↬ বাংলাদেশের উৎসব
↬ মানবজীবনে উৎসবের প্রয়োজনীয়তা
↬ বাংলাদেশের সামাজিক উৎসব
↬ বাঙালির উৎসব বৈচিত্র্য
↬ বাঙালির জীবনে উৎসব
↬ উৎসবের দেশ বাংলাদেশ
ভূমিকা :
“মানুষেরা উৎসব করে। মানুষ যেদিন আপনার মনুষ্যত্বের শক্তি বিশেষভাবে স্বরণ করে, বিশেষভাবে উপলব্ধি করে, সেইদিন। …… প্রতিদিন মানুষ ক্ষুদ্র দীন একাকী কিন্তু উৎসবের দিনে মানুষ বৃহৎ, সেদিন যে সমস্ত মানুষের সঙ্গে একত্র হইয়া বৃহৎ, সেদিন সে সমস্ত মনুষ্যত্বের শক্তি অনুভব করিয়া মহৎ।” ------রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
ঋতুর বর্ণময় আত্মপ্রকাশের রঙ্গমঞ্চে বাঙালির ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনে অনেক উৎসব আসে। উৎসব জীবনের ছন্দস্পন্দন, প্রতিদিনের তুচ্ছতার যবনিকা, আত্মার দিগন্ত প্রসারণের চলন্তিকা। ভিন্ন ভিন্ন ঋতুর রূপবৈচিত্র্যে বাংলাদেশ যেমন সৌন্দর্যময় তেমনি ভিন্ন ভিন্ন উৎসবে এদেশ আনন্দময়। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উৎসবে মেতে ওঠে এ দেশের মানুষ। তাই এ দেশকে বলা যায় উৎসবের দেশ। উৎসব যে কেবল মানবমনে আনন্দ সঞ্চার করে তাই নয়, বিভিন্ন উৎসবের মধ্য দিয়ে কোনো দেশের সামগ্রিক চিত্রটিও প্রস্ফুটিত হয়ে ওঠে। আমাদের দেশে পালিত বিভিন্ন উৎসব আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। উৎসবের মধ্য দিয়ে মানুষ তার দৈনন্দিন জীবনের সংকীর্ণ গণ্ডি থেকে মিলনের বৃহত্তর ক্ষেত্রে উত্তীর্ণ হয়। প্রতিদিনের কর্মব্যস্ততা মানুষের জীবনকে করে তোলে ক্লান্ত-শ্রান্ত, বৈচিত্র্যহীন। এই কর্মব্যস্ত জীবনে মানুষ একটু আনন্দ, একটু স্বস্তি চায়। বিভিন্ন উৎসব জীবনে এই আনন্দের বাণী নিয়ে আসে। প্রায় প্রতি মাসেই বাংলাদেশে কোনো না কোনো উৎসব পালিত হয়। এ দেশের উৎসবগুলো কখনো কখনো দেশের সীমানা ছাড়িয়ে প্রভাব ফেলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে।
উৎসব কী? : ’উৎসব’ বলতে মূলত আনন্দময় অনুষ্ঠানকে বোঝায়। উৎসবের মাধ্যমে আমরা আনন্দ প্রকাশ এবং আনন্দ লাভ করে থাকি। তবে এ আন্দ একার আনন্দ নয়। পারিবারিক, সামাজিক বা সাম্প্রদায়িক পরিমণ্ডলে সকলের সম্মিলনে সুখ বা আনন্দ লাভের উপায় হলো উৎসব। সে অর্থে উৎসব সকলকে আনন্দ দেয়। ইংরেজি ‘Festival’ কথাটির বাংলা অর্থ হলো উৎসব। তবে ‘Festival’ কথাটি একটু ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়। এটি সমাজের সাথে সম্পর্কিত, ব্যক্তি বা পরিবার এখানে গৌণ।
উৎসবের প্রকারভেদ ; বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের উৎসবের প্রচলন রয়েছে। এ উৎসবগুলো বাঙালির ইতিহাস ও ঐহিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বাংলাদেশের উৎসবগুলোকে প্রধানত কয়েকটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। যেমন- ১. ধর্মীয়, ২. সামাজিক, ৩. জাতীয় ও ৪. সাংস্কৃতিক উৎসব।
নিম্নে এগুলো সম্পর্কে বিশদভাবে আলোচনা করা হলো:
১. ধর্মীয় উৎসব :
সাধারণত ধর্মীয় উৎসবগুলো এক-একটি ধর্মীয় বিশ্বাস ও ভাবনাকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের ধর্মীয় উৎসবগুলোর মধ্যে রয়েছে মুসলমানদের ঈদ-উল-ফিতর, ঈদ-উল-আয্হা, ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী, মহররম। হিন্দুদের দুর্গাপূজা, কালীপূজা, সরস্বতী পূজা। বৌদ্ধদের বুদ্ধপূর্ণিমা। খ্রিস্টানদের বড়দিন প্রভৃতি প্রধান ধর্মীয় উৎসব।
ঈদ : মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব হলো ঈদ। ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি। ঈদ আসে আনন্দ আর মিলনের বার্তা নিয়ে। মানুষ ভুলে যায় হিংসা-বিদ্বেষ, দুঃখ-বেদন। বাংলাদেশে বেশ সাড়ম্বরে পালিত হয় ঈদ। ঈদ আসে বছরে দু’বার। প্রথমে আসে ঈদ-উল-ফিতর, পরে ঈদ-উল-আয্হা। রমজান মাসে মুসলমানগণ রোজা রাখে। আরবি রমজান মাস সিয়াম বা সংযম সাধনার সময়। রমজান মাসের চাঁদের প্রথম দিন থেকে শেষদিন পর্যন্ত রোজা রাখার পর শাওয়াল মাসের পহেলা তারিখে তারা পালন করে ঈদ-উল-ফিতর। জিলহজ মাসের দশ তারিখে পালিত হয় ঈদ-উল-আয্হা। এদিন কুরবানি করা হয়। একে বলা হয় আত্মত্যাগের ঈদ। অনেকে একে কুরবানির ঈদও বলে থাকে। কুরবানির পশুর গোশতও গরিব আত্মীয়ের মধ্যে বিতরণ করা হয়। ঈদের দিন সবাই ভালো পোশাক পরিধান করে। ঈদের নামাজ পড়ার জন্য ঈদগাহ ময়দানে যায়। নামাজের পর তারা একে অন্যের সাথে কোলাকুলি করে। এ দিনে সবাই একটু ভালো খাবারের আয়োজন করে। নিজেরা খেয়ে এবং পাড়া-পড়শিকে খাইয়ে তারা ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়।
মহররম : মহররম একটি বিষাদময় ভাব-গম্ভীর উৎসব। মহররম মূলত হিজরি সনের প্রথম মাসের নাম। এ মাসের দশ তারিখে মহানবি হজরত মুহম্মদ (স.)-এর দৌহিত্র ইমাম হোসেন কারবালা প্রান্তরে এজিদের সৈন্যদের হাতে নির্মমভাবে সপরিবারে শহীদ হন। এই শোকাবহ ঘটনার স্মৃতি উদযাপনকে মহররম বলা হয়।
শব-ই-বরাত : শব-ই-বরাত অর্থ সৌভাগ্য রজনী। মুসলমান সমাজের একটি বড় ধর্মীয় উৎসব। শব-ই-বরাতের রাতে মহান আল্লাহ্ তাঁর বান্দাদের অপরাধ ক্ষমা করেন এবং আগামী বছরের সৌভাগ্য নির্ধারণ করেন। তাই ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এ নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। দান খয়রাত ও নামাজই এ উৎসবের মূল বিষয়। আবেগ, উচ্ছ্বাস, আনন্দ নয়, সাধনাই এর মূলকথা।
ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী : বিশ্বনবি হজরত মুহম্মদ (স.)-এর জন্মদিন উপলক্ষে প্রতি বছর ১২ রবিউল আউয়াল তারিখটি ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী হিসেবে পালন করা হয়। ঈদ অর্থ খুশি আর মিলাদুন্নবী শব্দের অর্থ হজরত মুহাম্মদ (স.)-এর জন্ম। তাই ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী শব্দের অর্থ মহানবির জন্মের খুশি।
দুর্গাপূজা : হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব হলো দুর্গাপূজা। শরৎকালে এ পূজা হয়। সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী- এই তিন দিন দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। তবে সপ্তমীর আগে ষষ্ঠীর দিন যে উৎসব হয় তাকে বলা হয় বোধন আর নবমীর পরদিন দশমীর উৎসবকে বলা হয় বিজয়া দশমী। বোধন থেকে বিসর্জনের এক অনন্য রূপ বাঙালি হিন্দুদের জীবনকে আন্দোলিত করে। সপ্তমীর দিনে জাঁকজমকভাবে শুরু হয় দুর্গাপূজা। তবে অষ্টমীর দিন ধুমধাম আর আনন্দ হয় সবচেয়ে বেশি। রাতে দেবীর উদ্দেশ্যে আরতি হয। অষ্টমী আর নবমীর সন্ধিক্ষণে যে পূজা হয় তাকে বলা হয় সন্ধিপূজা। দশমীর দিন দেবীর প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। নদীর জলে দেবীর প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় দুর্গাপূজা। তবে এ বিদায় চিরকালের নয়। বাঙালি হিন্দুরা দেবীকে বিসর্জন দিতে গিয়ে দেবী যেন প্রতি বছর এই মাতৃরূপ নিয়ে এসে সকলের জন্য মঙ্গলবার্তা বয়ে আনেন এ প্রার্থনা করে। শক্তি, সাম্য, মৈত্রী এ তিনটি আদর্শ দুর্গাপূজা বাঙালি হিন্দুদের জীবনে স্থাপন করে।
রথযাত্রা : বাংলাদেশের হিন্দু সমাজের আরেকটি বড় ধর্মীয় উৎসব হলো রথযাত্রা। রথযাত্রা জগন্নাথ দেবের স্নানযাত্রা থেকে শুরু হয়। রথে করে জগন্নাথ দেবের প্রতিমা স্নানের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয়।, অগণিত ভক্ত রথের পিছু পিছু যান। এই রথযাত্রা শেষ হয় উলটো রথে। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এ উৎসব পালিত হয়। এ উৎসবগুলো ছাড়াও হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা লক্ষ্মীপূজা, সরস্বতী পূজা, কালীপূজা, চৈত্রসংক্রান্তি, জন্মাষ্টমী প্রভৃতি উৎসব পালন করে থাকে।
বুদ্ধ-পুর্ণিমা : বুদ্ধ পূর্ণিমা বৌদ্ধদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। এর অন্য নাম বৈশাখী পূর্ণিমা। গৌতম বুদ্ধের বোধি লাভের পূণ্যস্মৃতি বিজড়িত এই দিনটি। বুদ্ধদেবের বাণী স্মরণই এ উৎসবের মূলকথা।
বড়দিন : বাংলাদেশের খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা পালন করে বড়দিন। যিশুখ্রিস্টের জন্মদিন উপলক্ষে তারা এ উৎসব পালন করে থাকে। প্রতি বছর ২৫ ডিসেম্বর এই উৎসব উদযাপন করা হয়।
২. সামাজিক উৎসব :
বাংলাদেশ উৎসবের দেশ। এ দেশের নানা ধরনের সামাজিক উৎসব রয়েছে। এগুলোর মধ্যে বাংলা নববর্ষ, হালখাতা, বিবাহ, ভাইফোঁটা, অন্নপ্রাশন, খৎনা, জন্মদিন, নবান্ন, শ্রাদ্ধ, পৌষপার্বণ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
বাংলা নববর্ষ : বাংলাদেশের একটি প্রধান সামাজিক উৎসব হলো বাংলা নববর্ষ। পুরনো দিনের দুঃখ, ব্যথা, ক্লান্তি, গ্লানি ভুলে নতুনকে বরণ করার উৎসব এই বাংলা নববর্ষ। বাংলা নববর্ষ আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের বাহক। এদিক থেকে এ দিনটি প্রতিটি বাঙালির জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। বাংলা নববর্ষ বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি অঞ্চলেই পালিত হয়। এ উপলক্ষে মেলার আযোজন করা হয়। ব্যবসায়ীরা এ দিনে নতুন হিসেবের খাতা খোলে এবং বাকি-বকেয়া খাতায় যাদের নাম আছে তাদের আমন্ত্রণ করে বাকি পরিশোধের জন্য। তাদের জন্য মিষ্টিমুখের ব্যবস্থাও করা হয়। এটি হালখাতা নামে পরিচিত। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরে ব্যাপক আড়ম্বরে উদযাপন করা হয় বাংলা নববর্ষ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে বের করা হয় মঙ্গল-শোভাযাত্রা। রমনার বটমূলে সারাদিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে মেলা বসে।
নবান্ন : নবান্ন হলো নতুন ধানের উৎসব। হেমন্তকালে ঘরে ঘরে নতুন ধান ওঠে। এ সময় গ্রামবাংলার ঘরে ঘরে পিঠা তৈরির ধুম পড়ে যায়। নতুন ধানের চাল দিয়ে তৈরি করা হয় হরেক রকম পিঠা-পুলি।
পৌষ-পার্বণ : পৌষ-পার্বণ হলো পিঠার উৎসব। পৌষ মাসে এদেশের ঘরে ঘরে পিঠা তৈরি হয়। ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা, চিতই পিঠা মিষ্টি রসে ভিজিয়ে রসপিঠা প্রভৃতি। বাংলার প্রামীণ জীবন পিঠা খাওয়ার উৎসবে মেতে ওঠে।
৩. জাতীয় উৎসব :
উৎসব কেবল লোকাচারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। আমাদের দেশে এমন কিছু উৎসব রয়েছে যেগুলো কোনো ধর্মকেন্দ্রিক সস্প্রদায়, পরিবার প্রভৃতির মধ্যে সীমাব্ধ নয়। এগুলো সকল ধর্মের, সকল শ্রেণির মানুষের উৎসব। এ সর্বজনীন উৎসবগুলো আমাদের কাছে জাতীয় উৎসব হিসেবে পরিচিত। যেমন- একুশে ফেব্রুয়ারি বা শহীদ দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, বুদ্ধিজীবী দিবস প্রভৃতি। এ উৎসবগুলো যেমন রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পালন করা হয় তেমনি সামাজিকভাবেও আমরা এগুলো পালন করি।
একুশে ফেব্রুয়ারি : একুশে ফেব্রুয়ারি বা শহীদ দিবস আমাদের কাছে শোকের প্রতীক। ১৯৫২ সালে ২১শে ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে শহীদ হন রফিক, সালাম, বরকত, জব্বার, শফিউরসহ অনেকে। তাঁদের স্মৃতিকে স্মরণ করা এবং তাঁদের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য আমরা এ দিনটিকে উৎসবের মধ্য দিয়ে পালন করি। শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ মিনারে ফুল দেই। এছাড়া এ উপলক্ষে বিভিন্ন আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
স্বাধীনতা দিবস : ১৯৭১ সালের ২৫মে মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনারা বাঙালিদের উপর সশস্ত্র হামলা করে অসংখ্য ব্যক্তিকে হত্যা করে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল বাঙালিদের নিশ্চিহ্ন করা। কিন্তু বঙ্গবন্ধু ২৬শে মার্চ প্রথম প্রহরে স্বাধীনতা ঘোষণা করে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করেন।
বিজয় দিবস : দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর আমাদের দেশ শত্রুমুক্ত বা স্বাধীন হয়। এ কারণে ১৬ই ডিসেম্বর এই দিনটিকে আমরা বিজয় দিবস হিসেবে পালন করি। এ উপলক্ষে দেশের সব ধরনের প্রতিষ্ঠানে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়। বিজয়ের আনন্দে মেতে ওঠে সারা বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধে যাঁরা শহীদ হয়েছেন তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো ছাড়াও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় দেশের বিভিন্ন জায়গায়।
বুদ্ধিজীবী দিবস : ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনালগ্ন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের শেষলগ্ন পর্যন্ত বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়। বিশেষ করে রাজাকার, আলবদর বাহিনী শেষলগ্নে ১৪ ডিসেম্বর বহু সাহিত্যিক-লেখককে রায়েরবাজারে হত্যা করে। এ বিষণ্ণ স্মৃতি ১৪ ডিসেম্বর বৃদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে পালিত হয়।
৪. সাংস্কৃতিক উৎসব :
বাঙালি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য অনেক দিনের পুরনো। তবে এর আধুনিকায়নও ঘটেছে, আধুনিককালে এর পরিসরও আরও অনেক বেড়েছে। যাত্রা, খেলাধুলা, নাটক, সার্কাস, মেলা, বর্ষবরণ, সংগীতানুষ্ঠান, বইমেলা, রবীন্দ্র-জয়ন্তী, নজরুল-জয়ন্তী প্রভৃতি বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য সাংস্কৃতিক উৎসব।
বইমেলা : সারা বছরে প্রকাশিত বা পূর্ব প্রকাশিত সৃজনশীল গ্রন্থ নিয়ে মেলা। বইমেলা বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক উৎসবগুলোর মধ্যে অন্যতম। বিভিন্ন সময় বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বইমেলার আয়োজন করা হয়। তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বইমেলা হলো ঢাকার বাংলা একাডেমির ‘একুশে বইমেলা’। পুরো ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে চলে এই মেলা। বইমেলায় অনেক লেখক তাদের নতুন বই যেমন প্রকাশ করেন তেমনি অনেক পুরনো বইও এখানে পাওয়া যায়। প্রতিদিন হাজারো মানুষের ভিড়ে মুখরিত হয়ে ওঠে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ। ঢাকার জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের উদ্যোগেও বইমেলার আয়োজন করা হয়। তবে তার পরিসর একুশে বইমেলার মতো এত ব্যাপক নয়। বর্তমানে একুশে বইমেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে।
নজরুল-জয়ন্তী : জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী উদযাপনকে বলা হয় নজরুল-জয়ন্তী। গান, নাচ, কবিতা আবৃত্তি, আলোচনাসহ বিভিন্ন আয়োজনের মধ্য দিয়ে এ উৎসব পালিত হয়। ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার সাথে জড়িয়ে আছে কবির স্মৃতি। এখানে প্রতি বছর কয়েকদিন ব্যাপী নজরুল জয়ন্তীর উৎসব উদযাপিত হয়।
রবীন্দ্র জয়ন্তী : নজরুল জয়ন্তীর ন্যায় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকীকে বলা হয় রবীন্দ্র-জয়ন্তী। বহু আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নাটকের মাধ্যমে কবিগুরুকে স্মরণ করা হয়।
এগুলো ছড়াও নববর্ষ উপলক্ষে বৈশাখী মেলা, সার্কাস প্রভৃতির আয়োজন করা হয়। এগুলোও সাংস্কৃতিক উৎসব। একসময় গ্রামেগঞ্জে যাত্রাপালার খুব প্রচলন ছিল। এখনও বাংলাদেশের কোনো কোনো গ্রামাঞ্চলে যাত্রাপালা জনপ্রিয়তার শীর্ষে।
ফেডারেশন কাপ ফুটবল লীগ, প্রিমিয়ার ক্রিকেট লীগ প্রভৃতি খেলাধুলা শুরু হলে রাঝধানী ঢাকা শহরে উৎসবের সাড়া পড়ে যায়।
উৎসবের গুরুত্ব : প্রতিটি মানুষের জীবনে উৎসবের তাৎপর্য অত্যন্ত গভীর ও ব্যাপক। আমরা বাঙালি জাতি হিসেবে স্বাধীন। আমাদের রয়েছে নিজস্ব ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। উৎসবের মধ্য দিয়ে এ ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির একটি সুস্পষ্ট পরিচয় পাওয়া যায়। উৎসবের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয় আমাদের আত্মপরিচয়। উৎসবে থাকে না কোনো দুঃখ, ব্যথা, জড়তা, গ্লানি। তাই উৎসব সবকিছুর উর্ধ্বে মানুষের শক্তি, সাম্য, মৈত্রীর বিষয়কে স্থাপন করে। আনন্দমুখর উৎসব প্রাঙ্গণেই থাকে না মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ। উৎসব ছাড়া সকল শ্রেণির মানুষের মিলনমেলার চিত্র কল্পনাই করা যায় না। গ্রামে গ্রামে যখন উৎসব হয় তখন সমস্ত গ্রাম যেন উৎসবের আনন্দে একাকার হয়ে যায়। অসাম্প্রদায়িকতার প্রতিষ্ঠায় উৎসবের গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ এক সম্প্রদায়ের মানুষ অন্য সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসবে অংশগ্রহণ করে। এতে করে মানুষ সাম্প্রদায়িকতার ক্ষুদ্র গণ্ডি থেকে মুক্তি লাভ করে। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের পারস্পরিক প্রীতি ও সৌহার্দ তাদের সামাজিক বন্ধনকে আরও দৃঢ় করে। অন্যদিকে জাতীয় উৎসবগুলো আমাদের দেশপ্রেমকে জাগ্রত করে। স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসের উৎসব আমাদের দেশপ্রেমিক সত্তাকে যেমন জাগ্রত করে তেমনি আমাদের নতুন করে দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখায়। এসব কারণে উৎসবাদির গুরুত্ব অনেক।
উপসংহার : মানুষের বেদনাবিধুর, কর্মব্যস্ত, একঘেয়ে জীবনে উৎসব আনন্দের সঞ্চার করে। অবসাদ ও গ্লানি দূর করে আমাদের এক নতুন জীবন দান করে। তাই মানুষের জীবনে উৎসবের প্রয়োজন আছে। তবে মনে রাখতে হবে উৎসব মানেই কেবল উল্লাস নয়, আনন্দ মানে নয় যথেচ্ছাচার। পাশ্চাত্য সংস্কৃতির প্রভাবে আমাদের দেশে অনেকেই উৎসবের নামে করছে যথেচ্ছাচার। যেমন, থার্টি ফার্স্ট নাইট ইত্যাদি। এজন্য বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। ফলে আমাদের অনেক উৎসবই এখন হুমকির সম্মুখীন। আমাদের উৎসবের যে মহান মূল্যবোধ আমাদের চলতে সাহায্য করেছে, আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতিকে ফুটিয়ে তুলেছে তাকে আবার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। এ বিষয়ে আমরা সকলে সচেতন হলেই গড়ে উঠবে এক জাতি, এক প্রাণ ও একতা।
[ একই রচনা আরেকটি বই থেকে সংগ্রহ করে দেয়া হলো ]
ভূমিকা : উৎসব মানবজীবনে প্রাণচঞ্চল আনন্দময়তার অভিব্যক্তি। কেবল অন্ন-বস্ত্র সংস্থানেই মানবজীবনে সার্থকতা আসে না। তার জীবনে চাই অবাধ মুক্তির আনন্দ। সে আনন্দ লাভের একটি উপায় উৎসব ও মানব সম্মিলন।
উৎসবের তাৎপর্য : দৈনন্দিন জীবন-সংগ্রামে অবসিত মানুষের প্রাণশক্তি যখন শুকিয়ে আসে, যখন অসহনীয় হয়ে ওঠে “জীবনের খণ্ড খণ্ড করি দণ্ডে দণ্ডে ক্ষয়” তখন উৎসবের আয়োজন মনে আনে ফূর্তি, আনে মুক্তি জীবনের আনন্দ, সৃষ্টি করে নতুন কর্মপ্রেরণা। পারিবারিক, সামাজিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতির উৎসবে মানুষে মানুষে হয় আত্মিক মিলন। মানুষের জীবনে ব্যক্তিগত ক্ষুদ্রতা, গ্লানি, দীনতা ও তুচ্ছতা ছাপিয়ে ওঠে উদার প্রাণের ঐশ্বর্য। উৎসবের মধ্য নিয়ে ফুটে ওঠে জাতীয় সংস্কৃতির বৃহত্তর ও ব্যাপক রূপ।
উৎসবের রূপ-রূপান্তর : আদিম আরণ্যক জীবন থেকেই মানুষ উৎসবপ্রবণ। তখন যৌথ উদ্যোগে পশু শিকার শেষে সম্মিলিতভাবে সান্ধ্য উৎসব হতো আগুন জ্বেলে, নেচে গেয়ে ভোজে মিলিত হয়ে। সভ্যতার রূপ রূপান্তরের সঙ্গে সঙ্গে উৎসবেরও ঘটেছে নানা রূপান্তর, স্থান ও কালের পটভূমিতে এসেছে নানা বৈচিত্র্য।
নানা ধরনের উৎসব : প্রকৃতি, পরিবেশ, ধর্ম ও জীবনধারার বৈচিত্র্যের প্রেক্ষাপটে উৎসবেও দেখা যায় নান বৈচিত্র্য। প্রচলিত উৎসবগুলোকে মোটামুটি পাঁচটি আগে ভাগ করা যায় : (১) ধর্মীয় উৎসব; (২) পারিবারিক উৎসব; (৩) ঋতু উৎসব; (৪) জাতীয় উৎসব; (৫) আন্তর্জাতিক উৎসব। ঈদ, দর্গা পূজো, বড়দিন, বুদ্ধপুর্ণিমা ইত্যাদি ধর্মীয় উৎসব। জন্মদিন, বিয়ে ইত্যাদি পারিবারিক উৎসব। বর্ষবরণ, বসন্তোৎসব ইত্যাদি ঋতু উৎসব। শহীদ দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস ইত্যাদি জাতীয় উৎসব। আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব, অলিম্পিক, বিশ্ব যুব উৎসব ইত্যাদি আন্তর্জাতিক উৎসব।
উৎসবের উপযোগিতা : উৎসব কেবল মানব সম্মিলনের আনন্দ দেয় না, প্রাণের স্ফূরণ ঘটিয়ে শারীরিক ও মানসিক শক্তিকে সতেজ রাখে, দেয় নব নব কর্মপ্রেরণা। উৎসবকে কেন্দ্র করে মানুষের সৃজনশীলতারও নানা প্রকাশ ঘটে। রচিত হয় সংগীত, নৃত্য, চিত্রকলা, স্থাপত্য, ভাস্কর্য, চলচ্চিত্রের কত না সম্ভার। উৎসবের অর্থনৈতিক উপযোগিতাও কম নয়। উৎসবকে কেন্দ্র করে যে ব্যাপক অর্থনৈতিক তৎপরতা চলে তাতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অনেক পেশার মানুষ উপকৃত হয়।
উপসংহার : উৎসব মানুষে মানুষে প্রীতির বন্ধনকে দৃঢ় করে, হৃদয়কে করে প্রসারিত। উৎসব সঞ্চারিত করে অপার আনন্দ, দেয় নবতর চেতনা। জাতীয় উৎসব জাতীয় চেতনাকে করে সংহত। আন্তর্জাতিক উৎসব প্রশস্ত করে শান্তি, মৈত্রী ও সৌহার্দ্যের পথ। উৎসব মানুষের চৈতন্যে বিস্তার ঘটায় সুরুচি ও শিল্পবোধের। মানুষের জীবনের ক্লান্তি, হতাশা, নৈরাজ্য, অস্থিরতা ও দুঃখ ঘোচাতে উৎসবের উপযোগিতা অসামান্য।
[ একই রচনা আরেকটি বই থেকে সংগ্রহ করে দেয়া হলো ]
বাংলার উৎসব
[ ভারতীয় শিক্ষার্থীদের জন্য ]
ভূমিকা : মানবজীবনের একটি অপরিহার্য অঙ্গ হল উৎসব। মানুষ শুধুমাত্র খেয়ে-পরে বেঁচেই সন্তুষ্ট হয় না। সে অনেকের সঙ্গে নিজেকে মিলিয়ে দিতে চায়, দৈনন্দিন জীবনের একঘেয়েমি থেকে মুক্তি চায়।, শ্রমক্লান্ত জীবনে পেতে চায় সহজ অনাবিল আনন্দ। আর সেজন্যই মানুষ উৎসবে মেতে ওঠে। উৎসব মানুষকে আনন্দ দেয়, প্রসারিত করে তার অস্তিত্বকে। বাঙালি-জীবনে সারাবছর ধরে অজস্র উৎসব লেগে থাকে। বিষয় অনুযায়ী উৎসবগুলিকে মোটামুটি চারটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়-
১. ধর্মীয় উৎসব,
২. সামাজিক-পারিবারিক উৎসব
৩. ঋতু উৎসব এবং
৪. জাতীয় উৎসব।
ধর্মীয় উৎসব : নানান ধর্মসম্প্রদায়ের বাস এই বাংলায়। সকল সম্প্রদায়ই আপন আপন ধর্মীয় উৎসবে মেতে ওঠে। হিন্দু বাঙালির প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজো। শরৎকালে দেবী দুর্গার আরাধনাকে কেন্দ্র করে কয়েকদিনের জন্য ধর্মমত নির্বিশেষে বাঙালি-জীবন আনন্দমুখর হয়ে ওঠে। দুর্গাপূজো ছাড়া কালীপূজো, স্বরস্বতীপূজো, লক্ষ্মীপূজো, বিশ্বকর্মাপূজো, মনসাপূজো, ধর্মপূজো প্রভৃতিও বাংলার বিশিষ্ট ধর্মীয় উৎস। এছাড়া আরও নানা ধরনের ধর্মীয় উৎসব পালিত হয় হিন্দুসমাজে। মহরম, ইদ, সবেবরাত, প্রভৃতি মুসলমান সম্প্রদায়ের উৎসবও বাঙালি-জীবনের সঙ্গে অচ্ছেদ্যভাবে জড়িত। বাঙালি-খ্রিস্টানদের মধ্যেও রয়েছে, বড়োদিন, গুড ফ্রাইডে, ইস্টার স্যাটারডে প্রভৃতি উৎসব।
সামাজিক-পারিবারিক : মানুষ সামাজিক জীব। ব্যক্তিগত আনন্দ-অনুষ্ঠানকেও সে ভাগ করে নিতে চায় সমাজের আর পাঁচজনের সঙ্গে। এই প্রবণতা থেকেই বাঙালি সমাজে নানা ধরনের সামাজিক উৎসব পালিত হয়ে থাকে। বাংলার সামাজিক উৎসবগুলির মধ্যে বিবাহ, অন্নপ্রাশন, জন্মদিন, উপনয়ন প্রভৃতি বিশেষ উল্লেযোগ্য। এ ছাড়া আরও কিছু উৎসব-অনুষ্ঠান আছে যেগুলি মূলত পারিবারিক। যেমন জামাইষষ্ঠী, ভ্রাতৃদ্বিতীয়া, বিশেষ কোনো ব্রত উদ্যাপন প্রভৃতি। তবে এইসব পরিবারকেন্দ্রিক অনুষ্ঠানগুলিও শেষ পর্যন্ত বাংলার সামাজিক উৎসবে পরিণত হয়। এইসব সামাজিক-পারিবারিক উৎসবের মধ্য দিয়ে আত্মীয়স্বপন, বন্ধুবান্ধব এবং অনাত্মীয় প্রতিবেশীদের সঙ্গেও একটা নিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সুদৃঢ় হয় সামাজিক বন্ধন।
ঋতু-উৎসব : বঙ্গপ্রকৃতিতে ছয়টি ঋতুর আবির্ভাব বাঙালি-জীবনে নিয়ে আসে বৈচিত্র্য। বাংরার মানুষ এই বৈচিত্র্য আরও বেশি করে অনুভব করে বিভিন্ন ঋতুতে অনুষ্ঠিত বর্ণময় উৎসবগুলির মধ্য দিয়ে। বাংলার ঋতু-উৎসবগুলির মধ্রে প্রধান কয়েকটি হল নবান্ন, পৌষপার্বণ, মাঘোৎসব, দোলযাত্রা, নববর্ষোৎসব প্রভৃতি। রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতনে বৃক্ষরোপণ, বর্ষামঙ্গল, বসন্তোৎসব প্রভৃতি ঋতু-উৎসব বিশেষ গুরুত্ব সহকারে উদ্যাপিত হয়। রবীন্দ্রনাথের ধারা অনুসরণ করে এই সমস্ত উৎসব আজ শান্তিনিকেতনের বাইরেও বিভিন্ন জায়গায় অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
জাতীয় উৎসব : শুধু ধর্মীয়, সামাজিক পারিবারিক বা ঋতু-উৎসব নয়, বাংলার সমাজজীবনে আর-এক ধরনের উৎসব পালিত হয়, যাকে বলা যেতে পারে জাতীয় উৎসব। স্বাধীনতা দিবস, প্রজাতন্ত্র দিবস, রবীন্দ্রজয়ন্তী, নজরুলজয়ন্তী, নেতাজীজয়ন্তী প্রভৃতি উপলক্ষ্যে প্রতিবছর বিভিন্ন স্থানে যেসব অনুষ্ঠান হয়ে থাকে, সেই অনুষ্ঠানগুলি প্রকৃতপক্ষে উৎসবের চেহারাই ধারণ করে।
উপসংহার : বাঙালি উৎসবপ্রিয় জাতি। সেজন্যেই বাঙালি-সমাজে বারো মাসে তেরো পার্বণের সমারোহ। তবে বাংলার উৎসবগুলিকে শুধুমাত্র সাময়িক আনন্দ-উত্তেজনার উৎস মনে করলে ভুল করা হবে। এইসব উৎসব একের সঙ্গে অন্যকে মিলিয়ে দেওয়ার, নিজের সংকীর্ণ গণ্ডি থেকে বেরিয়ে আসার মাধ্যম হিসেবে কাজ করে।
প্রথম রচনা কোন বই থেকে নেয়া???
ReplyDeleteবললে উপকার হয়
লেখাটা পড়ে বেশ ভালোই লাগলো।
ReplyDeleteVery nice,but too large!
ReplyDeleteখুব ভালো লাগলো সহজ আছে প্রথম রচনাটি।
ReplyDeleteAppreciate your hardwork
ReplyDelete