যত মত, তত পথ
মূলভাব : পৃথিবীতে বিভিন্ন মত ও দৃষ্টিভঙ্গি থাকবে এটা স্বাভাবিক। মত আর দৃষ্টিভঙ্গির এ ভিন্নতাহেতু মানুষের জীবন এবং কর্মের ভিন্নতাও খুবই স্বাভাবিক বিষয়।
সম্প্রসারিত ভাব : সৃষ্টির আদিকাল থেকে মানুষের মধ্যে ভিন্নতার বিষয়টি বিদ্যমান। মানুষ চিন্তা চেতনা আর দৃষ্টিভঙ্গি এবং বিশ্বাসের ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই পরস্পর থেকে ভিন্ন হতে পারে। এ ভিন্নতা তাদের জীবনাচার, ধর্মকর্ম ও লেনদেনের ক্ষেত্রে প্রতীয়মান হয়। এক ধর্মে বিশ্বাসী বা অনুসারীদের জীবনাচার, চালচলন, রীতি নীতি অন্যদের চেয়ে ভিন্ন হবে। কেননা, মত ও বিশ্বাসের ভিন্নতার সাথে জীবনের বাহ্যিক ও আত্মিক অনেক বিষয়ই জড়িত। ব্যক্তির জীবনাচার ও কর্মের মাঝে তার মতের প্রতিফলন ঘটতে পারে। মতের ভিন্নতার কারণে যে পথেরও ভিন্নতা হতে পারে এ সত্যটাকে যখন মানুষ উপলব্ধি করতে পারে তখন ভিন্নতার মাঝেও ঐক্যের সুর শোনা যায়; পারস্পরিক সহনশীলতার মাধ্যমে মৈত্রীর বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া যায়। কেননা মানুষ যখন বুঝতে পারে, তার নিজের যেমন একটা মত বা একটা বিশ্বাস আছে এবং সে মত ও বিশ্বাস তাকে একটা নির্দিষ্ট পথে পরিচালিত করে, তেমনি অন্যের ক্ষেত্রেও তা স্বাভাবিক। এবং তখন তার মাঝে এসব কিছু মেনে নেওয়ার মনোবৃত্তি জন্ম নেয়। এমনিভাবে সকল মানুষের মাঝে এরূপ মনোবৃত্তির বিকাশ হলে অনেক ভিন্নতার মাঝেও মানব সমাজে শান্তির ধারা প্রবাহিত হতে পারে। কিন্তু যখনই এর ব্যতিক্রম ঘটে তখনই দেখা যায় এক ধর্ম আর বর্ণের মানুষ অন্যদের সহ্য করতে চায় না। শুরু হয় সাম্প্রদায়িক রেষারেষি, বিনষ্ট হয় মানব সমাজের শান্তি আর সমৃদ্ধি। মানুষের নিজের মতকে অপরের উপর চাপিয়ে দেওয়ার নীচু মনোবৃত্তি তাকে যেমন করে তোলে উগ্র, তেমনি সেও অনেক ক্ষেত্রে প্রতিবাদ আর প্রতিরোধের মুখোমুখী হয়। যুগে যুগে মানব জাতিকে অনেক মূল্য দিতে হয়েছে এবং বর্তমানেও বিশ্বের আনাচে-কানাচে মানুষকে তার মাশুল গুণতে হচ্ছে। শক্তিশালী জাতি, ধর্ম আর বর্ণের মানুষ নিজের মতকে অন্যের উপর চাপিয়ে দেওয়ার ঘৃণ্য তৎপরতা আজো থামায়নি, বরং প্রতিনিয়ত এর জন্য নানা ফন্দিফিকির আবিষ্কার করছে।
মানব সমাজ থেকে এ ঘৃণ্য প্রবৃত্তির উচ্ছেদ যতদিন সম্ভব না হবে ততদিন মানবজাতিকে এর মূল্য দিতেই হবে। মনে রাখতে হবে দিন শেষে আমরা সকলেই একই গ্রহের মানুষ।