প্রবন্ধ রচনা : বিশ্বায়ন / গ্লোবালাইজেশন

ভূমিকা : বর্তমান বিশ্বে বিশ্বায়ন সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। ইংরেজি ‘Globe’ থেকে Globalization শব্দটি এসেছে, যার অর্থ বিশ্বায়ন। এটা একটা প্রক্রিয়া, যে প্রক্রিয়া গোটা বিশ্বকে মানুষের হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে। জাতি-রাষ্ট্রের সীমানাকে তুলে দিয়ে সমগ্র বিশ্বকে একটি গ্রামে (Global Village) পরিণত করেছে। প্রকৃতপক্ষে, “Globalization is a process of development of the world into a single interested economic unit”। বিশ্বায়ন শব্দটি একটি বিশেষ অর্থনৈতিক স্বার্থের অনুষঙ্গে সৃষ্টি হলেও অনিবার্যভাবে তার প্রতিভাস এসে পড়েছে সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মাত্রায়। বিশ্বায়ন নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ের ওপর সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি বিশ্বজনীন ও সর্বজনীন। বিশ্বায়ন দেশে দেশে, মানুষে মানুষে দূরত্ব কমিয়ে দিয়েছে। ধীরে ধীরে এ পৃথিবী হয়ে উঠেছে মানুষের নিজের দেশ। মানুষে মানুষে ভাষা ও সংস্কৃতির ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের ফলে, সহযোগিতা ও পারস্পরিক যোগাযোগ বৃদ্ধির ফলে, অবাধ তথ্য প্রবাহে বিশ্ব সভ্যতার উন্নতি যেমন একদিকে ত্বরান্বিত হচ্ছে তেমনি অবনতিও ঘটছে ক্ষেত্রেবিশেষে। মানুষ ক্রমে ক্রমে যেমন পরিণত হচ্ছে বিশ্ব নাগরিকে, তেমনি আঞ্চলিক সন্ত্রাসবাদ বিশ্ব সন্ত্রাসবাদে রূপ নিয়েছে, বিশ্বব্যাপী দব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে, মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিয়েছে। বিশ্বব্যাপী দেশে দেশে, মানুষে মানুষে সন্দেহ-অবিশ্বাস হ্রাস করেছে, আন্তর্জাতিকতাবাদের ধারণা সুস্পষ্ট করেছে, পুঁজিপ্রবাহ বৃদ্ধি করেছে। অন্যদিকে, বিশ্বায়ন বিশ্বময় প্রাশ্চাত্যের আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় তৎপর। তারপরও বলা যায়, বিশ্বায়নের রয়েছে হাজারো সম্ভাবনা, সুকঠিন চ্যালেঞ্জ ও অজানা শঙ্কা। নিচে বিশ্বায়নের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মাত্রাগুলো ধারাবাহিকভাবে উপস্থাপন করা হলো : 

বিশ্বায়ন ও আর্থ-সামাজিক মাত্রা : বিশ্বায়নের ক্রমবর্ধমান ঢেউ ধনী ও গরিব দেশের মানুষের জীবনে সমানভাবে প্রভাব ফেলেছে। কোথাও এ প্রতিক্রিয়া ইতিবাচক আবার কোথাও তা নেতিবাচক। একই প্রজন্মের ক্ষেত্রে স্থানবিশেষে কোথাও এটি নিয়ে এসেছে সমৃদ্ধি আবার কোথাও অর্থনৈতিক ধস। যেমন- মালয়েশিয়া, চীন কিংবা ভারতের ব্যাঙ্গালোরের আইটি সেক্টরে এটি নিয়ে এসেছে বিপুল সমৃদ্ধি। বিপরীতদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ডেট্রয়টের মতো গাড়ি নির্মাণ শিল্পকেন্দ্রগুলোতে যে ধস নেমে এসেছে তা জন্যও দায়ী এ বিশ্বায়ন। অনেক অর্থনীতিবিদ বিশ্বাস করেন বিশ্ব অর্থনীতিতে বিশ্বায়ন নিজের যে ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়েছে তা নিম্নরূপ : 
- পশ্চিমা অর্থনীতির ক্ষেত্রে শ্রমিকদের জন্য নিম্ন মজুরি। আর কোম্পানিগুলোর জন্য উচ্চ মুনাফা।
- দরিদ্র দেশগুলোর শহর এলাকায় বিপুল জনস্রোত।
- জোরদার প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও মুদ্রাস্ফীতি ও সুদের নিম্নহার। গত ৫০ বছরে ধারণাতীত বিত্ত বৈভব এসেছে। আর এর পেছনে প্রধান ভূমিকা ছিল বিশ্বায়নের। সম্পদ ও সমৃদ্ধির এ বিশাল স্তুপ এখন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ ছেড়ে পূর্বের দরিদ্র দেশগুলোতে পৌঁছে যাচ্ছে। চীন, মালয়েশিয়া, ভারত ও থাইল্যান্ডের মতো দেশগুলোর এককালের হতদরিদ্র অর্থনীতি বিশ্বায়নের সুবাদেই আজ ফুলে ফেঁপে উঠেছে।

নিচে বিশ্বায়নের আর্থ-সামাজিক ভূমিকা উপস্থাপন করা হলো- 
১. ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিশ্বায়ন : বিশ্বায়নের মূল চালিকাশক্তিই হলো ব্যবসা-বাণিজ্য। শিল্পপণ্যের বাণিজ্য গত ৫০ বছরে ১০০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে যেখানে বিশ্ব বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৯৫ বিলিয়ন ডলার, বর্তমানে তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫০,০০০ বিলিয়ন ডলারে (বিশ্ব বাণিজ্য রিপোর্ট ২০১২ অনুসারে)। ব্যবসা-বাণিজ্য খাত অর্থনীতির অন্যান্য খাত থেকে দ্রুততম সময়ে বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য বিভিন্ন শুল্ক ও অশুল্ক বাধা দূরীকরণের চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়গুলো সহজ করে দিয়েছে। বিশেষ করে ধনী দেশগুলোয় শিল্প পণ্য রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা পূরণের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পদ্ধতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। জাপান, কোরিয়া, মালয়েশিয়া ও চীন এ দেশগুলোর অন্যতম। দেশগুলো তাদের জনগণের জীবনযাত্রার মান নাটকীয় উন্নতি ঘটিয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর সময়ে বড় বহুজাতিক কোম্পানিগুলো বিপুল শিল্প পণ্য রপ্তানি করে। বহুজাতিক কোম্পানিগুলো এখন তাদের পুঁজি বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বিনিয়োগ শুরু করেছে। শ্রম ব্যয় কমানোর লক্ষ্যেই পুঁজির এ ভিন্ন গন্তব্যে যাত্রা। একই সাথে পণ্যবাজারের কাছাকাছি শিল্পকারখানা স্থাপনও এর অন্যতম কারণ। বিশ্ব বাণিজ্যের এক-তৃতীয়াংশ মাত্র কয়েকটি কোম্পানির কব্জায় রয়েছে। 

২. বিশ্বায়ন ও পুঁজি প্রবাহ : উন্নত অর্থনীতিগুলো এতদিন যাবৎ সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের অবধারিত গন্তব্য হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছিল। উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোতেও এ প্রবাহ ছিল লক্ষণীয়। কিন্তু বিশ্বায়নের এ সময়ে সে স্রোতধারা যেন পুরোপুরি উল্টে গেছে। মাত্র কয়েক বছর আগেও কেউ ভাবতে পারেনি যে সাবেক ব্রিটিশ স্টিল কোম্পানি দক্ষিণ এশিয়া এবং ল্যাটিন আমেরিকার মতো এলাকায় বিনিয়োগের জন্য মরিয়া হয়ে উঠবে। 

অন্যদিকে, বিশ্বায়নে উন্নত দেশের বহুজাতিক কোম্পানিগুলো অনুন্নত দেশে পুঁজি বিনিয়োগ করে প্রচুর মুনাফা হাতিয়ে নিচ্ছে। তারপর সামান্য মুদ্রাস্ফীতি হলেই ঝড়ের বেড়ে ছুটে পালাচ্ছে। ফলে অনুন্নত, উন্নয়নশীল দেশগুলো কয়েক ঘণ্টায় বা দিনে মারাত্মকভাবে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছে। 

৩. পণ্যের জন্য লড়াই ও বিশ্বায়ন : বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ব্যাপক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটে চলেছে। প্রাকৃতিক উপাদান বিশেষ করে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের ক্রমবর্ধমান চাহিদা এক্ষেত্রে লক্ষণীয়। ২০০০ খ্রি. থেকে উন্নয়নশীল দেশগুলো বিশ্বের মোট জ্বালানি চাহিদার ৮৫ ভাগ দখল করে আছে। ক্রমবর্ধমান চাহিদার বিপরীতে অতিরিক্ত পণ্য উৎপাদনের কারণেই ঘটছে এটা। এর ফলে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি পেয়ে ব্যারেল প্রতি ১০০ ডলারকে অতিক্রম করেছে। বিশ্বব্যাপী নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পেতে থাকে। বিশ্বের বহু দেশে দেখা দেয় খাদ্যাভাব। খাদ্যাভাবের কারণে কোনো কোনো দেশের সরকারের পতন ঘটে এবং রাস্তায় ব্যাপক আন্দোলন হয়। 

৪. অর্থনৈতিক গতিপথের নতুন মানচিত্র ও বিশ্বায়ন : যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও ইউরোপ বিশ্ব অর্থনীতিতে তাদের একচেটিয়া কর্তৃত্ব হারিয়েছে। এমনকি গবেষণা ও উন্নয়ন এবং নতুন নতুন ভোগ্য পণ্যসামগ্রী তৈরি ও চমকপ্রদ সেবাসমূহ আবিষ্কারের বিষয়টিও আজ তাদের একক কর্তৃত্বে নেই। উদীয়মান বাজারগুলো এখন দ্রুত প্রসার লাভ করছে। আর এগুলো জোরদার হচ্ছে দক্ষতা বৃদ্ধিতে বিনিয়োগের মাধ্যমে, উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তিগুলোর শিল্পকারখানায় প্রবৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে এবং নতুন নতুন প্রযুক্তি ও কৌশল গ্রহণের ত্বরিত গতির কারণে। 

৫. বিশ্বায়ন ও মেধা আকর্ষণ : প্রতিভা বা মেধা ও দক্ষ শ্রমশক্তি বৈশ্বিক সম্পদে পরিণত হয়েছে। আর এ সম্পদের দখল নিয়ে লড়াইয়ে নেমেছে বহু প্রতিযোগী। পশ্চিমা বিশ্বর অর্থনীতি বয়োবৃদ্ধ কর্মী এবং শ্রম স্বল্পতায় ভুগছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোয় জনসংখ্যার বিপুল বৃদ্ধির ফলে বিশ্বের শ্রম শক্তির ভারসাম্যও তাদের দিকেই ঝুঁকে পড়েছে। ফলে অনুন্নত বিশ্ব মেধাপাচার সমস্যায় ভুগছে। 

৬. পরিবেশ ব্যবস্থা ও বিশ্বায়ন : বিশ্বায়নের ফলে প্রতিযোগিতাময় বিশ্বে মানুষের চোখের বন্ধ দরজা খুলে গেছে। মানুষ একচেটিয়া কারবার থেকে মুক্তি পেয়ে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে তার পছন্দমতো পণ্য ক্রয়ে সক্ষম হচ্ছে। পণ্যের চাহিদা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় উৎপাদনও বেড়েছে বহুগুণে। ফলে উৎপাদনে ব্যবহৃত প্রাকৃতিক জ্বালানি তেল, গ্যাস ব্যবহারের হার বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিবেশও দিন দিন ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। আবহাওয়া দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, খরা, দাবানল বিশ্বে নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। ফলে প্রতিবছর ঘটছে অসংখ্যা প্রাণহানি। 

৭. বাজারভিত্তিক মূল্য নির্ধারণ ও বিশ্বায়ন : বাজারে কতটুকু বিশেষজ্ঞ জ্ঞান ও দক্ষতা আনতে পারছে তা-ই নির্ধারণ করছে বিশ্বায়নের শ্রেষ্ঠত্ব। বাজারভিত্তিক মূল্যনির্ধারণ হচ্ছে সংশ্লিষ্ট দেশের পানি এবং জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির একটি কূটকৌশল। একটি দেশ যখন চরম অর্থনৈতিক সংকটে হাবুডুবু খায় ঠিক তখনই বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ সুযোগ নেয়। তার শেষ রক্তটুটু শুষে নেয়ার প্রক্রিয়া চলতেই থাকে- যতক্ষণ না আগুন জ্বলে ওঠে। যেমন- বলিভিয়ার পানি, ইকুয়েডরের গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করে আইএমএফ দরিদ্র মানুষদের দাঙ্গা হাঙ্গামা বাধাতে উসকে দেয়। এ ধরনের গণবিক্ষোভ ঠেকাতে সরকারকেও আরো রাজনৈতিক মূল্য দিতে হয়। দেশ থেকে আরো পুঁজি উধাও হয়। সরকার দেউলিয়া হয়ে পড়ে। এতে বিদেশি কর্পোরেশনগুলোর পোয়াবারো হয়। তাছাড়া এ সুযোগে সংশ্লিষ্ট দেশের অবশিষ্ট সম্পদও মুড়ি-মুড়কির দামে হাতিয়ে নেয়। 

বিশ্বায়ন ও রাজনৈতিক মাত্রা 
১. বিশ্বায়ন ও আন্তর্জাতিকতাবাদ : সমাজতান্ত্রিক বিশ্ব প্রতিষ্ঠার পরই পৃথিবীতে আন্তর্জাতিকতাবাদ চেতনা স্পষ্ট হয়ে উঠলেও স্নায়ুযুদ্ধের রূঢ় বাস্তবতা দেশে দেশে, মানুষে মানুষে সন্দেহ, অবিশ্বাস ও বিভেদ বাড়িয়ে দেয়। বাড়িয়ে দেয় উত্তেজনা। গানবোট ডিপ্লোমেসি, স্টার ওয়ার পৃথিবীর জন্য মহাবিপর্যয় ডেকে আনতে থাকে। বিশ্বশান্তি এসে দাঁড়ায় হুমকির মুখে। কিন্তু স্নায়ুযুদ্ধের অবসানের পর মানুষে মানুষে, দেশে দেশে সন্দেহ অবিশ্বাস কমে এসেছে। গড়ে উঠেছে ইউরোপী ইউনিয়ন, চালু হয়েছে অভিন্ন মুদ্রা। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় গড়ে উঠেছে আসিয়ান (ASEAN), আফ্রিকায় আফ্রিকান ইউনিয়ন (AU)। বৃদ্ধি পেয়েছে সহযোগিতা ও লেনদেন। বিলুপ্ত হয়েছে একলা চলার দিন। ভিয়েতনাম, ইরাক, আফগানিস্তানে মার্কিন নগ্ন আক্রমণের বিরোধিতা করে বিশ্ব ছাত্রসমাজ বিক্ষোভ করে, বিশ্ববাসী নিন্দা জানায়, কোথাও সন্ত্রাসী হামলা হলে তীব্র নিন্দা জানায়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে বিশ্ব দুর্যোগকবলিত রাষ্ট্রের সাহায্য-সহযোগিতায় এগিয়ে আছে। 

২. সাময়িক দিক ও বিশ্বায়ন : সংঘাত ও ব্যবসা মিলে গেছে। প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যাচ্ছে বেসরকারি খাতে। আন্তর্জাতিক বেসামরিক-সাময়িক ব্যবস্থা গড়ে উঠছে। কোনো কোনো দেশে ভাড়াটে সৈন্যরা খনি ও জ্বালানির ব্যবস্থাপনা রক্ষায় ভাড়া খাটছে। অস্ত্র বিক্রি ও তৈরির হিড়িক লেগেছে। বর্তমান বিশ্বে প্রতিবছর সাত হাজার কোটি টাকার অস্ত্র বাণিজ্য হয়। বিশ্বে যে পরিমাণ অস্ত্র মজুদ আছে তা দিয়ে এমন ১৫টি পৃথিবী ধ্বংস করা যাবে। জাতীয় বাজেটের একটা বৃহৎ অংশ সামরিক খাতে বরাদ্দ করা হচ্ছে। আর এক্ষেত্রে শীর্ষে রয়েছে গণচীন। অস্ত্র ক্রয়ে ব্যয় হচ্ছে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার, যাতে বর্তমানে শীর্ষ দেশ ভারত। অস্ত্র বিক্রিতে শীর্ষ অবস্থানে আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মাদার অব অল বোম্ব (Mother of All Bombs)-এর বিপরীতে রাশিয়া তৈরি করেছে ফাদার অব বোম্ব (Father of All Bombs-FOABs)-এ যেন অস্ত্রের প্রতিযোগিতা। 

৩. একমেরুভিত্তিক বিশ্বব্যবস্থা ও বিশ্বায়ন : স্নায়ুযুদ্ধের অবসানের পর বিশ্ব পরিণত হয়েছে একমেরুভিত্তিক বিশ্বে। এ মেরুর ধারক ও বাহক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বায়নের গতিকে ত্বরান্বিত করেছে একমেরুভিত্তিক বিশ্বব্যবস্থা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মোড়লের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। শক্তির ভারসাম্য ভেঙে একক শক্তির উত্থান ঘটেছে। যুদ্ধের দামামা বেজে উঠছে। মার্কিন নেতৃত্ব বিশ্ব রাজনীতি, অর্থনীতিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ক্ষমতার ঔদ্ধত্যে মত্ত হয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তালেবান দমনের নামে ২০০১ সালে আফগানিস্তান, ২০০৩ সালে ইরাক দখল করে হাজারো মানুষকে হত্যা করেছে। ন্যায়বিচার ও সন্ত্রাস রোধ প্রহসনে পরিণত হয়েছে। 

৪. বহুজাতিক কোম্পানির দৌরাত্ম্য ও বিশ্বায়ন : উন্নত দেশের বহুজাতিক কোম্পানিগুলো অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে পুঁজি বিনিয়োগ করে ধীরে ধীরে ঐ সকল দেশের অর্থনীতিকে গ্রাস করে নিয়েছে। ঐ সকল দেশের রাজনীতিকে নিজেদের মতো করে পরিচালিত করছে। প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে ভয়-ভীতি ও হুমকি দিচ্ছে। নিজেদের মতো না চললে আর্থিক সাহায্য বন্ধ করে দেবে, একঘরে করে রাখবে বলছে। এসবই হয়েছে বিশ্বায়নের প্রভাব। 

৫. অপরাধ ও বিশ্বায়ন : বিশ্বায়ন অপরাধের বহু সুযোগ খুলে দিয়েছে। আজ দুনিয়ায় মাদকসেবীর সংখ্যা ২০ কোটে। মাদক ব্যবসা পরিণত হয়েছে বিশ্ব বাণিজ্যে। গরিব, অনুন্নত দেশ থেকে নারী পাচার এখন জমজমাট শিল্পের রূপ নিয়েছে। প্রতিবছর পূর্ব ইউরোপের ৫ লাখ নারী পশ্চিম ইউরোপে নিয়ে দেহ ব্যবসায় নিয়োগ করা হয়। তৈরি হয়েছে অপরাধী চক্রের এক গ্লোবাল নেটওয়ার্ক। দক্ষিণ আফ্রিকার দামী গাড়ি হাইজ্যাক করে তা মস্কোয় নিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। ইউক্রেনের কোনো মেয়েকে সারা জীবনের জন্য পতিতাবৃত্তিতে নিয়োগ করা হচ্ছে। আফগানিস্তানের সীমান্তে অস্ত্র ব্যবসা জমজমাট হয়ে উঠেছে। 

বিশ্বায়ন ও সাংস্কৃতিক মাত্রা : সমাজ ও সভ্যতার বহিঃপ্রকাশ ঘটে সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে, কারণ সংস্কৃতি হলো মানুষের অস্তিত্বের দ্যোতক। সংস্কৃতি হলো সভ্যতাতরুর পুষ্প। ফল দিয়ে যেমন গাছ চেনা যায় তেমনি সংস্কৃতির রূপরেখা দিয়ে সমাজ সভ্যতা চেনা যায়। বিশ্বায়ন সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে, যা নিচে ধারাবাহিকভাবে উপস্থাপন করা হলো : 

ক. কৃষি, চিকিৎসা ও বিশ্বায়ন : বিশ্বায়ন কৃষিক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধান করেছে। আগে মানুষ কৃষি জমি চাষে লাঙ্গল-জোয়াল-মই ব্যবহার করতো। কিন্তু এখন বিশ্বায়নের এ যুগে সে স্থান ধীরে ধীরে দখল করে নিচ্ছে ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার। পানি সেচ যন্ত্র হিসেবে দোন বা সেঁওতি ব্যবহার না হয়ে স্যালো মেশিন ব্যবহৃত হচ্ছে। কৃষি জমিতে রাসায়নিক সার ব্যবহারে উৎপাদন বহুগুণে বৃদ্ধি পেলেও জমি দিন দিন উর্বরতা শক্তি হারিয়ে ফেলছে। রাসায়নিক সারের প্রভাবে হারিয়ে যাচ্ছে নানা প্রজাতির মাছ। বিশ্বায়ন ঝাঁকি জাল, কই জাল, ফাঁস জাল, বাঁশ জালের স্থান পরিবর্তন এনে মৎস্য শিকারে কারেন্ট জাল বা হুইলের ব্যবহার এনে দিয়েছে। আগের মানুষ অশিক্ষিত ছিল বিধায় পীর-ফকিরের ঝাঁড়-ফুঁক, পানি পড়া, তাবিজ-কবজ, মানত-দান দক্ষিণায় বিশ্বাস করে আপদ-বিপদ থেকে মুক্তিলাভের চেষ্টা করতো। কিন্তু এখন শিক্ষিত হওয়ার কারণে ডাক্তারের কাছে যায়। আগের দিনে কলেরা-বসন্তে গ্রামময় উজাড় হয়ে যেত। এখন কলেরা-বসন্ত মামুলি রোগে পরিণত হয়েছে। তবে এখন নতুন নতুন রোগ এইডস, বার্ডফ্লু ইত্যাদি দেখা দিয়েছে। 

খ. পরিবার ব্যবস্থা ও বিশ্বায়ন : আগে পরিবার ছিল যৌথ। এখন দিন দিন একক পরিবার ব্যবস্থা গড়ে উঠছে। আগে স্বামী-স্ত্রীর প্রেম-ভালোবাসা গভীর থাকলেও এখন এ বন্ধন শিথিল হয়েছে। সামান্য কারণেই ভুল বোঝাবুঝিতে একে অপর থকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। আগে একটি পরিবারে একাধিক সন্তান জন্মাতো। এখন একটি পরিবার অনধিক দুটি সন্তান জন্ম দিয়ে জনসংখ্যা হ্রাস সচেষ্ট রয়েছে। অতীতে মানুষ ঘরে আসবাবপত্র হিসেবে একটি চকি, দুটি চেয়ার বা বেঞ্চ রাখতো। এখন বক্সখাট, ওয়ার্ড্রপ, ড্রেসিং টেবিল, টিভি, রেডিও, স্টিলের আলমারি আরো কত কী? এভাবে বিশ্বায়ন দিন দিন মানুষের চাহিদার পরিবর্তন এনে দিয়েছে। 

গ. ভাষা, পোশাক-পরিচ্ছদ ও বিশ্বাযন : ভাষাই একমাত্র মাধ্যম যা মানুষের কথা একে অপরকে সম্পূর্ণরূপে বুঝতে সহায়তা করে। কিন্তু দিন দিন আকাশ সংস্কৃতির এ যুগে এক ভাষা অন্য ভাষার মধ্যে ঢুকে পড়েছে। মানুষ নিজেকে স্মার্ট করার জন্য ইংরেজি, হিন্দি, আরবি, ফরাসি ভাষার বিশ্রণ ঘটিয়ে জগাখিচুড়ি ভাষার উদ্ভব ঘটাচ্ছে। বিশ্বায়নের প্রভাবে বিশ্বে প্রতিসপ্তাহে দুটি এবং প্রতিবছরে শতাধিক ভাষা অপমৃত্যুর কবলে পড়ছে। ২০৫০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ বিশ্বের ৩৫০ কোটি লোকের ভাষা হবে ইংরেজি, ২০০ কোট লোকের ভাষা হবে মান্দারিন, ১০০ কোটি লোকের ভাষা হবে হিন্দি। 

বিশ্বায়ন পোশাক-পরিচ্ছদে এনেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। এখন নারীরা সেলোয়ার কামিজ, ওড়না, শাড়ি, ব্লাউজ ছেড়ে জিনস্, টি-শার্টের দিকে ধাবিত হচ্ছে। পুরুষের লুঙ্গি, পাজামা-পাঞ্জাবি, এসবের জায়গা জিনস্, গ্যাবার্ডিন, কোর্ট টাই দখল করেছে। 

ঘ. সামাজিক নীতি, মূল্যবোধ এবং বিশ্বায়ন : বিশ্বায়নের প্রভাবে তৃতীয় বিশ্বের দেশসমূহ তাদের নিজ নিজ সামাজিক রীতিনীতি, আচার-আচরণ, মূল্যবোধকে হারিয়ে ক্রমেই পশ্চিমা ধ্যানধারণানির্ভর সমাজ ব্যবস্থার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। সমাজে যৌনতা, হিংস্রতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইংরেজি নতুন বর্ষ পালনে কিংবা ১৪ ফেব্রুয়ারি পালনে হিড়িক লেগেছে। প্রেম, ভালোবাসা হৃদয়ঘটিত ব্যাপার থেকে দহসর্বস্বে পরিণত হয়েছে। ধর্মীয় মূল্যবোধের দিন দিন অবনতি ঘটছে। গরুজন ভক্তি নতুন প্রজন্মের কাছে বিকৃত রূপ ধারণ করেছে। 

ঙ. শিক্ষা, খেলাধুলা ও বিশ্বায়ন : বিশ্বায়নের প্রভাবে শিক্ষা রূপান্তরিত হচ্ছে পণ্যে। হারাচ্ছে তার বুদ্ধিবৃত্তি চর্চার কেন্দ্রবিন্দু। মেধাস্বত্ব ও বুদ্ধিভিত্তিক সম্পত্তির পেটেন্ট বহুজাতিক কোম্পানিগুলো কিনে নিচ্ছে। যার ফলে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান উৎপাদনক্ষম হচ্ছে না। পাশ্চাত্যে সম্প্রদায়ের ভীড় বেড়ে গেছে। বিশ্বায়ন খেলাধুলার ক্ষেত্রে এক অভূত পরিবর্তন ঘটিয়েছে। ক্রিকেট, হকি, ব্যাডমিন্টন, দাবা, বাস্কেটবল, ভলিবল, টেবিল টেনিস, লন টেনিস এখন বিশ্বের সর্বত্র চলছে। জার্মানির গুটেনবার্গে টাইপরাইটার আবিষ্কার যেমন রেনেসাঁ ঘটিয়েছে তেমনি বিশ্বায়ন খেলাধুলার বিশ্বে রেনেসাঁ ঘটিয়েছে। 

উপসংহার : বিশ্বায়নের মূলমন্ত্রই হলো Convergence বা বৈচিত্র্যকে লুপ্ত করে একটি মাত্র ছাঁচে বিশ্বকে ঢেলে সাজানো। তাই পাঁচতারা হোটেলগুলো, বড় বড় নগরী, ধনীক শ্রেণীর পোশাক, খাদ্য, রাজনীতি এমনকি মানসিক সম্পর্কেও যেন কোনো ভেদাভেদ নেই। অপরদিকে বিশ্বায়ন শিক্ষা, চিকিৎসা, উৎপাদন, চিন্তা-চেতনা, বিশ্ব পরিচিতির পথকে বেগবান করছে। তাই বিশ্বায়নকে বহুপাক্ষিক বলা যায়। তবে বর্তমান বিশ্বে স্রোহের ন্যায় ধাবমান বিশ্বায়নে উন্নত রাষ্ট্রই সুবিধাভোগী সবচেয়ে বেশি। বিশ্বায়ন যে মিথ নিয়ে উদ্ভব হয়েছিল সে মিথ ঘুরিয়ে দিয়েছে এবং নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিজেদের সুবিধামতো ব্যবহার করছে উন্নত পুঁজিবাদী রাষ্ট্র। ফলে বিশ্বায়নে অনুন্নত বা উন্নয়নশীল রাষ্ট্র হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত। কাজেই এরূপ বিশ্বায়ন অনভিপ্রেত।


[ একই প্রবন্ধ আরেকটি বই থেকে সংগ্রহ করে দেয়া হলো ]


ভূমিকা : জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বর্তমানে এক বহুল আলোচিত বিষয় ‘বিশ্বায়ন’ বা  গ্লোবালাইজেশন’। ধারণাগত অর্থে বিশ্বায়ন বলতে বোঝায় ‘বিশ্বের জ্ঞান-বিজ্ঞান, প্রযুক্তি-সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও পরিবেশের তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক দৃষ্টিকোণ থেকে একই দিকে উত্তরণ।’ উত্তর-দক্ষিণ ও পূর্ব-পশ্চিমের মধ্যে ঐক্য সৃষ্টি করাই এর মূল উদ্দেশ্য। তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশসহ অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশে বিশ্বায়নের প্রভাব সম্পর্কে পর্যালোচনা অত্যন্ত সময়োপযোগী একটি বিষয়। 

বিশ্বায়ন : বিশ্বায়ন হলো পারস্পরিক ক্রিয়া ও আন্তঃসংযোগ সৃষ্টিকারী এমন একটি পদ্ধতি যা বিভিন্ন জাতির সরকার, প্রতিষ্ঠান এবং জনগণের মধ্যে সমন্বয় ও মিথস্ক্রিয়ার সূচনা করে। অন্যভাবে বলা যায়, বিশ্বায়ন হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যার সাহায্যে রাষ্ট্রকেন্দ্রিক সংস্থাসমূহ বিশ্বজুড়ে আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক গড়ে তোলে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে বিশ্বায়ন বলতে বিশ্ব অর্থনীতির সাথে একাত্মতা বোঝায়। ‘উৎপাদনের ক্ষেত্রে কোনো বাধা নয় প্রতিবন্ধকতা থাকবে না শুল্ক ও বাণিজ্যে, একমাত্র মুক্ত বাণিজ্যেই জাতির অর্থনৈতিক উন্নয়নের সর্বোত্তম পন্থা’-এরূপ অর্থনৈতিক উদারীকরণের পথ ধরেই জন্মলাভ করেছে মুক্তবাজার অর্থনীতির ধারণা। দানা বেঁধেছে বিশ্বায়ন। 

বিশ্বায়নের কারণ : বিশ্বায়নের কারণ বহুবিধ। তবে সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে মুনাফা অর্জন ও আর্থিক আধিপত্য বিস্তার। এক সমীক্ষায় দেখা যায়, গ্লোবাল কোম্পানিসমূহের সম্পদের এক বিশাল অংশই নিজ দেশের (Home Country) বাইরে অবস্থিত এবং কোনো কোনো গ্লোবাল কোম্পানির বিক্রিয়র সিংহভাগই অনুষ্ঠিত হয় বহির্বিশ্বে। বিশ্বায়নের অন্যান্য কারণসমূহ নিম্নরূপ : 

১. ছোট হয়ে আসছে পৃথিবী : গতিশীল যোগাযোগ, উন্নত যাতায়াত ব্যবস্থা, ক্রমবর্ধমান আর্থিক সঞ্চালন এবং দ্রুত প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ফলে সময় ও দূরত্বের ব্যবধান এতই হ্রস পেয়েছে যে, একটি বৃহৎ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের পক্ষে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বিচরণ বর্তমানে কোনো কষ্টসাধ্য ব্যাপারই নয়। 

২. আকর্ষণীয় পণ্যের বাজার বিস্তৃতি : যেকোনো আকর্ষণীয় পণ্যের বাজার সহজেই এক দেশ থেকে অন্য দেশে পরিব্যাপ্ত হয়। উদাহরণস্বরূপ কোকাকোলা বা টয়োটা গাড়ির কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। 

৩. সস্তা শ্রম ও কাঁচামাল ব্যবহার : উন্নত বিশ্বে শ্রম ও কাঁচামাল ব্যয়বহুল বিধায় অনেক বড় কোম্পানি গ্লোবাল কার্যক্রম গ্রহণের মাধ্যমে সস্তা শ্রম ও কাঁচামাল ব্যবহারের সুযোগ গ্রহণে আগ্রহী হয়। 

৪. বিনিয়োগের ঝুঁকি হ্রাস : কোনো একক দেশে বিনিয়োগ অনেক সময় ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচিত হতে পারে। এরূপ ঝুঁকি এড়ানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগ ও উৎপাদনের সিদ্ধান্ত সুফল বয়ে আনতে পারে। 

৫. বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার উদ্ভব : World Bank, WTO, IMF, EEC, NAFTA, SAPTA, ASEAN ইত্যাদি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থা গঠনের মাধ্যমে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া যে বহু গুণে ত্বরান্বিত হয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। 

বিশ্বায়নের ব্যাপ্তি : বর্তমানে আমাদের জীবনযাত্রার প্রায় সকল ক্ষেত্রে বিশ্বায়নের বিস্তার ঘটেছে। বিশ্বায়নের বিস্তারকে নিম্নোক্তভাবে আলোচনা করা যেতে পারে : 

১. প্রযুক্তিগত বিশ্বায়ন : শিল্প বিপ্লবের সময় থেকেই এই ধরনের বিশ্বায়ন শুরু হয়েছে। ঐ সময় যে সকল যুগান্তকারী যান্ত্রিক আবিষ্কার সাধিত হয় তার ফলে পৃথিবীর মানুষ পরস্পরের কাছাকাছি আসতে শুরু করে। যান্ত্রিক উৎপাদন থেকে যান্ত্রিক যাতায়াত ও যোগাযোগের সুফল ভোগ করতে মানুষ তৎপর হয়ে ওঠে। পৃথিবীর এক প্রান্তে তৈরি পণ্য অপর প্রান্তে সহজলভ্য হয়। আর এভাবেই ঘটে প্রযুক্তিগত বিশ্বায়নের বিস্তার। 

২. তথ্যগত বিশ্বায়ন : এরূপ বিশ্বায়নের ইতিহাস বেশি দিনের নয়। বিগত দুই দশকে এর অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়। যদিও প্রযুক্তির সাথেই এর সম্পর্ক তবু যোগাযোগের ক্ষেত্রে বহুমাত্রিক উন্নয়নের ফলে বর্তমান যুগকে বলা হয় তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। তথ্য আদান-প্রদানে প্রযুক্তির ব্যবহার বিশ্বায়নের গতিকে বহু গুণে ত্বরান্বিত করেছে। 

৩. সামরিক বিশ্বায়ন : আন্তঃমহাদেশীয় মিসাইল সিস্টেমসহ বিভিন্ন অত্যাধুনিক যুদ্ধাস্ত্র আবিষ্কারের ফলে পৃথিবীর যে কোনো দেশকে আগ্রাসনের শিকারে পরিণত করা বর্তমানে খুবই সহজ। তবে এর ফলে দরিদ্র ও অনুন্নত দেশসমূহ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিশ্ব নিরাপত্তার নামে আমেরিকা-ব্রিটেন মহাশক্তি বর্তমানে যে কোনো সময় পৃথিবীর যে কোনো অঞ্চলে আগ্রাসন চালাতে সক্ষম। 

৪. পরিবেশগত বিশ্বায়ন : মানুষের কর্মকাণ্ড, বিশেষত শিল্প ও সমরাস্ত্র সংক্রান্ত আচার-আচরণে পরিবেশগত ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে। বায়ুদূষণ, পানিদূষণসহ বিভিন্ন দূষণের কারণে গাছপালা, মাটি ইত্যাদি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এক দেশের পরিবেশ দূষণের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পার্শ্ববর্তী দেশসমূহ। 

৫. সামাজিক-রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিশ্বায়ন : বিশ্বায়নের ফলে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে সামাজিক-রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে। তৃতীয় বিশ্বর দেশসমূহ অনেক ক্ষেত্রে অপসংস্কৃতির শিকারে পরিণত হচ্ছে। নিজেদের সামাজিক মূল্যবোধ অনেক ক্ষেত্রেই ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে। বৃহৎ শক্তি যে রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করছে তার ফলে সামাজিক-সাংস্কৃতিক আবহাওয়া পাল্টে যাচ্ছে। 

বিশ্বায়নের প্রভাব : বিশ্বায়নের ধারণা ক্রমে পরিব্যাপ্তি লাভ করছে। বিশেষত অর্থনীতি ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এর প্রভাব ব্যাপকাকারে ছড়িয়ে পড়ছে। বিশ্বায়নের প্রভাবকে ইতিবাচক ও নেতিবাচক এ দুভাবে আলোচনা করা যেতে পারে। 

বিশ্বায়নের ইতিবাচক প্রভাব : জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্নয়ন ও তথ্যপ্রযুক্তির দ্রুত প্রসারে আজ পৃথিবী যে সত্যি সত্যিই ছোট হয়ে আসছে তার প্রমাণ পেতে বেশি দূর যেতে হয় না। ঘরে বসেই কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের বদৌলতে সমগ্র পৃথিবীর খোঁজখবর পাওয়া যায়। এ সবই বিশ্বায়নের ইঙ্গিত বহন করে। বিশ্বায়নকে তাই উপেক্ষা করা দুরূহ। বিশ্বায়নের ইতিবাচক প্রভাবসমূহ নিম্নরূপ : 

১. আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়ন : বিশ্বায়নের প্রভাবে বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক জোরদার হচ্ছে। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রগুলো একে অপরের ওপর নির্ভরশীল হচ্ছে। বিভিন্ন মাত্রাভেদে এ পারস্পরিক নির্ভরতাই বিশ্বায়নের পক্ষে একটি বড় সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করছে। বিশ্বায়নের ফলে ইউরোপের দেশসমূহ ইতিমধ্যে এক হয়ে গেছে। 

২. বৃহদায়তন কর্মকাণ্ডের সুবিধা : বিশ্বায়নের ফলে যে বৃহৎ বাজার ব্যবস্থার ব্যাপ্তি হয়েছে, তাতে বৃহদায়তন উৎপাদন ও বিপণন সহজসাধ্য হয়েছে। এতে একদিকে হ্রাস পাচ্ছে উৎপাদন ব্যয়, অন্যদিকে বৃদ্ধি পাচ্ছে মুনাফার পরিমাণ। 

৩. ভৌগোলিক শ্রমবিভাগ ও বিশেষায়ন : বিশ্বায়নের ফলে ভৌগোলিক শ্রমবিভাগ ও বিশেষায়নের ক্ষেত্রে প্রসারিত হচ্ছে। ফলে প্রতিটি দেশ তার আপেক্ষিক সুবিধা অনুযায়ী উৎপাদনশীল কাজে নিয়োজিত থাকতে পারছে। 

৪. গ্লোবাল ভাবমূর্তি উন্নয়ন : গ্লোবাল পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের ফলে সর্বত্র পণ্যের একই রূপ ভাবমূর্তি সৃষ্টি হয়। এতে পণ্যের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে। উদাহরণস্বরূপ, বলা যেতে পারে, কোকাকোলা বা পেপসির এ জাতীয় গ্লোবাল ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছে যার ফলে বিশ্বব্যাপী এদের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। 

৫. অবাধ বাণিজ্যে সুযোগ সৃষ্টি : বিশ্বায়নের ফলে বিভিন্ন দেশের মধ্যে অবাধ বাণিজ্য সহজসাধ্য হয়েছে। ই-কমার্সের বদৌলতে আলাদা মাত্রা ও গতি সঞ্চারিত হয়েছে এ অবাধ বাণিজ্যে। পৃথিবীর এক প্রান্তে বসে অন্য প্রান্তের সাথে ব্যবসায়ের কাজ অতি দ্রুত সমাধা করা এখন কোনো কঠিন ব্যাপার নয়। 

বিশ্বায়নের নেতিবাচক প্রভাব : বিশ্বায়নের নেতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করা যায় উন্নয়নশীল দেশসমূহে। এ কারণেই এসব দেশের কৃষক সম্প্রদায়, শ্রমিক শ্রেণী, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ইত্যাদি শ্রেণীর লোকেরা বিশ্বায়নবিরোধী আন্দোলনে রসদ যোগায়। নিচে বিশ্বায়নের নেতিবাচক প্রভাবসমূহ আলোচনা করা হলো : 

১. অর্থনৈতিক শোষণ ও মেধাপাচার : মুক্তবাজার অর্থনীতির আওতায় বিশ্বায়ন উন্নত দেশের জন্য বিশ্বসম্পদের দ্বার খুলে দিলেও দরিদ্র বা পশ্চাৎপদ দেশের জন্য তা একটি বড় অভিশাপস্বরূপ। বিশ্বায়নের ফলে দরিদ্র দেশের মেধা ও সম্পদ অবাধে পাচার হচ্ছে ধনী দেশে। এতে গরিব দেশ হচ্ছে আরো গরিব, আর ধনী দেশ হচ্ছে আরো ধনী। 

২. রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা রক্ষা কঠিন : বিশ্বায়নের ফলে গরিব দেশগুলোর পক্ষে তাদের রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা রক্ষা করাও একটি দুঃসাধ্য ব্যাপারে পরিণত হচ্ছে। ইন্টারনেট, ই-মেইল, ফ্যাক্স ইত্যাদির মাধ্যমে যে কোনো গোপনীয় দলিল, সংবাদ, তথ্য অতি দ্রুত বিদেশী প্রতিপক্ষের হাতে চলে যেতে পারে। এক্ষেত্রেও পশ্চাৎপদ দেশগুলোই মার খাচ্ছে ধনী দেশগুলোর কাছে। 

৩. শিক্ষাব্যবস্থায় বিপর্যয় : বিশ্বায়ন শিক্ষা ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে গরিব দেশগুলোর বিরুদ্ধে আগ্রাসী ভূমিকা পালন করছে। উন্নত বিশ্বের শিক্ষা ও প্রযুক্তি উন্নত বিধায় অনুন্নত দেশসমূহকে তা থেকে উপকৃত হওয়ার ক্ষেত্রে একদিকে যেমন ব্যয় করতে হচ্ছে প্রচুর অর্থ, অন্যদিকে ভেঙে পড়ছে তাদের নিজস্ব শিক্ষাব্যবস্থা ও প্রযুক্তির ভিত্তি। 

৪. বেকার সমস্যা বৃদ্ধি : বিশ্বায়নের ফলে উৎপাদন ব্যবস্থায় উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে তৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশে শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ফলে এসব দেশে ভয়াবহ বেকারত্ব দেখা দিচ্ছে। 

বিশ্বায়ন ও বাংলাদেশ : উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সাধারণত বিশ্বায়নের নেতিবাচক প্রভাবই বেশি লক্ষ্য করা যায়। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। নিচে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো : 

১. বিদেশী পণ্যের প্রসার : বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে। মুক্তবাজার অর্থনীতি আমাদের স্পর্শ করছে কিন্তু এর প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি লাভ করার মতো পরিবেশ বা উপাদানসমূহ বর্তমানে আমাদের দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণে নেই। ফলে অবাধ বাজারের নামে বাংলাদেশ ক্রমাণ্বয়ে বিদেশী পণ্যের বাজারে পরিণত হচ্ছে। 

২. অসুসংহত বাজার কাঠামো : বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ দাতা গোষ্ঠীর বিভিন্ন কঠোর শর্ত আরোপের কারণে বাংলাদেশ দেশীয় মুদ্রা ও পুঁজির বাজারে কোনো সুসংহত কাঠামো অর্জন করতে পারেনি। ফলে দেশে রপ্তানির পরিমাণ প্রত্যাশিত মাত্রায় বাড়েনি। অন্যদিকে এ দেশে বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পেয়েছে। 

৩. নিম্ন মানব উন্নয়ন সূচক : নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের মতে, ‘মানব উন্নয়নকে বাদ দিয়ে কখনো বিশ্বায়ন সম্ভব নয়। যেসব দেশের মানব উন্নয়ন সূচক অত্যন্ত কম তারা বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ায় হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়বে।’ বাংলাদেশে মানব উন্নয়ন সূচক নিম্ন অবস্থানে বিদ্যমান। তাই বর্তমান অবস্থায় বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর সাথে তাল মিলিয়ে চলা বাংলাদেশের জন্য সত্যিই দুরূহ ব্যাপার। 

৪. বিশ্ব অর্থনৈতিক বাজারে প্রবেশের তাগিদ : উন্নত বিশ্ব বাংলাদেশকে বিশ্ব অর্থনৈতিক বাজারে প্রবেশের তাগিদ দিচ্ছে। অথচ অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের ফলে এশিয়ার মুদ্রাবাজার ক্রমাবনতিশীল। উন্নয়নশীল দেশগুলোর মুদ্রাবাজারের পতনের পাশাপাশি এসব দেশের প্রধান প্রধান স্টক মার্কেটেও ধস অব্যাহত রয়েছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে অস্থিতিশীল অর্থনৈতিক কাঠামোবেষ্টিত বাংলাদেশ প্রতিযোগিতামূলক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে কতটুকু স্থায়িত্ব অর্জন করার ক্ষমতা রাখে তা চিন্তার বিষয়। 

৫. বিশ্বজনীন প্রতিযোগিতায় ব্যর্থ : অর্থনৈতিক এবং প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ বিশ্বজনীন প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হবার সামর্থ্য অর্জন করতে পারেনি। চোরাচালানের মাধ্যমে ভারতীয় পণ্যের প্রবেশ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজার ব্যবস্থা ও জাতীয় অর্থনীতিতে মারাত্মক বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে। তাই বাংলাদেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মতো অর্থনৈতিক কাঠামো দাঁড় না করিয়ে বিশ্বায়নে অনুপ্রবেশ দেশের জন্য বুমেরাং হয়ে দেখা দেবে। 

বিশ্বায়নের ভবিষ্যৎ : ভবিষ্যৎ সব সময় অনিশ্চয়তার। তারপরও কিছু কিছু ক্ষেত্রে যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করলে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎকে সাফল্যমণ্ডিত করে তোলা অনেকাংশে সম্ভবপর হয়। বর্তমানে বিশ্বায়নের যে ধারা তাতে ধনী দেশগুলো ধনী হচ্ছে এবং গরিব দেশগুলো আরো বেশি গরিব হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণ পেতে হলে ধনী দেশগুলোকে গরিব দেশগুলোর প্রতি আরো বেশি নমনীয় ও সহনশীল হতে হবে, পাশাপাশি বাজার অর্থনীতিকে আরো বেশি সমাজনৈতিক ও কল্যাণমুখী হতে হবে। ধনী দেশগুলো উদার ও সহনশীল হলে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভবিষ্যতে নিম্নোক্ত সুবিধা পাওয়া যাবে : 
১. অবাধ তথ্য-প্রযুক্তি বিনিময় করা যাবে; 
২. কমদামে পণ্যভোগ করা যাবে; 
৩. গরিব দেশের শিক্ষার্থীরা সহজেই উন্নত দেশের শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে; 
৪. যোগাযোগ ব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নতি ঘটবে; 
৫. বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য হ্রাস পাবে; 
৬. চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি হবে অর্থাৎ গরিব দেশগুলো সুচিকিৎসার আওতায় আসবে; 
৭. আন্তর্জাতিক সম্পর্কোন্নয়ন ঘটবে; 
৮. যুদ্ধের ধামামা হ্রাস পাবে; 
৯. কূটনৈতিক উন্নয়ন ঘটবে; 
১০. জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ঘটবে ইত্যাদি। 

উপসংহার : আধুনিক সভ্যতার গতিশীল চক্রের এক অবশ্যম্ভাবী ফল বিশ্বায়ন। তাই বিশ্বায়নকে নব্য উপনিবেশবাদ বলে ঠেকিয়ে রাখা যাবে না। বিশ্বায়নকে যত নেতিবাচক বিশেষণেই ভূষিত করা হোক না কেন, বিশ্বায়ন এগিয়ে যাবে তার আপন গতিতে। তাই এরূপ বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট থেকে কোনো রাষ্ট্রই দূরে থাকতে পারে না। তবে পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়া বিশ্বায়নের পথে অগ্রসর হলে তা বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য বিপর্যয় ডেকে আনবে। আর অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন তখনই ফলপ্রসূ ও কার্যকর হবে যখন এর সুফল সর্বত্র সমানভাবে বণ্টন করা যাবে। এজন্য প্রয়োজন সুষম মানের সম্পদ উন্নয়ন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন, সম্পদের সুষম বণ্টন ও স্বচ্ছ প্রশাসনিক কাঠামো। তবেই বিশ্বায়নের পথে বাংলাদেশের যাত্রা হবে ফলদায়ক।

1 Comments

Post a Comment
Previous Post Next Post