মার্চের দিনগুলি

রচনা : আধুনিক জীবনে কম্পিউটার শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা

↬ কম্পিউটার শিক্ষার গুরুত্ব


ভূমিকা : বর্তমান জীবন একান্তভাবেই বিজ্ঞাননির্ভর। বিজ্ঞানের আবিষ্কার ও উদ্ভাবন জীবনের প্রতিক্ষেত্রেই মানুষের নানা প্রয়োজন মেটাচ্ছে। কেবল তাই নয়, বিজ্ঞান মানুষের দৃষ্টিভাঙ্গিতেও আমূল পরিবর্তন এনেছে। বিজ্ঞান শুধু মানুষের দৈনন্দিন জীবনকেই সমৃদ্ধ করে নি, তার চিন্তাজগৎকেও প্রভাবিত করেছে। উন্নতির দিকে নিয়ে গেছে মানবসভ্যতাকে। এ উন্নতির মূলে কাজ করেছে তথ্যপ্রযুক্তির উন্নতি। মানুষের দৈনন্দিন জীবনে বৈচিত্র্যপূর্ণ কাজেকর্মে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে তথ্যপ্রযুক্তির এক পরম বিস্ময়কর আবিষ্কার কম্পিউটার। মানুষের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে, প্রয়োজনীয় কাজেকর্মে, বিনোদনসহ সকল ক্ষেত্রেই কম্পিউটার অতুলনীয় সহায়ক হিসেবে কাজ করছে। যান্ত্রিক সভ্যতার চালিকাশক্তি হিসেবে কম্পিউটার আজ ঘরে ঘরে স্থান করে নিয়েছে। কম্পিউটারের উপযোগিতা ও প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে এর ব্যাপক ব্যবহার এখন সর্বজন স্বীকৃত।

কম্পিউটার কী? : কম্পিউটার বলতে এমন একটি ইলেকট্রনিক যন্ত্রকে বোঝায় যা অগণিত উপাত্ত গ্রহণ করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিশ্লেষণ করে খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত দিতে পারে। ’কম্পিউটার’ শব্দটি ইংরেজি এবং এর অর্থ হলো ‘গণকযন্ত্র’। কম্পিউটার হিসাবের যন্ত্র হিসেবে যোগবিয়োগ, গুণভাগ জাতীয় অঙ্ক কষতে পারে। এছাড়া তথ্যাদির বিশ্লেষণ ও তুলনা করা এবং সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে এ যন্ত্রটির। গণিত, যুক্তি ও সিদ্ধান্তমূলক কাজের সঙ্গে কম্পিউটারের সংযোগ। কাজের গতি, বিশুদ্ধতা ও নির্ভরশীলতার দিক থেকে কম্পিউটারের ক্ষমতা মানুষের চেয়ে অনেক বেশি উন্নত।

কম্পিউটারের ব্যাপক ব্যবহার : জন্মলগ্নের অত্যল্পকালের মধ্যেই কম্পিউটার এর কার্যগুণে ও উপযুক্ততার নিরীক্ষে সকল প্রকার বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারগুলোকে পেছনের সারিতে ঠেলে দিয়ে অতি সামনের আসনে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব সাফল্যের অন্যতম এক আবিষ্কার আজকের কম্পিউটার, যা মানুষ বিস্ময়ে হতবাক হয়ে দেখছে বা উপলব্ধি করছে। বিজ্ঞানের হাজারো উদ্ভাবনের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখে তার কার্য প্রয়োজনীয়তা গুণে মানুষকে অবাক করে দিয়েছে। এখন মানুষ গৃহের অন্দর থেকে শুরু করে অফিসপাড়ায় বিশাল কর্মজগতের সবখানেই কম্পিউটার এক বিস্ময়কর পদচারণা করছে, যা মানুষ তার কাজের একটি অংশ বা নিজ শরীরের একটি অত্যাবশ্যকীয় প্রত্যঙ্গ হিসেবে বিবেচনা করতেও স্বীকৃতি দিচ্ছে। মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের বিচিত্রতর কাজকর্মের সাথে যেমন কম্পিউটারকে সম্পৃক্ত করছে, তেমনি গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্ব বা তথ্য সংগ্রহে, বা নিজস্ব তথ্য ভাণ্ডার গড়ে তুলতে, অত্যাধুনিক বিনোদনের কর্মকাণ্ডে, তার্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে গতিশীল করতে, নিজের ব্যবসায়িক সাফল্যকে পরিকল্পিত উপায়ে পরিচালনা করতে, সম্যক ধারণার সৃষ্টিতে প্রভৃতি খুঁটিনাটি কাজ থেকে শুরু করে বৃহৎ কর্মপরিসরে কম্পিউটারকে অপ্রতিহত গতিতে বা প্রয়োজনে কম্পিউটারকে সম্পৃক্ত করছে মানুষ তার নিজের তাগিদেই। কম্পিউটারের প্রতি মানুষ এতটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে যে, সে কম্পিউটার ছাড়া তার উন্নততর আধুনিক জীবন কল্পনা করতেও রাজি হচ্ছে না। শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে তো কম্পিউটার একক রাজা। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, কম্পিউটারকে মানুষ এখন হাতের কাছে পেতে উদগ্রীব হচ্ছে।

শিক্ষাক্ষেত্রে কম্পিউটার : আধুনিক শিক্ষা পদ্ধতির অনন্য বাহন কম্পিউটার। আজকের উন্নত বিশ্বে কম্পিউটারের ব্যবহার ছাড়া শিক্ষা ব্যবস্থা কল্পনা করা অসম্ভব। এর মাধ্যমে অতি অল্প সময়ে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানের রাজ্যে বিচরণ করা সহজ হয়ে গেছে। প্রকাশনা শিল্পে বিপ্লব ঘটিয়েছে কম্পিউটার। যার ফলে জ্ঞানচর্চার অন্যতম উপকরণ বই ঠিক সময়ে আমাদের হাতে পৌঁছে। বইয়ের বিষয়াবলি এখন কম্পিউটারের ডিস্কে জমা রাখা যাচ্ছে। কী বোর্ডের বোতাম টিপলেই এখন বিশ্বের সমস্ত জ্ঞানভাণ্ডার আমাদের সামনে মনিটরের পর্দায় ভেসে উঠছে। কম্পিউটারের আশীর্বাদে যেকোনো বিষয় এখন হাতের কাছে অবস্থান করে মানুষের জ্ঞানভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করছে। এটি যেমন গ্রন্থাগারের ভূমিকা পালন করছে, তেমনি অভিজ্ঞ শিক্ষকের। ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমরা আমাদের যেকোনো শিক্ষণীয় বিষয়কে চোখের সামনে পাচ্ছি। পৃথিবীর সমস্ত গ্রন্থাগার এখন আমাদের ঘরেই যেন অবস্থান করছে।

জনস্বাস্থ্যে কম্পিউটার : মানুষের রোগ নির্ণয় ও নিরাময়ে কম্পিউটার এখন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। রোগের কারণ ও প্রতৃতি বিশ্লেষণ করে এর প্রতিরোধ এবং প্রতিকারে কম্পিউটার এখন সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। কম্পিউটার প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষ জটিল ব্যাধি থেকে নিরাময়ের পথনির্দেশ খুঁজে পাচ্ছে। চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা নতুন নতুন জটিল রোগের প্রতিষেধক ও নিরাময়ের ওষুধ আবিষ্কারে কম্পিউটারের সাহয্য নিচ্ছে। কম্পিউটারের এই সহযোগিতা যথার্থ শিক্ষার মাধ্যমেই কাজে লাগানো সম্ভব।

তথ্য প্রযুক্তির ক্ষেত্রে কম্পিউটার : কম্পিউটার এখন তথ্য প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এক অবাক করা ভূমিকায় অভিনয় করছে। আধুনিক তথ্য যোগাযোগের জগতে ই-মেইল, ফ্যাক্স, ফোন, ইন্টারনেট প্রভৃতির প্রাণবায়ু হয়ে বিরাজ করছে কম্পিউটার। বিশ্বের আন্তর্জাতিক তথ্য প্রবাহের যুগে, অবাধ বিচরণের ক্ষেত্রকে কম্পিউটার অভাবিত প্রসারণ ঘটিয়ে বিপুল বিস্ময়ে কাজ করে যাচ্ছে। সাথে সাথে মানুষ স্ফীত করে তুলছে তার জ্ঞানভাণ্ডারকে। মানুষ তার অসীম আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়ন করতে এখন এককভাবে নির্ভর করছে কম্পিউটারের ওপর এবং যথার্থভাবেই সে সাফল্য কুড়িয়ে নিচ্ছে। কম্পিউটার মানুষের দৈনন্দিন তথ্য আদান প্রদানেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কম্পিউটারের একচ্ছত্র আধিপত্য এতটাই ব্যাপক ও দৃঢ়তার আস্থায় অধিষ্ঠিত যে, মানুষের জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে সে জড়িত হচ্ছে। হয়ে উঠেছে মানবসভ্যতার সিঁড়িতে সিঁড়িতে বিছানো লাল গালিচা বা কার্পেট। হয়ে উঠেছে মানুষের এক পরম সুহৃদ। কম্পিউটারের এ ভূমিকাকে দ্বিমত পোষণ করতে বোধ হয় এখনকার জগতে আর কেউ নেই।

কম্পিউটার শিক্ষার গুরুত্ব : বর্তমান যুগ কম্পিউটার যুগ। যুগের চাহিদার সাথে তাল মিলিয়ে দেশকে উন্নতির দিকে এগিয়ে নিতে হলে কম্পিউটার শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। তাই জাতীয় উন্নতির কথা বিবেচনা করে প্রত্যেক শিক্ষিত ব্যক্তিকে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা এবং তা প্রয়োগের মাধ্যমে দেশের কল্যাণ সাধন করা উচিত। কম্পিউটারের কর্মক্ষেত্র প্রসারণের সাথে সাথে কম্পিউটার শিক্ষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা বেড়েই চলেছে। কম্পিউটার শিক্ষার মাধ্যমেই এর উপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়। কম্পিউটার শিক্ষার অভাব থাকলে এর কার্যকারিতা ব্যাহত হবে। তাছাড়া কম্পিউটারের কার্যক্ষেত্র সম্প্রসারণের সঙ্গে প্রয়োজনীয় প্রমিক্ষণপ্রাপ্ত জনশক্তির চাহিদাও বাড়ছে। তাই কম্পিউটার শিক্ষার ব্যাপক সম্প্রসারণ অত্যাবশ্যক।

কম্পিউটার শিক্ষাব্যবস্থা : কম্পিউটার এখন মানুষের দৈনন্দিন কাজকর্ম থেকে শুরু করে অফিস-আদালত, কলকারখানা প্রভৃতি ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় দীক্ষা গুরুর ভূমিকা পালন করছে, সেজন্য কম্পিউটার শিক্ষা ব্যাপক ও সামগ্রিক হওয়া প্রয়োজন। সে সরকারি প্রচেষ্টাতেই হোক আর বেসরকারি বা ব্যক্তিগত উদ্যোগ বা ব্যক্তিগত প্রচেষ্টাতেই হোক। এখনকার দিনের চাহিদা তথা যুগের দাবি মেটাতে কম্পিউটার শিক্ষাকে মানুষের হাতের নাগালে বা মানুষের দোর গোড়ায় পৌঁছে দিতে ব্যাপক আয়োজন দরকার। সেজন্য প্রয়োজন বিপুল জনশক্তি নিয়োগ। একটি জাতির দক্ষ জনশক্তি যখন কাজে নিযোজিত থাকে, তখন জাতি সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। প্রতিটি মানুষের মাঝে কম্পিউটারের জ্ঞানকে সম্প্রসারিত করা এখনকার দিনের দাবি বা যুগের দাবি। এ লক্ষ্যে কম্পিউটার শিক্ষাকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। বর্তমানে সমস্ত বিশ্বে কম্পিউটার শিক্ষার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভরতে ব্যাপক তোড়জোড় চলছে, ফলে তারা এক্ষেত্রে বিপুল সাফল্যকে করায়ত্ত করে ফেলেছে। তাবৎ বিশ্বে এ ব্যাপারে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। ইদানিং আমাদের দেশে অবশ্যই বিদ্যালয় পর্যায়ে পৌঁছে গেছে কম্পিউটার শিক্ষা। দেশের কারিগরি শিক্ষাবোর্ড অবশ্য প্রথম থেকেই তাদের শিক্ষা কারিকুলামে কম্পিউটারকে বাধ্যতামূলক করেছে। কম্পিউটার শিক্ষাকে শুধু মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রাখলেই চলবে না, উচ্চ মাধ্যমিক এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় মান পর্যন্তও চালু করা দরকার। বর্তমান বিশ্বে যা চলছে, তাতে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত কম্পিউটার শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা হলে তা জাতির জন্য মঙ্গলই বয়ে আনবে বলে সকল বিদ্ব্যানজন বিশ্বাস করেন। কম্পিউটার শিক্ষাকে মানুষের কাছাকাছি নিয়ে যাওয়ার সরকারি প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানানো যায় এ চেষ্টা যাতে ফলবতী হয় সেজন্য আমাদের সকলকে জাতীয়ভাবে সচেষ্ট হতে হবে।

উপসংহার : কম্পিউটার মানব সভ্যতার বিকাশে যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এতে যেমন কোনো দ্বিমত নেই ঠিক তেমনি তা অর্থবহ হবে ব্যাপকভাবে কম্পিউটার শিক্ষা লাভের মধ্যে- এর বিপরীতে কোনো মন্তব্য নেই। এর শিক্ষা ও ব্যবহার বৃদ্ধি করে জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে সম্মুখপানে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলো উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছে উন্নত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি লাভ করতে পারে কম্পিউটার শিক্ষা ও ব্যবহারের মাধ্যমে। উন্নত ও আধুনিক জীবন প্রণালীর প্রতিটি স্তরে কম্পিউটার সহায়ক ভূমিকা রাখে। তাই এ ব্যাপারে শিক্ষা গ্রহণ ও প্রয়োগের জন্য সবাইকে সেচেষ্ট হতে হবে।


আরো দেখুন :

4 Comments

Post a Comment
Previous Post Next Post