বিদ্যার সাধনা শিষ্যকে নিজে অর্জন করতে হয়, গুরু উত্তরসাধক মাত্র
মূলভাব : শিক্ষার পূর্ণতার দিকে অগ্রসর হতে হলে মানুষকে নিজস্ব প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে এবং সুশিক্ষিত হওয়ার জন্য স্বশিক্ষা বা নিজে নিজে শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।
সম্প্রসারিত ভাব : শিক্ষা সম্পূর্ণভাবেই অর্জন সাপেক্ষ। শিক্ষালাভের জন্য বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। ধাপে ধাপে এগিয়ে শিক্ষার্থীগণ সেসব প্রতিষ্ঠান থেকে ডিগ্রী অর্জন করে এবং শিক্ষিত হিসেবে পরিচিত হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষাগুরু প্রতিটি ছাত্রের জন্য পথ প্রদর্শক। শিক্ষক ছাত্রের জ্ঞান জীবনের স্রষ্টা। শিক্ষক ছাত্রের ভবিষ্যৎ জীবন গঠনের পবিত্র দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কিন্তু ছাত্র যদি শিক্ষাগুরুর নির্দেশ, আদেশ, উপদেশ পালন না করে তাহলে তার জীবন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। শিক্ষক শিক্ষা দান করেন এবং কিভাবে শিক্ষা অর্জন করতে হবে তার পথ নির্দেশ করে দেন। কিন্তু ছাত্র যদি সে শিক্ষা গ্রহণ না করে তাহলে শিক্ষকের কিছু করার থাকে না। শিক্ষাগুরু তাঁর শিষ্যকে ভালো-মন্দ, সত্য-মিথ্যা ও ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্য বুঝিয়ে দিয়ে তাকে সঠিক পথ দেখিয়ে দেন। শিষ্য সে পথ অনুসরণ করে জীবনকে সার্থক করে তুলবে এটাই কাম্য। বস্তুত জ্ঞানকে আত্মস্থ করার জন্য আত্মপ্রয়াসের কোন বিকল্প নেই। শিক্ষার পরিধি অনেক বড়। ‘দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত শিক্ষা লাভের সময়।’ তাই যথেষ্ট জ্ঞান অনুশীলন ছাড়া কেউ সুশিক্ষিত হতে পারে না। অনেক স্বশিক্ষিত ব্যক্তি প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি ছাড়াও দেশ ও জাতি তথা বিশ্বমানবের কল্যাণের জন্য অনেক কিছু করে গেছেন। দৃষ্টান্তস্বরূপ- সক্রেটিস, এরিস্টটল, প্লেটো, নিউটন, গ্যালিলিও, কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নজরুল ইসলাম প্রমুখের নাম উল্লেখ করা যেতে পারে। তাঁরা বিদ্যার সাধনায় নিজেকে সুশিক্ষিত হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন বলেই মরেও অমর হয়ে আছেন।
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শেষে যথার্থ জ্ঞানার্জনের জন্য জ্ঞানের রাজ্যে বিচরণ করতে
হয়। সুশিক্ষার জন্য নিজের উদ্যোগের প্রয়োজন হয়। সেজন্য সারাজীবন ধরে মানুষের
জ্ঞান সাধনা চলে।
এই ভাবসম্প্রসারণটি আরেকবার সংগ্রহ করে দেওয়া হলো
বিদ্যা অমূল্য সম্পদ। প্রত্যেকটি মানুষেরই আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞান আছে আর সেটা
চর্চার মাধ্যমে উৎকর্ষ হয়। শিক্ষক শুধু দিকনির্দেশনা দিতে পারেন।
'Knowledge is power.' কিন্তু এটা আপনা আপনি হয় না। কষ্ট করে অর্জন করতে
হয়। জীবন পুষ্পশয্যা নয়। এ পঙ্কিল জগতের সবকিছুই কণ্টকাকীর্ণ। বেহেস্তের ফলের
মতো সবকিছুই হাতে এসে পৌঁছায় না। দীর্ঘ সাধনা করে সেটা পেতে হয়। টাকা পয়সা,
মান-সম্মান, যাই বল না কেন সাধনা ছাড়া অর্জন করা যায় না। এক্ষেত্রে শুধু সাধনাই
নয় অপরের সাহায্য-সহযোগিতা, আদেশ, উপদেশ তাকে অনুসরণ করতে হয়। কেউ একা কোনো
কাজে লক্ষ্যে পৌছাতে পারে না। তাকে কিছু দিকনির্দেশনা পেতে হয়, তা না হলে সাফল্য
অর্জন করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। অপরের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করেই সে নিজ সাধনায়
ব্রতী হয় এবং কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে উপনীত হয়। তাই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যের সাথে উপদেশ,
বিদ্যা এবং সাধনা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এগুলো ঠিকমতো একত্রিত না হলে তা ব্যর্থতায়
পর্যবসিত হয়। বিদ্যা অর্জন করতে হলে সাধনার প্রয়োজন হয়, এটা সর্বসত্য। এ সাধনা
কীভাবে করতে হবে তা গুরুজনের মাধ্যমেই জানতে হয়। গুরুর দ্বারস্থ হয়েই একজন
মানুষ পায় সঠিক সাধনার পথসন্ধান। মানুষের পরিপূর্ণভাবে বিকশিত হওয়ার পথের
সন্ধান দেখান গুরু। গুরু এক্ষেত্রে শুধু সন্ধানদাতা; কিন্তু ফলপ্রাপ্তি করতে হলে
নিজেকে সাধনা করতে হয়। নিজ সাধনাই মানুষকে বিকশিত করে। গুরু প্রতিভাকে বিকশিত
করতে পারেন না। গুরু হলেন আলোকবর্তিকা আর শিষ্য হলেন আলোকিত জগৎ; সদ্যফোটা ফুলের
মতো। কোনো কিছু সাধনা করতে গেলে একটা মাধ্যম দরকার। গুরু হলেন সে মাধ্যম।
পৃথিবীতে অজস্র দৃষ্টান্ত আছে যাঁরা গুরুর উপদেশ পাথেয় হিসেবে গ্রহণ করে নিজ
সাধনায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, সক্রেটিস, প্লেটো এবং
অ্যারিস্টটলের কথা। গুরু সক্রেটিসের উপদেশ অনুসরণ করে প্লেটো এবং গুরু প্লেটোর
উপদেশ অনুসরণ করে অ্যারিস্টটল জগৎখ্যাত হয়েছেন। মূলত পরিশ্রমই সৌভাগ্যের
চাবিকাঠি। গুরু চালিকাশক্তি মাত্র। এক্ষেত্রে তিনি উত্তরসাধক। দিগ্দর্শন
যন্ত্রের মতো, দিগ্নির্ণয় করাই গুরুর কাজ; কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছাতে হয় নিজ
ক্ষমতাবলে।
এটা খুব খুব ভালো ❤️❤️❤️❤️❤️❤️💞💞💞💞
ReplyDeleteভালো লাগছে 🫠
ReplyDeleteSelf reply 😀
DeleteThis is so helpful
ReplyDelete