রচনা : বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন : সমস্যা ও সম্ভাবনা

ভূমিকা : একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রযাত্রায় আন্তর্জাতিক স্রোতধারায় সম্পৃক্ত হবার মধ্য দিয়ে ক্ষুধা, দারিদ্র্য এবং নিরক্ষরতামুক্ত নতুন বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ব্যাপক পরিবর্তনের সুযোগ এনে দিয়েছে। বিশ্বায়নের (Globalization) কারণে বর্তমানে বিশ্ব অর্থনীতি প্রায় একটি অভিন্ন অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে। প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাজার ব্যবস্থায় বাংলাদেশের অস্তিত্ব রক্ষা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের সমস্যাসমূহ যথাযথভাবে চিহ্নিত করা তা সমাধানের সঠিক দিকনির্দেশনা উদ্ভাবন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। 

অর্থনৈতিক উন্নয়ন : উন্নয়নের সংজ্ঞা ও সূচক বহুমাত্রিক এবং দ্ব্যর্থবোধক। এ সম্বন্ধে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন বিশ্লেষণ। ভিন্নতা সত্ত্বেও আমরা ক্রমপরিবর্তনশীল আর্থ-সামাজিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে একক বিশ্ব ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হচ্ছি। 

সাধারণভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন বলতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে বোঝানো হয়। 

প্রখ্যাত উন্নয়ন অর্থনীতিবিদ ইয়ং (Young, 1989)-এর মতে, উন্নয়ন হলো কোনো ব্যক্তি বা সমাজের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অগ্রগতির একটি জটিল প্রক্রিয়া। অগ্রগতি এই অর্থে যে, এর ফলে ব্যক্তি ও সমাজের জৈবিক ও মনস্তাত্ত্বিক চাহিদা পূরণ হয় এবং সৃজনশীলতা প্রকাশের সুযোগ ঘটে। অতি সম্প্রতি উন্নয়ন কথাটির সঙ্গে ‘টেকসই’ (Sustainable) শব্দটি যুক্ত হয়েছে। এর অর্থ হলো বৈষম্যহীন ও খুঁতবিহীন ক্রম উন্নয়ন এবং পরিবেশ ও সমাজ ব্যবস্থার সর্বনিম্ন ক্ষতি স্বীকার করে উন্নয়ন। টেকসই উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় পরিবেশ সুরক্ষা ও নারীর অংশগ্রহণ অপরিহার্য। 

নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন প্রায় দেড় দশক ‘উন্নয়ন তত্ত্ব’ চর্চা করার পর উপলব্ধি করলেন যে, শুধু মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি কোনো দেশের উন্নয়নের মাপকাঠি হতে পারে না। কেননা মাথাপিছু আয় বাড়লেও ঐ বাড়তি আয়ে জনসাধারণের একটি বড় অংশের কোনো অধিকার নাও থাকতে পারে। তাঁর মতে, উন্নয়ন মানে মানুষের জীবনযাত্রার মানের উন্নয়ন, যে মান তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য বা আয়ু এবং আরো অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে। আয় বৃদ্ধি সে লক্ষ্যে পৌঁছানোর একটি উপায় মাত্র। তাঁর মতে, আয় বৃদ্ধি বা উৎপাদনের ওপর মানুষের অধিকার বা এনটাইটেলমেন্টের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে। অমর্ত্য সেন উন্নয়নের আবশ্যিক পাঁচটি শর্তের কথা বলেছেন : ১. সামাজিক, ২. রাজনৈতিক, ৩. বাজার ব্যবস্থা, ৪. পদ্ধতিগত সুযোগ এবং ৫. অসহায় শ্রেণির সুরক্ষার স্বাধীনতা। এ পাঁচটি উপাদানের কোনো একটির অনুপস্থিতি অর্থনৈতিক উন্নয়নকে বিতর্কিত বা বাধাগ্রস্ত করে তোলে। অর্থাৎ কোনো একটি রাষ্ট্র এ পাঁচটি উপাদানের ভারসাম্যপূর্ণ ও সমন্বিত উপস্থিতি নিশ্চিত করার মাধ্যমেই উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যেতে পারে। 

অর্থনৈতিক উন্নয়নের সমস্যাসমূহ : বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রধান সমস্যাসমূহ নিম্নরূপ : 

১. অবকাঠামোগত দুর্বলতা : বাংলাদেশ সফল শেষে একজন বিশ্বব্যাংক কর্মকর্তা বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি বিকাশের পথে প্রধান বাধা হচ্ছে অবকাঠামোগত দুর্বলতা। অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য দৃঢ় ভিতের অবকাঠামো দরকার। ভিত না থাকলে যেমন ইমারত তোলা যায় না, তেমনি অর্থনীতি দাঁড়াবার জন্য অবকাঠামো দরকার। 

২. ঋণখেলাপিদের দৌরাত্ম্য : ঋণখেলাপিরা আমাদের অর্থনীতির প্রধান শত্রু। খেলাপি ঋণ আমাদের অর্থনীতির অগ্রযাত্রার পথে প্রধান বাধা। ঋণগ্রহীতারা নানা প্রভাব-প্রতিপত্তির মাধ্যমে বিনিয়োগের নামে শত শত কোটি টাকা ব্যাংক থেকে তুলে নির্ধারিত খাতে বিনিয়োগ না করে অন্য অনুৎপাদন খাতে বিনিয়োগ করে। এই খেলাপি ঋণের হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়মিত প্ররিশোধ হলে উক্ত টাকা পুনঃবিনিয়োগের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতি লাভবান হতো। কিন্তু ঋণখেলাপি হবার ফলে দেশ সমৃদ্ধির সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। 

৩. বৈদেশিক সাহায্য ও উন্নয়ন : বৈদেশিক সাহায্য আদৌ জাতীয় উন্নয়নে কোনো অবদান রাখতে পারে কিনা- এ নিয়ে খোদ দাতা দেশগুলোতেও দীর্ঘদিন ধরে বিতর্ক চলছে। দাতা দেশগুলোতেও এ কথা শোনা যাচ্ছে যে, বৈদেশিক সাহায্য তৃতীয় বিশ্বের কোনো উন্নয়নে আসছে না। 

৪. বিদেশি পণ্যের আধিপত্য : বর্তমানে বাংলাদেশের বাজার বিদেশি পণ্যে সয়লাব। এ ঘটনা দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তাদের হতাশ করেছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যখন কোনো দেশে বিনিয়োগ করতে আসেন তখন স্থানীয় বাজারের সম্ভাবনা যাচাই করেন। সুতরাং বাংলাদেশের বাজারে বিদেশি পণ্যের আধিপত্য আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে মারাত্মক অন্তরায়। 

৫. কম সঞ্চয় : একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য ১৬% থেকে ২০% জাতীয় সঞ্চয়ের প্রয়োজন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বাংলাদেশে বর্তমান জাতীয় সঞ্চয়ের পরিমাণ মাত্র ৮%। সুতরাং জাতীয় সঞ্চয়ের এই নিম্নমান বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি বিরাট সমস্যা।

৬. আমদানি নির্ভরতা : বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রমে রপ্তানির তুলনায় আমদানির আধিক্যের কারণে বাণিজ্যিক লেনদেনের ভারসাম্যে ঘাটতি ‍সৃষ্টি হয়। ২০০৪-০৫ সালে এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৩২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। পরবর্তী প্রতিটি আর্থিক বছরে এ ঘাটতির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে আসছে। অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০১৮, অনুসারে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের সাময়িক হিসাব অনুযায়ী, সার্বিক লেনদেন ভারসাম্যে ৯৭৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঘাটতি। 

৭. রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা : বলা হয়ে থাকে, রাজনৈতিক উন্নয়ন অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত। কিন্তু বাংলাদেশে সরকারি ও বিরোধী দলসমূহের নিম্ন রাজনৈতিক সংস্কৃতি চর্চার ফলে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্টহীন ইস্যুতে বিরোধী দলসমূহের সংসদীয় রীতি বিরোধী আচরণ দেশ ও জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতার শামিল। এর ফলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। 

৮. দুর্নীতি : অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক কূটনীতি সফল করতে স্বচ্ছ জবাবদিহিমূলক ও দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন অপরিহার্য। কিন্তু বাংলাদেশে এর উপস্থিতি অতি নগণ্য। Transperancy International-এর প্রতিবেদনেও এর ট্রাস্টি অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমেদ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে মূল অন্তরায় হিসেবে দুর্নীতিকে চিহ্নিত করেছে। 

৯. নীতি বাস্তবায়নে সরকারের ধীরগতি : নীতি বাস্তবায়নে সরকারের ধীরগতির কারণেও অর্থনৈতিক উন্নয়ন কার্যক্রম ব্যাহত হয়। বিশ্বব্যাংকের সাতজন নির্বাহী পরিচালক জানুয়ারি ১৯৯৭-এ বাংলাদেশ সফল শেষে এক রিপোর্ট তৈরি করেন। রিপোর্টে সরকারের নীতি বাস্তবায়নে ধীরগতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় এবং এ ধীরগতিকে অর্থনৈতিক উন্নতির পথে অন্তরায় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। 

অর্থনৈতিক উন্নয়নের সম্ভাবনা : 
১. বৈদেশিক বিনিয়োগ সম্ভাবনা : ‘বাংলাদেশ ২০২০ : এ লং রান পারস্পেকটিভ স্টাডি’ শীর্ষক সাম্প্রতিক বিশ্বব্যাংকের এক দীর্ঘমেয়াদি প্রেক্ষিত সমীক্ষা রিপোর্ট অনুযায়ী, আগামী ২০২০ সাল নাগাদ বাংলাদেশে কমপক্ষে ৮০০ কোটি মার্কিন ডলারের প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ আসার সম্ভাবনা রয়েছে। চলতি বিনিময় হার অনুযায়ী স্থানীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকা। উক্ত রিপোর্টে বিশ্বব্যাংক বলেছে, এ পর্যায়ে বৈদেশিক বিনিয়োগ আহরণের জন্য বাংলাদেশকে অবশ্যই সুষ্ঠু অর্থনৈতিক নীতি ও রেগুলেটরি পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে, মানব ও প্রাকৃতিক সম্পদের টেকসই উন্নয়নের দীর্ঘমেয়াদি কৌশল গ্রহণ করতে হবে। যদি তা করা হয়, তবে বাংলাদেশের সামনে রয়েছে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। 

ক. তেল ও গ্যাস ক্ষেত্রে বিনিয়োগের সম্ভাবনা : বিনিয়োগ বোর্ডের সাবেক নির্বাহী চেয়ারম্যান আনিসুল হক চৌধুরী বলেছেন, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশ বাংলাদেশে তেল ও গ্যাস খাতে বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত। তাদের মতে, এটা বিপুল সম্ভাবনাময়। 

খ. বস্ত্রশিল্পে বিনিয়োগের সম্ভাবনা : বাংলাদেশের জাতীয় আগের সিংহভাগ অর্জনকারী শিল্পের মধ্যে বস্ত্রশিল্প অন্যতম। আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের বিপুল চাহিদা থাকায় দেশি-বিদেশি প্রচুর বিনিয়োগকারী বাংলাদেশের বস্ত্রশিল্প পুঁজি বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ খাতের অবদান বাংলাদেশর সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে উত্তরোত্তর গতিতে বৃদ্ধি পেতে সক্ষম হবে। 

গ. ইপিজেডে বিনিয়োগের সম্ভাবনা : বৈদেশিক বিনিয়োগের অন্যতম সম্ভাবনা হলো ইপিজেড এলাকায় বিনিয়োগ। ইউরোপ, আমেরিকাসহ এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশের বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের ইপিজেড এলাকায় শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ থেকে অনুমান করা যায়, বাংলাদেশ এখন শিল্পযুগে পদার্পণ করেছে এবং দেশে দ্রুত শিল্পায়নের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। 

ঘ. কৃষিভিত্তক শিল্পে বিনিয়োগের সম্ভাবনা : বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কৃষির গুরুত্ব অপরিসীম। বাংলাদেশ সফরকালে সাবেক ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট ফিদেল রামোস বলেছিলেন, ‘কৃষি ও কৃষিভিত্তিক শিল্পে বিনিয়োগের অপার সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশে।’ তাই বিশ্বায়নের এই যুগে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষিক্ষেত্রে বিনিয়োগের যে অপার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে এতে দ্বিমতের কোনো অবকাশ নেই। 

২. জনশক্তি রপ্তানির সম্ভাবনা : জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হতে পারে বাংলাদেশের জন্য অসীম সম্ভাবনাময় বাজার। দক্ষ, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্স ও তথ্যপ্রযুক্তিবিদদের বিপুল চাহিদা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রে চাহিদা অনুযায়ী নার্স ও তথ্যপ্রযুক্তিবিদ পাঠাতে পারলে বাংলাদেশ বছরে কয়েক বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারবে। জাপান, জার্মানির মতো তাইওয়ানেও বাংলাদেশের জন্য বেশ সম্ভাবনাময় বাজার। 

৩. সম্ভাবনাময় প্রাকৃতিক সম্পদ : প্রাকৃতিক সম্পদ একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। যে দেশ প্রাকৃতিক সম্পদে যত পরিপূর্ণ সে দেশ অর্থনৈতিক দিক থেকে তত সমৃদ্ধশালী। বাংলাদেশের বিদ্যমান প্রাকৃতিক সম্পদ ও সম্ভাবনা বেশ উজ্জ্বল। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদের মধ্যে প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা, চুনাপাথর, চীনামাটি, কঠিন শিলা, খনিজ বালি, কাঁচা বালি ও খনিজ তৈল বেশ সম্ভাবনার সৃষ্টি করেছে। 

৪. মৎস্য সম্পদের সম্ভাবনা : বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মৎস্য সম্পদের গুরুত্ব অপরিসীম। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বর্তমানে জাতীয় আয়ের প্রায় ৭.২% এবং রপ্তানি আয়ের প্রায় ১৪.৫% আসে মৎস্য সম্পদ থেকে। যথাযথ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে উৎপাদন ও রপ্তানি সম্ভব হলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে মৎস্য সম্পদ সুদূরপ্রসারী অবদান রাখতে পারবে। 

৫. সামুদ্রিক সম্পদের সম্ভাবনা : বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের বঙ্গোপসাগরের কূল ঘেঁষে ৭১১কি.মি. উপকূল রেখা রয়েছে। উপকূল ভাগ থেকে সমুদ্রের অভ্যন্তরের ৩২২কি.মি. পর্যন্ত সামুদ্রিক সম্পদে পরিপূর্ণ। এসব সম্পদের রয়েছে উজ্জ্বল সম্ভাবনা, যে কারণে এসব সামুদ্রিক সম্পদকে ‘কালো সোনা’ নামে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। 

৬. পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনা : বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে পর্যটন শিল্পের ভূমিকা ও গুরুত্ব অপরিসীম। প্রাকৃতিক ও মানব সৃষ্ট সুবিধাদি দ্বারাই এ শিল্পকে উন্নততর করে তোলা যায়, যা দেশের কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্য বিমোচন, রপ্তানি বৃদ্ধি ও জাতীয় উন্নয়নের ক্ষেত্রে ব্যাপক অবদান রাখতে পারে। আর সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সংযোজিত হতে পারে এক নতুন ধারা। 

৭. তথ্যপ্রযুক্তি ও মানবসম্পদ উন্নয়ন : বর্তমান বিশ্বে এমন কোনো শিল্প বা প্রযুক্তি নেই, যা কোনো না কোনোভাবে কম্পিউটারের সাথে সম্পৃক্ত নয়। বর্তমানে রপ্তানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় কম্পিউটার সফ্টওয়্যার। কম্পিউটার সফ্টওয়্যার রপ্তানি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করার উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশের। 

উপসংহার : সার্বিক আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে যেমন রয়েছে অসংখ্য সমস্যা, তেমনি রয়েছে বিপুল সম্ভাবনা। তবে বর্তমানে বিশ্ব অর্থনীতি প্রায় একটি অভিন্ন অর্থনীতিতে পরিণত হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অধিকাংশ রাষ্ট্র মুক্তবাজার অর্থনীতি গ্রহণ করেছে। তাই বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থায় কোনো দেশের পক্ষেই এককভাবে সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধন সম্ভব নয়। এর জন্য দরকার আঞ্চলিক বা আন্তর্জাতিক সহযোগিতা। পাশাপামশি রাষ্ট্রের ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলকে শুধু দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি পরিহার করে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি ও ইস্যুতে ঐকমত্যভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।

1 Comments

Post a Comment
Previous Post Next Post