ভূমিকা : আদিম যুগের অরণ্যবাসী মানুষ বুনোপশুকে পোষ মানানোর প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে প্রথম সামাজিক জীবনের সূচনা করেছিল। সেই থেকেই বনের পশু মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গী। তাই মানুষের জীবনধারণের ক্ষেত্রে গৃহপালিত পশুর গুরুত্ব অপরিসীম। সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, মানুষ যেদিন থেকে বনের পশুকে পোষ মানিয়ে সমাজবদ্ধ জীবন যাপন শুরু করল, সেদিন থেকেই মানবসমাজের গোড়াপত্তন হয় এবং বুনো জন্তু-জানোয়ার গৃহপালিত পশু হিসেবে মানুষের কাছে আশ্রয় পায়। আর এ জন্যেই মানুষের জীবনযাত্রার পাশাপাশি এই জন্তু-জানোয়ার নিত্যসহচরের মতো কাজ করে আসছে।
পরিচিতি : বাংলাদেশের গৃহপালিত পশুগুলোর মধ্যে গরু অন্যতম। কৃষিনির্ভর এদেশে চাষাবাদের কাজে গরু অপরিহার্য। আমাদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও সাহিত্যে গরুর গাড়ির একটি বিশিষ্ট ভূমিকা রয়েছে। গরুর মাংস ও দুধ খুব উপাদেয় খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তা ছাড়া গাড়িটানা, ধানমাড়ানো, ঘানিটানা ইত্যাদি নানা কাজে গরু ব্যবহৃত হয়। গরুর গোবর, হাড়, চামড়া, শিং সবই কাজে লাগে। সুতরাং গরু জীবিত কিংবা মৃত যে-কোনো অবস্থাতেই আমাদের নানা উপাকার করে।
মহিষ হচ্ছে গৃহপালিত পশুদের মধ্যে অন্যতম। এই পশুটি গরুর মতোই উপকারী। তবে এদের দুধ গরুর দুধের মতো তত পুষ্টিকর নয়। মহিষ পালন করা খুব কষ্টসাধ্য। কারণ, গরমের সময় এরা পানি ছাড়া থাকতে পারে না। এদের আহারও বেশি দিতে হয়। তবে শক্তিশালী পশু হিসেবে এদের পরিচিতি সর্বাধিক।
গৃহপালিত পশুদের আরেকটি সদস্য হচ্ছে ঘোড়া। শোনা যায়, আদিম যুগের মানুষ সবাই আগে পোষ মানাতে পেরেছিল ঘোড়াকে। ঘোড়া পোষা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। ঘোড়া পরিবহন, লাঙল টানা ও যুদ্ধে ব্যবহৃত হত প্রাচীনকাল থেকেই। এ প্রাণীটি আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আমাদের দেশে ঘোড়ার গাড়ির একটি ঐতিহ্য আছে। এর দুধ ও মাংস সুখাদ্য হিসেবে প্রচলিত নয়। তা ছাড়া মরণের পর এ খুব একটা উপকারে আসে না। ঘোড়া পোষা ব্যয়বহুল হওয়াতে সর্বাপেক্ষা সুন্দর এই পশুটির সংখ্যা কমে যাচ্ছে।
গাধা আরেকটি গৃহপালিত পশু। প্রাচীনকাল থেকেই ভারবাহী জন্তু হিসেবে গাধা পরিচিত। এরা দেখতে অনেকাংশে ঘোড়ার মতোই। কিন্তু আধুনিককালে বাহন হিসেবে গাধার ব্যবহার কমে যাওয়াতে এদের বংশ প্রায় বিলুপ্তির পথে।
অনেকেই ছাগল ও ভেড়া শখ করে পুষে থাকে। এদের মাংস শৌখিন খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত। ছাগলের দুধ সুপেয়ী। এদের চামড়া, হাড়, গরু মহিষের চামড়া হাড়ের মতোই উপকারী।
কুকুর পোষ মনে বলে গৃহপালিত জন্তু হিসেবে সমাদৃত হয়ে আসছে। বিদেশিদের অনুকরণে আমাদের দেশে ব্যাপক হারে কুকুর পোষা হয় না। কিছু কিছু পরিবার অবশ্য কুকুর পুষে থাকে। এমনিতে এদেশিয় কুকুর না পুষলেও মানুষের আঙিনাতেই থাকে। কুকুর তার মনিবের বিশ্বস্ত ও ভক্ত হয়ে থাকে। কুকুরের প্রভুভক্তির অনেক বিস্ময়কর কাহিনী দেশে-বিদেশে প্রচলিত। মল, আবর্জনা, পচা হাড় মাংস খেয়ে এদেশিয় কুকুর অনেক উপকার করে থাকে। তবে প্রতিবছর কিছু পাগলা কুকুরেরও উপদ্রব দেখা যায়।
বিড়ালও পোষ মানে। শৌখিন লোকেরা বিড়াল পোষে। ইঁদুর-শিকার এদের প্রধান কাজ। কিন্তু চুরি করে দুধ, মাছ, মাংস খেতে এরা ওস্তাদ। বিড়ালের শরীর কোমল ও মনোরম বলে অনেক বিড়ালই মানুষের আদর পেয়ে থাকে।
চিড়িয়াখানাতে ও সার্কাস পার্টিতে বাঘ, হাতি, ভাল্লুক, বানর দেখা যায়। এসব পশু মানুষের প্রাত্যহিক যাত্রায় তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারে না। তবে হাতি এক সময় যানবাহন হিসেবে ব্যবহৃত হতো।
উপসংহার : বাংলাদেশে যত গৃহপালিত পশু আছে সবগুলোই দেশের উৎপাদনমুখী ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে ব্যাপক সহায়তা করে। তা ছাড়া এরা নিজেরাও অর্থকরী হিসেবে বিবেচিত হয়। আমদের পশু মন্ত্রণালয় ও পশুপালন বিভাগ পশুর চিকিৎসা, সংরক্ষণ ও যত্নের প্রতি তৎপর রয়েছে। আমাদের সকলেরই গৃহপালিত পশুদের প্রতি যত্নশীল ও সহানুভূতিশীল হওয়া উচিত। কারণ পশুসম্পদের উন্নতির সাথে সাথে জাতীয় উন্নতির বিষয়টি জড়িত।
এটা মোটামুটি খুব ভাল
ReplyDelete