যতনে রতন মিলে, সারসত্য এই।
মূলভাব : জীবনকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে যত্ন সহকারে পরিশ্রম করা দরকার। যত্ন বা পরিশ্রম ছাড়া কোনো কিছুই অর্জন করা যায় না।
সম্প্রসারিত ভাব : আমাদের জীবন বড়ই সংগ্রামমুখর। নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য এখানে আপ্রাণ চেষ্টা করতে হয়; নচেৎ এ পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। বিনা পরিশ্রমে, বিনা সাধনায় কোনো দেশ বা জাতি বড় হতে পারেনি। অতীত ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, সংসারে যাঁরা যত্নবান এবং পরিশ্রমী তাঁরাই সাফল্যের চূড়ান্ত শিখরে আরোহণ করেছেন- তাঁরাই বানিয়েছেন অক্ষয় কীর্তির স্তম্ভ। এজন্য তাঁরা সকলের কাছে শ্রদ্ধার পাত্র। ‘যতনে রতন মিলে’ -এ কথাটি ব্যক্তির ক্ষেত্রে যেমন সত্য সমষ্টির ক্ষেত্রেও তেমনি। দেশ-বিদেশের বহু ঘটনা থেকে এ বিষয়ে উদাহরণ দেয়া যায়। পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, প্রেডিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন, বৈজ্ঞানিক টমাস আলভা এডিসন, বিশ্ববিখ্যাত নাট্যকার ইউলিয়াম শেক্সপিয়র প্রমুখের জীবনী থেকে জানা যায় যে, তাঁরা ত্যাগ-তিতিক্ষা, যত্ন আর নিরলস সাধনা দ্বারাই পৃথিবীতে কীর্তিমান ব্যক্তি হিসেবে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন। আন্তরিক চেষ্টা এবং নিরবচ্ছিন্ন অনুশীলন দ্বারা সাফল্য লাভ অবশ্যই সম্ভব। মানুষের জীবনে অলসতার কোনো ঠাঁই নেই। আমাদের মনে রাখতে হবে ‘কাজই গতি’ পরিশ্রম দেখে যারা নিজেদের গুটিয়ে নেয় তাদের কাছে সৌভাগ্য কখনো ধরা দেবে না। কথায় আছে- ‘কষ্ট করলে কেষ্ট মেলে’। শুধু চাইলে হবে না চাওয়ার সাথে পরিশ্রমকেও সম্পৃক্ত করতে হবে। আজ যে দরিদ্র, পরিশ্রম দ্বারা সে-ই একদিন সাফল্যের স্বর্ণশিখরে আরোহণ করতে পারে- এরকম দৃষ্টান্তের কোনো অভাব নেই। তাই ‘যত্ন করলে রত্ন মিলে’ কথাটা চিরন্তন সত্য।
যত্ন ও পরিশ্রম দ্বারাই নিজের ভাগ্যকে প্রতিষ্ঠিত করা যায়। জীবনের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য তাই মানুষকে নিরলস সাধনাকরা দরকার।
এই ভাবসম্প্রসারণটি অন্য বই থেকেও সংগ্রহ করে দেয়া হলো
কষ্ট করলেই সাফল্য মেলে। সকলের জীবনেই এ প্রবাদ বাক্যটি একান্ত বাস্তব সত্য। অধ্যবসায় ব্যতীত কিছু অর্জন করা গেছে এ ধরনের নজির খুঁজে পাওয়া যাবে না। পরিশ্রম, একাগ্রতা এবং নিরলস সাধনাই সাফল্যের চাবিকাঠি। যে সকল ব্যক্তি জীবনে সফল হয়েছেন, মানুষের জন্য অবদান রেখে গেছেন, ভবিষ্যৎ বংশধরদের জন্য আদর্শ স্থাপন করে গেছেন, তাঁদের জীবন পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে তাঁরা সবাই নিরলস প্রচষ্টার মাধ্যমে ঈপ্সিত লক্ষ্যে উপনীত হতে পেরেছেন। বিজ্ঞানী, দার্শনিক, রাজনীতিবিদ, কবি-সহিত্যিক, শিল্পী, সকলেই সাধনার মাধ্যমে সাফল্যের সুফল অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ নিষ্ঠা ও সাধনার মাধ্যমে বিশ্বকবি হতে পেরেছেন। কামাল আতার্তুকের জীবন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, জীবনে বহু বাধা-বিঘ্ন উত্তীর্ণ হয়ে তুরস্কের মানুষের মুক্তিদাতা হতে পেরেছিলেন। ইউরোপের অনেক খ্যাতনামা চিত্রশিল্পী অধ্যাবসায় ও সাধনার মাধ্যমে পৃথিবীতে রেখে গেছেন মূল্যবান বহু চিত্রকর্ম। তাই বলা যায়, সযত্ন প্রচেষ্টা ছাড়া কেউ নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি। মানুষ আজ গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে যাচ্ছে, মহাশূন্যে বিচরণ করছে, চাঁদে পদার্পণ করছে– এসব কিছুই সাধনার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা গেছে। আজ বিজ্ঞানের নব নব আবিষ্কারে পৃথিবী প্রগতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, চিকিৎসা ক্ষেত্রে নতুন যুগের সূচনা হয়েছে– এ সবই হয়েছে বিজ্ঞানীদের প্রচেষ্টায়। তাই বলতে পারি, যতনেই রতন মেলে, অর্থাৎ কষ্ট করলেই ফল পাওয়া যায়।