্যয়িতা
রচনা : সৎসঙ্গ
রচনা : দেশভ্রমণ
আরো দেখুন :
রচনা : ছাত্রজীবন / দেশ ও জাতি গঠনে ছাত্র সমাজের ভূমিকা
রচনা : ছাত্রজীবনে ত্যাগ ও সততার অনুশীলন
রচনা : শিষ্টাচার
রচনা : দয়া
রচনা : মহত্ত্ব
রচনা : মিতব্যয়িতা
রচনা : সৎসঙ্গ
রচনা : দেশভ্রমণ
tnx
ReplyDelete