রচনা : বাংলাদেশের ফল

ভূমিকা : সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা আমাদের এ বাংলাদেশ। ষড়ঋতুর এদেশে এক একটি ঋতুতে প্রকৃতি যেন নতুন সাজে সজ্জিত হয়ে আমাদের সামনে উপস্থিত হয়। বিভিন্ন ঋতুতে আমরা দেখতে পাই বিচিত্র ফলের সমারোহ। এখানে মাঠে মাঠে বসে ফলের মেলা, বনে বনে দেখা যায় সবুজের হাট ও গাছে গাছে নানাবিধ ফল। আমাদের দেশে যেসব ফল জন্মে তাদের মধ্যে আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, আনারস, পেঁপে, পেয়ারা, তাল, নারিকেল, বেল, খেজুর, তরমুজ, ভাঙ্গি ইত্যদি প্রধান। 

আম : আমকে বলা হয় ফলের রাজা। আমের মতো সুস্বাদু ফল পৃথিবীতে খুব কমই আছে। এদেশে আম প্রচুর পরিমাণে জন্মে। তন্মধ্যে রাজশাহীর আম উল্লেখযোগ্য। হিমসাগর, ল্যাংড়া, গোলাপভোগ, মোহনভোগ ইত্যাদি আম সেখানে পাওয়া যায়। ল্যাংড়া আমের পরে ফজলি আমের নাম উল্লেখযোগ্য। আম গাছ বাংলাদেশের সকল স্থানেই আছে বলেই আম গাছ বাংলাদেশের জাতীয় গাছ। তাই এই ফলও কম বেশি সব জেলাতে পাওয়া যায়।

জাম : বাংলাদেশের প্রায় সকল জেলাতেই জাম পাওয়া যায়। এই জাতীয় ফল কেবল পাকা অবস্থায় খাওয়া যায়। জাম পাকলে উপরের খোসা কালো হয়ে যায়। জাম মানবদেহের রক্ত বৃদ্ধি ও পরিষ্কার করে। 

লিচু : বাংলাদেশের অল্প কয়েকটি জেলায় লিচু জন্মে। তবে রাজশাহীর লিচু সবচেয়ে উন্নতমানের। এছাড়া দিনাজপুরের লিচুও ভালো। 

কাঁঠাল : বাংলাদেশের জাতীয় ফল কাঁঠাল। এদেশের সব জেলাতেই কাঁঠাল জন্মে। এর উপরের চামড়া থরথরে এবং কাঁটার মতো। কাঁঠালের মধ্যে যে কোষ থাকে তা বেশ সুস্বাদু। কাঁঠাল খুব উপাদেয় খাদ্য। এটি খেয়ে হজম করতে পারলে বেশ উপকার হয়। কাঁঠালের বিচির তরকারিও বেশ মজাদার। 

আনারস : বাংলাদেশের সিলেট জেলায় প্রচুর পরিমাণে আনারস জন্মে। এছাড়া টাঙ্গাইলের মধুপুরেও যথেষ্ট আনারস জন্মে। এর চাষের জন্য উঁচু জায়গার প্রয়োজন। সিলেটের জলাভূমিতে যে আনারস জন্মে তা খুব সুস্বাদু। সাধারণত আনারস মিষ্টি এবং রসালো ফল। 

কলা : বাংলাদেশের সর্বত্রই কলা পাওয়া যায়। কলা খুব পুষ্টিকর ও উপাদেয় ফল। আমাদের দেশের কলার মধ্যে সবরি, কবরি, অমৃতসাগর ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। আনাজ কলার তরকারি পুষ্টিকর ও রোগীর পথ্য। 

নারিকেল : নারিকেল অত্যন্ত সুপরিচিত একটি ফল। আমাদের দেশে নোয়াখালী, বরিশাল, সন্দ্বীপ এবং খুলনা এ সকল অঞ্চলেই সবচেয়ে বেশি নারিকেল জন্মে। গাছে থোকায় থোকায় নারিকেল ধরে। কাঁচা নারিকেলের নাম ‘ডাব’। ডাবের পানি খুব সুস্বাদু এবং পেটের অসুখের জন্য ভীষণ উপকারী। সুগৃহিণীরা অনেক খাদ্যই নারিকেল দিয়ে রান্না করেন। নারিকেল মিশ্রিত তরকারি খুব মজাদার ও মুখরোচক হয়। 

উপকারিতা : ফল মানুষের শরীর গঠন ও স্বাস্থ্য রক্ষায় অতীব প্রয়োজনীয়। যে ঋতুতে শরীরের জন্য যে রকম ভিটামিনের প্রয়োজন সেসব ফলই সেসব ঋতুতে জন্মে। শিশুর পুষ্টিসাধনে, বয়স্ক লোকের স্বাস্থ্যরক্ষায় ও রোগীর পথ্য হিসেবে ফলের গুরুত্ব অপরিসীম। তাছাড়া ফল দিয়ে জ্যাম, জেলি, আচার ইত্যাদি মজাদার খাবার তৈরি করা হয়। 

উপসংহার : প্রকৃতির স্বাভাবিক বদান্যতায় বাংলাদেশ ফলের যে সম্ভার পেয়েছে তার সদ্ব্যবহার করতে হবে। জাতিকে নীরোগ ও বলিষ্ঠ করে তুলতে হলে ফল চাষের দিকে অধিকতর যত্নবান হতে হবে। ফল চাষের প্রতি আমাদের সকলকে আগ্রহী হতে হবে। কারণ এগুলোর মধ্যে নিহিত রয়েছে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রচুর সম্ভাবনা।

2 Comments

Post a Comment
Previous Post Next Post