ভাবসম্প্রসারণ : ধনের মানুষ অপেক্ষা মনের মানুষই বড় / ধনের মানুষ মানুষ নয়, মনের মানুষই মানুষ

ধনের মানুষ অপেক্ষা মনের মানুষই বড়
অথবা,
ধনের মানুষ মানুষ নয়, মনের মানুষই মানুষ

মূলভাব : অপরিসীম সম্পদের অধিকারীকে সাধারণ মানুষের ওপর সাময়িক আধিপত্য বিস্তারের সুযোগ দেয় বটে, কিন্তু তা কখনো তাদের অন্তরে স্থায়ী প্রভাব বিস্তার করতে পারে না।

সম্প্রসারিত-ভাব : মানবতাবোধ ও মনুষ্যত্বচেতনা মানব চরিত্রের ভূষণ। জাগতিক কামন, বাসনা, ষড়রিপু অবিরত হাতছানি দেয় যাবতীয় পাপ-পঙ্কিলতাব্যাপ্ত ইচ্ছেগুলোকে। পরিহাসপূর্বক মানবতার সেবায় জনহিতৈষণায় আত্মনিয়োগ করাই সমীচীন। ধনসম্পদ বলে মানুষ ধনী হয় কিন্তু প্রকৃত মানুষ হতে পারে না। বরং অগাধ বিত্ত বৈভব আরও লোভের জন্ম দেয় আর লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু। ধন মানুষকে সমাচ্ছন্ন-মোহচ্ছন্ন করে রাখে। জীবন জীবিকার তাড়নায় ও তাগিদে ইহলোককে সার্থক করে নরলোকে জাহান্নামবাসী হওয়া কোনো বাস্তব বুদ্ধিসম্পন্ন মনুষ্য সন্তানের জন্য কাম্য হতে পারে না। তাই ধনের পরিবর্তে মনুষ্যত্বের চর্চা করাই বিধিসম্মত। যে ব্যক্তি মূর্খ, কোনো প্রকার জ্ঞানের অধিকারী নয়, সে যদি ঐশ্বর্যশালী হয় তবে মানুষ তাকে মৌখিক সমাদর করলেও সম্মান করে না। সম্মুখে তাকে কিছু না বললেও পশ্চাতে তার মূর্খতা নিয়ে তারা উপহাস করে। কিন্তু যে সকল ব্যক্তি জ্ঞানী, প্রতিভাবান, চরিত্রবান এবং পবিত্র হৃদয়ের অধিকারী, তাঁদের দেখলে মানুষের মাথা অনায়াসে অবনত হয়ে আসে এবং তাদের অন্তর ভক্তিরসে সিক্ত হয়ে যায়। এ সকল মহৎ মনুষ্যসন্তান মানুষের কাছে কখনো সমাদর প্রকাশ করেন না। কিন্তু জাগতিক মানুষ তাঁদের ভক্তিভরে স্মরণ করে এবং চিরকালের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে নাম লিখে রাখে। পক্ষান্তরে, ঐশ্বর্যশালীর প্রতিপত্তি ক্ষণস্থায়ী মৃত্যুর সাথে সাথে তার নাম নশ্বর পৃথিবী হতে মুছে যাবে। এমনকি স্বজনদের স্বরণেও তিনি হন চিরতরে লুপ্ত। মোটকথা, ঐশ্বর্যসমৃদ্ধ ব্যক্তিবর্গ মানুষের উপর বাহ্য প্রভাব বিস্তার করলেও, তাঁদের হৃদয়ভাণ্ডারে প্রভাব বিস্তারে ব্যর্থ হন। মৃত্যুর অমোঘ পরশের সাথে সাথে তাঁদের নামের চিরপ্রস্থান ঘটে। তাই তারা ধনের মানুষ হলেও মনের মানুষ নন। তারা ধনী হলেও প্রকৃতপক্ষে মহৎ ও সচ্চরিত্রবান নয়, বড় মানুষদের সঙ্গে তুলনা করলে তারা নিতান্তই দরিদ্র, হীনবল।

অগাধ সম্পত্তির অধিকারী হলেই মানুষ বড় হয় না। কারণ অর্থ-সম্পদ মানুষের মনের মুক্তি আনয়ন করে না। মনুষ্যত্ব অর্জনের মাধ্যমেই কেবল মনের মুক্তি সম্ভব। তাই অর্থ নয় মনের মানুষই বড়।


এই ভাবসম্প্রসারণটি অন্য বই থেকেও সংগ্রহ করে দেয়া হলো


ভাব-সম্প্রসারণ : ধনসম্পদের অধিকারী হলেই প্রকৃত মানুষ হওয়া যায় না। প্রকৃত মানুষ হওয়ার জন্যে প্রয়োজন মনের উদারতা ও বিশ্বাস। তাই ধন থাকলেই ধনী হওয়া যায় না। ধনী হওয়ার জন্যে প্রয়োজন প্রশস্ত মন। 

একদিকে ঐশ্বর্য-আকাঙ্ক্ষা, অন্যদিকে ত্যাগ-মহিমা; একদিকে আত্মসুখ, অন্যদিকে মানব কল্যাণ- মানব- জীবনের এই দুই দিগন্ত। এক দিগন্ত তাকে ডাকে আত্ম-পরিধির মধ্যে, অন্য দিগন্ত ডাকে বিশ্বের পরিধিহীনতার মধ্যে। বিত্ত এবং চিত্তের মধ্যে স্থাপন করতে হবে সুষম সংগতি। ‘বিত্ত’ যেন বিষয়-বিষ-বিকারে পরিণত না হয় এবং ‘চিত্ত’-ও যেন কেবল স্বপ্ন-বিলাসিতার প্রতীক মাত্র না হয়। বিত্ত-বাসনা এবং চিত্ত-বিলাসের মধ্যে সংগতি স্থাপিত না হলে জীবনের সার্থকতা নেই। আমাদের সমাজে অনেক বিত্তবান ব্যক্তি রয়েছে। কিন্তু এসব বিত্তবানের সমাদর ক্ষণস্থায়ী। তারা সমাজে সাময়িকভাবে সমাদৃত হলেও মানুষের মনে স্থায়ী আসন করে নিতে পারে না। মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে এই পৃথিবী থেকে তাদের নাম চিরতরে বিলীন হয়ে যায়, এমনকি আপন জনেরাও তাদের নাম স্মরণ করে না। মূর্খ ব্যক্তি ধনী হলে সে শুধু মৌখিক সমাদরই পায়, সম্মান পায় না। তার মূর্খতা নিয়ে সবাই হাসি-তামাসা করে। কিন্তু যাঁরা জ্ঞানী, প্রতিভাবান, চরিত্রবান এবং পবিত্র হৃদয়ের অধিকারী, তাঁদের দেখলে মাথা আপনিই নত হয়ে আসে। যুগ যুগ ধরে মানুষ তাঁদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে। তাই মৃত্যুর পরেও তাঁরা পৃথিবীতে অমর হয়ে থাকেন। 

অর্থ মানবজীবনে যে সর্বনাশ ডেকে আনে, হৃদয়বত্তাই মানুষকে সেই সর্বনাশের হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। এ ছাড়া চিত্তের নির্দেশে বিত্তের সদ্ব্যবহার হলে মানুষ আর আত্মসুখ-সর্বস্ব হতে পারে না। এ প্রসঙ্গে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেন, ‘মঙ্গল করিবার শক্তিই ধন, বিলাসের সামগ্রী ধন নহে।’ যিনি উদারচেতা মহাপুরুষ, তিনি বিত্তের দাস না হয়ে বিত্তকেই নিজের দাসে পরিণত করেন। এটাই মনুষের আদর্শ হওয়া উচিত।


এই ভাবসম্প্রসারণটি অন্য বই থেকেও সংগ্রহ করে দেয়া হলো


মূলভাব : ধন থাকলেই ধনী হওয়া যায় না। ঐ ব্যক্তিই ধনী যার হৃদয় প্রশস্ত।

সম্প্রসারিত ভাব : পাথির্ব ঐশ্বর্যের অধিকারীকে সাধারণ মানুষের উপর সাময়িক আধিপত্য বিস্তারের সুযোগ দেয় বটে; কিন্তু তা কখনও তাদের অন্তরে স্থায়ী প্রভাব বিস্তার করতে পারে না। মুর্খ ব্যক্তি ধনী হলেও সে শুধু মৌখিক সমাদরই পায়, সম্মান পায় না। তার মুর্খতা নিয়ে সবাই হাসি-তামাসা করে। কিন্তু যে সকল ব্যক্তি জ্ঞানী, প্রতিভাবান, চরিত্রবান এবং পবিত্র হৃদয়ের অধিকারী, তাদের দেখলে মানুষের মাথা আপনিই নত হয়ে আসে এবং তাদের অন্তর অপূর্ব ভক্তিরসে সিক্ত হয়ে যায়। তাই মরেও তারা এ পৃথিবীতে অমর হয়ে থাকেন। পক্ষান্তরে, ঐশ্বর্যশালীর সমাদর ক্ষণস্থায়ী। মরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এ পৃথিবী হতে তার নাম চিরতরে বিলীন হয়ে যায়। নিজের লোকেরাও তার নাম স্মরণ করে না।

মন্তব্য : ধনাঢ্য ব্যক্তির চেয়ে মহৎ হৃদয়ের অধিকারী প্রকৃত মানুষ।


এই ভাবসম্প্রসারণটি অন্য বই থেকেও সংগ্রহ করে দেয়া হলো


মূলভাব : যার ধন-দৌলত আছে তিনি ধনী। কিন্তু ধনীর যদি মন ছোট হয় তাহলে সে ধনী হয়েও প্রকৃত মানুষ বলে গণ্য হবে না। যে ব্যক্তির মন উদার ও প্রশস্ত তিনিই প্রকৃত মানুষ।

সম্প্রসারিত ভাব : পার্থিব ঐশ্বর্যের অধিকারীকে সাধারণ মানুষের ওপর সাময়িক আধিপত্য বিস্তারের সুযোগ দেয় বটে, কিন্তু তা কখনো তাদের অন্তরে স্থায়ী প্রভাব বিস্তার করতে পারে না। তার মূর্খতা নিয়ে আড়ালে থেকে সবাই ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে এবং তার মন্দ কাজের জন্য অভিশাপ দিয়ে থাকে। আবার অনেকেই তাকে মানুষ না বলে, পশু বলে আখ্যা দিয়ে থাকে। কিন্তু যেসব ব্যক্তি জ্ঞানী, প্রতিভাবান, চরিত্রবান এবং পবিত্র হৃদয়ের অধিকারী তাঁদের দেখলে মানুষের মাথা আপনিই নত হয়ে আসে এবং তাঁদের অন্তর অপূর্ব ভক্তিরসে সিক্ত হয়ে যায়। এসব মহৎ ব্যক্তি কখনো মানুষের কাছে সমাদর প্রত্যাশা করেন না, কিন্তু মানুষ তাঁদের ভক্তি ও সমাদর করে এবং চিরকাল তাঁদের স্মরণ করে থাকে। তাই মরেও তাঁরা এ জড় পৃথিবীতে অমর হয়ে থাকেন।

পক্ষান্তরে, ঐশ্বর্যশালীর সমাদর ক্ষণস্থায়ী। মরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবী থেকে তার নাম চিরতরে লুপ্ত হয়ে যায়। নিজের আত্মীয়স্বজনরাও কখনো তাদের মনের রাজ্যে তাকে আর ঠাঁই দিয়ে রাখে না। মরার সঙ্গে সঙ্গে তাদের নামেরও মৃত্যু হয়। আবার কেউ যদি পার্থিব ধন ঐশ্বর্যের অধিকারী হয়েও তা মানবকল্যাণে ব্যয় না করে, তাহলে তাকে বলতে হবে সে নিতান্তই ছোট মনের অধিকারী। তার দ্বারা সমাজ, দেশ ও জাতির কোনো কল্যাণ হতে পারে না। তাই জীবদ্দশায় যেমন তাকে কেউ ভালোবাসে না, তেমনি মৃত্যুর পরও কেউ তাকে স্মরণ করে না। সুতরাং ধনসম্পত্তি, অর্থকড়ি যার আছে সে বড় নয়। তার চেয়ে বরং যে বড় মনের অধিকারী সেই আসল মানুষ। বড় মনের মানুষ ভালোবাসে উদারভাবে, সুন্দরভাবে এবং সে ভালোবাসা নির্মল ও পবিত্র। কেবল ধন-দৌলতের মাপকাঠিতে কোনো মানুষকে বিচার করা যায় না। দেখতে হবে ধনী ব্যক্তিটির মন কিরূপ— তার মন প্রশস্ত এবং উদার কিনা।

মন্তব্য : যদি ধনী ব্যক্তির মন ছোট হয় তাহলে সে প্রকৃতপক্ষে মানুষের পর্যায়ে পড়ে না। পক্ষান্তরে, যে ব্যক্তির প্রচুর ধন-সম্পদ নেই, কিন্তু মন প্রশস্ত তিনিই প্রকৃত মানুষ।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post