↬ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ
↬ আমাদের মুক্তিযুদ্ধ
↬ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক রচনা
ভূমিকা : বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। আজ আমরা আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির ও স্বাধীন দেশের নাগরিক। তবে এই স্বাধীনতা সহজভাবে আসেনি। ১৯৭১ সাল এক ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের ভেতর দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। এর জন্য লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রাণ দিয়েছে। প্রায় ত্রিশ লক্ষ মানুষের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা আমাদের মাতৃভূমির স্বাধীনতা পেয়েছি। পৃথিবীর কোনো জাতিই মুক্তির জন্য এরকম যুদ্ধ করেনি। তবে আমাদের মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাস বেদনার ইতিহাস হলেও তা গৌরবোজ্জ্বল মহিমায় ভাস্বর।
মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি : প্রাচীনকালে বাংলা স্বাধীন থাকলেও পরবর্তীতে পরাধীন হয়ে বিভিন্ন রাজা-সুলতানদের দ্বারা শোষিত হয়েছে। রূপসী বাংলার রূপ-ঐশ্বর্য ও অঢেল ধন-সম্পদ শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বিদেশিদের লোলুপ দৃষ্টি আর্কষণ করেছে। ১৯৪৭ সালে প্রায় দু’শ বছরের ইংরেজ শাসন ভেঙে কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বি-জাতি তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে জন্ম হয় ভারত ও পাকিস্তানের। বাংলাদেশ তথা পূর্ব বঙ্গ পূর্ব পাকিস্তান নামে স্বাধীন পাকিস্তানের অংশ ছিল। কিন্তু তখনও আমরা প্রকৃত স্বাধীন হতে পারেনি। পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের পক্ষপাতিত্বমূলক শাসনের ফলে আমরা ছিলাম শোষিত। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সকল দিকে দিয়ে আমরা ছিলাম বঞ্চিত। বাংলা ভাষা ও বাঙালি সংস্কৃতিকে স্বীকৃতি দিতে তারা অস্বীকার জানায়। উপরন্তু উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। কিন্তু এ দেশের ছাত্রজনতা তা মেনে নেয়নি। প্রচণ্ড বিক্ষোভে ফেটে পড়ে আপামর জনসাধারণ। এই অশুভ ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে বাঙালিরা সজাগ ছিল বলে ক্রমাগতভাবে প্রতিরোধ গড়ে ওঠে পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে। পরবর্তীকালে এই প্রতিরোধই মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামে রূপান্তরিত হয়।
স্বাধীনতার আন্দোলন : ১৯৪৬ সালে পাকিস্তানের প্রথম গভর্নর জেনারেল আলী জিন্নাহ উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা দেয়ার পরই মূলত স্বাধীনতা আন্দোলনের চারা রোপিত হয়। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু হয়। ১৯৬৫ সালে মৌলিক গণতন্ত্রের নামে আইয়ুব খান অধিকার হরণ করে নেয়। তখন থেকেই স্বাধিকার আন্দোলন তীব্র হয়ে ওঠে। বাঙালির স্বাধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ১৯৬৬ সালে ঐতিহাসিক ৬ দফা দাবি উত্থাপিত হয়। ১৯৬৮ সালে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা সাজিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানসহ ৩৫ জনকে কারাগারে আটক করা হয়। কিন্তু গণআন্দোলন রূপ নেয় গণঅভ্যুত্থানে। গণঅভ্যুত্থানের মুখে ১৯৬৯ সালে শেখ মুজিবুর রহমানসহ সকলকে ছেড়ে দেয়। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতা হস্তান্তরের নামে টালবাহানা শুরু করে। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকায় ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে “এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এইবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম” বলে জাতিকে মুক্তিসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান। সারা বাংলায় শুরু হয় তুমুল আন্দোলন। আলোচনার নামে কলক্ষেপণ করে ইয়াহিয়া খান পশ্চিম পাকিস্তান থেকে গোপনে সৈন্য ও অস্ত্রশস্ত্র এনে শক্তি বৃদ্ধি করে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ইয়াহিয়া তখন গণহত্যার নির্দেশ দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তান চলে যান। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের গভীর রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং পাক-বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্রাবাস, ইপিআর ও রাজারবাগ পুলিশ লাইনে নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চলে।
প্রবাসী সরকার গঠন : পাক-বাহিনীর হত্যাযজ্ঞের মুখে জ্বলে ওঠে সারা বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালে ১৭ এপ্রিল শেখ মুজিবুর রহমানের অনুপস্থিতিতে তাকে রাষ্ট্রপতি করে মুজিবনগরে প্রবাসী সরকার গঠিত হয়। এই সরকার গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মুক্তিসংগ্রাম।
মুক্তিযুদ্ধ : ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতের অন্ধকারে হানাদার বাহিনীর আক্রমণ শুরু হয়। ২৫ মার্চ মধ্যরাতে অর্থাৎ ২৬ মার্চ ১ম প্রহর বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে। পরবর্তীতে ২৭ মার্চ সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে তৎকালীন সেনাবাহিনীর মেজর জিয়াউর রহমান সহ অনেকে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে আবার বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের ঘোষণা দেয়া হয়। পাকবাহিনী তখন আরও মরিয়া হয়ে ওঠে এবং নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালায়। অসহায় বাঙালিরা দলে দলে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করে। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ। মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল আতাউল গণি ওসমানীর নেতৃত্বে বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয়। এ দেশের অগণিত ছাত্র, জনতা, পুলিশ, ইপিআর, আনসার ও সামরিক-বেসামরিক লোকদের দিয়ে মুক্তিবাহিনী গঠিত হয়। পাক-বাহিনীর মুখোমুখী মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে তারা। যতই দিন যেতে থাকে সুসংগঠিত হতে থাকে মুক্তিবাহিনী। তারা গেরিলা রীতিতে আক্রমণ করে পাকবাহিনীকে দিশেহারা করে দেয়। আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়েও তারা মুক্তিবাহিনীর মোকাবেলা করতে সক্ষম হচ্ছিল না। দেশের মধ্যে অল্পসংখ্যক আলবদর, রাজাকার ছাড়া দেশবাসী মুক্তিবাহিনীর পক্ষে কাজ করতে লাগলো। এর ফলে শত্রুর মোকাবেলা সম্ভব হচ্ছিল সহজে। ১৯৭১ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে মুক্তিসংগ্রাম চরমরূপ ধারণ করে। মুক্তিবাহিনীর আক্রমণ ব্যাপকতর হতে থাকে। আর শত্রুবাহিনীও সর্বাত্মক ধ্বংসলীলা চালাতে থাকে।
শত্রুর পরাজয় : মাত্র নয় মাসে পাকিস্তানিদের অবস্থান দুর্বল হয়ে আসে। পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আর কোনো উপায় খুঁজে না পেয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিকেলে রেসকোর্স ময়দানে পাকবাহিনী নিঃশর্তভাবে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর নিকট আত্মসমর্পণ করে। বিকেল ৬টা ১ মিনিটে রেসকোর্সের ময়দানে আত্মসমর্পণ দলিলে স্বাক্ষর করেন যৌথ কমাণ্ডের পক্ষে লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং আরোরা এবং পাকবাহিনীর পক্ষে লেফটেন্যান্ট জেনারেল নিয়াজী।
উপসংহার : বাংলাদেশের স্বাধীনতা এসেছে দীর্ঘ নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে। আজ আমরা স্বাধীন সার্বভৌম দেশের নাগরিক। লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। আজ আমাদের দায়িত্ব এক সমুদ্র রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশকে সুখী-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে পৃথিবীর বুকে প্রতিষ্ঠিত করা।
মুক্তিযুদ্ধে ছাত্র সমাজের ভূমিকা।। এই রচনা লাগবে
ReplyDeleteI HAVE THIS
DeleteI also want this
ReplyDelete