প্রবন্ধ রচনা : কর্তব্যনিষ্ঠা

↬ কর্তব্যপরায়ণতা


ভূমিকা : প্রত্যেক মানুষকেই নিজ নিজ ভূমিকা রাখতে হয়। সম্পাদন করতে হয় আপন আপন করণীয়। এক্ষেত্রে আন্তরিক নিষ্ঠা প্রয়োজন। তা না হলে সেসব কাজ সমাজের জন্য মঙ্গলজনক হয় না এবং তা ক্ষতির কারণও হতে পারে। সমাজের অগ্রযাত্রার লক্ষ্যে কর্তব্যনিষ্ঠার গুরুত্ব ব্যাপক। বর্তমান প্রতিযোগিতার যুগে কর্তব্যনিষ্ঠ কর্মীর উপযুক্ত মূল্যায়ন হয়ে থাকে।

কর্তব্যের স্বরূপ : মানুষের জীবন নিয়তই কর্মময়। অর্থাৎ মানুষকে পারিবারিক, পেশাগত, সামাজিক প্রভৃতি দায়ত্ব পালন করতে হয়। মানুষ তার কর্মক্ষমতা ও যোগ্যতা অনুযায়ী এসব দায়িত্ব পালন করে থাকে। পারিবারিক জীবনে পরিবার পরিচালনায় সহায়তা করা মৌলিক কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। সমাজের সদস্য হিসেবে বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজও তাকে সম্পাদন করতে হয়। পেশাগত জীবনে কর্তব্য সম্পান নিজের তাগিদেই বর্তায়। আর কর্তব্যনিষ্ঠায় এসব দায়িত্ব সুচারুভাবে সম্পন্ন করতে সহায়ক হয়।

ছাত্রজীবনে কর্তব্যনিষ্ঠা : ছাত্রজীবন হলো পরবর্তী জীবনে সফলতা অর্জনের প্রস্তুতিপর্ব। এর উপর নির্ভর করে পরবর্তী জীবনের সাফল্য ও ব্যর্থতা। নির্ভর করে তার ভবিষ্যৎ উন্নতি। এ সময়ই হলো তার কর্তব্যনিষ্ঠা শিক্ষা যথার্থ সময়। একজন ছাত্রের প্রথম ও প্রধান কর্তব্য হচ্ছে নিবিড়ভাবে অধ্যয়ন করে যাওয়া। ছাত্রজীবনে এ কর্তব্য যে নিষ্ঠার সাথে পালন করতে পারে তার পরবর্তী জীবনে উন্নতির সর্বোচ্চ শিখরে অবস্থান করে। ছাত্রজীবন মানুষের সুকুমারবৃত্তি লালনের শুভক্ষণ। এখানেই তাকে জ্ঞানে-গুণে পরিপূর্ণ একটি জীবন গঠন করতে হয়। কর্তব্যনিষ্ঠা হচ্ছে তাকে জ্ঞানী-গুণী করে তোলার সোপান। ছাত্রজীবনে কর্তব্যনিষ্ঠার প্রকাশ ঘটে তার শিক্ষক, মাতা-পিতা, বন্ধু-বান্ধব ও আশপাশের অন্যান্য ব্যক্তিবর্গের প্রতি তার কর্তব্যের পরিপূর্ণভাবে পালনের মাধ্যমে। শুধুমাত্র শিক্ষা অর্জনই একজন ছাত্রের কর্তব্য নয়। তার অন্যান্য কর্তব্য হচ্ছে শিক্ষকদের মেনে চলা, বন্ধুদের সাথে সুন্দর সম্পর্ক স্থাপন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সকল নিয়ম-কানুন যথার্থভাবে পালন, সর্বোপরি সমাজের সকল দায়িত্ব পালনে নিজেকে নিবেদিত রাখা। তাহলেই একজন ছাত্রের জীবন পরিপূর্ণতা পায়।

পেশা ও ব্যবসায়িক জীবনে কর্তব্যনিষ্ঠা : পেশাগত জীবনে কর্তব্যনিষ্ঠা থাকলে জীবনে সফলতা অবধারিত। একজন ব্যক্তি যখন পেশাগত জীবনে প্রবেশ করে তখন তাকে তার কর্তব্যের প্রতি পরিপূর্ণ নিষ্ঠা রাখতে হয়। চাকরি ও ব্যবসায় যাই হোক না কেন তার উপর অর্পিত সকল দায়িত্ব তার আবশ্যকীয় পালনীয় কর্তব্য হয়ে যায়। এ কর্তব্য পালনে কোনো প্রকার অলসতা বা গাফলতি তার ভবিষ্যৎ উন্নতিকে বাধাগ্রস্ত করে। নিজের পেশাগত জীবনে কর্তব্যনিষ্ঠ একজন ব্যক্তি খুব সহজেই অন্যদের কর্তব্য পালন করতে হয়। ব্যবসায়ীদের কর্তব্য হলো সঠিক মূল্যে সঠিক পণ্য বিক্রয়। যে ব্যবসায়ী এ কর্তব্য পালনে ব্রত থাকে সে সকল ক্রেতাসাধারণের অত্যন্ত কাঙ্ক্ষিত হয়ে ওঠে। তার ব্যবসায়ের উন্নয়ন শুধু সময়েল ব্যাপার হয়ে থাকে।

সামাজিক জীবনে কর্তব্যনিষ্ঠা : আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে তা নিয়েই আমাদের সমাজ। সমাজে আমাদের পরস্পরের প্রতি নির্ভরশীল হয়ে বেঁচে থাকতে হয়। সমাজেরে প্রতি একজন মানুষের প্রচুর কর্তব্য রয়েছে। এ সকল কর্তব্য তাকে অবশ্যই পালন করতে হয়। এ সকল কর্তব্যের মধ্যে রয়েছে পারস্পরিক সাহায্য-সহযোগিতা, সামাজিক রীতি-নীতি মেনে চলা, সকলের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা ইত্যাদি। সমাজের প্রতি আমাদের অন্যতম প্রধান কর্তব্য হচ্ছে একে অপরের বিপদে সহযোগিতা করা। একজন ব্যক্তি যখন তার প্রতিবেশীদের যেকোনো বিপদে সহযোগিতার হাত বাড়ায় তখন সে ব্যক্তি সমাজের অত্যন্ত কর্তব্যনিষ্ঠ মানুষ হিসেবে পরিচিতি পায়। তার প্রতি সকলে সম্মান প্রদর্শন করে। তার কোনো বিপদ হলে সকলে এগিয়ে আসে। কারণ একজন কর্তব্যনিষ্ঠ মানুষকে সমাজের সকল স্তরের মানুষ অত্যন্ত সম্মান ও শ্রদ্ধা করে থাকে।

সাংসারিক জীবনে কর্তব্যনিষ্ঠা : স্ত্রী, পুত্র, কন্যা, মাতা ও পিতা এ নিয়ে আমাদের সংসারজীবন। সংসারজীবনে আমাদের কিছু কর্তব্য রয়েছে। এ সকল কর্তব্য যে সকল ব্যক্তি পালন করে তাকেই একজন সাংসারিক জীবনে কর্তব্যনিষ্ঠ মানুষ বলা যায়। একজন পুরুষের সংসারজীবনে কর্তব্য হলো সংসারের প্রতিটি মানুষের প্রয়োজনীয় সকল চাহিদা পূরণ করা। আর সংসারের অন্য ব্যক্তিদেরও এ কর্তব্য পরিপূর্ণভাবে পালন করতে হয়। সংসারজীবন অত্যন্ত জটিল তাই সকলের সঠিকভাবে নিজ নিজ কর্তব্য পালনেই এর ভারসাম্য ঠিক থাকে এবং একটি সুখী ও সুন্দর সংসার গঠন করা যায়।

কর্তব্যনিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা : দায়িত্বের সঙ্গে কর্তব্যনিষ্ঠার সুগভীর সম্পর্ক রয়েছে। কেননা দায়িত্ব পালনে শৈথিল্য প্রদর্শন করলে করণীয় কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদিত না হয়ে বরং সমাজে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। যেমন- আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ বাহিনী যদি দায়িত্ব অবহেলা কিংবা শৈথিল্য দেখায় তাহলে সমাজে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটতে পারে। ফলে সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা ব্যাহত হতে পারে। তাই মানবজীবনে কর্তব্যনিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।

কর্তব্যনিষ্ঠার পুরস্কার : সাফল্য অর্জনই কর্তব্যনিষ্ঠার প্রধান পুরস্কার। এই সাফল্যই পরবর্তী কর্মপন্থায় উদ্দীপনা জোগায়। সত্যিকারের কর্তব্যনিষ্ঠ কর্মীর দ্রুত সম্পন্ন হয় এবং ত্রুটিও কম থাকে। এভাবে অন্যের আস্থাভাজন হওয়া যায়, পাওয়া যায় নতুন দায়িত্ব। সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করলে কাজের যেমন দক্ষতা বাড়ে তেমনি যোগ্যতার উৎকর্ষ সাধিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, যারা পৃথিবীতে মহৎ কাজের সূচনা করেছিলেন তাঁরা সবাই ছিলেন কর্তব্যনিষ্ঠ। আধুনিক সমৃদ্ধিময় বিশ্ব এঁদেরই সফল অবদানের ফল।

কর্তব্যনিষ্ঠা না থাকার ফলাফল : কর্তব্যনিষ্ঠাহীন ব্যক্তির জীবনের পরিণতি কখনো ভালো হয় না। ব্যক্তিজীবন, সংসারজীবন কিংবা ছাত্রজীবন সকল ক্ষেত্রেই কর্তব্যনিষ্ঠাহীন ব্যক্তির ফলাফল অত্যন্ত ভয়াবহ। ছাত্রজীবনে সঠিকভাবে অধ্যয়ন না করার ফলে ভবিষ্যতে পেশাগত জীবনে পড়তে হয় চরম বিপর্যয়ের মুখে, যা তাকে সাংসারিক জীবনে শুধুমাত্র দুশ্চিন্তা ও সামাজিক জীবনে অন্যদের অবহেলার পাত্র হিসেবে স্থাপন করে। তাই জীবনের প্রতিটি স্তরকে সুখ ও শান্তি-সমৃদ্ধ করতে হলে কর্তব্যনিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই। আর জাতীয় জীবনে কর্তব্যনিষ্ঠা না থাকার ফলাফল আমাদের দেশের সরকার, প্রশাসন-এর দিকে নজর দিলেই বুঝা যায়। প্রতিটি বিভাগে অবস্থান করছে চরম কর্তব্যহীনতা। ফলে দুর্নীতি, ঘুষ, ছিনতাই, রাহাজানি, মাদক ব্যবসায় বাড়ছে সমানতালে যা দেশকে পরিণত করছে অপার সম্ভাবনাময় এক দেশ থেকে তৃতীয় বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশ হিসেবে। তাই প্রতিটি স্তরেই কর্তব্যনিষ্ঠা প্রয়োজন তা না হলে কোনো ক্ষেত্রেই উন্নতি সম্ভব নয়।

উপসংহার : যিনি নিষ্ঠার সঙ্গে কর্তব্য পালন করেন, তার কাজের উপযুক্ত মূল্যায়ন হলে তিনি যেমন উৎসাহিত হন তেমনি কাজের গতি বাড়ে, উৎপাদনও বৃদ্ধি পায়। ব্যক্তির কর্তব্যনিষ্ঠার সার্বিক প্রভাব পড়ে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবন। গড়ে ওঠে শান্তি ও সমৃদ্ধিময় সমাজ। সমাজের কাঙ্ক্ষিত সমৃদ্ধিও আসে। তাই একুশ শতকের প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বায়নের যুগে আমাদের উন্নতিও অনেকাংশে কর্তব্যনিষ্ঠার ওপর নির্ভরশীল।


[ একই প্রবন্ধ আরেকটি বই থেকে সংগ্রহ করে দেয়া হলো ]


ভূমিকা : মানুষ তার কর্মের মাধ্যমে মহৎ ও শ্রেষ্ঠ হয়ে ওঠে। কর্মের সাফল্যই তার জীবনকে পৌঁছে দেয় সাফল্যের স্বর্ণদুয়ারে। এই সাফল্য অর্জনের পেছনে যেসব গুণ অপরিহার্য, কর্তব্যনিষ্ঠা সেসবের একটি। সমাজের সদস্য হিসেবে প্রতিটি ব্যক্তিকে পালন করতে হয় নিজ নিজ কর্তব্য। সে কাজে আন্তরিকতা থাকলে সে কাজ হয় সমাজের পক্ষে মঙ্গলজনক আর তা না থাকলে সমাজের জন্যে তা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই সমাজের অগ্রযাত্রার পথে মানুষের কর্তব্যনিষ্ঠার গুরুত্ব খুবই বেশি।

কর্তব্যনিষ্ঠার মর্মবস্তু : কর্তব্যনিষ্ঠা বলতে করণীয় বা পালনীয় দায়িত্ব সম্পাদনে আগ্রহ, আন্তরিকতা বা নিষ্ঠাকে বোঝায়। কোনো কাজ সুষ্ঠু ও সুচারুভাবে সম্পাদন করতে হলে চাই ঐ কাজের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তির দায়িত্ববোধ। কাজ সম্পাদনে আগ্রহ ও সেই সঙ্গে নিজের শক্তি ও সামর্থ্য অনুযায়ী প্রয়োজনীয় শ্রম, দক্ষতা ও বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে ঐ দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত অকৃত্রিম প্রচেষ্টাকেই বলা যায় কর্তব্যনিষ্ঠা। জীবনে ও কর্মে সফলতা প্রয়াসী, সমাজ-সচেতন মানুষের চারিত্রিক গুণাবলির অন্যতম হচ্ছে কর্তব্যনিষ্ঠা। কর্তব্যনিষ্ঠ মানুষের ভূমিকা ছাড়া কর্মজীবনের সাফল্য, জাতীয় উন্নতি এবং সমাজ-প্রগতির কথা কল্পনা করা যায় না।

কর্তব্যনিষ্ঠা এক মহৎ মানবিক গুণ। জীবনের সার্থকতা রচনায় কর্তব্যনিষ্ঠা এক প্রধান উপায়। আর কর্তব্যে নিষ্ঠ হতে হলে চাই কাজের প্রতি উৎসাহ এবং অদম্য আগ্রহ। কর্মবিমুখতা কর্তব্যনিষ্ঠার অন্তরায়। এজন্যেই বলা হয়, যে কাজকে ভয় পায়, সে প্রকৃত পক্ষে নিজেকে আবিষ্কারের সুযোগই গ্রহণ করে না। কোনো কোনো ধর্মে তাই কর্মময় জীবনকে গ্রহণ করা হয় পুণ্যময় বলে।

কর্তব্যের প্রকতি : প্রত্যেক মানুষকেই জীবনে নানারকম দায়িত্ব পালন করতে হয়। যেমন : পারিবারিক দায়িত্ব, পেশাগত দায়িত্ব, সামাজিক দায়িত্ব ইত্যাদি। জীবিকার বৈচিত্র্যের কারণে মানুষের দায়িত্বও হয় বৈচিত্র্যপূর্ণ। তাছাড়া, মানুষের একেক জনের কর্মক্ষমতাও একেক রকম। কাজেই মানুষ তার কর্মক্ষমতা বা যোগ্যতা অনুযায়ী বিভিন্ন কাজ করে সমাজের চাহিদা পূরণ করে। পারিবারিক জীবনে পরিবারের সদস্যদের ভালোমন্দ দেখা, পরিবার পরিচালনায় সহায়তা করা মৌলিক কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। আবার, সমাজের সদস্য হিসেবে প্রতিটি মানুষকে সমাজ হিতৈষণামূলক নানা কাজও সম্পাদন করতে হয়।

কর্তব্যনিষ্ঠার গুরুত্ব : দাায়িত্ব পালনের সঙ্গে কর্তব্যনিষ্ঠার রয়েছে সুগভীর যোগ। দায়িত্ব পালনের সময় কেউ যদি দায়িত্ব পালনে শিথিলতা দেখায়, করণীয় কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদিত না করে, তাহলে সমাজে এর বিরূপ প্রভাব পড়ে। যেমন : দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা যদি তাদের দায়িত্বে অবহেলা কিংবা শৈথিল্য দেখান, তবে গোটা সমাজের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটতে পারে। ফলে আইনের ওপর মানুষের আস্থা হারিয়ে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। এতে সমাজের অপরাপর প্রতিষ্ঠানও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

দায়িত্ব পালনের উপযুক্ত পরিবেশ : দায়িত্ব সুচারুরূপে পালনের জন্যে কাজের পরিবেশ হওয়া চাই উন্নত, উপযোগী এবং স্বাধীন। স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারলে মানুষের স্বাভাবিক যোগ্যতার প্রকাশ ঘটে। এতে করে কাজের মানও বৃদ্ধি পায়। প্রদর্শনী মনোভাবের পরিবর্তন করতে না পারলে নিজ ক্ষমতা বিকাশ লাভ করে না আবার কাজের যথাযথ ফল পাওয়াও সম্ভব নয়। অন্যদিকে কারো অধীনস্থ হয়ে দায়িত্ব পালনকালে নিজস্ব স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলা উচিত নয়। কর্তব্য সম্পাদনের জন্যে চাই সদিচ্ছা, আগ্রহ ও নিষ্ঠা। চাই উপযুক্ত পরিবেশ। আবার অনেক মহান কাজ আছে যা রাতারাতি সম্পন্ন করা যায় না। এর জন্যে চাই দীর্ঘদিনের পরিশ্রম, অধ্যবসায়সহিষ্ণুতা। চাই একাগ্রতা ও সাধনা। এ প্রসঙ্গে স্যার জসুয়া রেনল্ডস্-এর উক্তি-
“কোনো কাজে সাফল্য চাইলে ঘুম ভাঙার সময় থেকে নিদ্রা যাওয়ার মুহূর্ত পর্যন্ত সমস্ত দেহমন ঢেলে দিতে হবে কাজে।”
প্রকৃত পক্ষে এমন নিষ্ঠাই সফলতাকে নিশ্চিত করে।

কর্তব্যনিষ্ঠার পুরস্কার : কর্তব্যনিষ্ঠার পুরস্কার প্রথম ও প্রধানত কাজে সাফল্য অর্জন, একই সঙ্গে তা যুগপৎ পরবর্তী কাজের উদ্দীপনাও। মনীষী উক্তি :
“একটি কর্তব্য সম্পাদনের পুরস্কার হলো পরবর্তী কর্তব্য সম্পাদনের শক্তি অর্জন।”
যে সত্যিকারের কর্তব্যনিষ্ঠ তার কাজ সম্পন্ন হয় দ্রুত। মনোযোগ দিয়ে কাজ করলে তাতে ত্রুটিও থাকে কম। এভাবে দায়িত্বের সঙ্গে কর্তব্য সম্পাদন করলে মানুষের আস্থা অর্জন করা সম্ভব হয়, আবার নতুন দায়িত্ব পাওয়া যায়। সততার সাথে কাজ করে গেলে কাজের দক্ষতা বাড়ে এবং যোগ্যতার উৎকর্ষ সাধিত হয়। যারা পৃথিবীতে অনেক বড় কাজের সূচনা করেছিলেন তাঁরা সবাই ছিলেন কর্তব্যনিষ্ঠ। এঁদেরই সফল অবদানে অর্জিত হয়েছে জাতীয় ও বিশ্ব সমৃদ্ধি।

উপসংহার : যে যে ধরনের কর্তব্য সম্পাদন করুক না কেন, স্বার্থহীন থেকে কর্তব্য সম্পাদন করলে কাজে আসে সাফল্য, দায়িত্ব পালন হয় সার্থক। যিনি নিষ্ঠার সঙ্গে কর্তব্য পালন করেন, তার কাজের উপযুক্ত মূল্যায়ন হলে তিনি উৎসাহিত হন। তাই যারা কাজের তদারকি করেন, তাদের উচিত সর্বদা দায়িত্বপালনকারীকে উৎসাহ যোগানো। উৎসাহ কাজের গতি বাড়ায়, তাতে উৎপাদনও বৃদ্ধি পায়, সমৃদ্ধিও নিশ্চিত হয়। পারস্পরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ না হলে কিংবা পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীলতা না থাকলে কাজের পরিবেশ হয় বিনষ্ট। পক্ষান্তরে, উপযুক্ত পরিবেশে নিষ্ঠার সাথে কাজে যে সাফল্য আসে তা হয়ে দাঁড়ায় বৃহত্তর কাজের উজ্জীবনী প্রেরণা। ব্যক্তির কর্তব্যনিষ্ঠার সার্বিক প্রভাব পড়ে সমাজ এবং রাষ্ট্রীয় জীবনে। এতে সমাজে আসে শান্তি ও সমৃদ্ধি। সমাজের কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতিও অর্জিত হয়। একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে আমাদের অগ্রগতিও বহুলাংশে কর্তব্যনিষ্ঠার ওপর নির্ভরশীল।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post