প্রবন্ধ রচনা : ঈদ উৎসব

সূচনা : ঈদ মুসলমানদের জন্য একটি শ্রেষ্ঠ ধর্মীয় উৎসব। ঈদ অর্থ আনন্দ বা খুশী। এ ঈদ উৎসব মুসলমানদের প্রতিটি গৃহে পালিত হয়। ঈদ বছরে দু’বার আসে। প্রতিটি বছর সাওয়াল মাসের ১লা তারিখ এবং জিলহজ্জ্ব মাসের ১০ তারিখে ঈদ উৎসব পালিত হয়। প্রথমে যে উৎসব পালিত হয় তাকে ঈদুল ফিতর এবং পরে যে উৎসব পালিত হয় তাকে ঈদুল আয্হা বলে। 

ঈদুল ফিতর : প্রতি বছর মুসলমানগণ দীর্ঘ একমাস রোজা রাখেন। এ রমজান মাসটি মুসলমানদের জন্য অতি পবিত্র। এ মাসের দিবাভাগে পানাহার হতে বিরত থাকার জন্য মুসলমানগণ আল্লাহর আইন অনুসারে এক মাস রোজাব্রত পালন করে থাকেন। দীর্ঘ একমাস রোজা রাখার আনন্দে ঈদুল ফিতর পালন করা হয়। এ দিনে প্রতিটি মুসলিম পরিবার আনন্দে মেতে ওঠে। রমযান শেষ হবার ৩/৪ দিন পূর্ব হতেই ঈদের দিন সকালে প্রত্যেক গৃহে সেমাই, ফিরনী, নাস্তা, পোলাও ইত্যাদি খাবার তৈরি করা হয়। সবাই মিলে এক ঘর হতে অন্য ঘরে আনন্দের সাথে খাওয়া-দাওয়া করে। এ ঈদের দিন সকালে ধনীরা গরীব লোকদের মুক্ত হস্তে দান করে। এ দানকে ফেতরা বলা হয়। এ দিনে মুসলমানগণ সকালে গোসল করে নতুন কাপড় পরে মিষ্টান্ন খেয়ে ঈদগাহে গমন করে। তথায় সকলে মিলে ঈদের নামাজ পড়ে। একজন অপরজনের সঙ্গে কোলাকুলি করে আনন্দের সাথে ঘরে ফিরে। 

ঈদুল আয্হা : জিলহজ্জ্ব মাসের ১০ তারিখে যে ঈদ পালিত হয় তাকে ঈদুল আয্হা বলে। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) ছিলেন আল্লাহর নবী। তিনি আল্লাহর হুকুমে তাঁর একমাত্র পুত্র হযরত ইসমাইল (আঃ)-কে কোরবানি করার আদেশ পালন করার জন্য ইব্রাহীম (আঃ) তাঁর পুত্রকে মাটিতে শোয়ালেন। কিন্তু তাঁর গলায় ছুরি বিদ্ধ হলো না। আল্লাহ তাঁর বন্ধুর আন্তরিকতা ও ভালবাসায় মুগ্ধ হয়ে হযরত ইসমাইল (আঃ)-এর পরিবর্তে একটি পশু কোরবানি করতে আদেশ করলেন এবং তা কবুল করলেন। প্রতি বছর জিলহজ্জ্ব মাসের ১০ তারিখে এ উৎসব পালন করা হয়। এ দিনে ধনী মুসলমানগণ গরু, ছাগল, ভেড়া, উট প্রভৃতি পশু কোরবানি করেন। এ দিনে আনন্দে সবাই মেতে ওঠে। 

ঈদ উৎসব : ঈদ মূলত আনন্দের প্রতীক। ঈদের দিন মুসলমানগণ ময়দানে জমায়েত হয়ে নামাজ আদায় করেন। ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সবাই এতে শরীক হয়। নামাজ শেষে খুতবা পাঠ ও মুনাজাত করা হয়। এরপর একে অপরের সাথে আলিঙ্গনাবদ্ধ হয়ে কুশল বিনিময় করেন। 
ঈদের দিন ধনী-বির্ধন সবাই কিছু না কিছু সাধ্যানুসারে বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করেন। গরিবদের মধ্যে ধনীরা এসব খাবারও বিতরণ করেন। অনেকে কাপড়-চোপড় বিতরণের পদক্ষেপও নেয়। আবার কোরবানীর গোস্ত, পশুর চামড়ার মূল্য ছাড়াও নানা রকম সাহায্যও করে থাকেন। বাড়ির ছেলেমেয়েরা নতুন জামা-কাপড় করে দিনটিকে বিশেষ আনন্দের সাথে উদযাপন করে। 

উপসংহার : ঈদের দিন মুসলমানেরা পরস্পরের শত্রুতা ভুলে গিয়ে হাতে হাত মিলিয়ে মোছাহাফা করেন, বুকে বুক মিলিয়ে আলিঙ্গন করেন। একে অপরকে দাওয়াত করে বাড়িতে নিয়ে আপ্যায়ন করেন। এর ফলে তাদের পরস্পরের শত্রুতা ভাব দূর হয় এবং তাদের মাঝে ভ্রাতৃত্ব ভাব জেগে ওঠে। ঈদের সওয়াব বর্ষিত হোক সকলের উপর- আমরা এ কামনা করি।


8 Comments

Post a Comment
Previous Post Next Post