শীত যদি এসে যায়, বসন্ত কোথায় রয়
মূলভাব : ছয়টি ঋতু পালাক্রমে আবর্তিত হয়। এক একটি ঋতু আপন ঐশ্বর্যে মহিমামন্ডিত। কিন্তু তার পরেও একটি ঋতু বিদায়ের কালে আত্মত্যাগের মাধ্যমে আরেকটি ঋতুর জন্য রেখে যায় প্রেরণার ঝর্ণাধারা, এটাই প্রকৃতির নিয়ম।
সম্প্রসারিত ভাব : গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত, বসন্ত -এ ষড়ঋতু চক্রে প্রথমে বর্ষাযাত্রা আবর্তিত। একটি ঋতু পরেরটির জন্য আত্মদান করে, নিজের মধ্যেই জাগিয়ে তোলে আরেকটির সম্ভাবনা- এ হল প্রকৃতির নিয়ম। গ্রীষ্মের পরে যেমন বর্ষা এবং তারপরে শরৎ আসবেই তেমনি শীতের পরে বসন্তের আগমন অনিবার্য। তাই খর বৈশাকে প্রকৃতি যখন জ্বলতে থাকে তখন যদি কেউ ভাবে যে এ গ্রীষ্মই পৃথিবীর শেষ ঋতু এর পরে নবীন মেঘের ঘোমটা মাথায় শান্ত স্নিগ্ধ জলের ঝারি নিয়ে বর্ষারাণী আসবে তাহলে সে সম্পূর্ণ ভুল করবে। তেমনি ভুল হবে একথা ভেবেও যে পাহাড়ি দেশের হিমেল পরশ নিয়ে উত্তর পবন যখন জীব জগতের দুঃখ বয়ে আনবে, সে দুঃখের কোনো শেষ নেই। বরং উলটো কথাটাই ঠিক। ফাল্গুনের উজ্জ্বল প্রভাবে শীত-বায়ুর হি-হি করা আর্তনাদ হয় পরাভূত। মলয় পবনের রথে চড়ে হাতে নতুন ফুলের গুচ্ছ আর পাগল করা গানের সম্ভাবনা নিয়ে যায় আবির্ভাব হয় সে ঋতুরাজ বসন্ত। গভীর প্রত্যয়ে শেলীকে তাই বলতে শুনি, If winter comes can the spring be for behind? শীত যদি আসে বসন্ত কি দূরে থাকে?
প্রকৃতি রাজ্যের এ সত্যটিকে আমরা মানবজীবনেও দেখতে পাই। সাময়িক দুর্যোগে আমরা যখন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ি তখন স্বাভাবিক দুর্বলতাবশেই একথা ভাবি যে এ দুর্ভাগ্যের বুঝি আর শেষ নেই। কিন্তু এ অবস্থা কখনও স্থায়ী হতে পারেনা। বরং প্রভাতের পূর্বে যেমন গভীর রাত্রির অন্ধকার বিরাজমান তেমনি আনন্দের আগেও একটি বেদনার দিন যদি আসে তাতে নিরাশ হবার কিছু নেই। দুঃখের বিষ পান করতে পারলেই অমৃতময় সুখের দিন আসে। রবীন্দ্রনাথের গানে আছে- “দুঃখের মথন বেগে উঠিবে এ অমৃত। শঙ্কা হতে রক্ষা পাবে যারা মৃত্যুভীত।”